সুবর্ণ এক্সপ্রেস
সুবর্ণ এক্সপ্রেস (ট্রেন নং ৭০১/৭০২) বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশের শীর্ষ বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন। এটি চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |
---|---|
পরিষেবা ধরন | আন্তঃনগর (বিরতিহীন) |
অবস্থা | সচল |
প্রথম পরিষেবা | ১৪ এপ্রিল ১৯৯৮ |
বর্তমান পরিচালক | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
যাত্রাপথ | |
শুরু | চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন |
বিরতি | ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন (একমাত্র যাত্রাবিরতি) |
শেষ | কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন |
ভ্রমণ দূরত্ব | ৩৪৬ কিলোমিটার (২১৫ মাইল) |
যাত্রার গড় সময় | ৫ ঘণ্টা ২০ মিনিট |
পরিষেবার হার | প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন (বন্ধ: সোমবার) |
রেল নং | ৭০১/৭০২ |
ব্যবহৃত লাইন | |
যাত্রাপথের সেবা | |
শ্রেণী |
|
আসন বিন্যাস | উন্মুক্ত (আসন একটি আরেকটির পেছনে) |
ঘুমানোর ব্যবস্থা | নেই |
খাদ্য সুবিধা | অন-বোর্ড |
মালপত্রের সুবিধা | ওভারহেড র্যাক |
কারিগরি | |
গাড়িসম্ভার |
|
ট্র্যাক গেজ | মিটারগেজ১,০০০ মিলিমিটার (৩ ফুট ৩ ৩⁄৮ ইঞ্চি) |
পরিচালন গতি | ৮০ কিমি/ঘ (সর্বোচ্চ) |
ট্র্যাকের মালিক | বাংলাদেশ রেলওয়ে |
রক্ষণাবেক্ষণ | চট্টগ্রাম |
সুবর্ণ এক্সপ্রেস বাংলাদেশের প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন। ১৯৯৮ সালের ১৪ই এপ্রিল ট্রেনটি উদ্বোধন করা হয়।[১] এটি চালু হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন মহানগর এক্সপ্রেস ৭০১/৭০২ নাম্বারে চলাচল করতো। তবে সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হওয়ার পর মহানগরের নাম্বার সূবর্ণকে দিয়ে দেওয়া হয়, এবং মহানগরকে ৭২১/৭২২ নাম্বার দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম−ঢাকা রুটে এই ট্রেনের পাশাপাশি মহানগর প্রভাতী/গোধূলী এক্সপ্রেস (৭০৩/৭০৪), মহানগর এক্সপ্রেস (৭২১/৭২২), তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪১/৭৪২), সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭/৭৮৮), কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৩/৮১৪), পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৫/৮১৬), চট্টলা এক্সপ্রেস (৮০১/৮০২), ঢাকা/চট্টগ্রাম মেইল (১/২) এবং কর্ণফুলী এক্সপ্রেস (৩/৪) চলাচল করে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সুবর্ণ এক্সপ্রেস (৭০১/৭০২), সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭/৭৮৮), কক্সবাজার এক্সপ্রেস (৮১৩/৮১৪), পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৫/৮১৬) ও বনলতা এক্সপ্রেস (৭৯১/৭৯২), মোট এই পাচটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের বেজ চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন।
সময়সূচী
সম্পাদনাবাংলাদেশ রেলওয়ের সময়সূচী পরিবর্তনশীল। বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে সর্বশেষ সময়সূচী যাচাই করার জন্য অনুরোধ করা হলো। নিম্নোক্ত সময়সূচীটি বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫২তম সময়সূচী অনুযায়ী, যা ২০২০ সালের ১০ই জানুয়ারি হতে কার্যকর।[২]
ট্রেন
নং |
উৎস | প্রস্থান | গন্তব্য | প্রবেশ | সাপ্তাহিক
ছুটি |
---|---|---|---|---|---|
৭০১ | চট্টগ্রাম | ০৭:০০ | কমলাপুর | ১২:২০ | সোমবার[১][৩] |
৭০২ | কমলাপুর | ১৬:৩০ | চট্টগ্রাম | ২১:৫০ |
বি.দ্র.: মাঝেমধ্যে বিশ্ব ইজতেমার সময় ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়।[৪]
যাত্রাবিরতি
সম্পাদনা২০২২ সাল অব্দি, সুবর্ণ এক্সপ্রেস শুধুমাত্র ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে বিরতি দেয়।
রোলিং স্টক
সম্পাদনাসূচনাকালে এই ট্রেনে ২৭০০ ও ২৬০০ শ্রেণীর লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হতো। তবে পরবর্তীতে ২৯০০ শ্রেণীর লোকোমোটিভ দ্বারা পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে একে ৩০০০ সিরিজের লোকোমোটিভ দ্বারা পরিচালনা করা শুরু হয়েছে।
পূর্বে ট্রেনটি ইরানি সবুজ-হলুদ এয়ার ব্রেকের কোচে চলাচল করতো। পরে রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যার কারণে ২০০৭ সালে এই রেক পাল্টিয়ে চীনা সাদা এয়ার ব্রেক কোচের রেক দেওয়া হয় যার লোড ১৮/৩৬ এবং মোট আসন ছিলো ৮৯৯টি। যাত্রীচাহিদা বৃদ্ধি পেলে (যেমন ঈদের সময়) ট্রেনটিকে ২২/৪৪ লোডে চালানো হয়।
২০১৬ সালে ট্রেনটিকে তৎকালীন সময়ের নতুন ইন্দোনেশিয়ান লাল-সবুজ কোচের রেক দ্বারা ট্রেনটি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে পরে তা বাতিল করা হয়। পরে ২০২০ সালের ২০ই অক্টোবর ২০১৯ ব্যাচের নতুন ইন্দোনেশিয়ান লাল-সবুজ কোচের রেক দ্বারা ট্রেনটি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ২০২০ সালের ৩রা নভেম্বর থেকে ট্রেনটি নতুন রেকে চলাচল শুরু করে।
সর্বশেষ গত ২০২৩ সালের ৬ জুন হতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত সর্বকালের সেরা আধুনিক কোচের রেক দ্বারা বিরতিহীন ট্রেনটি পরিচালিত হচ্ছৈ।
বর্তমানে ট্রেনটিতে ১৮টি কোচের মধ্যে ৮টি তাপানুকুল চেয়ার, ৭টি শোভন চেয়ার, ২টি শোভন চেয়ার+খাবার গাড়ী+গার্ডব্রেক এবং ১টি পাওয়ার কার রয়েছে। কোনো কেবিন কোচ না থাকলেও শীঘ্রই কেবিন কোচ যুক্ত করা হবে ট্রেনটিতে। বর্তমানে ট্রেনটির মোট আসন ৮৯০টি।
দুর্ঘটনা
সম্পাদনা- ১২/০৮/২০০৪: হরতাল চলাকালে ভৈরব বাজার জংশনে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ১২টি কোচ ভস্মীভূত হয়। স্টেশন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ভাংচুর করা হয়। সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ভৈরব রেল সেতুর অদূরে দুষ্কৃতিকারীরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন গতিরোধ করে অগ্নিসংযোগ করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
- ০৭/০৫/২০১৩: চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ৫ নং প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে আগুন ধরিয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনের দুটি কোচ পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫টি কোচ। রেলওয়ে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
- ০৫/০২/২০১৪: চট্টগ্রামের পাহাড়তলী লোকোসেডের সামনে সিগন্যাল ভুলের কারণে লাইন অতিক্রম করার সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকোমোটিভ লাইনচ্যুত হয়। এতে ট্রেনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা কোনো যাত্রীর হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রায় দুই ঘণ্টা পর ট্রেনটি উদ্ধার করা হয়।[৫]
- ১৫/০৩/২০১৮: বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার বনানী রেলওয়ে স্টেশনের কাছে মহাখালী আমতলী এলাকায় চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের গ ও ঘ কোচের সংযোগস্থলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। পরে রেলওয়ের কর্মী, যাত্রী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।[৬]
- ০৭/০১/২০২০: চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কুমিল্লার গোমতি ব্রিজ এলাকায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৪ জন যাত্রী আহত হয়েছেন।[৭]
- ০১/০৩/২০২০: লাকসাম জংশন রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রমকালে ট্রেনটির ৬৫০৮ নং তাপানুকুল চেয়ার কোচের বগিতে চাকা ও স্প্রিং-এর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এক্সেল গরম হয়ে গেলে কোচটিতে আগুন লাগে। ফলে ট্রেনটিকে দ্রুত থামাতে হয়। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।[৮][৯][১০]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
সুবর্ণ এক্সপ্রেসের একটি টিকেট
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "সুবর্ণ-সোনার বাংলা: সাপ্তাহিক বন্ধের দিন পরিবর্তন"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২০২০-০৭-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১১।
- ↑ "সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী, টিকেট ও ভাড়ার তালিকা"। আমার ট্রেন। ২০২০-০৩-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।
- ↑ "সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলার সাপ্তাহিক বিরতি পরিবর্তন হচ্ছে"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০২০-০৭-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১১।
- ↑ "১২ জানুয়ারি বন্ধ থাকবে সুবর্ণ এক্সপ্রেস"। বাংলাদেশ টাইমস। ২০২০-০১-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।
- ↑ "সুবর্ণ এক্সপ্রেস দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার"। risingbd.com। ২০১৪-০২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।
- ↑ "আগুন নেভানোর পর সুবর্ণ এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের পথে"। RTV NEWS। ২০১৮-০৩-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।
- ↑ "কুমিল্লায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, আহত ৪"। দৈনিক অধিকার। ২০২০-০১-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।
- ↑ "সুবর্ণ এক্সপ্রেসের বগিতে আগুন"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২০-০৩-০১। ২০২০-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১১।
- ↑ "সুবর্ণ এক্সপ্রেসের বগিতে আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা"। ঢাকা ট্রিবিউন। ২০২০-০৩-০১। ২০২০-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।
- ↑ "সুবর্ণ এক্সপ্রেসের বগিতে আগুন: অল্পের জন্য ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা"। UNB। ২০২০-০৩-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৯।