লেস জোসলিন

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

লেসলি রোল্যান্ড জোসলিন (ইংরেজি: Les Joslin; জন্ম: ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৪৭) ভিক্টোরিয়ার ইয়ারাভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ও সাবেক অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

লেস জোসলিন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
লেসলি রোল্যান্ড জোসলিন
জন্ম (1947-12-13) ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৭ (বয়স ৭৬)
ইয়ারাভিল, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনবামহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ২৪৫)
২৬ জানুয়ারি ১৯৬৮ বনাম ভারত
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৪৪
রানের সংখ্যা ১৮১৬ ৬৩
ব্যাটিং গড় ৪.৫০ ২৯.৭৭ ৩১.৫০
১০০/৫০ -/- ২/১২ -/-
সর্বোচ্চ রান ১২৬ ২৯
বল করেছে - - -
উইকেট - -
বোলিং গড় - ৭৩.০০ -
ইনিংসে ৫ উইকেট - - -
ম্যাচে ১০ উইকেট - - -
সেরা বোলিং - ১/১৪ -
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ২৭/- ১/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন লেস জোসলিন

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

লেস জোসলিন মেলবোর্নভিত্তিক ইউনিভার্সিটি হাইস্কুলে পড়াশুনো করেছেন। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই সেরা ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি পান।[] সাবেক ও বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার এবং পারিবারিক বন্ধু জর্জ ট্রাইবের কাছে শৈশবকালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। কিশোর অবস্থাতেই বড়দের বিপক্ষে তাকে খেলতে দেখা যেতো। ইয়ারাভিল থেকে চলে আসার পর ফুটসক্রে ক্রিকেট ক্লাবে যোগে দেন। এখানে দলীয় সঙ্গী ও এক টেস্টের বিস্ময়কারী ত্রিশোর্ধ্ব কেন ইস্টউডের সাথে একযোগে অনুশীলন কর্মে সম্পাদন করতেন।

১৯৬৬-৬৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত লেস জোসলিনের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। মারকুটে বামহাতি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি।[] শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্যাটসম্যান নীল হার্ভেবব কাউপারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যায় প্রতিশ্রুতিশীলতার আভাষ দিয়েছিলেন। সর্বকনিষ্ঠ ভিক্টোরীয় হিসেবে শেফিল্ড শিল্ডে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন।

১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার। প্রথম মৌসুমেই ৪৩.৭৫ গড়ে ৫২৫ রান তুলেন। ঐ মৌসুমে ভিক্টোরিয়া দল শেফিল্ড শিল্ডের শিরোপা জয় করেছিল। তন্মধ্যে, এসসিজিতে অনুষ্ঠিত নিজস্ব তৃতীয় খেলায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২৬ রানের প্রথম সেঞ্চুরি করেন। এ সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ১৮। এ পর্যায়ে দলীয় অধিনায়ক জ্যাক পটারের সাথে চতুর্থ উইকেটে ১০৭ রানের জুটি গড়েছিলেন।[]

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে আরও একটি সেঞ্চুরি করেন। ১২১ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলেছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে। এবারো পটারের সাথে চতুর্থ উইকেটে ১৩০ মিনিটে ১৭৭ রান তুলেছিলেন তিনি।[] এ মৌসুমে ৫১.৩৬ গড়ে ৫৬৫ রান তুলেছিলেন তিনি।[]

অস্ট্রেলিয়ার দল নির্বাচকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ও সাবেক টেস্ট অধিনায়ক জ্যাক রাইডারের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন তিনি। ৮০ বছর বয়সী জ্যাক রাইডার এই তরুণ ব্যাটসম্যানের ক্রীড়াশৈলীর মাঝে প্রতিশ্রুতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার স্বাক্ষর দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি তাকে নিউজিল্যান্ড গমনে দলে অন্তর্ভূক্তির ব্যর্থ চেষ্টাও চালিয়েছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন লেস জোসলিন। ২৬ জানুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে সিডনিতে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

২০ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্ট খেলায় অভিষিক্ত হন ও তখন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধাই অনেকগুলো টেস্টে তার অংশগ্রহণের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। তবে মাত্র ৭ ও ২ রান তুলে বিষেন সিং বেদীইরাপল্লী প্রসন্ন - এ দুই ভারতীয় স্পিনারের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন।[] প্রথম ইনিংসে দলের রান কম থাকাবস্থায় তিনি মাঠে নামেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বলকে সুইপ করাকালে ছয় ফুট উচ্চতার অধিকারী সৈয়দ আবিদ আলী বাউন্ডারি সীমানায় লাফিয়ে দর্শনীয়ভাবে তালুবন্দী করেন। জোসলিনের বড় ধরনের খেলা উপভোগ করার জন্যে তার মাতা, বান্ধবী ও অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্বকারী ভ্রাতা গ্রেইম উপস্থিত ছিলেন। তার পিতা রন ইয়ারাভিলের বাড়ীতে অবস্থান করেন ও মাংস বিক্রয়ের দোকান পরিচালনা করতেন।

ইংল্যান্ড গমন, ১৯৬৮

সম্পাদনা

ভারতের বিপক্ষে খেলার পর ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ সফরে নিজের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নের সন্দিগ্ধ ছিলেন। তবে, শেফিল্ড শিল্ডে মৌসুমের শেষদিকে বেশ কয়েকটি দূর্দান্ত ইনিংস খেলার পরিপ্রেক্ষিতে এ সফরে তাকে যুক্ত করা হয়। এরফলে, ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ড গমনের জন্যে মনোনীত হন। ঐ দলটিতে বিল লরি, ব্রায়ান টাবের, ডগ ওয়াল্টার্স, লেস জোসলিন, জন গ্লিসন, অ্যাশলে মলেট, ডেভিড রেনেবার্গ, জন ইনভেরারিটি, এরিক ফ্রিম্যান, ইয়ান চ্যাপেল, নীল হক, পল শিহান, অ্যালেন কনলি, বব কাউপার, গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জিইয়ান রেডপাথ ছিলেন।

ইংল্যান্ডের ভেজা গ্রীষ্মে প্রস্তুতিমূলক খেলায় তার অংশগ্রহণ সীমিত পর্যায়ের ছিল। লিডসের চতুর্থ টেস্টে বিল লরি আহত হলে তার অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা দেখা দেয়। তবে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও অভিজ্ঞতালব্ধ জন ইনভেরারিটিকে ঐ শূন্যস্থান পূরণে দলের প্রথম একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সফরে ১৩ খেলায় অংশ নিয়ে ২১.৫০ গড়ে মাত্র ৩৪৪ রান তুলতে পেরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, পরবর্তীকালে কোন টেস্টেই তাকে আর রাখা হয়নি।

ইংল্যান্ড সফর শেষে অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যাবর্তন করে ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমসহ ১৯৬৯-৭০ মৌসুমের অধিকাংশ সময় খেলেন। তবে, পূর্বেকার ক্রীড়াশৈলী আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ঐ গ্রীষ্মগুলোয় তার রান সংগ্রহের হার ২০-এর নিচে চলে যায়। এরফলে, ভিক্টোরিয়া দলের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। ২২ বছর বয়সেই খেলার জগৎ থেকে তাকে চলে আসতে হয়।[] ২৩ বছর বয়সে উপজেলা পর্যায়ের খেলোয়াড়ে রূপান্তরিত হন ও এরপর মেলবোর্নের প্রথম স্তরভিত্তিক ক্রিকেটকে বিদেয় জানাতে বাধ্য হন তিনি। এছাড়াও, হাঁটুর সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

পরবর্তী ৩০ বছর ক্রিকেটের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি। ক্লাবের কোন অনুষ্ঠানেও তাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। জীবনের বাদ-বাকি সময়েও তিনি এ ধারা বজায় রেখেছিলেন। ক্রিকেট খেলা থেকে চলে আসার পর তামাক শিল্পে কাজে করেন। এরপর ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার উপযোগী ঘোড়া উৎপাদনের সাথে জড়িত হন।[]

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। কন্যা ও নাতি রয়েছে তার।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. The Oxford Companion to Australian Cricket, Oxford, Melbourne, 1996, p. 281.
  2. Wisden 1968, p. 904.
  3. Victoria v Western Australia 1966-67
  4. Wisden 1969, p. 887.
  5. Les Joslin batting by season
  6. Australia v India, Sydney 1967-68
  7. Coverdale, Brydon (২৩ ডিসেম্বর ২০১৫)। "Australia's forgotten prodigy"The Cricket Monthly। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৯ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা