শতক (ক্রিকেট)
শতক বা শতরান বা সেঞ্চুরি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের অন্যতম অনুষঙ্গ বিষয় ও ক্রিকেটীয় পরিভাষা। ব্যাটিংকারী দলের কোন ব্যাটসম্যান কর্তৃক একটি ইনিংসে ১০০ বা তদূর্ধ্ব রান সংগ্রহকে শতক হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] এর ফলে ব্যাটসম্যান শতক লাভ করেছেন বলে স্কোরকার্ডে তুলে ধরা হয়। এছাড়াও এ পরিভাষাটি দুইজন ব্যাটসম্যানের অংশীদারত্বে গঠিত জুটিতে প্রয়োগ করা হয় যা ‘শতক পার্টনারশিপ’ বা ‘শতরানের জুটি’ হিসেবে পরিচিত। শতক একজন ব্যাটসম্যানের পরম আরাধ্য বিষয় ও গুরুত্বপূর্ণ পদচারণা হিসেবে স্বীকৃত। সাধারণতঃ একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানে সংখ্যাগতভাবে তুলে ধরা হয়। একজন ব্যাটসম্যানের শতককে একজন বোলার কর্তৃক এক ইনিংসে সংগৃহীত ৫ উইকেটের সমমান হিসেবে খসড়াভাবে মনে করা হয়।
বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সফল সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ৫১টি শতক করেছেন।[২]
অর্ধ-শতক
সম্পাদনা২০০, ৩০০, ৪০০ কিংবা ৫০০ রানও শতক হিসেবে গণ্য যদিও এ রানগুলো যথাক্রমে দ্বি-শতক (২০০-২৯৯), ত্রি-শতক (৩০০-৩৯৯), কোয়াড্রপল শতক (৪০০-৪৯৯) নামে পরিচিত। যদি কোন ব্যাটসম্যান ৫০-৯৯ রান সংগ্রহ করেন, তাহলে তিনি অর্ধ-শতরান বা অর্ধ-শতক বা হাফ-শতক করেছেন। এভাবে ৯৯ রান থেকে যদি ব্যাটসম্যান ১০০ রান করেন, তাহলেই তা পরিসংখ্যানে শতরান হিসেবে গণ্য করা হয়।[৩]
ইতিহাস
সম্পাদনাশতক পরিভাষাটি ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ্ব পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে অপ্রচলিত ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল পিচ যা কোন রকমে প্রস্তুত করা হতো। প্রথমদিককার শতক নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও ৩১ আগস্ট, ১৭৬৯ তারিখে একটি গুরুত্বহীন খেলায় জন মিনশাল ডিউক অব ডরসেট’স একাদশের পক্ষে রোথামের বিরুদ্ধে সেভেনওকস ভাইনে ১০৭ রানের এক শতক করেছিলেন বলে নির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।[৪] জুলাই, ১৭৭৫ সালে ব্রডহাফপেনি ডাউনে অনুষ্ঠিত বড় ধরনের ক্রিকেট খেলায় প্রথম সুনির্দিষ্টভাবে শতক করেন জন স্মল নামীয় এক ইংরেজ ক্রিকেটার। তিনি হ্যাম্পশায়ারের হয়ে সারে দলের বিপক্ষে ১৩৬ রান করেন।[৫] শুরুর দিকের চিহ্নিত শতক পার্টনারশীপের রেকর্ড করা হয়েছে দুইজন হ্যাম্বলডন ক্লাবের ব্যাটসম্যানের মাধ্যমে।[৬] ক্যাটারহ্যামের বিপক্ষে এ জুটি প্রথম উইকেটে ১৯২ রান সংগ্রহ করেন। বিশ্বাস করা হয় যে, ব্যাটসম্যানদ্বয় হচ্ছেন - টম সুটার এবং এডওয়ার্ড কারি অ্যাবারো।[৭] এছাড়াও তাদের মধ্যে কমপক্ষে একজন শতক করেছিলেন; কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপিত হয়নি।
টেস্ট ক্রিকেট
সম্পাদনাটেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো শতকের সৌভাগ্য অর্জন করেন অস্ট্রেলিয়ার ডানহাতি ব্যাটসম্যান চার্লস ব্যানারম্যান। ১৫-১৯ মার্চ, ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার বিশ্বের ১ম টেস্টে ১৬৫ রানে অবসর নিয়েছিলেন তিনি।[৮] ১৮৮০ সালে কেনিংটন ওভালে প্রথমবারের মতো শতরানের জুটি গড়েন ইংল্যান্ডের ডব্লিউ. জি. গ্রেস - এ. পি. লুকাস। ৬-৮ সেপ্টেম্বর, ১৮৮০ সালে তারা এ শতরানের জুটিটি গড়েন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক ইনিংসে অপরাজিত ৪০০ রান করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং বিস্ময় ব্রায়ান লারা। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার ৫১টি শতক করে বিশ্বরেকর্ডের অধিকার অর্জন করেছেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সম্পাদনাভিরাট কোহলি এক দিনের ক্রিকেট বা ওডিআইয়ে প্রথম শতকটি করে ২০০৯ সালে ইডেন গার্ডেনে , কলকাতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৭ রান করার সময় তার প্রথম সেঞ্চুরি করেন ।।[৯] ২০২৩ সালে নভেম্বরের , ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে চেন্নাই এ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১১৭ রান করে শচিন তান্দুলকারের ৪৯ টি সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙ্গে ৫০তম ওডিআই সেঞ্চুরি করার পর কোহলি যে কোনো খেলোয়াড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওডিআই সেঞ্চুরি করেছেন। আর তিনি শীর্ষস্থানে রয়েছেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
সম্পাদনাডব্লিউ. জি. গ্রেস হচ্ছেন প্রথম ক্রিকেটার যিনি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শততম শতক করেছেন। এ কৃতিত্ব অর্জন করেন ১৮৯৫ সালে। তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বমোট ১২৪টি শতক রয়েছে। পরবর্তীতে জ্যাক হবস এ রেকর্ড অতিক্রম করে ১৯৯টি প্রথম-শ্রেণীর শতক করে থেমে যান যা অদ্যাবধি অক্ষত রয়েছে।[১০][১১]
দ্রুততম শতক
সম্পাদনা২৩ এপ্রিল, ২০১৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩টি পদ্ধতির (টেস্ট, একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টুয়েন্টি২০) যে-কোনটিতে দ্রুততম শতক করেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের টি২০ ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে তিনি মাত্র ৩০ বলে এ কীর্তিগাঁথা রচনা করেন।[১২] পূর্বতন রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ৩৪ বলে। এছাড়াও তিনি টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ১১টি শতক করেন।
একদিনের ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম শতকের বিশ্বরেকর্ড গড়েন এবি ডি ভিলিয়ার্স ২০১৫ সালে ১৮ জানুয়ারি তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে শতক করেন এবং কোরে অ্যান্ডারসন এর করা ৩৬ বলে শতকের রেকর্ড ভেঙে দেন।
টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম শতক করেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৬ সালে নিজের বিদায়ী টেস্টে মাত্র ৫৪ বলে তিনি শতক করেন।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Williamson, Martin। "A glossary of cricket terms"। ESPNcricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৪। Refer to entry for ton.
- ↑ Test centuries
- ↑ "England gives it to Aussies at Ashes", Sydney Morning Herald, Dec. 2, 2006.
- ↑ G. B. Buckley, Fresh Light on 18th Century Cricket, Cotterell, 1935.
- ↑ Arthur Haygarth, Scores & Biographies, Volume 1 (1744-1826), Lillywhite, 1862.
- ↑ H. T. Waghorn, Cricket Scores, Notes, etc. (1730-1773), Blackwood, 1899.
- ↑ Ashley Mote, The Glory Days of Cricket, Robson, 1997.
- ↑ Test #1
- ↑ 1st ODI: England v Australia, Aug. 24, 1972, ESPN website.
- ↑ Most Hundreds in a Career, ESPN website.
- ↑ See Variations in first-class cricket statistics.
- ↑ "'অতিমানবীয়' গেইল, প্রথম আলো, ২৩ এপ্রিল ২০১৩"। ২০১৫-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২।