গ্রাহাম থর্প

ইংরেজ ক্রিকেটার

গ্রাহাম পল থর্প, এমবিই (ইংরেজি: Graham Thorpe; জন্ম: ১ আগস্ট, ১৯৬৯) সারে এলাকার ফার্নহামে জন্মগ্রহণকারী সাবেক প্রথিতযশা ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন গ্রাহাম থর্প[১] দলে তিনি মূলতঃ মাঝারীসারির ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালনসহ স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সময়কালে ঠিক ১০০টি টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণ করেছেন।

গ্রাহাম থর্প
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামগ্রাহাম পল থর্প
জন্ম (1969-08-01) ১ আগস্ট ১৯৬৯ (বয়স ৫৪)
ফার্নহাম, ইংল্যান্ড
ডাকনামথর্পি
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকামাঝারিসারির ব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৬৪)
১ জুলাই ১৯৯৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৫ জুন ২০০৫ বনাম বাংলাদেশ
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১২২)
১৯ মে ১৯৯৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ ওডিআই২ জুলাই ২০০২ বনাম শ্রীলঙ্কা
ওডিআই শার্ট নং
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৮৮-২০০৫সারে
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১০০ ৮২ ৩৪১ ৩৫৪
রানের সংখ্যা ৬৭৪৪ ২৩৮০ ২১৯৩৭ ১০৮৭১
ব্যাটিং গড় ৪৪.৬৬ ৩৭.১৮ ৪৫.০৪ ৩৯.৬৭
১০০/৫০ ১৬/৩৯ ০/২১ ৪৯/১২২ ৯/৮০
সর্বোচ্চ রান ২০০* ৮৯ ২২৩* ১৪৫*
বল করেছে ১৩৮ ১২০ ২৩৮৭ ৭২১
উইকেট ২৬ ১৬
বোলিং গড় ৪৮.৫০ ৫৩.০০ ৪০.৫৬
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ২/১৫ ৪/৪০ ৩/২১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১০৫/– ৪২/– ২৯০/– ১৬৮/–
উৎস: ক্রিকইনফো, ১৮ মে ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

স্বভাবজাত ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয় বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলতে থাকেন। দাঁড়ানোর ভঙ্গীমা পরিবর্তনের ফলে বড় দুই ভাইয়ের পক্ষে তাকে আউট করা বেশ দুঃসাধ্য বিষয় ছিল। এর প্রধান কারণ ছিল লেগ সাইডে বামহাতে ব্যাটিং করার ফলে বাগানের সীমানা রেখা বেশ ছোট ছিল। ১৯৮৮ সালে সারে দলের পক্ষে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়।

খেলোয়াড়ী জীবন সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১১৪* রানের মনোমুগ্ধকর সেঞ্চুরি করেন। ১ জুলাই, ১৯৯৩ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন তিনি। নভেম্বর, ২০০০ সালে লাহোরে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরিতে তিনি কেবলমাত্র এক চারের মার মেরেছিলেন। তার ঐ ইনিংসটিতে সাতটি তিন, ১২টি দুই এবং ৫১টি এক রান ছিল। তবে, ৩০১ বলে ১১৮ রান করে আউট হবার পূর্বে আরও একটি বাউন্ডারি ছিল। এরফলে তার এ ইনিংসটি স্বল্পসংখ্যক বাউন্ডারিতে গড়া টেস্ট ক্রিকেট সেঞ্চুরিতে পরিণত হয়।[২] তাস্বত্ত্বেও উচ্চমানের স্ট্রোকের মারের জন্যও তার সুনাম রয়েছে। ২০০২ সালে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে নিজস্ব সেরা অপরাজিত ২০০* রান করেন ২৩১ বল মোকাবেলা করে। এ সময় অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের সাথে জুটি গড়ে ৫১ ওভারে ২৮১ রান সংগ্রহ করেন।[৩]

ব্যক্তিগত সমস্যা ও প্রত্যাগমন সম্পাদনা

২০০২ মৌসুমে থর্পের বৈবাহিক জীবন নিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন টেবলয়েড সংবাদপত্রে এ নিয়ে মুখরোচক খবর প্রকাশিত হতে থাকে। এরফলে তার খেলায় মারাত্মক প্রভাববিস্তার করে। ধারাবাহিকভাবে বিদেশ সফরে ব্যস্ত থাকায় পারিবারিক সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাকে। ফলশ্রুতিতে একদিনের খেলা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। এছাড়াও বেশ কয়েকবার অস্ট্রেলিয়া সফরের বিষয়ে মন পরিবর্তন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি পুরোপুরি সফর থেকে দূরে রাখেন নিজেকে।

২০০৩ সালে পারিবারিক সমস্যা সমাধানের পর পুনরায় ইংল্যান্ড দলে ফিরে আসেন। সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে নিজ মাঠ ওভালে খেলতে নামেন। স্থানীয় বীরকে উষ্ণ স্বাগতঃ জানায় দর্শককূল। থর্প চমকপ্রদ ১২৪ রানে ইনিংস খেলেন যাতে ইংল্যান্ড অপ্রত্যাশিতভাবে জয় পেয়ে সিরিজ ড্রয়ে সক্ষম হয়। জুন, ২০০৫ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনি তার শততম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। দুই বছরের ব্যবধানে তিনি ৫৬.৩৭ গড়ে ১৬৩৫ রান তুলেছিলেন।

অবসর সম্পাদনা

জুলাই, ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড দল নির্বাচকমণ্ডলী অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে কেভিন পিটারসনকে তার স্থলাভিষিক্ত করলে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। দল ঘোষণার পর ইংল্যান্ড দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি ডেভিড গ্রেভেনি মন্তব্য করেন যে, ‘একজন নির্বাচক হিসেবে আমার সময়কালে এ সিদ্ধান্তটি সর্বাপেক্ষা কঠিনতর ছিল’।[৪] টেস্ট থেকে অবসর নেয়ার আরও দুই মাস পর ঘরোয়া ক্রিকেটে সারে দল থেকে অবসর নেন আগস্ট, ২০০৫ সালে।

 
গ্রাহাম থর্পের খেলোয়াড়ী জীবনের লেখচিত্র।

কোচিং সম্পাদনা

অবসর নেয়ার পর ২০০৫-০৬ মৌসুম থেকে পরবর্তী দুই মৌসুমের জন্য নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্যাটিং কোচ হিসেবে যোগ দেন। এ সময় সিডনি ফার্স্ট গ্রেড প্রতিযোগিতায় ইউটিএস-বালমেইন দলের পক্ষে খেলেন। ম্যাথু মটকে কোচের মর্যাদায় আসীন করার প্রেক্ষিতে তাকে ২০০৭ সালে নিউজিল্যান্ডের সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচ হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[৫]

অর্জনসমূহ সম্পাদনা

১৯৯৮ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার মনোনীত হন। ১৭ জুন, ২০০৬ তারিখে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (এমবিই) পদবীতে তাকে ভূষিত করা হয়।[৬]

২০০৭ সালে ইংল্যান্ড দলের ভারত সফরে প্রথম টেস্ট থেকে বিবিসি রেডিও’র টেস্ট ম্যাচ স্পেশাল অনুষ্ঠানে বিশ্লেষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। একই সিরিজে স্কাই স্পোর্টসের বিশেষ মুহূর্ত অনুষ্ঠানেও তাকে খেলা বিশ্লেষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রিকেট সাময়িকী স্পিন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট মান্থলীতে ডিসেম্বর, ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত লিখছেন।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Surrey players". CricketArchive. Retrieved 29 April, 2017.
  2. "BBC Sport – Cricket – Ask Malcolm Ashton"BBC Online। ১৫ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১০ 
  3. Scorecard, New Zealand v England, March 2002
  4. Cricinfo staff (জুলাই ১৪, ২০০৫)। "The Ashes: 2005 Pietersen edges out Thorpe in Ashes squad"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৩, ২০১৪ 
  5. Melbourne Age, "Thorpe new NSW cricket assistant coach" 6 July 2007
  6. Thorpe/Ferguson head honours list bbc.co.uk 16 June 2006
  7. Graham Thorpe playing innings of his life[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] telegraph.co.uk 13 August 2007

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা