ওয়াকা গ্রাউন্ড (ইংরেজি: WACA Ground; /ˈwækə/) পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থের একটি ক্রীড়া স্টেডিয়াম। এ স্টেডিয়ামটি ১৮৯০ সালে নির্মাণ করা হয়। ২৪,৫০০ আসন ক্ষমতাসম্পন্ন স্টেডিয়ামটির স্বত্ত্বাধিকারী হচ্ছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াকা)। এ সংস্থার মাধ্যমেই ওয়াকা গ্রাউন্ড পরিচালিত হচ্ছে।

ওয়াকা গ্রাউন্ড
দ্য ওয়াকা
২০০৬-০৭ অ্যাশেজ সিরিজ নাগাদ মাঠের এক ঝলক
স্টেডিয়ামের তথ্যাবলি
অবস্থানইস্ট পার্থ, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া
দেশঅস্ট্রেলিয়া
স্থানাঙ্ক৩১°৫৭′৩৬″ দক্ষিণ ১১৫°৫২′৪৭″ পূর্ব / ৩১.৯৬০০০° দক্ষিণ ১১৫.৮৭৯৭২° পূর্ব / -31.96000; 115.87972
প্রতিষ্ঠা১৮৯০
ধারণক্ষমতা২৪,৫০০
স্বত্ত্বাধিকারীপশ্চিম অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন
প্রান্তসমূহ
মেম্বার্স এন্ড
প্রিন্ডিভাইল স্ট্যান্ড এন্ড
আন্তর্জাতিক খেলার তথ্য
প্রথম পুরুষ টেস্ট১৬ ডিসেম্বর ১৯৭০:
অস্ট্রেলিয়া  বনাম  ইংল্যান্ড
সর্বশেষ পুরুষ টেস্ট১৩ নভেম্বর ২০১৫:
অস্ট্রেলিয়া  বনাম  নিউজিল্যান্ড
প্রথম পুরুষ ওডিআই৯ ডিসেম্বর ১৯৮০:
অস্ট্রেলিয়া  বনাম  নিউজিল্যান্ড
সর্বশেষ পুরুষ ওডিআই১২ জানুয়ারি ২০১৬:
অস্ট্রেলিয়া  বনাম  ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (১৮৯৯-)
পার্থ ফুটবল ক্লাব (১৮৯৯-১৯৫৮)
ওয়েস্ট কোস্ট ঈগলস (১৯৮৭-২০০০)
ফ্রিম্যান্টল ফুটবল ক্লাব (১৯৯৫-২০০০)
পার্থ স্কর্চার্স (২০১১–)
১২ জানুয়ারি ২০১৬ অনুযায়ী
উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ

১৮৯০-এর দশকের সূচনালগ্নে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ক্রিকেট মাঠ হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম টেস্ট খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়।[১] ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্সের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট এবং স্থানীয় বিগ ব্যাশ লীগ ফ্র্যাঞ্জাইজ পার্থ স্কর্চার্সের ঘরের মাঠে হিসেবে ওয়াকাকে ব্যবহার করা হয়। মহিলাদের ক্রিকেট দল ওয়েস্টার্ন ফারি মহিলাদের জাতীয় ক্রিকেট লীগে অংশগ্রহণ করে।

ইতিহাস[২] সম্পাদনা

ঐতিহাসিক এই মাঠ সাক্ষী হয়ে আছে অনেক কিছুরই, দারুণ কিছু মুহূর্তের, দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্সের। ১৮৮৫ সালে যে মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেটি বাস্তবে রূপ পেয়েছিল ১৮৮৯ সালে। যদিও ওয়াকায় টেস্ট খেলা হয়েছিল এর অনেক পরে—১৯৭০ সালে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে টেস্ট ভেন্যু হিসেবে পথচলা শুরু করা ওয়াকায় ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াই নেমেছে শেষ টেস্টটি খেলতে।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পাদনা

ডেনিস লিলি বনাম জাভেদ মিয়াঁদাদ, ১৯৮১ সম্পাদনা

জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বে পাকিস্তানের প্রথম সফর। স্বাগতিকদের ১৮০ রানে গুটিয়ে দিয়ে হাওয়ায় উড়ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ডেনিস লিলিটেরি অলডারম্যান ৯ উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিলে ৬২ রানে অলআউট পাকিস্তান। চতুর্থ ইনিংসে মিয়াঁদাদের দলের সামনে লক্ষ্য ছিল ৫৪৩। ২৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন ‘বড়ে মিয়াঁ’। একটি রান নিতে গিয়ে ধাক্কা লাগে লিলি ও মিয়াঁদাদের। এ নিয়ে আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ করেন লিলি। পরে মিয়াঁদাদের ঊরুতে ছোট্ট একটি লাথি ঝাড়েন। ব্যস, আর যায় কোথায়। লিলিকে রীতিমতো ব্যাট তুলে মারতে গিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ! পরে আম্পায়ারের মধ্যস্থতায় শান্ত হয় পরিস্থিতি।

কার্টলি অ্যামব্রোসের ১ রানে ৭ উইকেট, ১৯৯৩ সম্পাদনা

অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ তখন ১-১ সমতায়। সিরিজের চতুর্থ টেস্ট মাত্র ১ রানে জিতে সমতা ফিরিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। ওয়াকায় পঞ্চম টেস্টে ইনিংস ও ২৫ রানে জিতেছিল রিচি রিচার্ডসনের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ইনিংসে বিধ্বংসী এক স্পেলে অস্ট্রেলিয়ার ৭ ব্যাটসম্যানকে আউট করেছিলেন ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার অ্যামব্রোস। রান খরচ করেছিলেন মোটে ১। সেই ইনিংসে জাস্টিন ল্যাঙ্গার, স্টিভ ওয়াহশেন ওয়ার্ন বাদে বাকি সব ব্যাটসম্যানকে আউট করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা এই পেসার। ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস।

গ্লেন ম্যাকগ্রার প্রথম হ্যাটট্রিক ও ৩০০তম উইকেট, ২০০০ সম্পাদনা

২০০০ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখটা নিশ্চয়ই মনে রেখেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অস্ট্রেলিয়া সফরের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ক্যারিবীয়রা। অভ্যাসমতো সিরিজের শুরুতেই ব্রায়ান লারার উইকেটকে পাখির চোখ করেছিলেন ম্যাকগ্রা। ২৯৮টি টেস্ট উইকেট নিয়ে ম্যাচ শুরু করেছিলেন এই পেসার। ওপেনার শেরউইন ক্যাম্পবেলকে প্রথম স্লিপে পন্টিংয়ের ক্যাচ বানিয়ে শুরু। লারাকে প্রথম বলেই স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের ক্যাচ বানালেন—৩০০তম উইকেট। হ্যাটট্রিক বলে জিমি অ্যাডামসকে বানালেন ল্যাঙ্গারের ক্যাচ। ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক, ৩০০তম উইকেট হিসেবে লারাকে আউট করা, চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য সে টেস্টে সবকিছুই করেছিলেন ম্যাকগ্রা।

ম্যাথু হেইডেনের ৩৮০, ২০০৩ সম্পাদনা

সেবার হিথ স্ট্রিকের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ায়। প্রথম ইনিংসে ৭৩৫ রানের পাহাড় গড়েছিল স্বাগতিকেরা। এর আগে টেস্টের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল লারার ৩৭৫। ১১টি ছয় আর ৩৮টি চারে ৩৮০ করেছিলেন হেইডেন। এটিই তখন হয়ে উঠেছিল টেস্টের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ছয় মাস পরই অবশ্য নিজের রেকর্ড ফের দখলে নিয়েছিলেন লারা, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০০ করে অপরাজিত ছিলেন ত্রিনিদাদের রাজকুমার। তবে এখনো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংস হিসেবে অক্ষত রয়েছে হেইডেনের মহাকাব্যিক সেই ইনিংস।

অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ৫৭ বলে সেঞ্চুরি, ২০০৬ সম্পাদনা

অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। তবে সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। আগের তিন টেস্ট ইনিংসে রান পাননি, এমনকি সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ডাক মেরেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রান উৎসবের মাঝে দাঁড়িয়ে ৪০ বলে ফিফটি করেছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। পার্থের ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পরের ১৭ বলে ঝড় তুলেছিলেন ইংলিশ বোলারদের ওপর। ৫৭ বলে সেঞ্চুরি করার পথে ৪টি ছক্কা ও ১২টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন গিলি। ২০৬ রানে টেস্ট জিতেছিল স্বাগতিকেরা, ধরে রেখেছিল অ্যাশেজ।

মাঠের অবস্থা সম্পাদনা

ওয়াকা’র পীচকে পৃথিবীর অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন ও বাউন্সার উপযোগী হিসেবে গণ্য করা হয়, যা ফাস্ট বোলারদের বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও, পীচের বহিঃভাগও দ্রুততর। এ সকল বৈশিষ্ট্যের সাথে বৈকালিক সমুদ্রের বাতাস মাঠে প্রবাহিত হয়। এরফলে ঐতিহাসিকভাবেই পেসারসুইং বোলারগণের জন্য সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মাঝেমাঝেই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে রান সংগ্রহ করতেও দেখা যায় এখানে। ডিসেম্বর, ২০১২ সালে সাতটি দ্রুততম সময়ের টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে চারটিই এসেছে ওয়াকাতে।[৩]

অন্যান্য সম্পাদনা

এ মাঠকে অন্যান্য ক্রীড়ায়ও ব্যবহার করতে দেখা যায়। তন্মধ্যে অ্যাথলেটিক্স, অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল, বেসবল, ফুটবল, রাগবি লীগ, রাগবি ইউনিয়ন খেলা এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও, রক কনসার্টের ন্যায় অন্যান্য কর্মকাণ্ডেও এ মাঠ ব্যবহৃত হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা