স্টেডিয়াম (ইংরেজি: Stadium) এমন একটি নির্দিষ্ট স্থান বা কেন্দ্রস্থল, যেখানে দর্শকেরা একত্রিত হয়ে খেলাধুলা উপভোগ করেন। স্টেডিয়ামসমূহে সাধারণত খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে স্টেডিয়ামে কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সার্কাস-সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়ে থাকে।

জার্মানির মিউনিখে স্থাপিত অ্যালিয়েঞ্জ এরিনা বিশ্বের ১ম স্টেডিয়াম যা বহিঃভাগে রঙ পরিবর্তন করতে পারে

অবকাঠামো সম্পাদনা

সাধারণতঃ মাঠের চতুঃপার্শ্বে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে স্থায়ী অবকাঠামো হিসেবে নকশা অঙ্কন করে স্টেডিয়াম তৈরী করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ আংশিকভাবে ঘেরাও করা হয়ে থাকে। অঙ্কিত নকশায় দর্শকদের জন্য বসার ব্যবস্থা রাখা হয়।[১] খেলার দৃষ্টিগ্রাহ্যতার উপর টিকেটের মূল্যমান নির্ভর করে।

উৎপত্তি সম্পাদনা

গ্রীকদের প্রাচীন অলিম্পিক খেলায় একমাত্র ইভেন্ট ছিল দৌঁড়এথেন্সের পজেনিয়াসরা খেলা দাঁড়িয়ে দেখার জন্য প্রায় অর্ধ-শতাব্দীকাল এ ব্যবস্থা রেখেছিল। গ্রীসের অলিম্পিয়ায় স্ট্যাড দূরত্ব নির্ণয় করা থেকে আধুনিক স্টেডিয়াম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে।[২]

গ্রীক শব্দ স্ট্যাডিয়ন শব্দ থেকে 'স্ট্যাডিয়াম' বা 'স্টেডিয়াম' শব্দটি এসেছে। দূরত্ব হিসেবে পরিমাপ করলে মনুষ্য নির্ণেয় ৬০০ ফুটের সমমান হবে। এটি ঐ সময়ের লোক, স্থান এবং সময়ের উপর নির্ভর করে প্রকৃত দৈর্ঘ্য নিরূপণ করা হতো। এছাড়াও, বর্তমানকালের মানদণ্ডে ১ স্ট্যাডিয়ন = ৬০০ ফুট বা ১৮০ মিটার দেখানো হয়। ঐতিহাসিক স্থান-কালের প্রেক্ষাপটে এ দূরত্ব ১৫% বেশি বা কম হতে পারে।[২]

রোমান দৈর্ঘ্যের একক হিসেবে স্ট্যাডিয়নকে বিভিন্ন সময়ে ১২৫ দ্বিগুণ পদক্ষেপ হিসেবে ১৮৫ মিটার বা ৬০৭ ফুট হিসেবে বিবেচনা করা হতো। রোমানদের গ্রহণকৃত এ দৈর্ঘ্যটিই পরবর্তীকালে ইংরেজি ভাষায় স্টেডিয়ামরূপে গ্রহণ করা হয়েছে।

অধিকাংশ অভিধানেই 'স্ট্যাডিয়ামস্‌' এবং 'স্ট্যাডিয়া' - উভয় শব্দকেই স্টেডিয়ামের বহুবচন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

 
গ্রীসের এথেন্স নগরীতে অবস্থিত প্যানেথেনেইকো স্টেডিয়ামের স্থিরচিত্র।

অলিম্পিয়া-কে প্রাচীনতম স্টেডিয়াম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি গ্রীসের পশ্চিমাংশে পিলোগোনিজ এলাকার অলিম্পিয়া নগরীতে অবস্থিত। খ্রীষ্ট-পূর্ব ৭৭৬ সালে প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করা হতো। গেমসে একটিমাত্র বিষয় থাকতো।

গ্রীক ও রোমান স্টেডিয়ামগুলো অনেক প্রাচীন নগরে দেখা যায়। তন্মধ্যে, রোমের স্টেডিয়াম অব ডোমিশিয়ান খুবই জনপ্রিয় ও পরিচিত ছিল।

প্রাচীন স্টেডিয়াম হিসেবে আধুনিককালে বর্ধিত ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করে প্রথমবারের মতো ঊনবিংশ শতকে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। গ্রীসের প্যানেথেনেইকো স্টেডিয়ামে আধুনিক অলিম্পিক গেমস্‌ প্রতিযোগিতা ১৮৭০, ১৮৭৫, ১৮৯৬ এবং ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[৩]

সৌর-শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাইওয়ানের স্টেডিয়াম ইতিহাসের পর্দায় জায়গা করে নিয়েছে।[৪]

প্রাচীনতম স্টেডিয়াম সম্পাদনা

স্টেডিয়ামের নাম দেশ আনুমানিক বছর ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ট্র্যাকের প্রস্থ
স্টেডিয়াম অ্যাট অলিম্পিয়া গ্রীস খ্রীষ্ট-পূর্ব ৭৭৬ ২১২.৫৪ মি (৬৯৭.৩ ফু) ২৮.৫ মি (৯৪ ফু)
ডেলফি গ্রীস খ্রীষ্ট-পূর্ব ৫০০ ১৭৭ মি (৫৮১ ফু) ২৫.৫ মি (৮৪ ফু)
স্টেডিয়াম অব ডোমিশিয়ান ইতালি খ্রীষ্ট-পূর্ব ৮০ ২০০ মি (৬৬০ ফু) - ২৫০ মি (৮২০ ফু) (আনুমানিক)
আফ্রোডিসিয়াস তুরস্ক ২২৫ মি (৭৩৮ ফু) (প্রায়) ৩০ মি (৯৮ ফু) (প্রায়)

হিপোড্রোম সম্পাদনা

ঘোড়ার দৌড়ের জন্য গ্রীসের হিপোড্রোম স্টেডিয়ামগুলোকে প্রধান মানদণ্ড হিসেবে নিয়ে রোমের স্টেডিয়াম ও সার্কাস ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। হিপোড্রোম ও স্টেডিয়াম হয়তোবা একই আয়তনের ছিল। তবে সবচেয়ে বড় সার্কাস ভবনের আসন ব্যবস্থা ১০ গুণেরও বেশি ছিল।

বিখ্যাত স্টেডিয়াম সম্পাদনা

 
ইংল্যান্ডের লন্ডনে অবস্থিত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরভাগ।

শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম, এমিরেট্‌স স্টেডিয়াম, বেইজিং ন্যাশনাল স্টেডিয়াম, মারাকানা স্টেডিয়াম, আর্সেনাল স্টেডিয়াম, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন বা সল্টলেক স্টেডিয়াম, সিটি অফ ম্যানচেস্টার স্টেডিয়াম, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, সাবিনা পার্ক, ইডেন গার্ডেনস, রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম অন্যতম।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nussli Group "Stadium Construction Projects" আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে
  2. A Brief History of the Olympic Games by David C. Young, p. 20
  3. The Modern Olympic Games, A Struggle for Revival by David C. Young, Chapters 4 & 13
  4. Taiwan's solar stadium 100% powered by the sun Guardian

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা