কোন জীবের দেহে সংঘটিত সকল রাসায়নিক বিক্রিয়াকে একত্রে বিপাক (ইংরেজি:Metabolism. গ্রীক: μεταβολή metabolē, পরিবর্তন) বলে।

শক্তির বিপাকের অন্যতম মুখ্য মাধ্যম এটিপি (অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট) এর গঠন

বিপাক ২ প্রকার। বিশ্লেষণ বা ক্যাটাবলিক; যা জৈব পদার্থকে ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে এবং সংশ্লেষণ বা অ্যানাবলিক,যা অসংখ্য ক্ষুদ্র অংশকে সংযুক্ত করে বৃহৎ অংশ গঠন করে। যেমন প্রোটিন এবং নিউক্লিক অ্যাসিড[]

বিপাকে সংঘটিত ক্রিয়া-বিক্রিয়া বিপাকীয় পথ অনুসরণ করে যেখানে একটি কেমিক্যাল এনজাইমের সাহায্যে বিভিন্ন সিরিজের মাধ্যমে আরেকটি কেমিক্যালে রূপান্তরিত হয়। বিপাকের জন্য এনজাইম আবশ্যক। খুব দ্রুত বিক্রিয়া সংঘটনের পাশাপাশি কোষের পরিবেশ পরিবর্তিত কিংবা অন্য কোষ থেকে সংকেত পেলে এনজাইম বিপাকের পথও নিয়ন্ত্রণ করে ।

কোন জীবের বিপাকীয় পথ নির্ধারণ করে কোন উপাদানটিতে এটি পুষ্টি পাবে এবং কোনটি বিষাক্ত। উদাহরণস্বরূপ: কিছু প্রোক্যারিয়ট হাইড্রোজেন সালফাইডকে নিউট্রিয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে যদিও এই গ্যাস প্রাণীর জন্যে ক্ষতিকর।[] বিপাকের গতি, হার একটি জীব কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করে।

বিপাকের একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে মৌলিক বিপাকীয় পথ এবং উপাদান একই হয়।[] উদাহরণস্বরূপ সাইট্রিক এসিড চক্র intermediates নামে পরিচিত যে কার্বক্সিলিক অ্যাসিড সেটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র Escherichia Coli এর মত এককোষী জীব থেকে বৃহৎ হাতির মাঝেও একই পাওয়া যায়।[] এই আকর্ষণীয় মিলের কারণ বিবর্তনের ইতিহাসে তাদের প্রাচীন পদার্পণ ।[][]

প্রধান জৈবরসায়নিক

সম্পাদনা
 
ট্রাইঅ্যাসাইলগ্লিসারল লিপিডের গঠন।

প্রাণী,উদ্ভিদের গঠনের অধিকাংশই অ্যামিনো অ্যাসিডকার্বোহাইড্রেট এবং লিপিড অণু দিয়ে গঠিত।জীবনের জন্য অত্যাবশকীয় বলেই এগুলির উপর বিপাকীয় ক্রিয়া-বিক্রিয়া সংঘটিত হয়ে সংশ্লেষণের মাধ্যমে কোষ ও টিস্যু তৈরি করে কিংবা বিশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে।এই উপাদানগুলি একত্রে DNA এবং প্রোটিন এর মত পলিমার তৈরি করে।

অণুর প্রকারভেদ মনোমার রূপ পলিমার রূপ পলিমারের উদাহরণ
অ্যামিনো অ্যাসিড অ্যামিনো এসিড প্রোটিন (পলিপেপটাইড ও বলে) তন্তুজ প্রোটিন
কার্বোহাইড্রেট মনোস্যাকারাইড পলিস্যাকারাইড স্টার্চ, গ্লাইকোজেন সেলুলোজ
নিউক্লিক অ্যাসিড নিউক্লিওটাইড পলিনিউক্লিওটাইড DNA এবং RNA

অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন

সম্পাদনা

অ্যামিনো অ্যাসিড অনেক পেপটাইড বন্ধন দ্বারা যুক্ত হয়ে প্রোটিন গঠন করে।অনেক প্রোটিন বিপাকে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।অন্যান্য প্রোটিনের গাঠনিক কাজ আছে যেমন সাইটোকঙ্কাল হিসেবে কোষের গঠন ঠিক রাখা।[] কোষীয় সংকেত প্রদান,অ্যান্টিবডি,সক্রিয় পরিবহন,কোষ চক্র ইত্যাদি কাজেও প্রোটিন গুরুতবপূর্ণ।[] ট্রাইকার্বক্সিলিক এসিড চক্রতে কার্বনের উৎসরূপে কোষীয় বিপাকে অ্যামিনো এসিড যোগান দেয়,[] বিশেষ করে যখন শক্তির প্রাথমিক উৎস যেমন গ্লুকোজ ঘাটতি দেখা দেয় কিংবা যখন কোষে বিপাক ঠিকমত ঘটে না।[]

লিপিড কোষ প্রাচীরের গঠন কিংবা শক্তির উৎস হিসেবে অংশ নেয়।.[] লিপিড হল হাইড্রোফোবিক,অর্থাৎ পানিতে অদ্রবণীয়,কিন্তু জৈব দ্রাবক যেমন বেনজিন,ক্লোরোফর্ম ইত্যাদিতে দ্রবণীয়।[১০]ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারল সমৃদ্ধ যৌগকে ফ্যাট বলে। [১১] কোলেস্টেরল এর মত স্টেরয়েড লিপিডের আরেক ধরনের শ্রেণিবিন্যাস।[১২]

কার্বোহাইড্রেট

সম্পাদনা
 
গ্লুকোজ সরল চেইন এবং শিকল উভয় রূপেই থাকতে পারে।

কার্বোহাইড্রেট হাইড্রক্সিল গ্রুপ সংবলিত অ্যালডিহাইড বা কিটোন সরল চেইন এবং শিকল উভয় রূপেই থাকতে পারে।কার্বোহাইড্রেট সবচেয়ে সহজলভ্য জৈবিক অণু যা অনেক কাজ যেমন শক্তি রূপান্তর ও সঞ্চয় করে (স্টার্চ, গ্লাইকোজেন) এবং গাঠনিক রূপে(বৃক্ষে সেলুলোজ,প্রাণীর কাইটিন) বিদ্যমান থাকে।[] কার্বোহাইড্রেটের মৌলিক উপাদানকে মনোস্যাকারাইড বলে,যার মধ্যে গ্যালাকটোজ,ফ্রুক্টোজগ্লুকোজ আছে।মনোস্যাকারাইড পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে পলিস্যাকারাইড গঠন করে।[১৩]

নিউক্লিওটাইড

সম্পাদনা

কো এনজাইম

সম্পাদনা

বিশ্লেষণ

সম্পাদনা
বিপাকের উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের শ্রেণিবিভাগ
শক্তির উৎস সূর্যালোক ফটো-   -ট্রফ
অন্তর্বর্তী অণু কেমো-
ইলেক্ট্রন দাতা জৈব যৌগ   অর্গ্যানো-  
অজৈব যৌগ লিথো-
কার্বন উৎস জৈব যৌগ   হেটেরো-
অজৈব যৌগ অটো-

শক্তি রূপান্তর

সম্পাদনা

সংশ্লেষণ

সম্পাদনা

বিবর্তন

সম্পাদনা

ইতিহাস

সম্পাদনা

বিপাক বা Metabolism শব্দটি গ্রীক Μεταβολισμός হতে এসেছে – "Metabolismos" মানে "পরিবর্তন"।বিপাকের বৈজ্ঞানিক গবেষণা বেশ কিছু শতাব্দী ধরে চলে আসছে ,প্রথমদিকের প্রাণী থেকে শুরু করে আধুনিককালের জৈবরসায়ন এর যুগে মানুষকে পরীক্ষা করে।মানুষের শরীরে বিপাক পরীক্ষা প্রথম নিয়ন্ত্রিতভাবে চালানোর গবেষণা সান্তোরিও সান্তোরিও কর্তৃক ১৬১৪ সালে তার Ars de statica medicina বইয়ে প্রকাশিত হয়।তিনি এখানে খাওয়া,ঘুম,কাজ,যৌন মিলন,অনাহারের আগে এবং পরে নিজের শরীরের ওজন কীভাবে নিয়েছিলেন এবং কি ফল পেয়েছিলেন,তা লিপিবদ্ধ করেন।তিনি দেখতে পান,খাদ্য গ্রহণের পর তার কিছু অংশ হারিয়ে যায়,একে "insensible perspiration" বা অচেতন ঘাম বলে অভিহিত করেন।

প্রথমদিকে বিপাক প্রক্রিয়ার কৌশল আবিষ্কৃত হয় নাই।বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এডুয়ার্ড বাকনার কর্তৃক এনজাইমের আবিষ্কার রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া থেকে কোষের জৈবিক গবেষণাকে পৃথক করে এবং জৈবরসায়নের সূচনা করে।আধুনিক জৈবরসায়নবিদদের অন্যতম পথিকৃৎ হেনস ক্রেবস বিপাক গবেষণায় অনেক অবদান রাখেন।তিনি ইউরিয়া চক্র আবিষ্কার করেন এবং পরে হেনস কর্নবার্গের সাথে সাইট্রিক এসিড চক্র এবং গ্লাইঅক্সাইলেট চক্র আবিষ্কার করেন।আধুনিক জৈবরসায়ন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে অনেক উন্নত হয়েছে যেমন ক্রোমাটোগ্রাফি,NMR স্পেক্ট্রোস্কপি,রেডিওআইসোটপিক লেবেলিং,ইলেক্ট্রোন মাইক্রোস্কোপি ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Hothersall, J and Ahmed, A (২০১৩)। "Metabolic fate of the increased yeast amino acid uptake subsequent to catabolite derepression"J Amino Acids2013: e461901। ডিওআই:10.1155/2013/461901পিএমআইডি 23431419পিএমসি 3575661  
  2. Friedrich C (১৯৯৮)। "Physiology and genetics of sulfur-oxidizing bacteria"। Adv Microb Physiol। Advances in Microbial Physiology। 39: 235–89। আইএসবিএন 9780120277391ডিওআই:10.1016/S0065-2911(08)60018-1পিএমআইডি 9328649 
  3. Pace NR (জানুয়ারি ২০০১)। "The universal nature of biochemistry"Proc. Natl. Acad. Sci. U.S.A.98 (3): 805–8। ডিওআই:10.1073/pnas.98.3.805পিএমআইডি 11158550পিএমসি 33372 বিবকোড:2001PNAS...98..805P 
  4. Smith E, Morowitz H (২০০৪)। "Universality in intermediary metabolism"Proc Natl Acad Sci USA101 (36): 13168–73। ডিওআই:10.1073/pnas.0404922101পিএমআইডি 15340153পিএমসি 516543 বিবকোড:2004PNAS..10113168S 
  5. Ebenhöh O, Heinrich R (২০০১)। "Evolutionary optimization of metabolic pathways. Theoretical reconstruction of the stoichiometry of ATP and NADH producing systems"। Bull Math Biol63 (1): 21–55। ডিওআই:10.1006/bulm.2000.0197পিএমআইডি 11146883 
  6. Meléndez-Hevia E, Waddell T, Cascante M (১৯৯৬)। "The puzzle of the Krebs citric acid cycle: assembling the pieces of chemically feasible reactions, and opportunism in the design of metabolic pathways during evolution"J Mol Evol43 (3): 293–303। ডিওআই:10.1007/BF02338838পিএমআইডি 8703096 
  7. Michie K, Löwe J (২০০৬)। "Dynamic filaments of the bacterial cytoskeleton"Annu Rev Biochem75: 467–92। ডিওআই:10.1146/annurev.biochem.75.103004.142452পিএমআইডি 16756499 
  8. Nelson, David L. (২০০৫)। Lehninger Principles of Biochemistry। New York: W. H. Freeman and company। পৃষ্ঠা 841আইএসবিএন 0-7167-4339-6  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  9. Kelleher, J,Bryan 3rd, B, Mallet,R, Holleran, A, Murphy, A, and Fiskum, G (১৯৮৭)। "Analysis of tricarboxylic acid-cycle metabolism of hepatoma cells by comparison of 14CO2 ratios"Biochem J246 (3): 633–639। পিএমআইডি 6752947পিএমসি 346906  
  10. Fahy E, Subramaniam S, Brown H, Glass C, Merrill A, Murphy R, Raetz C, Russell D, Seyama Y, Shaw W, Shimizu T, Spener F, van Meer G, VanNieuwenhze M, White S, Witztum J, Dennis E (২০০৫)। "A comprehensive classification system for lipids"J Lipid Res46 (5): 839–61। ডিওআই:10.1194/jlr.E400004-JLR200পিএমআইডি 15722563। ২৪ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৪ 
  11. "Nomenclature of Lipids"। IUPAC-IUB Commission on Biochemical Nomenclature (CBN)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৩-০৮ 
  12. Hegardt F (১৯৯৯)। "Mitochondrial 3-hydroxy-3-methylglutaryl-CoA synthase: a control enzyme in ketogenesis"Biochem J338 (Pt 3): 569–82। ডিওআই:10.1042/0264-6021:3380569পিএমআইডি 10051425পিএমসি 1220089  
  13. Raman R, Raguram S, Venkataraman G, Paulson J, Sasisekharan R (২০০৫)। "Glycomics: an integrated systems approach to structure-function relationships of glycans"। Nat Methods2 (11): 817–24। ডিওআই:10.1038/nmeth807পিএমআইডি 16278650