কল্যাণী (ইংরেজি:Kalyani) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি নদিয়া জেলার কল্যাণী মহকুমার প্রশাসনিক কেন্দ্র-ও বটে। রাজধানী কলকাতা থেকে এর দূরত্ব ৫০ কিমি (৩১ মাইল)। কলকাতার পরে এটি একটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় তার পরিকল্পনা ছিল কল্যাণী'কে দ্বিতীয় কলকাতা তৈরি করা, তার অকাল প্রয়াণে সেই কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি, এছাড়া এয়ারপোর্ট অথরিটি পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখানে হবে, আপাতত জমি জটে এই কাজ বন্ধ আছে।

কল্যাণী
শহর
Kalyani Lake 02.JPG
কল্যাণী পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
কল্যাণী
কল্যাণী
পশ্চিমবঙ্গ, ভারতে অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২২°৫৯′ উত্তর ৮৮°২৯′ পূর্ব / ২২.৯৮° উত্তর ৮৮.৪৮° পূর্ব / 22.98; 88.48
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলানদিয়া
সরকার
 • পৌরপ্রধানসুশীল তালুকদার
 • সাংসদশান্তনু ঠাকুর
 • বিধায়কঅম্বিকা রায়
আয়তন
 • মোট২৯.১৪ বর্গকিমি (১১.২৫ বর্গমাইল)
উচ্চতা১১ মিটার (৩৬ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট১,০০,৬২০
 • জনঘনত্ব৯৭৮/বর্গকিমি (২,৫৩০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • সরকারিবাংলা, ইংরেজি
সময় অঞ্চলআইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০)
ডাক সূচক সংখ্যা৭৪১২৩৫
টেলিফোন কোড০৩৩
লিঙ্গ অনুপাত৯৭৮ / ১০০০
ওয়েবসাইটkalmun.com/website/

শহরের বিস্তারসম্পাদনা

কল্যানী, গয়েশপুর, সগুনা, চরসরাটি, মাঝেরচর, মোহনপুর সহ আরো কিছু অঞ্চলগুলো নিয়ে এই কল্যাণী শহরটি গঠিত।

ইতিহাসসম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই স্থান ছিল একটি আমেরিকান বিমান ঘাঁটি। যার কিছু নিদর্শণ এখনও কল্যাণী স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে ও কল্যাণী ঘোষপাড়া অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এই সময়ে এর নাম ছিল রুজভেল্ট নগর।[১] ১৯৫০ এর দশকের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে তাঁর প্রেমিকার নামে কল্যাণীকে একটি আদর্শ পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়,। ১৯৫২ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এর অধিবেশনও এই শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই ঐতিহাসিক অধিবেশনের স্মৃতিস্বরূপ কল্যাণীর একটি রাস্তার নাম 'কংগ্রেস রোড' নামে চিহ্নিত।

ভৌগোলিক অবস্থানসম্পাদনা

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২°৫৯′ উত্তর ৮৮°২৯′ পূর্ব / ২২.৯৮° উত্তর ৮৮.৪৮° পূর্ব / 22.98; 88.48[২] সমুদ্রতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১১ মিটার (৩৬ ফুট)।

জনসংখ্যাসম্পাদনা

ভারতের ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কল্যাণী পৌর অঞ্চলের জনসংখ্যা হল ১০০,৬২০ জন [৩] এর মধ্যে পুরুষ ৫০.৯৯% এবং নারী ৪৯%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৮৮.৭%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৯২% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮৪.৬%। যা ভারতের গড় সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, এর থেকে অনেকটাই বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৯% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

শিক্ষাসম্পাদনা

কল্যাণী পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (MAKAUT) ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় , কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জে আই এস কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, আইডিয়াল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, গয়েশপুর গভঃ পলিটেকনিক কলেজ, কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড জে.এন.এম হসপিটাল, কল্যাণী মহাবিদ্যালয় (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত একটি স্নাতক কলেজ), স্নেহাংশুকান্ত আচার্য আইন কলেজ, একটি ডেয়ারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল হোমিওপ্যাথি ইনস্টিটিউট, ইন্ডিয়ান সায়েন্স, রিসার্চ ইন্সটিটিউট, একটি কারিগরী শিক্ষাকেন্দ্র (ITI) মোট ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় সহ মোট ১১ টি কলেজ এবং ১ টি মেডিকেল কলেজ ও ৩ টি গবেষণা কেন্দ্র, এছাড়াও অসংখ্য সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারী স্কুল কল্যাণীকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের একটি বিশিষ্ট শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করেছে।

 
কল্যাণী মহাবিদ্যালয়

ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থানসম্পাদনা

এই শহরে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারত সরকারের মানব সম্পদ বিভাগের অন্তর্গত রাজ্যের একমাত্র ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থান, কল্যাণী অবস্থিত।

স্বাস্থ্যসম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত আর্মি হসপিটাল কল্যাণীর প্রাচীনতম হাসপাতাল, বিধান চন্দ্র রায় এটিকে যক্ষ্মা রোগীদের জন্য নেতাজী সুভাষ সানাটোরিয়াম হিসেবে নামকরণ করেন।

পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম হাসপাতাল এইমস কল্যাণী'তে অবস্থিত। ২০১৫ সালে কল্যাণী শহরে এইমস অখিল ভারতীয় আয়ুর্বেদ সংস্থান নির্মানের ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকার। ২০২১ সাল থেকে এই এইমস এ চিকিত্সা শুরু হয়। এছাড়াও জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ই এস আই হাসপাতাল ও গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল কল্যাণীর অপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতাল। জে এন এম কলেজের সাথে ২০০৯ সাল থেকে যুক্ত হয়েছে কল্যাণী কলেজ অফ মেডিসিন। গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল হৃদরোগ সম্পর্কিত চিকিৎসার জন্য খ্যাত। এছাড়াও এখানে একাধিক বেসরকারি চিকিৎসালয় রয়েছে মোট ১১ টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং 4 টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতাল।

খেলাধূলাসম্পাদনা

ফুটবলসম্পাদনা

কল্যাণী শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে কল্যাণী স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে আই-লিগের বেশ কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্টেডিয়ামটি মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল দল তারা তাদের অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করে। পশ্চিমবঙ্গ ফুটবল দলের অনেক ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

ক্রিকেটসম্পাদনা

কল্যাণী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাংলা ক্রিকেট একাডেমি গ্রাউন্ড এ ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ইডেন গার্ডেন্স এর অবর্তমানে বাংলা ক্রিকেট দল তাদের ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচগুলো এখানে খেলে।

টেবিল টেনিসসম্পাদনা

কল্যানী স্টেডিয়ামের পাশেই টেবিল টেনিস শেখানোর একটি একাডেমী অবস্থিত। যেখানে রাজ্য টেবিল টেনিস মিট এর আসর বসে।

যোগাযোগসম্পাদনা

কলকাতা থেকে ট্রেন ও সড়ক পথে কল্যাণী খুবই ভাল ভাবে সংযুক্ত।

রেলসম্পাদনা

ট্রেনে শিয়ালদহ থেকে কল্যাণী সীমান্ত, রাণাঘাট, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, গেদে লোকালে ও লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে কল্যাণী রেলওয়ে স্টেশন এ পৌঁছান যায়। কল্যাণী সীমান্ত লোকাল ব্রাঞ্চ লাইন এ শহরের মধ্য দিয়ে কল্যাণী শিল্পাঞ্চলকল্যাণী ঘোষপাড়া হয়ে কল্যাণী সীমান্ত স্টেশন অবধি যাচ্ছে। গোটা ভারতের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে একই শহরের ভেতর ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আছে ৪ টি রেল স্টেশন। সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা ও কল্যাণীকে একটি শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিধানচন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে এই রেল রুট চালু করার প্রস্তাব পাঠান কেন্দ্রীয় সরকারকে।

সড়কপথসম্পাদনা

সড়কপথে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে কল্যাণীকে সরাসরি কলকাতার সাথে সংযুক্ত করে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েরই আর একটি এক্সটেনশান ঈশ্বর গুপ্ত সেতু দিয়ে হুগলীর বাঁশবেড়িয়ায় ৬ নং জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। ১ নং রাজ্য সড়ক শহরের মধ্যভাগ ছুঁয়ে গিয়েছে। কল্যাণীর নিকটবর্তী জাগুলিয়ার ওপর দিয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক কলকাতাকে সংযুক্ত করছে।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. Lee, Terence R. (১৯৬৯)। Residential water demand and economic development। University of Toronto Press। পৃষ্ঠা 66। 
  2. "Kalyani"Falling Rain Genomics, Inc। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৭, ২০০৬ 
  3. "Cities having population 1 lakh and above" (পিডিএফ)। Census of India, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১১ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা