শিলখড়ি

ট্যাল্কভিত্তিক মোলায়েম, পরতদার রূপান্তরজ শিলা
(সাবান-পাথর থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শিলখড়ি বা সাবান-পাথর একটি ট্যাল্ক-ভিত্তিক পরতদার শিলা (Schist শিস্ট), যা এক ধরনের রূপান্তরজ শিলা। এটি মূলত ম্যাগনেসিয়াম-সমৃদ্ধ খনিজ ট্যাল্ক (সোদক ম্যাগনেসিয়াম সিলিকেট, এক ধরনের রূপালি রঙের খনিজ) দিয়ে গঠিত। ইংরেজিতে শিলখড়ি বা সাবান-পাথরকে সোপস্টোন (Soapstone), সোপরক (soaprock) বা স্টিয়াটাইট (steatite) নামেও ডাকা হয়।

শিলখড়ি বা সাবান-পাথরের কিছু নমুনা

ভূ-ত্বকের যেসব অঞ্চলে ভূ-ত্বকীয় পাতগুলির অধোগমন (subduction) ঘটে, সেখানে গতি-তাপীয় রূপান্তর (dynamothermal metamorphism) ও কায়ান্তর (metasomatism) প্রক্রিয়াতে প্রবাহী পদার্থের অন্তর্প্রবাহ ঘটে ও এভাবে শিলাগুলির উপর তাপ ও চাপের সৃষ্ট হয়, তবে এগুলির গলন ঘটে না। এভাবে শিলাগুলিতে পরিবর্তন সাধিত হয়ে শিলখড়ির সৃষ্টি হয়। ট্যাল্কের পাশাপাশি ভেজাল হিসেবে এটিতে বিভিন্ন পরিমাণে মাইকা, ক্লোরাইট, পাইরক্সিন, অ্যাম্ফিবোল, সার্পেন্টিন, কোয়ার্জ ও লোহার অক্সাইড থাকতে পারে। পরতদার শিলা বা শিস্ট বলে এটি অনেকগুলি পরত নিয়ে গঠিত ও এই পরতগুলিকে একে একে পৃথক করা সম্ভব। কদাচিৎ শিলাটি পরতহীন হতে পারে। শিলখড়ি হল শিলাটির জমাট পাথরখণ্ড রূপটির নাম, এটিকে গুঁড়া করলে যে রূপটি পাওয়া যায়, তাকে "ট্যাল্ক" বলে।

শিলখড়ির রঙ সাদা, সবজে ধূসর এমনকি গাঢ় সবুজ পর্যন্ত হতে পারে। এটি একটি মোলায়েম, কোমল শিলা (মো-র মাপনীতে ১-২) এবং এর আপেক্ষিক গুরুত্ব ২.২-২.৮, তবে এইসব ধর্ম ভেজালের ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে। শিলখড়িকে হাতে ধরলে পিচ্ছিল অনুভূত হয়, তাই এটিকে সাবান-পাথরও বলা হয়। এটিকে চূর্ণ করা যায়, কোমল বলে এটির উপর সহজেই খোদাই করা যায়, এটি নিশ্ছিদ্র, নিঃশোষী, এটির গলনাংক অনেক উচ্চ, তড়িৎ ও তাপ পরিবাহিতা নিম্ন, এটির তাপধারণক্ষমতা উচ্চ এবং পিচ্ছিলকারক ক্ষমতা উচ্চ। রাসায়নিকভাবে এটি নিষ্ক্রিয়, ফলে এটি অম্ল ও ক্ষারের ক্রিয়া প্রতিরোধ করে।[১]

প্রাচীনকাল থেকেই শিলখড়ি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাচীন মিশরীয়রা এটি দিয়ে গুবরে-মণি (scarab) ও সীলমোহর বানাতো। প্রাচীন চীন ও ভারতে এটিকে অলংকার ও গৃহস্থালি উপকরণে ব্যবহার করা হত। উত্তর আমেরিকার আদিবাসীরাও এটি ব্যবহার করত। সাম্প্রতিককালে শিলখড়িকে সম্পূর্ণ শোভাবর্ধক বস্তু সৃষ্টিতেই ব্যবহার করা হচ্ছে, ব্যবহারিক উপকরণে নয়। প্রায়শই অন্য উপাদান যেমন সার্পেন্টাইন ও পাইরোফাইলাইট নামের ট্যাল্ক সদৃশ খনিজের উপর খোদাই করা বস্তুগুলিকেও আজকাল শিলখড়ির খোদাইকর্ম বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।[১] শিলখড়ির শিলাখণ্ড প্রতিসারক উপাদান, ধাতুকর্মীর পেনসিল, ভাস্কর্য ও সম্প্রতি রান্নার পাত্র হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এটিকে অতীতে কখনও কখনও ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হত। শিলখড়ির চূর্ণ বা ট্যাল্ককে মূলত কাগজ, প্লাস্টিক, রবার ও রঙ শিল্পে গর্তপূরক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্রসাধনী ও ঔষধ শিল্পেও এটির ব্যবহার আছে।[১]


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ann P. Sabina (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Soapstone"The Canadian Encyclopedia। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০২৩