হ্যারল্ড লারউড
হ্যারল্ড লারউড (ইংরেজি: Harold Larwood; জন্ম: ১৪ নভেম্বর, ১৯০৪ - মৃত্যু: ২২ জুলাই, ১৯৯৫) নটিংহ্যামশায়ারের নানকারগেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯২৪ থেকে ১৯৩৮ সময়কালে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার ছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তিনি। অপ্রত্যাশিত গতিতে ও নিখুঁত লক্ষ্যে বোলিং করতে সম্যক পারদর্শীতা দেখিয়েছেন লারউড।[১] অনেক ধারাভাষ্যকারের মতে, তিনি তার সময়কালের অন্যতম সেরা বোলার ছিলেন। বডিলাইন নামে পরিচিত বিশেষ ধরনের বোলিংয়ের প্রবর্তন করে পরিচিত পেয়েছেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | হ্যারল্ড লারউড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | নানকারগেট, নটিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড | ১৪ নভেম্বর ১৯০৪|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২২ জুলাই ১৯৯৫ র্যান্ডউইক, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া | (বয়স ৯০)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উচ্চতা | ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি ফাস্ট | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২২৫) | ২৬ জুন ১৯২৬ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৪-১৯৩৮ | নটিংহ্যামশায়ার | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৩৬-১৯৩৭ | ইউরোপিয়ান্স (ভারত) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ক্রিকইনফো, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৪ নভেম্বর, ১৯০৪ তারিখে নটিংহ্যামশায়ারের নানকারগেট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হ্যারল্ড লারউড।[২] রবার্ট লারউড ও মেরি দম্পতির পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি চতুর্থ ছিলেন।[২] পাঁচ বছর বয়সে তিনি কির্কবি উডহাউজ স্কুলে ভর্তি হন। এ সময়েই ছোট্ট গ্রামটিতে ভবিষ্যতের সমসাময়িক উইলিয়াম ডজ হোয়াইসল, স্যাম স্টেপল, বিল ভোস ও জো হার্ডস্টাফ জুনিয়র - এ চারজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার তার সাথে খেলেছিলেন।[৩] ১৯১৭ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিদ্যালয় ত্যাগ করে স্থানীয় খনি সমবায় সংস্থায় কাজ করেন।[৪] কয়লা খনি শ্রমিকের সন্তান লারউড ১৪ বছর বয়সেই খনিতে কাজ করতে শুরু করেন। ক্লাব ক্রিকেটে সফলতার কারণে ছোট-খাঁট গড়নের অধিকারী লারউডকে নটিংহ্যামশায়ার দলের সদস্য মনোনীত করা হয়।[৫] কালক্রমে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বোলারে পরিণত হয়েছিলেন।
খেলোয়াড়ী জীবন
সম্পাদনাপ্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব দ্বিতীয় মৌসুমেই ১৯২৬ সালে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে।[৬] ১৯২৮-২৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন। ঐ অ্যাশেজ সফরে দলটি ট্রফি অক্ষুণ্ন রাখতে সমর্থ হয়। কিন্তু, ১৯৩০ সালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের অসাধারণ ব্যাটিং প্রতিভা ডন ব্র্যাডম্যানের একচ্ছত্র প্রাধান্যতার প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়া ট্রফি জয় করে।
বডিলাইন সিরিজ
সম্পাদনা১৯৩১ সালে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিত সিরিজের কথা মনে রেখে দল নির্বাচকমণ্ডলী জারদিনকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক মনোনীত করেন।[৭] ইংল্যান্ডের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের অধিকারী অধিনায়ক ডগলাস জারদিনের পরামর্শক্রমে ফাস্ট লেগ তত্ত্ব বা বডিলাইন বোলিং আক্রমণের দিকে মনোনিবেশ ঘটান ফলশ্রুতিতে ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রয়োজনীয় সফলতা লাভ করে। কিন্তু অস্ট্রেলীয়দের কাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ডটি অখেলোয়াড়ীসুলভ আচরণের পর্যায়ে চলে যায়। ফলে, ১৮ জানুয়ারি, ১৯৩৩ তারিখে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড এমসিসি বরাবরে তারবার্তা প্রেরণ করে। উভয় দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক অনেকাংশেই ভেঙ্গে পড়ে। লারউড তার বোলিংয়ের জন্য ক্ষমা চাইতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, তিনি অধিনায়ক জারদিনের নির্দেশনায় এ ধরনের বোলিং করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আর কখনও ইংল্যান্ড দলে টেস্ট খেলেননি। এরপর অবশ্য তিনি আরও কয়েক মৌসুম নিজ কাউন্টিতে সফলতার সাথে অতিবাহিত করেছিলেন।
সম্মাননা
সম্পাদনা১৯২৬ সালে জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে ১৬.৯৫ গড়ে শতাধিক উইকেট লাভ করার প্রেক্ষিতে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে তাকে মনোনীত করা হয়।[২][৮] ১৯৪৯ সালে এমসিসি’র সম্মানিত সদস্য হিসেবে মনোনীত হন তিনি। পরের বছরই সাবেক প্রতিপক্ষীয় জ্যাক ফিঙ্গলটনের অনুরোধক্রমে পাঁচ কন্যাসহ স্বপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসিত হন।[৯][১০] সেখানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। একটি কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।[১১] সফরকারী ইংল্যান্ড দলের সাথে প্রতিবেদক ও ধারাভাষ্যকারের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও মাঝে-মধ্যেই ইংল্যান্ড ভ্রমণে যেতেন। ট্রেন্ট ব্রিজের একটি স্ট্যান্ড তার নামে নামঙ্কিত করে তাকে সম্মাননা জানানো হয়। বেশ দেরীতে হলেও ক্রিকেট খেলায় অসামান্য অবদান রাখার প্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালে ৮৮ বছর বয়সে তাকে এমবিই পদবীতে ভূষিত করা হয়। এর দুই বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় তার দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Hamilton, pp. 34–38
- ↑ ক খ গ Wynne-Thomas, Peter (জানুয়ারি ২০১১)। "Larwood, Harold"। Oxford Dictionary of National Biography Online edition। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Hamilton, pp. 50–54
- ↑ "Nuncargate – Larwood's Village"। Ashfield District Council। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Hamilton, p. 27
- ↑ Hamilton, pp. 71–72
- ↑ Le Quesne, p. 161
- ↑ Hamilton, pp. 356–58
- ↑ Larwood and Perkins, pp. 254–56
- ↑ Hamilton, pp. 259–60
- ↑ Obituary: Harold Larwood in Wisden Cricketers' Almanack 1996। London: John Wisden & Co। ১৯৯৬। আইএসবিএন 0-947766-32-4।
আরও দেখুন
সম্পাদনাগ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- Arlott, John (১৯৯০)। Basingstoke Boy। London: Willow Books। আইএসবিএন 0-00-218351-X।
- Birley, Derek (২০০০)। A Social History of English Cricket। London: Aurum Press। আইএসবিএন 1-85410-710-0।
- Blythe, Ronald (১৯৬৪)। The Age of Illusion। Harmondsworth, UK: Penguin Books। ওসিএলসি 10971329।
- Compton, Denis (১৯৪৮)। Playing for England। London: Samson, Low, Marston & Co। ওসিএলসি 792776114।
- Douglas, Christopher (১৯৮৪)। Douglas Jardine: Spartan Cricketer। Hemel Hempstead, UK: George Allen and Unwin। আইএসবিএন 0-04-796083-3।
- Fingleton, Jack (১৯৮৪)। Cricket Crisis। London: The Pavilion Library। আইএসবিএন 0-907516-68-8। [First published 1946]
- Frindall, Bill (১৯৮০)। The Wisden Book of Test Cricket 1876–77 to 1977–78। London: Macdonald and Jane's। আইএসবিএন 0-354-08535-2।
- Frith, David (২০০২)। Bodyline Autopsy। London: Aurum Press। আইএসবিএন 1-85410-931-6।
- Hamilton, Duncan (২০০৯)। Harold Larwood। London: Quercus। আইএসবিএন 978-1-84916-207-4।
- Jardine, Douglas (১৯৩৩)। In Quest of the Ashes। London: Hutchinson & Co। ওসিএলসি 774642047।
- Larwood, Harold and Perkins, Kevin (১৯৮৫)। The Larwood Story। Harmondsworth, UK: Penguin Books। আইএসবিএন 0-14-007018-4। [First published 1965]
- Le Quesne, Laurence (১৯৮৩)। The Bodyline Controversy। London: Unwin Paperbacks। আইএসবিএন 0-04-796098-1।
- Parkinson, Michael (১৯৮৪)। "Introduction"। Fingleton, Parkinson। Cricket Crisis। London: The Pavilion Library। আইএসবিএন 0-907516-68-8।
- Perry, Roland (২০০১)। The Don, 1908–2001। London: Virgin Books। আইএসবিএন 0-7535-0408-1।
- Swanton, E.W. (১৯৬২)। A History of Cricket (Volume II)। London: George Allen and Unwin। ওসিএলসি 17890016।
- Webber, Roy (১৯৫৩)। The Australians in England। London: Hodder & Stoughton। ওসিএলসি 2944003।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে হ্যারল্ড লারউড (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে হ্যারল্ড লারউড (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- A 15-second clip of Larwood's run-up and delivery Filmed during the third Test at Adelaide, January 1933, this shows the ball that hit and injured Oldfield.