সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (৮ মে ১৯৩৫ - ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা ছিলেন। তিনি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হিসেবেও পূর্বে কর্মরত ছিলেন।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী | |
---|---|
ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | |
পূর্বসূরী | সাইফুজ্জামান চৌধুরী জুয়েল |
উত্তরসূরী | আবুল হোসেন মিয়া |
কাজের মেয়াদ ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ – ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | |
পূর্বসূরী | কে এম ওবায়দুর রহমান |
উত্তরসূরী | শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু |
জাতীয় সংসদ উপনেতা | |
কাজের মেয়াদ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ – ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ | |
পূর্বসূরী | জিল্লুর রহমান |
উত্তরসূরী | মতিয়া চৌধুরী |
সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ৭ মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৬ | |
পূর্বসূরী | আসন শুরু |
উত্তরসূরী | আয়েশা সরদার |
শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | মাগুরা, বাংলাদেশ | ৮ মে ১৯৩৫
মৃত্যু | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৮৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | গোলাম আকবর চৌধুরী |
আত্মীয়স্বজন | সৈয়দ কামরুল আহসান (চাচা/দাদীর ভাইপো) সৈয়দ রহমাতুর রব ইরতিজা আহসান (চাচাতো ভাই/দাদীর ভাইপোর ছেলে) |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
তিনি ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড এসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক বর্ষসেরা নারী নির্বাচিত হন।[১] ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।[২]
প্রারম্ভিক জীবন ও বংশ পরিচয়
সম্পাদনাসৈয়দা সাজেদা ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।[১][৩] তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। সাজেদার দাদী সৈয়দা হামিদুন্নেসা বামনার সৈয়দ পরিবারের মীর সরওয়ার জানের মেয়ে।[৪]
তার স্বামী রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী গোলাম আকবর চৌধুরী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর তার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।[৫] তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ে হয়।
শিক্ষা
সম্পাদনাশিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[১]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাসৈয়দা সাজেদা ১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৯–১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নির্বাচিত মনোনীত হন।
প্রথম জাতীয় সংসদে তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯ থেকে সংসদ সদস্য মনোনীত হন।[৬]
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।।[১] ১৯৭২-১৯৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-১৯৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের জাতীয় কমিশনার ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১][৩]
তিনি ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৭]
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়কের দায়িত্বও পালন করেন।
১২ জুন ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৮] ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সাধারণ নির্বাচনেও তিনি ফরিদপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৯][১০]
নবম জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন।[১১] এরপর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি একই পদ অলংকৃত করেন।[১২]
দুর্নীতির অভিযোগ
সম্পাদনা২০০৮ সালের ১০ই জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ দাখিল করে।[১৩] তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।[১৪] ২০০৮ সালের ১৮ই নভেম্বর বাংলাদেশ হাইকোর্ট মামলাটি স্থগিত করে, পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে আবারও ওঠে।[১৫][১৩] হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন।[১৬] ২০১০ সালের ২৯শে নভেম্বর হাইকোর্ট মামলায় চৌধুরীর বিরুদ্ধের অভিযোগ সুসংগঠিত না হওয়ায় মামলাটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেন।[১৭]
মৃত্যু
সম্পাদনাসৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন ও সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।[১৮] ১১ সেপ্টেম্বর রোববার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।[১১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "সাজেদা চৌধুরীর ৭৮তম জন্মদিন"। ৮ মে ২০১৩। ৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"। cabinet.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ ক খ "জন্মদিনে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত সাজেদা চৌধুরী"। যায় যায় দিন। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ সিরাজ উদদীন আহমেদ (২০১০)। "বামনার জমিদার চৌধুরী পরিবার"। বরিশাল বিভাগের ইতিহাস। ১। ঢাকা: ভাস্কর প্রকাশনী।
- ↑ "গোলাম আকবর চৌধুরীর ইন্তেকাল"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ২০১৬-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১১।
- ↑ "১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য তালিকা"। জাতীয় সংসদ। ২০১৯-০৯-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "১১তম সংসদের সদস্যবৃন্দ"। জাতীয় সংসদ। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ২০১৯-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ ক খ "সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ "ফের সংসদ উপনেতা সাজেদা"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ ক খ "সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের লিভ টু আপিল খারিজ"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ "Sajeda bins graft claims against her"। দ্য ডেইলি স্টার। ৭ অক্টোবর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "SC upholds HC order to stay case against Sajeda Chy"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Tofail, Sajeda, MK Anwar granted bail"। দ্য ডেইলি স্টার। ২১ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলা বাতিল"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "গুরুতর অসুস্থ সাজেদা চৌধুরী হাসপাতালে"। banglanews24.com। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২।