ভৌগোলিক নির্দেশক
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হচ্ছে কোনো সামগ্ৰীর ব্যবহার করা বিশেষ নাম বা চিহ্ন। এই নাম বা চিহ্ন নিৰ্দিষ্ট সামগ্ৰীর ভৌগোলিক অবস্থিতি বা উৎস (যেমন একটি দেশ, অঞ্চল বা শহর) অনুসারে নিৰ্ধারণ করা হয়। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সামগ্ৰী নিৰ্দিষ্ট গুণগত মানদণ্ড বা নিৰ্দিষ্ট প্ৰস্তুত প্ৰণালী অথবা বিশেষত্ব নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরুপ, ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্ৰাপ্ত আসামের মুগা সূতা[১][২] চিহ্নই[৩] মুগা সূতায় নিৰ্মিত বস্ত্ৰ বা অন্যান্য সামগ্ৰীর গুণগত মানদণ্ড নিশ্চিতি প্ৰদান করে। ভৌগোলিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিভিন্ন সামগ্ৰী নিৰ্দিষ্ট অঞ্চলটিতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা প্ৰদান করে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যসামগ্ৰী সম্পাদনা
বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে ১৭ নভেম্বর ২০১৬ সালে জামদানি স্বীকৃতি পায়।
১৭ আগস্ট ২০১৭ পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশকে বাংলাদেশী পণ্য হিসাবে বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জনের কথা ঘোষণা করে। এর ফলে ইলিশ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
২৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে খিরসাপাত আমকে বাংলাদেশের ৩য় ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (খাদ্যদ্রব্য) হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর মসলিনকে বাংলাদেশের চতুর্থ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজশাহী সিল্ককে ৫ম, রংপুরের ৭০০ বছরের ঐতিহ্যের ধারক বাহক শতরঞ্জিকে ৬ষ্ট, চিনিগুঁড়া চালকে ৭ম, দিনাজপুরের কাটারিভোগকে ৮ম এবং বিজয়পুরের সাদা মাটিকে ৯ম জিআই পণ্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।[৪][৫]
২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল বাগদা চিংড়িকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশের দশম জিআই পন্য।[৬]
বাংলাদেশের একাদশতম ভৌগোলিক নির্দেশক জিআই পণ্য রাজশাহীর বিখ্যাত ফজলি আম ( ১১ তম জিআই পণ্য,২০২২)
২০২৩ সালের ৫ই জুলাই আরোও ৪টি পণ্যকে জি আই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পণ্যগুলা যথাক্রমে, বগুড়ার বিখ্যাত দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম।
১৬ তম জি আই পণ্যের স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশের সিলেটের শীতলপাটি।(২০ জুলাই ২০২৩)
সর্বশেষ ১৭ তম জি আই পণ্যের স্বীকৃতি পায়- নাটোরের কাঁচাগোল্লা। (৮ আগস্ট ২০২৩)
এই দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যের সংখ্যা[৭] দাঁড়ালো মোট ১৭টি।
ক্রম | আবেদন নং | আবেদনের তারিখ | পণ্যের নাম | আবেদনকারী | পণ্যের শ্রেণী | রেজিস্ট্রেশন নং |
---|---|---|---|---|---|---|
০১ | জি আই-০১ | ০১/০৯/২০১৫ | জামদানি শাড়ী | বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) | ২৫ | ০১ |
০২ | জি আই-০১ | ১৩/১১/২০১৬ | বাংলাদেশ ইলিশ | মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ | ২৯, ৩১ | ০২ |
০৩ | জি আই-০৩ | ০২/০২/২০১৭ | চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম | বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট | ৩১ | ০৩ |
০৪ | জি আই-০৫ | ০৬/০২/২০১৭ | বিজয়পুরের সাদা মাটি | জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নেত্রকোনা | ০১ | ০৪ |
০৫ | জি আই-০৬ | ০৬/০২/২০১৭ | দিনাজপুর কাটারীভোগ | বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর | ৩০ | ০৫ |
০৬ | জি আই-০৭ | ০৭/০২/২০১৭ | বাংলাদেশ কালিজিরা | বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর | ৩০ | ০৬ |
০৭ | জি আই-৩৪ | ১১/০৭/২০১৯ | রংপুরের শতরঞ্জি | বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) | ২৭ | ০৭ |
০৮ | জি আই-২৭ | ২৪/০৯/২০১৭ | রাজশাহী সিল্ক | বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড, রাজশাহী | ২৫ | ০৮ |
০৯ | জি আই-৩০ | ০২/০১/২০১৮ | ঢাকাই মসলিন | বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, ঢাকা | ২৪, ২৫ | ০৯ |
১০ | জি আই-১৫ | ০৯/০৩/২০১৭ | রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম | ১। ফল গবেষণা কেন্দ্র, বিনোদপুর, রাজশাহী,
২। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি এসোসিয়েশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। |
৩১ | ১০ |
১১ | জি আই-৩২ | ০৪/০৭/২০১৯ | বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি | মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ | ২৯, ৩১ | ১১ |
১২ | জি আই-৩৭ | ১৬/০৩/২০২১ | বাংলাদেশের শীতল পাটি | বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) | ২৭ | ১২ |
১৩ | জি আই-২৯ | ০১/০১/২০১৮ | বগুড়ার দই | বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, বগুড়া জেলা শাখা। | ২৯ | ১৩ |
১৪ | জি আই-৩১ | ১১/০৪/২০১৮ | শেরপুরের তুলশীমালা ধান | জেলা প্রশাসক, শেরপুর | ৩০ | ১৪ |
১৫ | জি আই-১০ | ১৯/০২/২০১৭ | চাঁপাই নবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম | আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | ৩১ | ১৫ |
১৬ | জি আই-১১ | ১৯/০২/২০১৭ | চাঁপাই নবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম | আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | ৩১ | ১৬ |
১৭ | জি আই-৪০ | ৩০/০৩/২০২৩ | নাটোরের কাঁচাগোল্লা | জেলা প্রশাসন, নাটোর | ২৯,৩০ | ১৭ |
ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যসামগ্ৰী সম্পাদনা
পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদনা
- দার্জিলিং চা- ২০০৩ সালে দার্জিলিং চা ভারতের ভারতীয় পেটেন্ট অফিসের মাধ্যমে ভারতের প্রথম পণ্য হিসাবে ২০০৪ -২০০৫ সালে জিআই ট্যাগ লাভ করে।[৯]
- নকশি কাঁথা- ২০০৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নকশি কাঁথার ভৌগোলিক স্বীকৃতি পায়।[১০]
- শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী - ২০০৭
- তুলাইপাঞ্জি চাল - ২০১৭
- গোবিন্দভোগ চাল - ২০১৭
- লক্ষ্মণভোগ আম
- ফজলি আম
- হিমসাগর আম - ২০১৩
- শান্তিপুরী শাড়ি
- বালুচরী শাড়ি
- ধনেখালি শাড়ি
- পটচিত্র
- সীতাভোগ -২০১৭
- মিহিদানা - ২০১৭
- রসগোল্লা - ২০১৭
- জয়নগরের মোয়া - ২০১৫
- মাদুরকাঠি - ২০১৮
- ছৌ মুখোশ -২০১৮
- ডোকরা
- মনসা চালি
- বাঁকুড়ার ঘোড়া
আসাম সম্পাদনা
এছাড়াও জহা চাউল, সৰ্থেবারীর কাঁহ-পিতলর শিল্প, কাৰ্বি বস্ত্ৰশিল্প এবং গোয়ালপারার শীতল পাটীর জন্যে ভৌগোলিক স্বীকৃতি বিভাগে কেন্দ্ৰীয় সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।[১১]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "G.I. – APPLICATION NUMBER 384" (পিডিএফ)। GEOGRAPHICAL INDICATIONS JOURNAL GOVERNMENT OF INDIA। 52: 28–38। ২০১৩। ২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Samudra Gupta Kashyap (২৪ আগস্ট ২০০৭)। "Assam's muga silk gets GI registration"। The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Finally, muga gets GI logo"। The Telegraph। ২৮ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৫।
- ↑ আজাদ, আবুল কালাম মুহম্মদ। "ঢাকাই মসলিনের পুনর্জন্ম"। Prothomalo।
- ↑ "জিআই সনদ পেলো আরও ছয় পণ্য, ইত্তেফাক, ১৮ জুন ২০২১"। ১৮ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০২১।
- ↑ জিআই সনদ পেল বাগদা চিংড়ি, যুগান্তর, ১৮ মে ২০২২
- ↑ হোসেন, মোঃ দেলোয়ার (আগস্ট ২৭, ২০২৩)। "বাংলাদেশের জিআই পণ্য"। ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি), জিআই ব্লগ। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৭, ২০২৩।
- ↑ "মঞ্জুরকৃত জিআই পণ্য"। পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। আগস্ট ২০, ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৭, ২০২৩।
- ↑ "GI tag: TN trails Karnataka with 18 products"। The Times of India। আগস্ট ২৯, ২০১০। নভেম্বর ৩, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩০, ২০১৮।
- ↑ http://www.ttg-sric.iitkgp.ernet.in/GIDrive/images/gi/registered_GI_13June2016.pdf
- ↑ "Break up & Status of GI Application Pending before the GI Registry as on March 31, 2015" (পিডিএফ)। Intellectual Property India (Govt. of India)। ২৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৫।