ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দারুল উলুম দেওবন্দ

দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস

ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় মুসলমানরা ১৮৫৭ সালে সংগঠিত সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে। সিপাহি বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় শামলীর যুদ্ধ সহ এই বিদ্রোহে পরাজয়ের পর তার ক্ষতি মিটানোর জন্য কাসেম নানুতুবির নেতৃত্বে কয়েকজন আলেম ১৮৬৬ সালের ৩০ মে দেওবন্দের সাত্তা মসজিদের ডালিম গাছের নিচে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করে। এই মাদ্রাসার প্রথম শিক্ষক মাহমুদ দেওবন্দি ও প্রথম ছাত্র ছিলেন মাহমুদ হাসান দেওবন্দি৷ পরবর্তীতে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত হন এবং তার ছাত্রদের মাধ্যমে তিনি সশস্ত্র বিপ্লব গড়ে তুলতে স্বচেষ্ট হন। তিনি পর্যায়ক্রমে সামরাতুত তারবিয়াত, জমিয়তুল আনসার, নাযারাতুল মাআরিফ আল কুরআনিয়া গঠন করেন। তার রেশমি রুমাল আন্দোলন ফাঁস হয়ে গেলে তিনি মাল্টায় নির্বাসিত হন। এরই মধ্যে তার ছাত্ররা ভারতে জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ গঠন করেন। কারামুক্ত হয়ে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে তিনি জমিয়তের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের একমাসের মাথায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন৷ জমিয়ত খিলাফত আন্দোলনভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে জমিয়তের নেতৃত্বে আসেন দারুল উলুম দেওবন্দের অধ্যক্ষ হুসাইন আহমদ মাদানি। তিনি অখণ্ড ভারতের দাবিতে কংগ্রেসের সাথে মিলে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যান। দারুল উলুম দেওবন্দের সদরে মুহতামিম শাব্বির আহমদ উসমানির নেতৃত্বে আরেকটি দল জমিয়ত থেকে বের হয়ে জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম গঠন করে পাকিস্তান আন্দোলনকে সমর্থন করেন, যাদের তাত্ত্বিক গুরু ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের আরেক ছাত্র আশরাফ আলী থানভী। ১৯৪৭ দেশ ভাগের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সফল হয়।

১৯৮০ সালে প্রকাশিত ভারতের ডাকটিকিটে দারুল উলুম দেওবন্দ

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

১৬০০ সালে ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথ প্রদত্ত সনদের মাধ্যমে প্রাচ্যের জলপথে একচেটিয়া বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৬১২ সালে এই কোম্পানি মুঘল প্রশাসন থেকে সুরাটে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে। ১৬১৫ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতি পেয়ে কোম্পানি দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলে বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে।[১] আস্তে আস্তে এই কোম্পানি সারা ভারতে বাণিজ্যের প্রসার ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব কোম্পানির হাতে পরাজিত হলে কার্যত ভারতে কোম্পানি শাসনের সূচনা ঘটে।[২] দ্বাদশ শতাব্দী হতে ভারতীয় উপমহাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্র থাকা মুসলমানদের ক্ষমতা ইংরেজদের হাতে চলে যাওয়ার পর এবং মুসলমানদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে পঙ্গু করার জন্য ইংরেজদের সবার্ত্মক প্রচেষ্টার কারণে মুসলিম সমাজে অবনতি হয়। মুসলমানদের এই অবনতি থেকে উদ্ধারের জন্য শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী সংস্কার কাজ শুরু করেন।[৩] তার মৃত্যুর পর তার ছেলে শাহ আবদুল আজিজ এই সংস্কার কাজ চালিয়ে যান। তিনি ভারতকে দারুল হারব ঘোষণা করে জিহাদ করা ফরজ মর্মে ফতোয়া জারি করেন।[৪] এইজন্য তিনি সৈয়দ আহমদ বেরলভিকে নির্বাচন করেন। সৈয়দ আহমদ বেরলভি ও তার শিষ্য শাহ ইসমাইল শহীদ ১৮৩১ সালে বালাকোট যুদ্ধে মারা যান।[৫] কিন্তু মুসলমানদের আন্দোলন চলতে থাকে। ১৮৫৭ সালে এসে তা সিপাহি বিদ্রোহে রূপ নেয়। এক পর্যায়ে উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর জেলার থানা ভবনকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন এলাকার সৃষ্টি হয়। এই এলাকায় অস্থায়ী সরকার গঠন করে প্রধান বিচারপতি হন রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, প্রধান সেনাপতি কাসেম নানুতুবি ও আমিরুল মুমিনীন বা রাষ্ট্রপ্রধান হন ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি[৬] ১৮৫৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে শামলীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে জামেন শহীদ নিহত হন। অপরাপর নেতৃবৃন্দ আত্মগোপন করেন। স্বাধীন থানা ভবন সরকারের পতন ঘটে। এই সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে ইংরেজ সরকার ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি, কাসেম নানুতুবি, রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও পুরস্কার ঘোষণা করে।[৭][৮] এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এটি ঔপনিবেশিক প্রশাসনে অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনয়নে সমর্থ হয়। ভারত সরকার আইন, ১৮৫৮ পাসের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটে এবং সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।[৯] দীর্ঘদিন আত্মগোপনের পর ১৮৫৯ সালে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি মক্কায় হিজরত করতে সক্ষম হন।[৭] কিছুদিন পর সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হলে কাসেম নানুতুবি ও রশিদ আহমদ গাঙ্গুহিও আত্মগোপন থেকে মুক্ত কর্মক্ষেত্রে পদার্পণ করেন।[১০]

১৮৫৭ সালে এটি প্রচার করা হয় যে, ইশ্বর ব্রিটিশদের পক্ষে আছেন বলেই তারা যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় রদবদলের মাধ্যমে তারা সাধারণ জনগণকে খ্রিস্টধর্মে ধমার্ন্তরিত করতে প্ররোচিত ও উৎসাহিত করে।[১১] স্বাধীনতা সংগ্রাম, যুদ্ধ ও ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের কারণে মুসলমানদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও পৃষ্টপোষকতার অভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। মুসলিম সমাজে অনৈসলামিক সংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে।[১২] এমতাবস্থায় আপাততঃ সশস্ত্র সংগ্রামের ধারা স্থগিত রেখে সাম্রাজ্যবাদউপনিবেশবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন ও ইসলামের চেতনায় একদল কর্মী তৈরির লক্ষ্যে ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কির ইঙ্গিতে ও কাসেম নানুতুবির নেতৃত্বে এবং সিপাহি বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন ব্যক্তির মাধ্যমে ১৮৬৬ সালের ৩০ মে ভারতের উত্তরপ্রদেশস্থ সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক বস্তিতে সাত্তা মসজিদের প্রাঙ্গনে ছোট্ট একটি ডালিম গাছের ছায়ায় দারুল উলুম দেওবন্দের গোড়া পত্তন করা হয়।[১২]

মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পাদনা

 
দারুল উলুম দেওবন্দের জামে রশিদ মসজিদ

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে এমন কর্মী তৈরি করাই ছিল এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য।[১৩] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মুহাম্মদ শামসুজ্জামান এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ৬টি উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। যথা:[১৪]

  1. শিক্ষার ক্ষেত্রে সামগ্রিকতার সৃষ্টি এবং একটি গ্রহণযোগ্য ও যুযোপযোগী শিক্ষা ও সিলেবাসের মাধ্যমে মুসলিম শিক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন করে তোলা এবং শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে ইসলামের খেদমত করা।
  2. আমল ও আখলাকের প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনে ইসলামি ভাবাদর্শের প্রতিফলন ঘটানো।
  3. ইসলামের ব্যাপক প্রচার প্রসারের উদ্দেশ্যে এবং সমাজের চাহিদার নিরিখে যুগসম্মত কর্মপন্থা অবলম্বন এবং সাহাবাদের যুগের মতো দানের চেতনা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া।
  4. সরকারি প্রভাবমুক্ত থেকে ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষা ও চিন্তা চেতনার স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখা।
  5. ইসলামি শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সেগুলোকে দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে সংশ্লিষ্ট করা।
  6. সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত এবং ইসলামি চেতনায় উদ্দীপ্ত একদল আত্মত্যাগী কর্মী তৈরি করা।

প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯২০ পর্যন্ত সম্পাদনা

সামরাতুত তারবিয়াত সম্পাদনা

 
মাহমুদ হাসান দেওবন্দি (১৮৫১ – ১৯২০)

ডালিম গাছের তলায় সূচিত মাদ্রাসায় প্রথম শিক্ষক ছিলেন মাহমুদ দেওবন্দি এবং প্রথম ছাত্র ছিলেন মাহমুদ হাসান দেওবন্দি[১৫] ১৮৭৩ সালে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। এর বছর দুয়েক আগ থেকে দারুল উলুম দেওবন্দে অস্থায়ী শিক্ষকতা করতেন।[১৫] ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কর্তৃপক্ষ ১৮৭৫ সালে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের অংশ হিসেবে মাহমুদ হাসান দেওবন্দিকে চতুর্থ স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেন।[১৬] ১৮৮৭ সালে সদরুল মুদাররিস ও শায়খুল হাদিস হিসেবে তার পদোন্নতি হয়। ১৯২০ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। তার সময়কালে মাদ্রাসার প্রভূত উন্নতি হয়।[১৭]

যেহেতু দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই ছিল শিক্ষার্থীদেরকে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তাদেরকে মনমানসিকতার দিক থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করা এবং প্রতিকারের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সৈনিকরূপে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি ও কাসিম নানতুবি ও ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কির সংস্পর্শে থাকার কারণে অতি অল্প বয়সেই মাহমুদ হাসান দেওবন্দির মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা জাগ্রত হয়েছিল।[১৮] তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তার পরিকল্পনায় ছিল ভারতের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করে ব্রিটিশমুক্ত এলাকা থেকে ভারতে ব্রিটিশদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করা।[১৯]

স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের ৫ বছর পর মাহমুদ হাসান দেওবন্দি ১৮৭৮ সালে সামরাতুত তারবিয়াত গঠন করেন। এ সংগঠনের প্রকাশ্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল দারুল উলুম দেওবন্দের উন্নতিকল্পে অত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা এবং অপ্রকাশ্য উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের উদ্দেশ্যে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করা।[২০] এ সংগঠনের কার্যক্রম গোপনে পরিচালিত হতো।

দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম দিকের বেশিরভাগ ছাত্র ছিল আফগানিস্তানপাঞ্জাবের অধিবাসী। সামরাতুত তারবিয়াতের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে এদের মাধ্যমে ইংরেজ কবলমুক্ত এলাকা আফগানিস্তান ও সীমান্ত থেকে ভারতের উপর বহিরাক্রমণ করা সম্ভব হয়। পরবর্তীতে তারা সীমান্তবর্তী উপজাতীয় জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করার প্রচেষ্টা চালান।[২১] এই সংগঠনটির কার্যক্রম ৩০ বছর স্থায়ী ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। এর অন্যতম কারণ ছিল প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মাথায় সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষক কাসেম নানুতুবির মৃত্যু। তার মৃত্যুর ফলে নেতৃত্ব প্রদানে শূন্যতা সৃষ্টি হয়।[২০]

জমিয়তুল আনসার সম্পাদনা

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দুইভাবে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি তার বিপ্লবী কর্ম পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন। ভারতের অভ্যন্তরে এই আন্দোলন পরিচালনার প্রধান কেন্দ্র ছিল দেওবন্দ, দিল্লি, দিনাপুর, আমরোহা, কারান্জিয়া, খেড়া এবং চকওয়াল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইয়াগিস্তানকে কেন্দ্র করে তিনি সশস্ত্র আন্দোলন সংগঠিত করেন।[২২] সামরাতুত তারবিয়াতের পরিবর্তিত রূপ হিসেবে তিনি ১৯০৯ সালে জমিয়তুল আনসার প্রতিষ্ঠা করেন। একে বাহ্যিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্রদের পুনর্মিলনী সংগঠন এবং এর উদ্দেশ্য দেওবন্দ ও আলিগড়ের মধ্যে বন্ধুসদৃশ সম্পর্ক স্থাপন হিসেবে পরিচিত করা হলেও এর অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল একটি মুজাহিদ বাহিনী গঠন করা। দেওবন্দি তার ছাত্র উবাইদুল্লাহ সিন্ধিকে সিন্ধু থেকে ঢেকে এনে এর সচিব হিসেবে সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ দেন। ১৯১০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের সমাবর্তন সম্মেলনে প্রায় ৬০০ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এই সম্মেলনে সিন্ধি জমিয়তুল আনসারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘোষনা করেন। সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নানা সময় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯১১ সালের ১৫, ১৬, ১৭ এপ্রিল দশ সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মোরাদাবাদে সংগঠনের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে সংগঠন ও কর্মীদের করণীয় ঘোষণা দেওয়া হয় এবং সরকারি স্কুল ও কলেজের মুসলিম শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষা দান, বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ প্রদান, স্বনির্ভর হওয়া সহ কিছু প্রস্তাবনা গৃহীত হয়। ১৯১২ সালে ১৬, ১৭, ১৮ এপ্রিল আশরাফ আলী থানভীর সভাপতিত্বে মিরাটে সংগঠনের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পূর্বের সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সংগঠনটির মাধ্যমে দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্ররা এক ছাতার নিচে আসতে সক্ষম হয়, দেওবন্দ মাদ্রাসার পরিচিত বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ে, আফগান, সীমান্ত এলাকা এবং তুর্কির আলিমরাও এর অন্তর্ভুক্ত হন। দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে উসমানীয় খিলাফতকে সাহায্য করা হয়। মুখতার আহমাদ আনসারী, মুহাম্মদ আলি জওহর প্রমুখ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে সহযোগিতা করা হয়। জমিয়তুল আনসারের সদস্য মুহাম্মদ মিয়া দেওবন্দি লিখেন, সে সময়ে দারল উলুমের তীক্ষ্মধীশক্তি, বিচক্ষণ, মেধাবী শিক্ষার্থীরা মনে করত, প্রত্যেক আত্মসম্মান জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান যারা ইসলামি শাসনের প্রতিষ্ঠা কামনা করে তাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী দাসত্বের কবল হতে মুক্তিলাভের প্রচেষ্টা চালানো। একারণে শিক্ষার্থীগণ এ প্রেরণাকেই জীবনের একমাত্র অবলম্বন বলে মনে করত। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী ব্রিটিশদের উচ্ছেদকল্পে পরিকল্পনা স্থির করত এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধার দল গঠন করত। আর এ প্রেরণা সামরাতুত তারবিয়াত সংগঠন স্থাপিত হওয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে স্তরে স্তরে চলতে থাকে।

সংগঠনটির দুইটি সম্মেলনের উপস্থিতি ও এর মাধ্যমে ভারতের রাজনীতিতে উলামাশ্রেণীর উত্থানের প্রচেষ্টা ব্রিটিশ শাসকদের সন্দিহান করে তোলে। ফলে সরকার সংগঠনের উপর নজরদারি শুরু করে। প্রথম সম্মেলনের সভাপতি আহমদ হাসান আমরুহীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও মাহমুদ হাসান দেওবন্দিকে জরিমানা করা হয়। এসময় অভ্যন্তরীণ মতানৈক্যের কারণে দারুণ উলুম দেওবন্দের সাথে উবাইদুল্লাহ সিন্ধির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তবে গোপনে মাহমুদ হাসান দেওবন্দির সাথে তার সম্পর্ক অটুট থাকে। রাতের আঁধারে তারা দেওবন্দ এলাকার বাইরে একত্রিত হতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ করতেন।

নাযারাতুল মা’আরিফ সম্পাদনা

দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর উবায়দুল্লাহ সিন্ধি জমিয়তুল আনসার থেকে পদত্যাগ করলে সংগঠনটির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে যায়। এরপর তিনি দিল্লি চলে যান। দিল্লিতে অবস্থানকালে ফতহপুরী মসজিদে ১৯১৪ সালে তিনি নাযারাতুল মা’আরিফ প্রতিষ্ঠা করেন। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণদের দৈনন্দিন জীবনে খারাপ অভ্যাস ও অসৎকর্ম দূরীভূত করে কোরআন ও সুন্নাহ’র ছঁাচে ঢেলে তাদের জীবনকে নতুন রূপ দান করা। এটি ক্রমেই হাকীম আজমল খান, ডঃ মুখতার আহমেদ আনসারী, মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা মোঃ আলী জাওহার, মাওলানা জাফর আলী খান এবং মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মত নেতাদের সভাস্থল হয়ে উঠে। মাহমুদ হাসান দেওবন্দি দিল্লি গমন করে সিন্ধির সাথে এসব নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এই প্রতিষ্ঠাস থেকে কলীদে কুরআন’ এবং ’তালীমে কুরআন’ নামক দুটি বই প্রকাশিত হয় যাতে মুসলিম সম্প্রদায়কে দলমত নির্বিশেষে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝঁাপিয়ে পড়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয়। ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ সরকার গ্রন্থ দুটি নিষিদ্ধ করে প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। এতদসত্ত্বেও পাঞ্জাব, সিন্ধু এবং সীমান্ন্ত প্রদেশে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব সংগঠনের পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের মূখ্য ভূমিকাকে দায়ী করা হয়।

উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চল থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিপ্লবের উদ্যোগ সম্পাদনা

১৯১৪ সালে ব্রিটিশদের সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতকে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন। তার পরিকল্পনা ছিল ভারতের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করে ভারতের বাইরে থেকে আক্রমণ পরিচালনা করা। তাই দেওবন্দি তার ছাত্রদের বায়আত করানোর সময় জিহাদের বায়আতও করাতেন এবং জায়গায় জায়গায় মাদ্রাসা স্থাপন করে জিহাদের বায়আত করানোর নির্দেশ দেন। ফলশ্রুতিতে উপমহাদেশের নানা স্থান মাদ্রাসা গড়ে উঠে, সবচেয়ে বেশি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ইয়াগিস্তানে। এই ইয়াগিস্তানের গোত্রগুলোর মধ্যে সবসময় লড়াই চলত। তাই ব্রিটিশরা এটা কখনো দখল করতে পারে নি৷ দেওবন্দি এখান থেকেই বিদ্রোহের সূত্রপাত করার পরিকল্পনা করেন। ইয়াগিস্তানের যুদ্ধাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করতে দেওবন্দি দিল্লি থেকে দিল্লী থেকে মাওলানা সাইফুর রহমান, পেশোয়ার থেকে মাওলানা ফযলে রাব্বী ও ফযল মাহমুদকে ইয়াগিস্তানে প্রেরণ করেন। সীমান্ত এলাকায় দেওবন্দির অসংখ্য ছাত্র ছিল।

দেওবন্দির তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উবায়দল্লাহ সিন্ধী ও মাওলানা মুহাম্মাদ মিয়া মনসুর আনসারীকে বিশ্বস্ত সহকর্মী নির্বাচন করেছিলেন। তিনি সিন্ধিকে ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে উপজাতীয় স্বাধীন এলাকাসমূহের অবস্থান নিরূপণ, যোগাযোগের রাস্তা আবিষ্কার ও সামরিক ছাউনি নিরূপণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মিয়া মনসুর আনসারীকে তিনি সীমান্তের উপজাতিদের মধ্যে জিহাদের চেতনা সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণদানের উদ্দেশ্যে পাঠান।

ডাক্তার মুখতার আহমাদ আনসারী, হাকীম আব্দুর রাজ্জাক এবং সীমান্ত প্রদেশের সাহসী যুবক খান আব্দুল গাফফার খান, আবুল কালাম আযাদ, মাওলানা জাফর আলী খান, হাকীম আজমল খান, মাওলানা মুহাম্মাদ আলী জওহর, মাওলানা শওকত আলী, নওয়াব ভিকারুল মূলক এবং মাওলানা হাসরত মোহানী প্রমুখ এই পরিকল্পনা সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়া দেওবন্দির কাছ থেকে থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত ও জিহাদের বায়'আতকৃত বহু ছাত্রও দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর ছিলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় মুসলিম নেতৃবৃন্দ পাশাপাশি হিন্দু ও শিখরাও নেতৃবৃন্দরাও তার সাথে আলাপ করে সলাপরামর্শ করত। আগত হিন্দু, মুসলিম ও শিখদের থাকার জন্য তিনি তঁার বাসভবনের নিকটেই একটি বাসভবনের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। এখানে প্রত্যেক ধর্মের লোকদের নিজ নিজ রুচি অনুযায়ী থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা থাকত। শায়খুল হিন্দ তার বাসভবনের এক গোপন কক্ষে আগত নেতৃবৃন্দের সাথে অতি গোপনে দেখা সাক্ষাত ও মতবিনিময় করতেন।

দেওবন্দি হাজী সাহেব তুরঙ্গযয়ীকে ইয়াগিস্তানে গমন করে জিহাদের পতাকা ধারণ করে জিহাদ পরিচালনা করার অনুরোধ জানালে তিনি সম্মত হন এবং তার উপস্থিতিতে প্রচুর যুদ্ধা সমাগম হয়। তারা কয়েকটি এলাকা দখল করে নেয়।

মুসলমানদের মধ্যে ব্রিটিশদের বিভক্তির প্রচেষ্টা সম্পাদনা

সীমান্তে যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালায়। তারা আফগানিস্তানের আমীর হাবিবুল্লাহ খানকে উৎকোচ প্রদান করে। আমির অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ অবৈধ হওয়ার প্রচারণা চালায়। পরবর্তীতে হাবিবুল্লাহ যুদ্ধাদের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে। ব্রিটিশরা উসমানীয়দের যুদ্ধে রাজনৈতিক যুদ্ধ এবং তাতে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নাই হিসেবে প্রচার করে। পক্ষান্তরে তারা মুসলমানদের মক্কা মদিনা সহ ধর্মীয় স্থানগুলো রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। উসমানি খলিফার বিরুদ্ধে ধর্মবিহীন জীবনযাপনের অভিযোগ আনে এবং মাওলানা আব্দুল হকের মাধ্যমে একটি ফতওয়াও জারি করে যাতে বেশ কিছু ব্রিটিশপন্থী উলামার স্বাক্ষর নেয়া হয়। মাহমুদ হাসান দেওবন্দির কাছে এই ফতওয়ায় দুইবার স্বাক্ষর চাওয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশদের এই নানমাত্রিক প্রচারের ফলে সীমান্তের যুদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি চলে আসে। তারপরও একদল যুদ্ধা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় অটল ছিলেন। অন্যান্য সংগঠকরা দেওবন্দিকে সেখানে গিয়ে তাদের পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করার অনুরোধ করেন এবং যুদ্ধের রসদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। দেওবন্দি বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও সামরিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নজর দেন।

উবায়দুল্লাহ সিন্ধীকে কাবুলে প্রেরণ সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইতিপূর্বে প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে তুর্কী ও আফগান সরকারের সাথে যেসব চুক্তি হয়েছিল সেগুলো অনুমোদন করিয়ে নেয়ার জন্য ১৯১৫ সালে মাহমুদ হাসান দেওবন্দি তুরস্কের উদ্দেশ্য হিজাজ গমন করেন এবং সিন্ধিকে কাবুল প্রেরণ করেন। ১৯১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী তার পূর্ব পরিকল্পিত চূড়ান্ত বিপ্লব সংগঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মাওলানা মাদানী বলেন, সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া ইংরেজদেরকে ভারত থেকে উৎখাত করা মোটেও সম্ভব নয়। এর জন্য যুদ্ধকেন্দ্র, অস্ত্রশস্ত্র, মুজাহিদদের একান্ত প্রয়োজন। ইয়াগিস্তানকে বিপ্লবী দলের বহিরাক্রমণের যুদ্ধকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে যুদ্ধের রসদ, অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধোন্মাদ নির্ভীক সাহসী সৈন্যের খুবই প্রয়োজন। এছাড়া সীমান্তের যুবকেরা যুদ্ধ করতে অভ্যস্ত এবং সাহসী ও নির্ভীক হয় এজন্য একতাবদ্ধ করা এবং জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত করা প্রয়োজন এবং এদের দ্বারাই দেশ মুক্ত করা সম্ভব।৪৭

সিন্ধি ১৯১৫ সালের ১৫ আগস্ট আফগান সীমান্তে পৌঁছান। পথিমধ্যে আফগানিস্তানের স্থানীয় সরকারগুলো তাকে সহায়তা করেন। তিনি কাবুলে ইতিপূর্বে আগত অনেক স্বাধীনতাকামী ভারতীয়দেরকে দেখতে পান। তার এই কাবুল গমন সফলতা পেয়েছিল।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্তর্জাতিক মৈত্রী গঠন সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সিরাজুল ইসলাম (২০১২)। "ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. বোস, সুগত (২০০৪)। Modern South Asia : history, culture, political economy [আধুনিক দক্ষিণ এশিয়া: ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি] (২য় সংস্করণ)। নিউইয়র্ক: রাউটলেজ। পৃষ্ঠা ৭৬। আইএসবিএন 0-415-30786-4ওসিএলসি 52270088 
  3. শামসুজ্জামান, মুহাম্মদ (২০১৯)। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে দেওবন্দ মাদ্রাসার ভূমিকা (পিএইচডি)। বাংলাদেশ: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৯৭। ৩ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২২ 
  4. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ৯৮।
  5. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ৯৯–১০০।
  6. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, আবুল ফাতাহ (১৯৯৮)। দেওবন্দ আন্দোলন: ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান (পিডিএফ)। ঢাকা: আল-আমীন রিসার্চ একাডেমী বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১৫৬। 
  7. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ১০৪।
  8. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ১৯৯৮, পৃ. ১৫৬।
  9. এম. আনসার আলী (২০১২)। "ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, ১৮৫৮"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  10. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ১৯৯৮, পৃ. ১৫৭।
  11. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ১০৭।
  12. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ১৯৯৮, পৃ. ১৫৮।
  13. দেওবন্দি, মুহাম্মদ মিয়া (২০০৫)। The prisioners of Malta (Asiran-e-Malta) : The heart-rending tale of Muslim freedom fighters in British period (ইংরেজি ভাষায়) (১ম সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: জমিয়ত উলামায়ে হিন্দ। পৃষ্ঠা ৭। আইএসবিএন 81-7827-104-4ওসিএলসি 60392777 
  14. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ১০৮–১০৯।
  15. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ১২৪।
  16. বিজনুরি, আজিজুর রহমান (১৯৬৫)। তাযকেরায়ে শায়খুল হিন্দ। বিজনৌর, ভারত: ইদারায়ে মদনি দারুত তালিফ। পৃষ্ঠা ৬২। ওসিএলসি 20115051 
  17. দেওবন্দি, আসগর হুসাইন (১৯৭৭)। হায়াতে শায়খুল হিন্দ। লাহোর, পাকিস্তান: ইদারা ইসলামিয়াত। পৃষ্ঠা ১৮। ওসিএলসি 559832561 
  18. শামসুজ্জামান ২০১৯, পৃ. ১২৫।
  19. আব্দুল জলিল, এ.এম.এম. (১৯৮৩)। দেওবন্দ আন্দোলন একটি জেহাদ। ঢাকা: ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র। পৃষ্ঠা ৪০। 
  20. কাসেমি, বুরহানুদ্দিন (২০০১)। Darul Uloom Deoband : A Heroic Struggle Against Ther British Tyranny [দারুল উলুম দেওবন্দ : ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম] (পিডিএফ)মুম্বই: মারকাজুল মাআরিফ। পৃষ্ঠা ১৯। 
  21. দেওবন্দি, মুহাম্মদ মিয়া (১৯৭৬)। আসিরানে মাল্টাদিল্লি: আল জমিয়ত বুক ডিপো। পৃষ্ঠা ৯। ওসিএলসি 20256861 
  22. চাঁদ, তাঁরা (১৯৭২)। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস। প্রকাশনা বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার। পৃষ্ঠা ২৫৫। এএসআইএন B000LA71QK 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা