সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (জন্ম: ৪ অক্টোবর, ১৯৪৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২] তিনি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।
মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | উত্তর বুড়িশ্চর, চট্টগ্রাম, পূর্ব পাকিস্তান | ৪ অক্টোবর ১৯৪৯
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফোরকান ইবরাহিম |
সন্তান | ১ পুত্র, ১ কন্যা |
পিতামাতা | এস এম হাফেজ আহমেদ (বাবা), সামসুন্নাহার (মা) |
বাসস্থান | ডিওএইচএস মহাখালী, ঢাকা, বাংলাদেশ |
জীবিকা | সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ |
পুরস্কার | বীর প্রতীক |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | ![]() ![]() |
শাখা | ![]() ![]() |
কাজের মেয়াদ | ১৯৭০-১৯৭১ (পাকিস্তান) ১৯৭১-১৯৯৬ (বাংলাদেশ) |
পদ | মেজর জেনারেল |
জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার উত্তর বুড়িশ্চর গ্রামে। তার বাবার নাম এস এম হাফেজ আহমেদ এবং মায়ের নাম মা শামসুন নাহার। তার স্ত্রীর নাম ফোরকান ইবরাহিম। তাদের এক মেয়ে, এক ছেলে।
কর্মজীবনসম্পাদনা
১৯৭১ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরিরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।
তিনি পরে মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশন নামের একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হন। ২০০৬-০৮ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সময়, তিনি ডিসেম্বর ২০০৭ সালে "বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি" নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালে তার দলটি কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। তিনি ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ এ পুনরায় দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের সদস্য। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫-তে, বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী তাকে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য বঙ্গভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে বাধা দেয় কারণ তার নামটি একটি বর্জন তালিকায় ছিল। ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম তাকে রাষ্ট্রপতির বাস ভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ইব্রাহিম একজন লেখক এবং বক্তা। তিনি ঢাকার সংবাদপত্র এবং প্রোব নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাটির জন্য অনিয়মিত কলাম লেখেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাসম্পাদনা
১৯৭১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত আখাউড়া ছিলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে। এর পাশেই ছিলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। সেখানে ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পরে ৪ ডিসেম্বর ভোরে আখাউড়া মুক্ত হয়। ‘সি’ কোম্পানির দলনেতা ইবরাহিমও সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেই যুদ্ধে অংশ নেন। সেদিন যুদ্ধের রাতে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন দলনেতা তৈরী হন মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য। লক্ষ্য আক্রমণ করবেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে। ভয়াবহ এ সম্মুখ যুদ্ধে বেশ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিচলিত হননি। নির্ধারিত সময়ে আগেই ভারত থেকে শুরু হয় দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ ধরে চলে তা। গোলাবর্ষণ শেষ হওয়া মাত্র ইবরাহিম সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর আর শুরু হয় মেশিনগান, রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রের অবিরাম গোলাগুলি। দুই পক্ষে সমানতালে যুদ্ধ চলে। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যায় তবে সে সময়েও মুহাম্মদ ইবরাহিম দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং সহযোদ্ধাদের মধ্যে সাহস যোগান। প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যেও নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে যান তিনি এবং সহযোদ্ধারা যাতে ছত্রভঙ্গ না হয়ে যাওয়া যায় সেদিকেও নজর রাখেন। তার প্রচেষ্টায় সহযোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ চালান। তাদের সাহসিকতায় থেমে যায় বেপরোয়া পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রযাত্রা।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৪-১০-২০১২"। ২০১৮-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ মতিউর রহমান (২০১৫)। সম্মুখযুদ্ধ ১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধাদের কলমে। ঢাকা, বাংলাদেশ: প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২০৭। আইএসবিএন 9789849120216।
পাদটীকাসম্পাদনা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।