হিথ স্ট্রিক

জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার

হিথ হিল্টন স্ট্রিক (ইংরেজি: Heath Streak; ১৬ মার্চ ১৯৭৪ – ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩) বুলাওয়াওতে জন্মগ্রহণকারী জিম্বাবুয়ের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারহিথ স্ট্রিক জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় ছিলেন। পাশাপাশি তিনি দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডানহাতি ব্যাটিং এবং প্রচণ্ড দম ও শক্তিমত্তায় ফাস্ট মিডিয়াম বোলিংয়ে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। ১৯৯৫/৯৬ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে মাতাবেলেল্যান্ড দলের হয়ে খেলেন। এই দলের পক্ষেই তার ৪৬ বছর বয়সী বাবা ডেনিস স্ট্রিক লনরো লোগান কাপে ম্যাশোনাল্যান্ড কান্ট্রি ডিস্ট্রিক্টস দলের হয়ে চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিয়েছিলেন যা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে গত ত্রিশ বছরের মধ্যে পিতা-পুত্রের একই দলের হয়ে অংশগ্রহণ। এছাড়াও, স্ট্রিকি, স্ট্যাক ডাকনামে পরিচিত স্ট্রিক আফ্রিকা একাদশ, আহমেদাবাদ রকেটস, হ্যাম্পশায়ার, ওয়ারউইকশায়ার দলে খেলেছেন। জিম্বাবুয়ের এডুকেশন ফ্যালকন কলেজে অধ্যয়ন করেছেন তিনি।

হিথ স্ট্রিক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামহিথ হিল্টন স্ট্রিক
জন্ম(১৯৭৪-০৩-১৬)১৬ মার্চ ১৯৭৪
বুলাওয়াও, রোডেশিয়া
মৃত্যু৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩(2023-09-03) (বয়স ৪৯)
মাতাবেলেল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে
ডাকনামস্ট্রিকি, স্ট্যাক
উচ্চতা৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি ব্যাটসম্যান
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার, অধিনায়ক, কোচ
সম্পর্কডেনিস স্ট্রিক (বাবা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২০)
১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ বনাম পাকিস্তান
শেষ টেস্ট২০ সেপ্টেম্বর ২০০৫ বনাম ভারত
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৩৪)
১০ নভেম্বর ১৯৯৩ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ ওডিআই৩১ আগস্ট ২০০৫ বনাম নিউজিল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯৪-২০০৪মাতাবেলেল্যান্ড
১৯৯৫হ্যাম্পশায়ার
২০০৪-২০০৭ওয়ারউইকশায়ার
২০০৭-২০০৮আহমেদাবাদ রকেটস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৬৫ ১৮৯ ১৭৫ ৩০৯
রানের সংখ্যা ১৯৯০ ২৯৪২ ৫৬৮৪ ৪০৮৮
ব্যাটিং গড় ২২.৩৫ ২৮.২৮ ২৬.৩১ ২৫.৭১
১০০/৫০ ১/১১ ০/১৩ ৬/২৭ ০/১৪
সর্বোচ্চ রান ১২৭* ৭৯* ১৩১ ৯০*
বল করেছে ১৩৫৫৯ ৯৪৬৮ ৩১১১৭ ১৪৭৪১
উইকেট ২১৬ ২৩৯ ৪৯৯ ৩৮৫
বোলিং গড় ২৮.১৪ ২৯.৮২ ২৮.৭৬ ২৮.৫৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৭
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ৬-৭৩ ৫-৩২ ৭-৫৫ ৫-৩২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৭/- ৪৬/- ৫৮/- ৭৫/-
উৎস: ক্রিকেট আর্কাইভ, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

খেলোয়াড়ী জীবন সম্পাদনা

কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর অক্টোবর, ২০০৫ সাল থেকে দুই-বছর মেয়াদে ওয়ারউইকশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৭ মৌসুমে এক খেলায় অধিনায়কত্ব করার পর ২৫ এপ্রিল, ২০০৭ তারিখে ওয়ারউইকশায়ারের অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তার মতে অধিনায়কত্বের ফলে তার ফিল্ডিং করার সক্ষমতা দলে প্রভাব পড়েছে। ড্যারেন ম্যাডি তার স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০৭ মৌসুম শেষে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ওয়ারউইকশায়ার ত্যাগ করেন।[১] জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত অবস্থায় সতীর্থ কয়েকজন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া রেড লায়ন্স দলের অধিনায়ক হিসেবে ইংল্যান্ডে অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে খেলায় অংশ নেন। ২০০৭ সালের শেষদিকে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে আহমেদাবাদ রকেটস দলের সদস্য ছিলেন। দুই মৌসুম আইসিএলে খেলার পাশাপাশি হংকং সিক্স প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছেন স্ট্রিক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে পাকিস্তান সফরে জিম্বাবুয়ে টেস্ট দলের হয়ে অভিষিক্ত হন তিনি। ৯-১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টেই তিনি ৮ উইকেট লাভ করেছিলেন। ১৩.৫৪ বোলিং গড়ে সিরিজ ২২ উইকেট লাভ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারও পেয়েছিলেন স্ট্রিক। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে পাকিস্তান জিম্বাবুয়ে সফরে এলে হারারেতে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টে তিনি তার সেরা টেস্ট বোলিং পরিসংখ্যান ৬/৯০ লাভ করেন। ২০০০-২০০১ মৌসুমে প্রথমে ইংল্যান্ড সফরে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের জিম্বাবুয়ে সফরে ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন। বিশেষ করে ২০০০ সালে চমৎকার পেস বোলিং ও বলকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে লর্ডসে তিনি একাকী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ বছরেই তিনি জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট প্রদত্ত দায়িত্ব ও বেতন-কোটার চাপে তিনি ছন্দ হারিয়ে ফেলেন ও পদত্যাগ করেন। ২০০২ সালে তিনি পুনরায় দায়িত্ব ফিরে পান কিন্তু জিম্বাবুয়ের দলের সাথে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আবারো আলোচনায় আসেন। হেনরি ওলোঙ্গাঅ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের প্রতিবাদের সাথে[২] তিনি একাত্মতা পোষণ করেননি। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে তার বোলিং ও ব্যাটিংয়ে দৈন্যতা প্রকাশ পায়। দলের ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক টানাপোড়নে অধিনায়কের গুরুভার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এপ্রিল, ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক অতিরিক্ত দল গঠনের নিশ্চয়তার বিষয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। বোর্ডের সাথে তার তিক্ততাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ও মার্চ, ২০০৫ সালে অবশেষে তিনি পদত্যাগ করেন।

জিম্বাবুয়ের একমাত্র বোলার হিসেবে তিনি টেস্টে শতাধিক ও একদিনের আন্তর্জাতিকে দুইজন জিম্বাবুয়ে বোলারের একজনরূপে গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের সাথে তিনিও শতাধিক উইকেট লাভ করেছেন। তিনি মৃতপ্রায় উইকেটে বলকে সিম করানোয় দক্ষ ছিলেন যা তাকে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা বোলারের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

কোচিং জীবন সম্পাদনা

২০০৯ সালে আইসিএল প্রতিযোগিতা থেকে চলে আসার পর ঐ বছরেরই আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব পান স্ট্রিক। এছাড়াও তিনি জিম্বাবুয়ের তরুণ ফাস্ট বোলারদেরকে প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত ছিলেন। এরপর ২৬ মে, ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক তিনি বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত হন।[৩] ২০১৬ পর্যন্ত দলের বোলিং পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও তিনি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন দলের পরামর্শকেরও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে স্ট্রিক তার সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনের ৬৫ টেস্টের মধ্যে ৬টি এবং ১০টি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

বিতর্ক সম্পাদনা

জিম্বাবুয়ের অধিনায়কত্ব থাকাকালে হিথ স্ট্রিক দি অবজারভার পত্রিকায় এক স্বাক্ষাৎকারে নৈতিকতার মুখোমুখি হন। তিনি তামাশাপূর্ণ অবস্থায় শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়দের মাঝে যথেষ্ট প্রতিভা নেই ও কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়েরা তাদের স্থান দখল করবে বলে মন্তব্য করেছিলেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Streak ends Warwickshire stint
  2. "Andy Flower & Henry Olonga: the 'death of democracy' remembered"BBC Sport। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। 
  3. "Heath Streak appointed Bangladesh bowling coach"espncricinfo.com। ২৬ মে ২০১৪। 
  4. "Triumph and despair"। observer.guardian.co.uk। ৩০ আগস্ট ২০১৪। 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

পূর্বসূরী
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার
জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
২০০০/০১-২০০১/০২
উত্তরসূরী
ব্রায়ান মার্ফি
পূর্বসূরী
অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেল
জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
২০০৩-২০০৩/০৪
উত্তরসূরী
তাতেন্দা তাইবু