ব্রহ্মচর্য

আশ্রম পদ্ধতির প্রথম পর্যায়

ব্রহ্মচর্য সনাতন ধর্ম অনুযায়ী জীবনের নির্দিষ্ট সময় কাল (মোটামুটি ১৩ বছর বয়স থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত) বোঝায় যখন কোন ছাত্র বা ছাত্রী বেদ এবং উপনিষদ এর বিধান অনুযায়ী ঐতিহ্যগত বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং ধর্মীয় অনুশাসন সম্প্রর্কিত বিদ্যা লাভ করে। অন্যদিকে ব্রহ্মচর্য বলতে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ইচ্ছাকৃত কৌমার্য-ব্রত বোঝায় এবং এক্ষেত্রে ব্রহ্মচর্য অর্থ হল কায়-মন-বাক্যে সর্বদা পবিত্রতা রক্ষা করা। ব্রহ্মচর্য পালন অর্থ হল সম্পূর্ণ কাম-বাসনাশূণ্য জীবন যাপন করা যা আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য অপরিহার্য । পুরুষ ব্রহ্মচর্য পালনকারীকে ব্রহ্মচারী এবং নারী ব্রহ্মচর্য পালনকারীকে ব্রহ্মচারিনী বলে।

ব্রহ্মচর্য পালনকারী ব্রহ্মচারী

শব্দটির উৎস্যসম্পাদনা

ব্রহ্মচর্য শব্দটির দুইটি অংশ। যথা:

  1. ব্রহ্ম
  2. চর্য

ব্রহ্ম শব্দটির অর্থ হল স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা এবং চর্য শব্দটির অর্থ হল অনুসরনকৃত। অনেক সময় চর্য বলতে ধর্মীয় জীবন পদ্ধতিও বুঝায়। সুতরাং ব্রহ্মচর্য শব্দটি একটি ধর্মীয় বিধিসম্মত জীবনপদ্ধতি নির্দেশ করে।

বিস্তারিতসম্পাদনা

বৈদিক আশ্রম ব্যবস্থা অনুযায়ী ব্রহ্মচর্য জ়ীবনের ১ম ২০ বছর বা ২৫ বছর পর্যন্ত ব্রহ্মচর্যের অন্তর্গত। প্রাচীন হিন্দু সমাজ অনুযায়ী মানুষের জীবনকালকে ১০০ বছর কল্পনা করে ৪টি ভাগে ভাগ করা হত। এর মধ্যে প্রথম ভাগ হল ব্রহ্মচর্য। অন্য তিনটি হল যথাক্রমে গার্হস্থ্য,বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস

সনাতন ধর্ম অনুসারে ব্রহ্মচর্য ভাগে একটি শিশুকে ৫ বছর বয়সে গুরুর নিকট বৈদিক জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠানো হত। এর পর উপনয়ন অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে উপবীত বা পৈতা ধারণ করে সে তার গুরুগৃহে বিদ্যারম্ভ করত। সঠিক বিদ্যার্জনের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে ২৫ বছর বয়শে গুরুগৃহ ত্যাগ করত।

ব্রহ্মচর্য আশ্রমে একজন শিষ্যকে কঠোর ধর্মীয় অনুসরন করে চলতে হত। এই সময় সে তার গুরুর কাছ থেকে ধর্মীয় অনুশাসন, সদাচার, সঠিক জ়ীবন-পদ্ধতি, দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ, ধ্যান, যোগসাধনা মানবতাবোধ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করত। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী ৫ বছর বয়সে ব্রহ্মচর্য শুরু হলেও জৈন ধর্মের শ্রামানিক অনুযায়ী সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ব্রহ্মচর্য আশ্রম শুরু হয়। বৌদ্ধ ধর্মে নির্বাণ লাভের জন্য আজীবন ব্রহ্মচর্য পালন করা বাঞ্ছনীয় ।