পুরূরবা
পুরূরবা (সংস্কৃত: पुरूरवस्) ছিলেন রাজা এবং ঐল রাজবংশ বা চন্দ্রবংশের প্রথম। বেদ অনুসারে, তিনি সূর্য (দেবতা) ও ঊষা (দেবী)র সাথে যুক্ত কিংবদন্তি সত্তা এবং বিশ্বজগতের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ঋগ্বেদ (১০.৯৫.১৮) বলে যে তিনি ইলার[২] পুত্র ছিলেন এবং একজন ধার্মিক শাসক ছিলেন।
পুরূরবা | |
---|---|
![]() 'দুঃখে পুরূরবা, কালিদাসের বিক্রমোর্বশীয়মের একটি দৃশ্য | |
অন্তর্ভুক্তি | মহাভারতে রাজা |
গ্রন্থসমূহ | মহাভারত, ঋগ্বেদ, পুরাণ |
লিঙ্গ | পুরুষ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | |
দম্পত্য সঙ্গী | ঊর্বশী , ঔশিনরি |
সন্তান | আয়ু, অমাবসু[১], বিশ্বায়ু বা বনায়ু, শ্রুতায়ু বা ধীমত, শতায়ু (বা সতায়ু), এবং দৃঢ়ায়ু |
যাইহোক, মহাভারত বলে যে ইলা তার মা এবং তার বাবা উভয়ই ছিলেন। বিষ্ণুপুরাণ অনুসারে, তার পিতা ছিলেন বুধ, এবং তিনি ছিলেন পুরূরবা গোত্রের পূর্বপুরুষ, যাঁদের উত্তরসূরী হল মহাভারতের যাদব, কৌরব ও পাণ্ডবগণ।
বংশধর
সম্পাদনাতার ছয়জন (বা বিভিন্ন বিবরণ অনুসারে সাত বা আট) পুত্র ছিল। এই পুত্রদের নাম হল: আয়ু, অমাবসু,[১] বিশ্বায়ু, শ্রুতায়ু, শতায়ু (বা সতায়ু), এবং দৃঢ়ায়ু। আয়ুর পুত্র নহুষ ঋগ্বেদের একটি সুবিখ্যাত নাম । [৩]
উৎস
সম্পাদনাপুরূরবা ও ঊর্বশী আখ্যানের পূর্ববর্তী সংস্করণটি ঋগ্বেদ (১০.৯৫.১-১৮) এবং শতপথ ব্রাহ্মণ (১১.৫.১) এ পাওয়া যায়। পরবর্তী সংস্করণগুলো পাওয়া যায় মহাভারত, হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ, মৎস্য পুরাণ,[৪] ও ভাগবত পুরাণে।
ঋগ্বেদ, ১০.১২৯-এ একটি কথোপকথনমূলক অংশ রয়েছে, যা অত্যন্ত কাব্যিক শৈলীতে লেখা। স্তোত্রটি বর্ণনা দেয় যে ঊষা (ঊর্বশী নামেও পরিচিত) একজন গন্ধর্ব বা অপ্সরা (স্বর্গীয় জলপরী)। মানব রাজা পুরূরবার সাথে একত্রিত হয়ে চারটি শরৎকাল একত্রে বসবাস করার পর হঠাৎ করেই তার অনিচ্ছাকৃতভাবে মিলনের শর্ত লঙ্ঘনের জন্য তাকে ছেড়ে চলে যায়। পরে পুরূরবা তার কাছে ফিরে আসার জন্য নিস্ফল অনুরোধ করতে থাকেন।[৪]
আখ্যানটি বৈদিক সংস্কৃত পদে বহুবিধ অর্থের উপর নির্ভর করে প্রতীকবাদের একাধিক স্তর প্রদর্শন করে। যদিও এটি প্রেমের কবিতা, যেখানে এক প্রেমিক এবং তার প্রেয়সীর মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকাশ করে, যে তার প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করে, এটি সূর্য (পুরূরবা) এবং ভোরের (ঊষা) মধ্যে অমর সম্পর্ককেও প্রকাশ করে। অর্থের এই দুটি স্তরের পাশাপাশি, এটি গন্ধর্ব বা অপ্সরা হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণের জন্য আচার-অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্রিক বিধানের প্রস্তাব করে।
কিংবদন্তি
সম্পাদনাজন্ম ও প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাত্রেতাযুগে বুধ ও ইলার পুত্র হিসেবে পুরূরবা জন্মগ্রহণ করেন। বুধ ছিলেন চন্দ্র দেবতার পুত্র এবং এইভাবে পুরূরবা ছিলেন প্রথম চন্দ্রবংশী রাজা। যেহেতু তিনি পুরু পর্বতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাই তাকে পুরূরবা বলা হত।[৫] বামন পুরাণে, পুরূরবার পূর্বজন্মের বিবরণ রয়েছে। [৬]
রাজত্ব
সম্পাদনাপুরাণ অনুসারে, পুরূরবা প্রতিষ্ঠান বা পৈঠানে (প্রয়াগ[৭]) রাজত্ব করেছিলেন। তিনি ভগবান ব্রহ্মার তপস্যা করেছিলেন এবং পুরস্কার হিসাবে, তাকে সমগ্র পৃথিবীর সার্বভৌম করা হয়েছিল। পুরূরবা একশত অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। অসুররা তার অনুসারী ছিল, দেবতারা ছিল তার বন্ধু।
মহাভারত অনুসারে, গন্ধর্বলোক থেকে পুরূরবাই পৃথিবীতে তিন ধরনের আগুন (যজ্ঞের উদ্দেশ্যে) নিয়ে এসেছিলেন, যেখানে তিনি ঊর্বশীর দেখা পেয়েছিলেন এবং তার প্রেমে পড়েছিলেন। সম্ভব পর্বে বলা হয়েছে, পুরূরবা তার ক্ষমতার নেশায় মত্ত ছিলেন এবং তিনি ব্রাহ্মণদের সাথে ঝগড়া করেছিলেন। সনৎকুমার তাকে পরামর্শ দিতে ব্রহ্মলোক থেকে এসেছিলেন। কিন্তু পুরূরবা পরামর্শে কান দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঋষিরা পুরূরবাকে অভিশাপ দেন এবং তিনি বিনষ্ট হন।
পুরূরবা ও ঊর্বশী
সম্পাদনাচন্দ্র রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা পুরূরবা ও ঊর্বশী একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন। পুরূরবা তাকে তার স্ত্রী হতে বললেন, কিন্তু উর্বশী তিন বা দুটি শর্তে রাজি হলেন। সবচেয়ে উল্লিখিত শর্ত হল যে পুরূরবা ঊর্বশীর পোষা ভেড়াকে রক্ষা করবে এবং তারা একে অপরকে কখনই নগ্ন দেখতে পাবে না।
পুরূরবা শর্তে রাজি হন এবং তারা সুখে বসবাস করতে থাকেন। ইন্দ্র ঊর্বশীর অভাব উপলব্ধি করতে শুরু করেছিলেন এবং তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করলেন যাতে শর্তগুলো ভঙ্গ হয়। প্রথমে তিনি কয়েকজন গন্ধর্বকে পাঠান মেষ অপহরণ করার জন্য, যখন দম্পতি প্রেম করছিল। ঊর্বশী যখন তার পোষা প্রাণীর কান্না শুনতে পেল, তখন সে তার প্রতিশ্রুতি পালন না করার জন্য পুরূরবাকে তিরস্কার করল। তার ভর্ৎসনা শুনে পুরূরবা ভুলে গেলেন যে তিনি নগ্ন এবং ভেড়ার পিছনে ছুটলেন। ঠিক তখনই ইন্দ্র আলো জ্বালিয়ে দিলে ঊর্বশী তার স্বামীকে নগ্ন দেখতে পান। ঘটনার পর, ঊর্বশী স্বর্গে ফিরে আসেন এবং পুরূরবার হৃদয় ভেঙে যায়। ঊর্বশী পৃথিবীতে আসতেন এবং পুরূরবার অনেক সন্তানের জন্ম দিতেন, কিন্তু তারা সম্পূর্ণরূপে মিলিত হননি।
পরবর্তী সাহিত্য
সম্পাদনারাজা পুরূরবা এবং স্বর্গীয় অপ্সরা উর্বশীর প্রেমের গল্পটি বিখ্যাত কবি কালিদাসের লেখা সংস্কৃত নাটক 'বিক্রমোর্বশীয়মে' পাওয়া যায় । পুরূরবার আরেকজন স্ত্রীর সংযোজন এবং মূল গল্প থেকে ভিন্নতা সহ গল্পটি আরও নাটকীয়। [৮]
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
সম্পাদনাগুদিপতি ভেঙ্কটাচলম পুররূবা নাটকটি রচনা করেছেন , যা তেলুগু দর্শকদের কাছে সমালোচনামূলক প্রশংসা অর্জন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে অ্যামাজন প্রাইমে প্রকাশিত নাটকটির অ্যানিমেটেড সংস্করণ পুররূবা -তে এই নাটকটির আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Pargiter, F.E. (1972). Ancient Indian Historical Tradition, Delhi: Motilal Banarsidass, pp. 85–6.
- ↑ Misra, V.S. (2007). Ancient Indian Dynasties, Mumbai: Bharatiya Vidya Bhavan, আইএসবিএন ৮১-৭২৭৬-৪১৩-৮, p.57
- ↑ Misra, V.S. (2007). Ancient Indian Dynasties, Mumbai: Bharatiya Vidya Bhavan, আইএসবিএন ৮১-৭২৭৬-৪১৩-৮, pp.59–61
- ↑ ক খ Dandekar, R.N. (1962). Indian Mythology in S. Radhakrishnan ed. The Cultural Heritage of India, Calcutta: The Ramakrishna Mission Institute of Culture, আইএসবিএন ৮১-৮৫৮৪৩-০৩-১, pp.229–30, 230ff
- ↑ www.wisdomlib.org (২০১৫-০৭-১৩)। "Pururavas, Purūravas: 9 definitions"। www.wisdomlib.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০২।
- ↑ পঞ্চানন তর্করত্ন। বামন পুরাণ। নবভারত পাবলিশার্স।
- ↑ Wilson, H.H. (1840). The Vishnu Purana, Book IV, Chapter I, footnote 7.
- ↑ Kalidasa; Pandit, Shankar Pandurang (১৮৭৯)। The Vikramorvasîyam, a drama in 5 acts। University of California Libraries। Bombay, Government Central Book Depôt।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- A Dictionary of Hindu Mythology & Religion by John Dowson
- Gaur, R. C. (১৯৭৪)। "The Legend of Purūravas and Urvaśī: An Interpretation"। Journal of the Royal Asiatic Society of Great Britain and Ireland। 106 (2): 142–152। জেস্টোর 25203565। ডিওআই:10.1017/S0035869X00131983।
- Wright, J. C. (১৯৬৭)। "Purūravas and Urvaśī"। Bulletin of the School of Oriental and African Studies, University of London। 30 (3): 526–547। এসটুসিআইডি 162788253। জেস্টোর 612386। ডিওআই:10.1017/S0041977X00132033।
- Teverson, Andrew; Warwick, Alexandra; Wilson, Leigh, সম্পাদকগণ (২০১৫)। "'Cupid, Psyche, and the "Sun-Frog"', Custom and Myth: (London: Longmans, Green and Co., 1884)"। The Edinburgh Critical Edition of the Selected Writings of Andrew Lang, Volume 1: Anthropology, Fairy Tale, Folklore, The Origins of Religion, Psychical Research। Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 66–78। আইএসবিএন 978-1-4744-0021-3। জেস্টোর 10.3366/j.ctt16r0jdk.9।