ফ্রেড ট্রুম্যান

ইংরেজ ক্রিকেটার

ফ্রেডরিক সিওয়ার্ডস ("ফ্রেড") ট্রুম্যান, ওবিই (ইংরেজি: Fred Trueman; জন্ম: ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ - মৃত্যু: ১ জুলাই, ২০০৬) দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের স্টেইনটন এলাকার স্কচ স্প্রিংসে জন্মগ্রহণকারী ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা, লেখক এবং ধারাভাষ্যকার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে ভূমিকা রাখতেন। এছাড়াও ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি সেরা ফাস্ট বোলারদের একজনরূপে পরিচিত হয়ে আছেন। তিনশত উইকেটধারী বোলার হিসেবে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন ফ্রেড ট্রুম্যান

ফ্রেড ট্রুম্যান
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামফ্রেডরিক সিওয়ার্ড ট্রুম্যান, ওবিই
জন্ম(১৯৩১-০২-০৬)৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১
স্কচ স্প্রিংস, স্টেইনটন, দক্ষিণ ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১ জুলাই ২০০৬(2006-07-01) (বয়স ৭৫)
স্টিটন উইদ ইস্টবার্ন, পশ্চিম ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
ডাকনামফাইরি ফ্রেড
উচ্চতা৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩৬৯)
৫ জুন ১৯৫২ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট১৭ জুন ১৯৬৫ বনাম নিউজিল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৪৯-৬৮ইয়র্কশায়ার
১৯৭২ডার্বিশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৬৭ ৬০৩ ১৮
রানের সংখ্যা ৯৮১ ৯,২৩১ ১৫৬
ব্যাটিং গড় ১৩.৮১ ১৫.৫৬ ১৩.০০
১০০/৫০ ০/০ ৩/২৬ ০/০
সর্বোচ্চ রান ৩৯* ১০৪ ২৮
বল করেছে ১৫,১৭৮ ৯৯,৭০১ ৯৮৬
উইকেট ৩০৭ ২,৩০৪ ২৮
বোলিং গড় ২১.৫৭ ১৮.২৯ ১৮.১০
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৭ ১২৬
ম্যাচে ১০ উইকেট ২৫ -
সেরা বোলিং ৮/৩১ ৮/২৮ ৬/১৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৬৪/– ৪৩৯/– ৫/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৫ মার্চ ২০১৩

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ফ্রেড ট্রুম্যান দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন।[১] জন্মকালীন সময়ে তার ওজন ছিল ১৪ পাউন্ড ১ আউন্স (৬.৪ কেজি)। তার দিদিমা মিসেস স্টিম্পসন ভূমিষ্ঠকালীন সময়ে উপস্থিত ছিলেন।[২] স্টিম্পসনের বিবাহ-পূর্বেকার নাম ছিল সিওয়ার্ডস। তাই ট্রুম্যানের পিতা-মাতা সিদ্ধান্ত নিলেন যে স্টিম্পসনের সম্মানার্থে তার নামকরণ হবে ফ্রেডরিক সিওয়ার্ডস ট্রুম্যান।[১]

অ্যালান এবং ইথেল ট্রুম্যান ছিলেন তার বাবা-মা। ট্রুম্যান পিতা-মাতার সাত সন্তানের মধ্যে মধ্যম। তারা সন্তানদেরকে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা ও সততা শিখিয়েছিলেন।[৩] দাদা ছিলেন ঘোড়ার ব্যবসায়ী। বাবাও ঘোড়ার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন এবং একসময় কয়লা খনিতে কাজ করতেন।

ক্রিকেট জীবন সম্পাদনা

স্টেইন্টনের গ্রামের বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় এক শিক্ষক তার ক্রিকেট প্রতিভা দেখতে পান।[৪] বাবার উৎসাহ-উদ্দীপনায় চার বছর বয়সেই বোলিং করতে শুরু করেন। বাবা স্টেইন্টন ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন। ট্রুম্যান তার খেলা দেখতে যেতেন। এভাবে মাত্র আট বছর বয়সেই ক্লাবের পক্ষ হয়ে খেলেন।[৫] বার বছর বয়সে তাদের পরিবার স্থানান্তরিত হলে ট্রুম্যানও মল্টবির টেনিসন রোডে চলে আসেন। সেখানে তিনি মল্টবি সেকেন্ডারী স্কুলে অধ্যয়ন করেন।[৬] ডিকি হ্যারিসন এবং টমি স্টাবস নামীয় দুই স্কুল শিক্ষক বোলার হিসেবে তাকে দেখতে পান এবং বিদ্যালয়ের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। ঐ সময় ট্রুম্যান দলের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন।[৬] কিন্তু মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্তি ঘটায় তার খেলাধুলা বাঁধাগ্রস্ত হয়। ১৯৪৫ সালে চৌদ্দ বছর বয়সে পুনরায় খেলতে নামেন কিন্তু এক গ্রীষ্মে বিদ্যালয় ত্যাগ করে পত্রিকার এজেন্টের দোকানে কাজ নেন। পেশাদার ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পূর্বে তিনি বেশ কয়েকবার চাকরি ত্যাগ করেন।[৭] নিয়মিত বিরতিতে আঘাতপ্রাপ্তি ঘটতে থাকায় তিনি ক্রিকেট খেলা ত্যাগ করার ইচ্ছে পোষণ করেন। কিন্তু তার পরিবারের উদ্দীপনায় ১৯৪৬ সাল থেকে রোচি অ্যাবি নামীয় গ্রামের এক ক্লাবে খেলতে থাকেন।[৭] সেখানে তিনি সফলকাম হন।

১৯৪৭ সালে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের খেলোয়াড় সিরিল টার্নারের নজরে পড়েন।[৮][৯] এখানে অবস্থানকালেই বিখ্যাত ক্রিকেটার ও বোলিং কোচের দায়িত্বে নিয়োজিত বিল বোসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন।[১০]

টেস্ট ক্রিকেট সম্পাদনা

 
গ্রাহাম ইবসন কর্তৃক স্কিপটনে ফ্রেড ট্রুম্যানের ভাস্কর্য চিত্র

১৯৫২ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের অধীনে ন্যাশনাল সার্ভিসে কর্মরত অবস্থায় ট্রুম্যান নয়টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে চারটি ছিল টেস্ট খেলা। ৫ জুন, ১৯৫২ তারিখে ইংল্যান্ড দলের পক্ষ হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। লেন হাটন ঐ টেস্টে অধিনায়কত্ব করেন। তরুণ ট্রুম্যানের বোলিংয়ের বিপক্ষে দূর্বল ভারতীয় দল ভেঙ্গে পড়ে।[১১] অ্যালেক বেডসারের সাথে জুটি বেঁধে বোলিং করেন ও চারদিন স্থায়ী টেস্টে দলকে ৭ উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভ করান। ভারতের প্রথম ইনিংসের ২৯৩ রানের জবাবে ইংল্যান্ড ৩৩৪ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে চৌদ্দ বলের ব্যবধানে ট্রুম্যান ৩ উইকেট দখল করলে ভারত ১৬৫ রান সংগ্রহ করে। ফলে ৩ উইকেটে ১২৮ রান করে জয়ের প্রান্তে পৌঁছে।[১২] লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টে তিনি ৮ উইকেট লাভ করেন।[১৩] ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ইংল্যান্ড জয় পায় এক ইনিংস ও ২০৭ রানে যাতে ট্রুম্যান ৮/৩১ ও ১/৯ মোট ৯ উইকেট লাভ করেন।[১৪] ওভালের চূড়ান্ত টেস্টটি বৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়। ইংল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করলে ভারত ৯৮ রানে অল-আউট হয়ে যায়। এতে ট্রুম্যান ৫/৪৮ ও অ্যালেক বেডসার ৫/৪১ নেন।[১৫] অভিষেক সিরিজে তিনি সর্বমোট ২৯ উইকেট লাভ করেন।[১৬]

অর্জনসমূহ সম্পাদনা

১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম সদস্য নীল হক তার ৩০০তম টেস্ট উইকেট শিকারে পরিণত হন তিনি। জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার সর্বশেষ খেলাটি স্কারবোরায় ৮, ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ফ্রেড ট্রুম্যানের নেতৃত্বাধীন প্লেয়ার্স দল ৭ উইকেটে বিজয়ী হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Arlott, p.16.
  2. Trueman, As It Was, p.5.
  3. Trueman, As It Was, pp.5–7.
  4. Trueman, As It Was, p.18.
  5. Trueman, As It Was, p.19.
  6. Arlott, p.17.
  7. Arlott, p.18.
  8. Arlott, p.19.
  9. Trueman, As It Was, p.32.
  10. Trueman, p. 35.
  11. Birley, p.284.
  12. "England v India 1952 – First Test"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১০ 
  13. "England v India 1952 – Second Test"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১০ 
  14. "England v India 1952 – Third Test"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১০ 
  15. "England v India 1952 – Fourth Test"CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১০ 
  16. "Wisden obituary". Wisden Cricketers' Almanack. 2007. Retrieved 31 July 2010.

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা


তথ্যমূলক সম্পাদনা

স্থিরচিত্র সম্পাদনা

রেকর্ড
পূর্বসূরী
ব্রায়ান স্ট্যাদাম
বিশ্বরেকর্ড - টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেটধারী
৩০৭ উইকেট (২১.৫৭), ৬৭ টেস্টে
১৫ মার্চ, ১৯৬৩ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ পর্যন্ত
উত্তরসূরী
ল্যান্স গিবস