শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী

শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী এক ধরনের হস্তশিল্প যার উৎস পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন[১] এই চর্মজাত সামগ্রীগুলি বেশ রঙ্গিন বুটিদার অথবা বাটিকের নক্সাযুক্ত হয়।[২] শান্তিনিকেতনী চর্মজাত দ্রব্যের প্রধান বৈশিষ্ট হল এগুলি সুন্দর রঙের লৈখিক নক্সাযুক্ত। রঙিন নক্সাগুলি, শুকনো আনাজের খোসা থেকে উৎপন্ন রঙ এর সাহায্যে করা হয় যা এইজাতীয় জিনিসপত্রের অলংকরণের পক্ষে বিশেষভাবে উপযুক্ত।[২] আনাজের খোসা থেকে এইপ্রকার রঙ এবং অলংকরণের পদ্ধতিকে E.I.Tanning পদ্ধতি বলা হয়।[৩] এই হস্তশিল্প ভারতের ভৌগোলিক অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।[৪][৫]

শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী
ভৌগোলিক নির্দেশক
শান্তিনিকেতনী চর্মজাত হাতব্যাগ
অঞ্চলশান্তিনিকেতন, বীরভূম , পশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
নথিবদ্ধ২০০৭
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটhttp://ipindia.nic.in/girindia/

ইতিহাস সম্পাদনা

 
আমার কুটিরে বিক্রি হচ্ছে শান্তিনিকেতনী চর্মজাত সামগ্রী

শান্তিনিকেতনে চর্ম-শিল্পের এই ঐতিহ্যের সাথে নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরএর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এর একটা যোগসূত্র রয়েছে। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে সৃজনশীল এবং বস্তুধর্মী শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন ছিল যা গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি অপেক্কা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[২] শান্তিনিকেতন তথা বোলপুরে ভারতীয় কারিগরি শিল্প আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ এবং তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুযোগ্য নেতৃত্বে প্রায় ৮০বছর পূর্বে। এই কারিগরি শিক্ষার অন্যতম ছিল চর্মশিল্প। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এর এই সম্পর্কিত বিভাগটি শিল্প সদন নামে পরিচিত।[৬][৩][৭]

এই চর্মশিল্পের ঐতিহ্যের উন্নয়নের সাথে জড়িত অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল আমার কুটির[৮] ১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দে, স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী সুশেন মুখার্জ্জী আমার কুটির সোসাইটি স্থাপন করেন, প্রাক- স্বাধীনতা্র সময়কার মুক্ত রাজনৈতিক জেলবন্দীদের আশ্রয় এবং কর্মসংস্থানের জন্য।[৯] কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার দ্রুত এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। স্বাধীনতা্ পরবর্তীকালে, আমার কুটির সোসাইটি এদের চর্মজাত সামগ্রী এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের উৎকর্ষতার কারণে সুপরিচিত হয়।[১০]

অভিনবত্ব সম্পাদনা

শান্তিনিকেতনে উৎপাদিত সামগ্রীর একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হল এদের অলংকরনে ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দে পূর্বদেশীয় জাভা এবং বালি থেকে আমদানিকৃত বাটিক নক্সা ব্যবহৃত হয়। এই বাটিক নক্সাগুলির মধ্যে এক অনবদ্য শিল্পশৈলীর পাশাপাশি চিরন্তনতা এবং ঐতিহ্যের ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়।[১০] এই শিল্প চিরন্তন এবং লোকশিল্পের এক চমৎকার মিশেল প্রদর্শিত করে। চিরন্তন চিত্রায়নের মধ্যে যেমন দেখা যায় হরিনের সাথে শকুন্তলার বনচারিনী দৃশ্য, তেমন লোকশিল্পের চিত্রায়নে লক্ষ্য করা যায় সনাতনী সাঁওতালি প্রথার উপস্থিতি।

শান্তিনিকেতনএর চর্মজাত সামগ্রী সমূহ সম্পাদনা

চর্মজ দ্রব্যের বিপুল সম্ভার শান্তিনিকেতনের চর্মজাত শিল্পকর্মকে সমৃদ্ধ করেছে, যথা-[১০]

  • মানি ব্যাগ
  • হাত ব্যাগ
  • মুদ্রা অথবা কয়েন রাখার ব্যাগ
  • গয়নার বাক্স
  • মহিলাদের কাঁধে ঝোলা ব্যাগ
  • ভ্যানিটি ব্যাগ
  • কলম এবং পেন্সিল রাখার বাক্স
  • চশমা রাখার খাপ

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Five decades of leather: a journey down memory lane(1995)" 
  2. "Diagnostic Study Report for Leather Goods Cluster, Santiniketan" (পিডিএফ)। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ 
  3. "Santiniketan Leather Goods Cluster Information Sheet" (পিডিএফ)  line feed character in |শিরোনাম= at position 37 (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "Registration Details Of G.I Applications,2003 – 22nd November 2011" (পিডিএফ)। ২ জুন ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ 
  5. "Business Standard Bengal's index of industrial production higher: Mitra, November 24, 2013" 
  6. "Official Website of Birbhum District Santiniketan-Bolpur" 
  7. Basak, Tapan Kumar, Rabindranath-Santiniketan-Sriniketan, An Introduction, pp. 6–8, BB Publication
  8. "Amar Kutir" 
  9. "Social Work and Global Recovery" (পিডিএফ)। ১৬ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ 
  10. "Santiniketan Artistic Leather Products Overview" (পিডিএফ) [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]