রাণাঘাট

কলকাতার উপশহর

রাণাঘাট, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার একটি মহকুমা শহর ও পৌরসভা এলাকা। এটি শিয়ালদহ - লালগোলা সেকশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন স্টেশন। রাণাঘাট স্টেশনে মোট ৬ টি প্ল্যাটফর্ম আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ৫ টি পায়ে হাঁটা ওভারব্রিজ এবং একটি সাবওয়ে আছে।

রাণাঘাট
শহর
রাণাঘাট জংশন রেলস্টেশন
রাণাঘাট জংশন রেলস্টেশন
রাণাঘাট পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
রাণাঘাট
রাণাঘাট
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে রাণাঘাটের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১১′ উত্তর ৮৮°৩৫′ পূর্ব / ২৩.১৮° উত্তর ৮৮.৫৮° পূর্ব / 23.18; 88.58
দেশ ভারত
Stateপশ্চিমবঙ্গ
জেলানদিয়া
সরকার
 • ধরনপশ্চিমবঙ্গ সরকার
 • শাসকSub-Divisional Officer, Ranaghat
 • পৌরপ্রধানকোশলদেব বন্দোপাধ্যায় (সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস)
 • উপ পৌরপ্রধানআনন্দ দে
আয়তন
 • মোট৭.৭২ বর্গকিমি (২.৯৮ বর্গমাইল)
উচ্চতা৮ মিটার (২৬ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,৩৫,৫৮৩ (suburban only)
ভাষা
 • সরকারিবাংলা, ইংরাজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+৫:৩০)
ডাক সূচক সংখ্যা৭৪১২০১
Telephone code91-3473-2xxxxx
যানবাহন নিবন্ধনWB-52
লোকসভা কেন্দ্ররানাঘাট
বিধানসভা কেন্দ্ররাণাঘাট উত্তর-পূর্ব
ওয়েবসাইটwww.ranaghat.org
রাণাঘাট টাউন হল "নজরুল মঞ্চ" ও অতিথি নিলয় "আহেলী"

নামকরণ সম্পাদনা

বর্তমানে রাণাঘাট নামটি সবাই জানলেও এই নামকরণের পশ্চাতে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু ইতিহাসবেত্তাদের মতানুসারে, রাণাঘাটের পূর্বনাম ছিল ব্রহ্মডাঙা। চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদে রনা বা রানা নামে এক ডাকাতের মূল ঘাঁটি ছিল। তার ভয়ে আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা কাঁপত। চূর্ণী নদীতে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে তখন বড়ো বড়ো নৌকা চলত। তবে রানার ভয়ে সবাই দলবদ্ধ ভাবে যেত। এই ভয়ের কারণেই বাসিন্দারা ব্রহ্মডাঙাকে আর ব্রহ্মডাঙা বলত না। বলত রানার ডাকাতের ঘাঁটি বা রানার ঘাট। এই ভাবেই ব্রহ্মডাঙা হয়ে গেল রাণাঘাট।
রাণাঘাটের নামকরণের উৎপত্তি হিসাবে কিছু ঐতিহাসিক ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, কোনো রানি বা রানার (রাজপুতের যোদ্ধা) নাম এবং ঘাট (নদীর পাড়) একত্রিত হয়ে রাণাঘাট হয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

রাণাঘাট চূর্ণী নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। রাণাঘাটের রেল জংশনটি দেশভাগের পূর্বে অতি গুরুত্ববাহী ছিল। এই শহরে পৌরসভা তৈরি হয় ১৮৬৪ সালে। মহকুমা শাসক হিসেবে আসেন বিখ্যাত কবি নবীনচন্দ্র সেন। শহরের প্রথিতযশা মানুষদের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ কালীময় ঘটক, নদিয়া কাহিনীর রচয়িতা কুমুদনাথ মল্লিক, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সন্তোষকুমার বোস, অলিম্পিয়ান ফুটবলার নিখিল নন্দী, অনিল নন্দী, অজিত নন্দী প্রমুখ। শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় রাণাঘাটের জমিদার পালচৌধুরীদের বড় অবদান আছে। খেলাধুলা, নাটক, সাহিত্য পত্রিকা, বিজ্ঞান আন্দোলন এবং সংগীত জগতের নিজস্ব ঘরানাতে রাণাঘাটের মানুষ বাংলার সংস্কৃতি জগতে অবদান রেখেছেন[১]

ভৌগোলিক উপাত্ত সম্পাদনা

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা হল ২৩°১১′ উত্তর ৮৮°৩৫′ পূর্ব / ২৩.১৮° উত্তর ৮৮.৫৮° পূর্ব / 23.18; 88.58[২] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৭ মিটার (২২ ফুট)।

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে রাণাঘাট শহরের জনসংখ্যা হল ৬৮,৭৫৪ জন।[৩] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৮৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৮৭% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৮০%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে রাণাঘাটের সাক্ষরতার হার বেশি। এই শহরের জনসংখ্যার ৮% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

 
রাণাঘাট কলেজ

রাণাঘাট কলেজ এখানকার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও বহু বিখ্যাত বিদ্যালয়ও এখানে আছে। যেমন– রাণাঘাট পালচৌধুরী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাণাঘাট ব্রজবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, রাণাঘাট লালগোপাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাণাঘাট ভারতী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রভৃতি।

পরিবহণ সম্পাদনা

রাণাঘাট জংশন রেলওয়ে স্টেশন শিয়ালদহ – কৃষ্ণনগর সিটি জংশন শাখার একটি প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়াও রাণাঘাট জংশন – গেদে শাখারাণাঘাট জংশন – বনগাঁ জংশন শাখার সর্বশেষ স্টেশন। যদিও, গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনটি এখনও পুরোপুরি উন্নতমানের হয়ে ওঠেনি। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক (পূর্বতন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক) শহরের পাশ দিয়ে গিয়েছে। রাণাঘাটের পূর্বপাড়ে রথতলায় একটি বাসস্ট্যান্ড আছে, যেখান থেকে ধানতলা, পানিখালি, দত্তপুলিয়া, বগুলা, হাঁসখালি, কৃষ্ণনগর ইত্যাদি স্থানে যাওয়া যায়। অপর একটি বাসস্ট্যান্ড কোর্ট মোড়ের পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে অবস্থান করে, যেখান থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কৃষ্ণনগর (হবিবপুর, ফুলিয়া, শান্তিপুর, চক দিগনগর হয়ে) যাওয়া যায়। কোর্ট মোড়ের উত্তরদিকে প্রামাণিক মোড় রাণাঘাট শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাসস্টপ। এখানে কলকাতা, কল্যাণী, করিমপুর, বহরমপুর-সহ পথিমধ্যে নানান গ্রাম-শহরে যাওয়ার সরকারি বা বেসরকারি নানা বাস দাঁড়ায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বহু ইতিহাসের সাক্ষী রানাঘাট" (ইংরেজি ভাষায়)। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২৩ ২ অক্টোবর ০১৪।  অজানা প্যারামিটার |রাণাঘাটের আরেকজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব হলেন রেলওয়ে উনিয়নের সর্বভারতীয় নেতা সুকুমার লাহিড়ী মহাশয় যিনি সারা দেশে অজস্র মানুষের কর্মসংস্থান সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে আন্দোলন সংঘটিত করেছেন। একদা ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বাংলাদেশে যাওয়ার পথে এখানে এসেছিলেন। এই শহরের "পান্তুয়া" নামক মিষ্টি সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিখ্যাত।= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  2. "Ranaghat"Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০০৬ 
  3. "ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি" (ইংরেজি ভাষায়)। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০০৬ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা