আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ
আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ (১৯৪৯-১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ব্যাচের অফিসারদের একজন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[১]
আবু মঈন মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২০ নভেম্বর ১৯৭১ | (বয়স ২২)
মৃত্যুর কারণ | মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া |
সমাধি | জয়মনিরহাট |
মাতৃশিক্ষায়তন | |
প্রতিষ্ঠান | মুক্তি বাহিনী |
আদি নিবাস | সতেরো দরিয়া, করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ |
পিতা-মাতা |
|
পুরস্কার | বীর উত্তম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআবু মঈন মো. আশফাকুস সামাদ ১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার সতেরো দরিয়া গ্রামে। তার পিতা আ ম আজিজুস সামাদ ছিলেন আবগারী বিভাগের কর্মকর্তা; আর মাতা সাদেকা সামাদ ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। ঢাকার সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন।[২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনাপ্রশিক্ষণ
সম্পাদনা১৯৭১ সালে সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, ২৯ মার্চ তিনি তার কিছু বন্ধুদের নিয়ে কিশোরগঞ্জ যান। সেখানে ২ ও ৪ নং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করেন। তারপর সামাদ ভারতের আগরতলায় যান এবং প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে[১] সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[২]
মুক্তিযুদ্ধে অবদান
সম্পাদনাপ্রশিক্ষণ শেষে সামাদ সেক্টর-২ এর অধীনে কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। পরবর্তীতে ৯ অক্টোবর তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন পান এবং সেক্টর-৬ এর সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টরের একটি কোম্পানির কমান্ডারের দায়িত্ব পান। জয়মনিরহাট, ভুরুঙ্গামারী, রায়গঞ্জ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার নেতৃত্বেই ভুরুঙ্গামারী এবং আশেপাশের এলাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সেখানে মুক্তাঞ্চল গঠন করা হয়।[২]
রায়গঞ্জের যুদ্ধ এবং মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর মধ্যরাতে (অর্থাৎ, ২০ নভেম্বর) কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জে যুদ্ধটি ঘটে। ১৪ নভেম্বর ভূরুঙ্গামারী থেকে পিছু হটে[৩]পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫-পাঞ্জাব রেজিমেন্ট রায়গঞ্জ সেতুর পাশে ঘাঁটি তৈরি করেছিল। এ ঘাঁটি দখল করতে মুক্তিযোদ্ধারা লেফটেন্যান্ট সামাদ এবং লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহর নেতৃত্বাধীন দুটি দলে বিভক্ত হয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু, সেতুর নিচে যে পাক সেনারা এলএমজিসহ বাঙ্কার তৈরি করেছে সে খবর তারা পাননি। ফলে, যাওয়ার পথে তারা নিজেরাই পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আক্রান্ত হন। আকস্মিক এ বিপর্যয়ে বিচলিত না হয়ে সামাদ সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করতে থাকলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনিসহ তার অনেক সহযোদ্ধা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।[৪][৫]
পরবর্তীতে, কমান্ডার বাশারের নেতৃত্বাধীন একটি দল এ ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। ফলে ২১ নভেম্বর ২৫-পাঞ্জাব রেজিমেন্ট পিছু হটে নাগেশ্বরীতে চলে যেতে বাধ্য হয়।[৫] তখন সামাদের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং যথাযথ মর্যাদায় জয়মনিরহাট মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।[৬]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সামাদকে মরণোত্তর বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। স্থানীয়রা সামাদের শেষ যুদ্ধক্ষেত্র জয়মনিরহাটের নাম রাখেন সামাদ নগর।[২]
তাঁর সম্মানে ঢাকার মতিঝিলের দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত সড়কটির নাম রাখা হয়েছে বীরউত্তম আশফাকুস সামাদ সড়ক। [২] এছাড়াও, তার নামানুসারে জয়মনিরহাটের লে. সামাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং রংপুর ক্যান্টনমেন্টের বীরউত্তম শহীদ সামাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে।[৭]
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ৩০-০৩-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ৩০-০৩-২০১২"। ২০২০-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (২০১২)। "সামাদ, আশফাকুস"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২০।
- ↑ "আজ শহীদ লে. সামাদ বীরউত্তমের ৪২ তম শাহাদৎবার্ষিকী"। যুগান্তর। ২০ নভেম্বর ২০১৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৩৯। আইএসবিএন 9789849025375।
- ↑ ক খ মামুন, মুনতাসির। "মুক্তিযুদ্ধ কোষ Part 8b | সংগ্রামের নোটবুক"। ২০২০-০৮-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২০।
- ↑ "২৩ গণকবর ও বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে"। সমকাল। ২০২০-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-২০।
- ↑ "আজ শহীদ লে. সামাদ বীরউত্তমের ৪২ তম শাহাদৎবার্ষিকী"। যুগান্তর। ২০ নভেম্বর ২০১৩।