শ্বেতসার
উদ্ভিদে শ্বেতসার বা স্টার্চ সঞ্চিত পদার্থ রূপে বিরাজ করে। স্টার্চ একটি পলিস্যাকারাইড। এর সাধারণ সংকেত (C6H10O5)n। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট গ্লুকোজের অধিকাংশই পরিবর্তিত হয়ে শ্বেতসারে পরিণত হয়। শ্বেতসার সাধারণত ঘনীভূত দানা হিসেবে উদ্ভিদ কোষে বিরাজ করে এবং এদের আকার-আকৃতি বিভিন্ন উদ্ভিদে বিভিন্ন রকম। বীজ, ফল, কন্দ প্রভৃতি সঞ্চয়ী অঙ্গে শ্বেতসার জমা হয়। ধান, গম, আলু শ্বেতসারের প্রধান উৎস।[১]হাওয়ার্থ (Haworth) -এর পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, প্রায় ২৪ থেকে ৩০টি এককের সমন্বয়ে একটি স্টার্চ এর অণু গঠিত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভিদের মূল ও বীজে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে স্টার্চ জমা থাকে। হাইলাম নামক একটি স্বচ্ছ চকচকে বিন্দুকে কেন্দ্র করে স্টার্চ কণাগুলো গঠিত হয়। হাইলাম বিন্দুর অবস্থানভেদে স্টার্চ কণাগুলো উৎকেন্দ্রিক বা সমকেন্দ্রিক। উদ্ভিদভেদে স্টার্চ কণিকার আয়তন ও আকৃতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। গোল আলুর স্টার্চ কণিকা বৃহত্তম এবং চালের স্টার্চ কণিকা ক্ষুদ্রতম।[২]
![]() | |
শনাক্তকারী | |
---|---|
কেমস্পাইডার | |
ইসিএইচএ ইনফোকার্ড | ১০০.০২৯.৬৯৬ |
ইসি-নম্বর | |
আরটিইসিএস নম্বর |
|
কম্পটক্স ড্যাশবোর্ড (EPA)
|
|
বৈশিষ্ট্য | |
(C 6H 10O 5) n | |
আণবিক ভর | variable |
বর্ণ | white powder |
ঘনত্ব | 1.5 g/cm3 |
গলনাঙ্ক | decomposes |
insoluble (see starch gelatinization) | |
ঝুঁকি প্রবণতা | |
৪১০ °সে (৭৭০ °ফা; ৬৮৩ K) | |
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য অনাবৃতকরণ সীমা (NIOSH): | |
PEL (অনুমোদনযোগ্য)
|
TWA 15 mg/m3 (total) TWA 5 mg/m3 (resp) |
সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা ছাড়া, পদার্থসমূহের সকল তথ্য-উপাত্তসমূহ তাদের প্রমাণ অবস্থা (২৫ °সে (৭৭ °ফা), ১০০ kPa) অনুসারে দেওয়া হয়েছে। | |
![]() ![]() ![]() | |
তথ্যছক তথ্যসূত্র | |


রাসায়নিক গঠনসম্পাদনা
আণবিক সংকেত (C6H10O5)n। অ্যামাইলোজ ও অ্যামাইলোপেকটিন নামক দুটি পলিস্যাকারাইডের সমন্বয়ে শ্বেতসার গঠিত হয়। বিভিন্ন শ্বেতসারের আকার-আকৃতিতে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়। আয়োডিন দ্রবণে শ্বেতসার গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে। জলীয়বিভাজন (Hydrolysis) করলে শ্বেতসার গ্লুকোজে পরিণত হয়।
গাঠনিক উপাদানসম্পাদনা
অ্যামাইলোজসম্পাদনা
অসংখ্য গ্লুকোজ অণু নিয়ে শ্বেতসার গঠিত। অ্যামাইলোজের গ্লুকোজ অণুগুলো পরস্পর কার্বনের ১-৪ স্থানে সংযুক্ত হয়। সাধারণত ২০০ থেকে ১০০০ গ্লুকোজ অণু নিয়ে একটি অ্যামাইলোজ তৈরি হয়। এর অণু শৃঙ্খল সোজা। অ্যামাইলোপেক্টিনে সাধারণত ২০০০ থেকে ২,০০,০০০ গ্লুকোজ অণু যুক্ত হয়। আলু, ধান, গম, ভুট্টা, কলা ইত্যাদির স্টার্চে শতকরা ২২ ভাগ অ্যামাইলোজ থাকে। অ্যামাইলোজ থাকায় স্টার্চের দ্রবণে আয়োডিন যোগ করলে কালো বর্ণ (কালো-নীল) ধারণ করে।
অ্যামাইলোপেকটিনসম্পাদনা
অ্যামাইলোপেকটিন সাধারণত ২০০০ থেকে ২০,০০,০০০ গ্লুকোজ অণুবিশিষ্ট হয়। zঅ্যামাইলোপেকটিন এর গ্লুকোজ অণুগুলো কার্বনের ১-৪ বন্ধন ছাড়াও α -১-৬ বন্ধনে যুক্ত থাকে। এর অণু শৃঙ্খল শাখান্বিত। আলু,ধান,গম,কলা,ভুট্টার শ্বেতসারে ৭৮% অ্যামাইলোপেকটিন থাকে।অ্যামাইলোপেক্টিন থাকায় স্টার্চের দ্রবণে আয়োডিন যোগ করলে লাল বা পার্পল রং ধারণ করে।
কাজসম্পাদনা
উদ্ভিদদেহে শ্বেতসার প্রধানত সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে বিরাজ করে। যা আমাদের দেহে শক্তি যোগায়
বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা
এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন এক ধরনের সাদা নরম অদানাদার পাউডারের মতো জৈব রাসায়নিক পদার্থ।
সাধারণ তাপমাত্রায় এরা পানিতে, ইথার ও অ্যালকোহলে অদ্রবণীয়।
আয়োডিন দ্রবণে এরা নীল বর্ণ ধারণ করে।
উচ্চ তাপমাত্রায় এরা ভেঙে ডেক্সিটিনের বড় বড় কণায় পরিণত হয়।
ফেহলিং দ্রবণ স্টার্চ কর্তৃক বিজারিত হয় না।[৩]
ব্যবহারসম্পাদনা
স্টার্চ বা শ্বেতসার প্রধানত খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়।
শ্বেতসার গ্লুকোজে পরিণত হয়ে জীবদেহে শক্তি ও কার্বন অণু সরবরাহ করে।
টাইট্রেশন করার সময় নির্দেশক হিসেবে স্টার্চ ব্যবহার করা হয়।
পরীক্ষাগারে গ্লুকোজ ও অ্যালকোহল তৈরি করার জন্য স্টার্চ ব্যবহার করা হয়।
কাগজ শিল্পে স্টার্চ ব্যবহার করা হয়।
আঠা প্রস্তুত করার জন্য স্টার্চ ব্যবহৃত হয়।