আমিনপুর থানা
আমিনপুর থানা পাবনা জেলার একটি থানা।
আমিনপুর | |
---|---|
থানা | |
বাংলাদেশে আমিনপুর থানার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৫৩′ উত্তর ৮৯°৩৭′ পূর্ব / ২৩.৮৮৩° উত্তর ৮৯.৬১৭° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | পাবনা জেলা |
প্রতিষ্ঠা | ২০ অক্টোবর, ২০১৩ |
আসন | পাবনা ০২ আসন(সংসদীয় ৬৯ আসন) |
সরকার | |
আয়তন | |
• মোট | ২২৭.৩৮ বর্গকিমি (৮৭.৭৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১৩) | |
• মোট | ২,৯৫,৩৩৪ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৪০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৩% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৬৬৮২ |
অবস্থান
সম্পাদনাআমিনপুর থানার দক্ষিণে রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর উপজেলা ও গোয়ালন্দ উপজেলা পূর্বে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলা ও শিবালয় উপজেলা পশ্চিমে জেলার সুজানগর উপজেলা উত্তরে জেলার সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলা
ইতিহাস
সম্পাদনাআমিনপুর নামটি আরবি শব্দ 'আমিন' থেকে নেওয়া হয়েছে। 'আমিন' শব্দের একাধিক অর্থ রয়েছে। 'আমিন ' শব্দের এক অর্থ জমি জরিপকারী। আরেক অর্থ তদারককারী। আমিনপুর গ্রামটি একটি প্রাচীন গ্রাম। মোগল আমলে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে। তখন মোগল কর্মচারী স্বরূপ কিছু মুসলমান ভূমি জরিপকারী 'আমিন' এখানে অস্থায়ী বসতি স্থাপন করে। এবং এই স্থানটির নামকরণ করা হয় আমিনপুর। মতান্তরে ; আমিনপুর গ্রামটি পূর্ব সিন্দুরী গ্রামের একটি পাড়া ছিল। এককালে এখানে সম্ভ্রন্ত মুসলমানদের বসতি ছিল। জৈনিক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ' আমিন' সাহেবের নামানুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয় - আমিনপুর।
সূত্রঃ- পাবনা জেলার গ্রামের নামকরণের ইতিহাস - ১৪।
লোকমুখে এটাও প্রচলিত আছে আমিন নামের এক সাধু আমিনপুরে অবস্থান করেছিলো, এবং রাসূলুল্লাহ হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর নামের শেষে আমিন বলা হত সেইজন্য সেই সাধুর অনুরোধে গ্রামের নাম আমিনপুর নাম করন করা হয়।
১৯৯৫ সালের দিকে পাবনার সন্ত্রাস কবলিত এলাকা হিসাবে ঢালারচর এলাকা পরিচিতি পায়।[১] সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তৎকালিন সরকার ১৯৯৭ সালে আমিনপুর গ্রামে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে এবং তারই ধারাবাহিকতাই ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর তৎকালিন পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার মার্শাল অব এ কে খন্দকার পাবনার ১১ তম থানা হিসাবে আমিনপুর থানা উদ্ভোধন করেন।[২]
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাআমিনপুর থানা মোট ৮ টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ২টি নৌ ফাঁড়ি নিয়ে গঠিত।[২]
বেড়া উপজেলা থেকে ৫ টি ও সুজানগর উপজেলা থেকে ৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আমিনপুর থানা।[৩]
ইউনিয়নগুলো হলো:
ফাড়িগুলো হলো ঃঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাআমিনপুর থানা সদর হতে পাবনা জেলা শহরের দুরুত্ব ৪৯ কিলোমিটার। বিভাগীয় শহর রাজশাহীর দুরুত্ব ১৫৩ কিলোমিটার। সড়ক পথে রাজধানী ঢাকা'র দূরত্ব ২০১ কিলোমিটার এবং আরিচা - কাজিরহাট হয়ে এই দুরুত্ব একশো কিলোমিটারেরও কম। এছাড়াও আমিনপুর থানা সদর হতে সকল ইউনিয়নের দুরুত্ব ১০ কিলোমিটারের মধ্যে।
রাস্তাঘাটঃ ৭৫% পাকা,১৫% আধা পাকা,১০% কাঁচা রাস্তাঘাট রয়েছে।
নৌপথঃ আমিনপুর থানার মধ্যে দুইটি নৌবন্দর রয়েছে। একটি নগরবাড়ী নৌ বন্দর ও আরেকটি কাজীরহাট। কাজীরহাট - আরিচা নৌরুট দিয়ে আমিনপুর থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টায় ঢাকা পৌছানো যায়।
রেল পথঃ আমিনপুর থানার মধ্য দিয়ে ঢালারচর-পাবনা-রাজশাহী রেল রাস্তাটি চলে গিয়েছে।
এইখানে দুটি স্টেশন রয়েছেঃ
- বাঁধেরহাট রেলওয়ে স্টেশন (কদমতলা)
- ঢালারচর রেলওয়ে স্টেশন (গোয়াল নগর)
স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য ভ্যানগাড়ি, ইলেকট্রিক অটো-রিক্সা ও সিএনজি অন্যতম।
অর্থনীতি
সম্পাদনাআমিনপুর থানার ৬০% লোক কৃষি কাজ করে,৩০% বস্ত্রশিল্পের,এবং বাকি ১০% অন্যান্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাআমিনপুর থানা অন্তর্গত এলাকায় বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারমধ্যে উল্যেখযোগ্য হলো, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (আমিনপুর বাজার), ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং (আমিনপুর বাজার), বেসরকারি এনজিও যেমন, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক ইত্যাদি। এছাড়াও যেকোন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে এখানে।
হাট-বাজার
সম্পাদনাআমিনপুর থানায় উল্লেখ্যযোগ্য হাট-বাজার রয়েছে যেগুলো সাপ্তাহে ২ দিন হাট বসে এবং সব সময় কাচামাল পাওয়া যায়।
সর্বমোট হাটঃ ১৪ টি, বাজারঃ ১৯ টি।
- শ্যামগঞ্জ হাট
- কাজিরহাট বাজার(সকাল এর সব চেয়ে বড় বাজার)
- আমিনপুর
- নগরবাড়ি হাট
- মাশুমদিয়া বাজার
- আমিনপুর নতুন বাজার
- সাগরকান্দী বাজার
- বাধেরহাট (পাইকেরি বড় বাজার)
- চব্বিশ মাইল হাট-বাজার
- কয়া বাজার
- খলিলপুর বাজার
- টাকিগাড়া বাজার
- ত্রীমোহনি বাজার
- ভূরকুলিয়া বাজার
- মালদাহ হাট উল্লেখযোগ্য।
নদীসমূহ
সম্পাদনাআমিনপুর থানা অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে মৃতপ্রায় আত্রাই নদী চলে গিয়েছে, এবং পূর্বে যমুনা নদী, দক্ষিণে পদ্মা নদী প্রবহমান এবং বাদাই নদী। এবং গাজনার বিল প্রসিদ্ধ।
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনাধর্ম ও ধর্মীয় উৎসব
সম্পাদনাআমিনপুরে রয়েছে দুই ধর্মের লোক। মুসলমান ও হিন্দু। আমিনপুরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর শতভাগই সুন্নী মুসলমান। আমিনপুরের হিন্দু-মুসলমানরা ভ্রাতৃবোধ বজায় রেখে চলাফেরা করে। এই এলাকার মুসলিমদের আসল ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদ উল ফিতর, ঈদ উল আযহা, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (ﷺ), শবে বরাত, আশুরা ইত্যাদি। এই এলাকার বেশির ভাগ মুসলমানগণ আঞ্জুমান ই কাদেরীয়া তরিকার অনুসারী। এরা ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (ﷺ) ও জশনে জুলুস পালন করে। এরা প্রত্যেক মাসেই ১১ই শরীফ পালন করে থাকেন। আর, হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। তাছাড়াও তারা তাদের ছোট-বড় সকল উৎসব সসম্প্রীতি বজায় রেখে পালন করে থাকেন।
খাদ্য
সম্পাদনাআমিনপুর থানার সকল মানুষের প্রধান খাবার হলো ভাত৷ এছাড়াও রুটি, ডাল, শাক-সবজি, মাছ, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদিও খুব জনপ্রিয় খাদ্য। পান্তা ভাত ও বাসি ভাতের চাহিদাও এই এলাকাতে বেশ দেখা যায়। এখানকার হিন্দুরা সাধারণত গরুর মাংস, মুরগী ইত্যাদি খায় না।
শিক্ষা
সম্পাদনাআমিনপুর থানার শিক্ষার হার ৬২% তার মধ্যে (পুরুষ ৩৫%,মহিলা ২৭%)। আমিনপুর থানার কলেজ সংখ্যা ৮ টি,উচ্চ বিদ্যালয় ২৪ টি,প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮০ টি,মাদ্রাসা ২০টি,ভোকেশনাল ২ টি। কলেজসমূহঃ
- মেরিন একাডেমী,
- কাশিনাথপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ,
- মাসুমদিয়া কে.জে.বি. ডিগ্রি কলেজ,
- ধোবাকোলা করনেশন উচ্চবিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজ
- তালিমনগর শাহ মাহাতাব উদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজ
- রানীনগর উচ্চবিদ্যালয় ডিগ্রি কলেজ
- সৈয়দপুর স্কুল এবং কলেজ
- শহীদ স্বরনিকা ডিগ্রি কলেজ
উচ্চবিদ্যালয়:
- ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়, সন্নাসীবাধা
- ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়, নাটিয়াবাড়ী
- খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- রতনগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
- বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
- কাজীরহাট উচ্চ বিদ্যালয়
- রানীনগর উচ্চ বিদ্যালয়, ভাটিকয়া
- সাগরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়
- মাশুমদিয়া ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- আমিনপুর আয়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়
- তালিমনগর শাহ মাহতাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
- খানপুরা উচ্চ বিদ্যালয়
- দুর্গাপুর নেছারা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- দ্বারিয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়
- কদিম মালঞ্চী উচ্চ বিদ্যালয়
- বিরাহিমপুর আলহাজ্ব মির্জা আব্দুর রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়
- বাঘুলপুর আলহাজ্ব ইমান আলী উচ্চ বিদ্যালয়
- রাণীনগর বিল গাজনা স্কুল ও কলেজ
- ঢালারচর উচ্চ বিদ্যালয়
- ফকিরকান্দি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- হরিনাথপুর এসইএসডিপি মডেল স্কুল উচ্চ বিদ্যালয়
- সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- শহীদ স্মরণিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
মাদ্রাসা সমূহঃ
- আমিনপুর বাতেনীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা।
- কাজির হাট দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসা।
- পুরান মাশুমদিয়া হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
- আহম্মাদপুর আহমদিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
- সৈয়দপুর দাখিল মাদ্রাসা।
- সাগরকান্দি ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা।
- সাগরকান্দি কাশেমুল উলুম মাদ্রাসা ও লিল্লাহ্ বোডিং।
- মাশুন্দিয়া ভবানীপুর দাখিল মাদ্রাসা।
- বিরাহিমপুর আশরাফুল উলুম কওমী মাদ্রাসা।
- নান্দিয়ারা বাতেনিয়া হাফিজিয়া কওমীয়া মাদ্রাসা।
- আহম্মদপুর উত্তরপাড়া মদিনাতুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা।
- নয়াবাড়ি কওমি মাদ্রাসা।
- যদুপুর দারুলউলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানা।
- দাঁতিয়া কাওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা।
- ভাটিকয়া দাখিল মাদ্রাসা।
- সুলতানগেট সাগরকান্দী কাওমীয়া মাদ্রাসা।
স্বাস্থ্যসেবা
সম্পাদনাআমিনপুর থানায় ১ টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে এবং ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র: ১.রাজনারায়নপুর উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
ইউনিয়ন স্বাস্থসেবা:
- পুরান ভারেংগা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
- জাতসাখিনী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
- রূপপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
- মাশুমদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
- ঢালারচর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
- সাগরকান্দী ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
- রানীনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
- আহম্মদপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
সম্পাদনা- এ কে খন্দকার, (বীর উত্তম)
- মির্জা আজিজুল ইসলাম
- বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) মোঃ লিয়াকত আলী খান
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৮।
- ↑ বেড়ার ৫ ও সুজানগরের ৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে আমিনপুর থানা http://bm.thereport24.com/article/386/index.html