আর্চি জ্যাকসন

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার

আর্চিবল্ড আর্চি জ্যাকসন (ইংরেজি: Archie Jackson; জন্ম: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯০৯ - মৃত্যু: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩) স্কটল্যান্ডের রাদারগ্লেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ছিলেন। সহজাত ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আর্চি জ্যাকসন ১৯২৯ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

আর্চি জ্যাকসন
১৯৩০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আর্চি জ্যাকসন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্চিবল্ড জ্যাকসন
জন্ম(১৯০৯-০৯-০৫)৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৯
রাদারগ্লেন, স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩(1933-02-16) (বয়স ২৩)
ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ স্পিন
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৩০)
১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২৬-১৯৩০নিউ সাউথ ওয়েলস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৭০
রানের সংখ্যা ৪৭৪ ৪৩৮৩
ব্যাটিং গড় ৪৭.৪০ ৪৫.৬৫
১০০/৫০ ১/২ ১১/২৩
সর্বোচ্চ রান ১৬৪ ১৮২
বল করেছে ৮৬
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ০/৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৭/– ২৬/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার সুগভীর আসক্তি লক্ষ্য করা যায়। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই প্রথম স্তরের ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান। এরপর ১৭ বছর বয়সে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[১]

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আলেকজান্ডার ও মার্গারেট দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম পুত্র সন্তান ছিলেন তিনি। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর কাছাকাছি ছোট শহর রাদারগ্লেনে ১৯০৯ সালে জন্ম হয় তার। তার বাবা শৈশবকাল অস্ট্রেলিয়ায় অতিবাহিত করেন ও পরিবারসহ পুনরায় ১৯০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে সিডনির কাছাকাছি বলমেইন এলাকায় নিবাস গড়েন।[২]

অ-ধূমপায়ী ছিলেন তিনি। বার্চগ্রোভ পাবলিক ও রোজেল জুনিয়র টেকনিক্যাল স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এ সময়ে নিউ সাউথ ওয়েলসের ছাত্র হিসেবে ফুটবল ও ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেন।[৩] বলমেইন ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেটে ক্লাবের কাছাকাছি এলাকায় বড় হন কিশোর বয়সে ক্লাবের যোগ দেন। অধিনায়ক ও টেস্ট বোলার আর্থার মেইলি’র সুনজরে আসেন তিনি।[৪]

খেলোয়াড়ী জীবন সম্পাদনা

১৯২৮-২৯ মৌসুমে পার্সি চ্যাপম্যানের নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী ইংরেজ দল পাঁচ টেস্টের অ্যাশেজ সিরিজের জন্য অস্ট্রেলিয়া সফরে আসে।[৫] কিন্তু টেস্ট দলে নির্বাচনের জন্য মেলবোর্নের প্রস্তুতিমূলক খেলায় দুইবারই অকৃতকার্য হন।[৬] অন্যদিকে দলীয় সঙ্গী ডন ব্র্যাডম্যান ও অ্যালান কিপাক্স উভয়েই সেঞ্চুরি করলে ব্রিসবেন একজিবশন গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হন জ্যাকসন।[৭] প্রথম তিন টেস্টে হারার পাশাপাশি অ্যাশেজ হারানোর পর দল নির্বাচকমণ্ডলী তাকে চতুর্থ টেস্ট খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার টেস্টে অভিষেক হয়।[৮]

 
আর্চি জ্যাকসন

ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৩৪ রান সংগ্রহ করে। জবাবে বিল উডফুলের সাথে ব্যাটিংয়ে নামেন আর্চি জ্যাকসন।[৯] টেস্ট শুরুর পূর্বে অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের জ্যাক রাইডার কিপাক্সের কাছে তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে জ্যাকসনের ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনের বিষয়ে অভিমত জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে কিপাক্স বলেছিলেন, আমি নিশ্চিত উদ্বোধনে সে আশাতীত ভালো করবে।[১০] অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১৯/৩ হবার পর রাইডার জ্যাকসনের সাথে যোগ দেন। হ্যারল্ড লারউডের ধ্বংসাত্মক পেস মোকাবেলা ও মরিস টেটের লেগ সাইডের বোলিং আস্থার সাথে মোকাবেলা করেন তিনি। এ জুটি ১০৫ মিনিটে ১০৫ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করে ১৩১/৩।[৯]

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯ তারিখে ১৯ বছর ১৪৯ দিন বয়সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে।[১১] খেলার উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল প্রথম ইনিংসেই তার শতরানের সন্ধান পাওয়া। এরফলে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার গৌরবগাঁথা রচনা করেন তিনি।

১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসার পূর্বে কিছু পর্যবেক্ষক জ্যাকসনকে সেরা ব্যাটসম্যানরূপে ব্যাটিং উদ্বোধনে বা এর পরের অবস্থানের উপযোগী হিসেবে মনে করতেন।[১২][১৩] দূর্বল স্বাস্থ্য, অসুস্থতা ও স্থানীয় পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করায় ইংল্যান্ড সফরে তেমন সুবিধা করতে পারেননি।[১৪] ঐ সফরে পাঁচ টেস্টের মধ্যে কেবলমাত্র দুই টেস্টেই অংশগ্রহণ ছিল তার। ঐ বছরের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে অপরাজিত ৭০* রান তোলেন।

 
বিল উডফুলের সাথে ব্যাট হাতে জ্যাকসন (ডানে)

খেলার ধরন সম্পাদনা

দর্শনীয় ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনের অধিকারী ছিলেন তিনি। বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ভিক্টর ট্রাম্পার, অ্যালেক্স কিপাক্সের সাথে তার ব্যাটিংশৈলীর বেশ মিল রয়েছে। ডন ব্র্যাডম্যানের শুরুর দিকের খেলার ধরনের সাথেও তার টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণীর খেলার বেশ মিল ছিল যা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। প্রায়শঃই ব্র্যাডম্যানের সাথে তাকে তুলনা করা হতো।

দেহাবসান সম্পাদনা

১৯৩১-৩২ মৌসুমে কাশির সাথে রক্ত বেরিয়ে আসে ও শেফিল্ড শিল্ডে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শুরুর পূর্বে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সিডনির পশ্চিমে অবস্থিত ব্লু মাউন্টেইনসে তাকে দ্রুত ভর্তি করানো হয়! পরীক্ষান্তে তার দেহে যক্ষ্মার জীবাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।[১৫] পাঁচদিন পর ছাড়পত্র পান তিনি। নিজ স্বাস্থ্যোন্নতির চেষ্টা চালান ও বান্ধবীর কাছাকাছি আসেন।[১৫] এরপর তারা ব্রিসবেনে চলে যান।[১৬] ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩ সালে বান্ধবী ফাইলিসের সাথ তার বাগদানের কথা ঘোষণা করেন।[১৭]

চিকিৎসকের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে জ্যাকসন পুনরায় স্থানীয় দলের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ করেন। ফলশ্রুতিতে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩ তারিখে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে। ২০০৭ সালে মানজারুল ইসলাম রানা’র অকালমৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত তিনিই সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন।[১৮]

জীবিত থাকাকালীন ডন ব্র্যাডম্যানের প্রবল প্রতিপক্ষরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি।[১৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "List of Players who have played for New South Wales". www.cricketarchive.com. Retrieved 31 May, 2017
  2. Frith, p. 5.
  3. Nairn, Bede (২০০৬)। "Jackson, Archibald (Archie) (1909–1933)"Australian Dictionary of Biography, Online Edition,Australian National University। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৮ 
  4. Frith, p. 8.
  5. Frith, p. 34.
  6. Frith, p. 35.
  7. Frith, pp. 36–37.
  8. Frith, pp. 38–39.
  9. Frith, pp. 39–41.
  10. Harte, pp. 314–315. The distance between the Sun building on Elizabeth St and Kippax's store was around 880 yards (800 m) or less.
  11. Youngest players on debut for Australia in Test matches – CricketArchive. Retrieved 10 January 2017
  12. Frith, pp. 53–57.
  13. "JACKSON, MR. ARCHIBALD"Wisden Cricketers' Almanack obituary। as published on Cricinfo। ১২ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-১৯ 
  14. Frith, pp. 62–63.
  15. Frith, p. 93.
  16. Frith, p. 88.
  17. Frith, p. 100.
  18. "Shortest lived players"CricinfoRecords। Cricinfo। ২০০৭-০৩-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৬ 
  19. Williamson, Martin. "A better batsman than Bradman?", 27 October 2007, Cricinfo. Retrieved on 5 March 2008.

আরও দেখুন সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জী সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা