সুবর্ণা মুস্তাফা
সুবর্ণা মুস্তাফা (জন্ম ২ ডিসেম্বর ১৯৬০) হলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী, প্রযোজক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য। তিনি অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যা এবং ক্যামেলিয়া মোস্তফার বোন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শকপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সাথে তার জুটি ব্যাপক দর্শক সমাদর লাভ করে। এছাড়া তিনি হুমায়ূন আহমেদের লেখা কোথাও কেউ নেই ও আজ রবিবার টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি তিনি ২২ বছর মঞ্চে অভিনয় করেন।
সুবর্ণা মুস্তাফা | |
---|---|
![]() | |
একাদশ জাতীয় সংসদের ৪ নং সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান (এখন বাংলাদেশ) | ২ ডিসেম্বর ১৯৬০
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | হুমায়ুন ফরীদি (বি. ১৯৮৪; বিচ্ছেদ. ২০০৮)[১] বদরুল আনাম সৌদ (২০০৮-বর্তমান) |
পিতামাতা | গোলাম মুস্তাফা (পিতা), হোসনে আরা (মা) |
আত্মীয়স্বজন | ক্যামেলিয়া মুস্তাফা (বড় বোন) |
শিক্ষা | এমএ (ইংরেজি) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অভিনেত্রী, প্রযোজক, সাংসদ |
সুবর্ণা ১৯৮৩ সালে নতুন বউ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হল ঘুড্ডি (১৯৮০), নয়নের আলো (১৯৮৪), পালাবি কোথায় (১৯৯৭) ও গহীন বালুচর (২০১৭)। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।[২]
প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা
সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৬০ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪][৫] তার পৈত্রিক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে।[৬] তার পিতা গোলাম মুস্তাফা ছিলেন একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও আবৃত্তিকার। তার মাতা হোসনে আরা পাকিস্তান রেডিওতে প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন। মায়ের সহায়তায় মাত্র ৫/৬ বছর বয়সে বেতার নাটকে কাজ করেন। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে নিয়মিত টেলিভিশনে কাজ করেছেন।[৭]
কর্মজীবন সম্পাদনা
১৯৭০-এর দশকে সুবর্ণা ঢাকা থিয়েটারে নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন-এ অভিনয় করেন। ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ঘুড্ডি ছবির মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে আসেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ছবিটিকে "সময়ের আগে নির্মিত একটি ছবি, অ্যাহেড অব ইটস টাইম" বলে উল্লেখ করেন।[৭] ১৯৮৩ সালে নতুন বউ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। নয়নের আলো (১৯৮৪) ছবিতে তার অভিনয় সব শ্রেণীর দর্শককে নাড়া দিয়েছিল।
তিনি আজাদ আবুল কালাম রচিত ও আফসানা মিমি এবং বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত ডলস হাউজ টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। এটি সৌদ পরিচালিত ও সুবর্ণা অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক। পরবর্তী কালে তিনি সৌদের পরিচালনায় সীমান্ত, উপসংহার, গহীনে, গ্রন্থিকগণ কহে, এলেবেলে, কোমল বিবির অতিথিশালা ও কানা সিরাজউদ্দৌলা, পিঞ্জর, ঘোড়ার চাল আড়াই ঘর, অন্তর্যাত্রা টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন।[৫]
২০১৮ সালে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিটিভির বিশেষ অনুষ্ঠান আনে মুক্তি আলো আনে উপস্থাপনা করেন এবং চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় বিশেষ টেলিভিশন নাটক অপেক্ষা-এ অভিনয় করেন।[৫] সুবর্ণা বর্তমানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পল্লীসমাজ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিতব্য লীলাবতী চলচ্চিত্রে কাজ করছেন।[৮]
রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা
দীর্ঘদিন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণার পর সুবর্ণা মুস্তফা নাম লিখিয়েছেন রাজনীতির ঘরে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ বিজয়ী ও ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪ (৩০৪), ঢাকা-২২ থেকে সুবর্ণা মুস্তফাকে মনোনয়ন ও চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।[৯][১০]
ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা
সুবর্ণা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘ ২২ বছর সংসার করার পর ২০০৮ সালে ফরীদির সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে তিনি বদরুল আনাম সৌদকে বিয়ে করেন।[১১]
চলচ্চিত্রের তালিকা সম্পাদনা
- ঘুড্ডি (১৯৮০) - ঘুড্ডি
- লাল সবুজের পালা (১৯৮১) - নীলা
- নতুন বউ (১৯৮৩)
- নয়নের আলো (১৯৮৪) - নয়ন
- সুরুজ মিয়া (১৯৮৫) - নোলকি
- একা একা - বিনু
- কোথাও কেউ নেই - মুনা
- ফুলের মালা
- স্ত্রী
- অপহরণ
- শঙ্খনীল কারাগার (১৯৯২) - রুনু
- কমান্ডার (১৯৯৪) - মুক্তি
- পালাবি কোথায় (১৯৯৭) - শিরিন
- আজ রবিবার (১৯৯৯) - মীরা
- ফাঁসি
- রাক্ষস
- প্রাইভেট ডিটেকটিভ (২০০৫) - নিশা
- দূরত্ব (২০০৬)
- খণ্ড গল্প ৭১ (২০১১) - সূর্যের ফুফু
- হেডমাস্টার (২০১৪)
- আঁখি ও তার বন্ধুরা (২০১৭) - ডঃ রাইসা
- গহীন বালুচর (২০১৭) - আসমা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "2012 In The Rear-view Mirror"। The Daily Star। ২০১২-১২-৩০। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-৩০।
- ↑ "ফরীদির পর একুশে পদক পাচ্ছেন সুবর্ণা মুস্তাফা"। দৈনিক যুগান্তর। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "প্রার্থীর হলফনামা" (পিডিএফ)। নির্বাচন কমিশন। ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ "'অনেক আগে হিন্দি সিরিয়াল দেখা বন্ধ করেছি'"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২০।
- ↑ ক খ গ "শুভ জন্মদিন সুবর্ণা মুস্তাফা"। দৈনিক মানবজমিন। ২ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "বাবার ভিটায় সুবর্ণা মুস্তাফা"। দৈনিক প্রথম আলো। ১০ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ ক খ "বন্ধুত্ব ও সম্মান ছাড়া সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মানে হয়না: সুবর্ণা মুস্তাফা"। বিবিসি বাংলা। ২৯ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "শরৎচন্দ্রের গল্পে সুবর্ণা মুস্তাফা"। দৈনিক মানবজমিন। ১৫ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যদের তালিকা"। উইকিপিডিয়া। ২০১৯-১১-০৮।
- ↑ "সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা"। চ্যানেল আই অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-১৭।
- ↑ নূর, নাইস (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "আমাদের সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি : সুবর্ণা মুস্তাফা"। এনটিভি অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে সুবর্ণা মুস্তাফা (ইংরেজি)
- বাংলা মুভি ডেটাবেজে সুবর্ণা মুস্তাফা