সিন্দাবাদ

কাল্পনিক নাবিক
(সিনবাদ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সিন্দাবাদ (আরবি: السندباد البحري, প্রতিবর্ণীকৃত: আস-সিন্দিবাদু আল-বাহরিয়ি, অনুবাদ'নাবিক সিন্দাবাদ') হলো মধ্যপ্রাচ্যের উপকথার এক কাল্পনিক নাবিক। কাল্পনিক এই চরিত্রটি নাবিক সিন্দাবাদ, সিন্দবাদ বা সিনবাদ ইত্যাদি নামেও পরিচিত। উপকথায় সিন্দাবাদকে আব্বাসীয় খেলাফতের সময়ে (খ্রিষ্টীয় ৮ম ও ৯ম শতক) বাগদাদের বাসিন্দা বলে বর্ণনা করা হয়। সাতবার আফ্রিকার পূর্বে এবং এশিয়ার দক্ষিণের সমুদ্রে রোমাঞ্চকর অভিযানের সময় সিন্দাবাদ বিভিন্ন জাদুকরী দুনিয়ার মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করে, অতিপ্রাকৃত নানা ঘটনার মুখোমুখি হয় এবং বহু দানবকে পরাজিত করে।

সিনবাদ দ্য সেইলর:
“হ্যাভিং ব্যালেন্সড মাই কার্গো এক্সাক্টলি...”
মিলো উইন্টার কর্তৃক অঙ্কিত (১৯১৪)

উৎস ও উৎপত্তি

সম্পাদনা

সিন্দাবাদের কাহিনি এক হাজার এক রজনী উপাখ্যানের পরবর্তী সংযোজন বলে ধারণা করা হয়। আরব্য রজনীর ১৪শ শতাব্দীর পাণ্ডুলিপিতে সিন্দাবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় না; বরং ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে একে স্বতন্ত্র এক উপাখ্যান হিসেবে শনাক্ত করা যায়। উপাখ্যানটিতে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কার আরব বিশ্বের সামাজিক পরিস্থিতি এবং আরবীয় বণিকদের সমুদ্রযাত্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি সেই সময়কার লোকসাংস্কৃতিক উপাদানও উপাখ্যানে পাওয়া যায়। আব্বাসীয় খিলাফতের সময়কাল আরবদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের স্বর্ণযুগ হিসেবে গণ্য। আরব ও মুসলিমরা সেই সময় নতুন নতুন পথ, বন্দর ও দেশে তাদের বাণিজ্যের বিস্তার করতে থাকে। সিন্দাবাদের কাহিনিগুলোতে অর্থনৈতিক এই প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন দেখা যায়। সিন্দাবাদের উপাখ্যানে বিভিন্ন থিম বা প্রসঙ্গের অবতারণা করা হয়েছে। ১৩শ শতাব্দীতে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে ভারত মহাসাগরে আরব বণিকদের বিচরণের ফলে আজাবুল মাখলুকাত প্রভৃতি রচনার প্রভাব এতে দেখা যায়।[]

সিন্দাবাদের কাহিনি আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের (৭৮৬–৮০৯) শাসনামলের প্রেক্ষাপটে রচিত। আরব্য রজনীর প্রথন ইউরোপীয় সংস্করণ গার্ল্যান্ডের লে মিল এ উ্যন ন্যুই, কোঁত জারাব ত্রাদ্যুই অঁ ফ্রঁসে-এ (পরবর্তীতে ১৭১১ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজিতে রূপান্তরিত দ্য অ্যারাবিয়ান উইন্টার নাইটস এন্টারটেইনমেন্টস) সিন্দাবাদের গল্পও অন্তর্ভুক্ত হয়।[] এরপর ১৮শ শতাব্দীব্যাপী বিভিন্ন সংস্করণে আরব্য রজনীর অংশ হিসেবে এটি প্রচলিত হয়ে যায়।

ইংরেজি ভাষায় সিন্দাবাদের সবচেয়ে পুরনো পৃথক সংস্করণ পাওয়া যায় ব্রিটিশ গ্রন্থাগারে ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে লেখা দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অফ হুরান বানো, এট সেটেরা. টেকেন ফ্রম দি অ্যারাবিয়ান নাইটস, বিয়িং দ্য থার্ড অ্যান্ড ফোর্থ ভোয়েজেস অব সিনবাদ দ্য সেইলর. নামক বইয়ে।[] ১৭৯৪ সালে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রকাশিত দ্য সেভেন ভয়েজেস অব সিনবাদ দ্য সেইলর। অ্যান্ড দ্য স্টোরি অব আলাদিন; অর, দ্য ওয়ান্ডারফুল ল্যাম্প বইটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো বই হিসেবে ধরা হয়।[] এরপর টমাস টেগের প্রকাশনায় চ্যাপবুক সংস্করণসহ ১৯শ শতাব্দীর শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সিন্দাবাদের কাহিনি নিয়ে বই প্রকাশিত হয়। তবে, ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত রিচার্ড বার্টনের দ্য বুক অব দ্য থাউজ্যান্ড নাইটস অ্যান্ড অ্যা নাইট বইয়ের ষষ্ঠ বালামের ১২০ নং গল্পকে ইংরেজি ভাষায় এর শ্রেষ্ঠ অনুবাদ হিসেবে ধরা হয়।[][][]

কাহিনি

সম্পাদনা

কুলি সিন্দাবাদ ও নাবিক সিন্দাবাদ

সম্পাদনা

আরব্য রজনীর গল্পগুলোর মতোই সিন্দাবাদের গল্পও একটি কাঠামোবদ্ধ গল্প, যার শুরু হয় এভাবে: বাগদাদের খলিফা হারুনুর রশিদের আমলে এক গরিব কুলি এক ধনী বণিকের বাড়ির সামনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। সেখানে বসে খোদার কাছে দুনিয়ায় ধনী-গরিবের মাঝে অসমতার জন্য নালিশ জানায়। ধনীরা সারাদিন আরামে-আয়াশে থাকে, কিন্তু তার মতো গরিবদের সারাদিন খাটতে হয় কিন্তু দিনশেষে গরিবই থেকে যায়। বাড়ির মালিক কুলির কথাগুলো শুনতে পায় এবং কুলিকে ডেকে আনে। কাকতালীয়ভাবে তারা জানতে পারে, তাদের দুইজনের নামই সিন্দাবাদ। ধনী সিন্দাবাদ এরপর গরিব সিন্দাবাদকে তার সাতটি রোমাঞ্চকর অভিযানের কথা বলে, যার মাধ্যমে সে অনেক সম্পদ অর্জন করে।

সিন্দাবাদের প্রথম অভিযান

সম্পাদনা

সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তি হারানোর পর সিন্দাবাদ ভাগ্যান্বেষণের জন্য সমুদ্র অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। মাঝসমুদ্রের একটি দ্বীপে সে নোঙর করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, দ্বীপটি আসলে একটি ঘুমন্ত তিমি, যার দেহে গাছ গজিয়েছে। নাবিকদের জ্বালানো আগুনের জন্য ঘুম ভেঙে গেলে তিমিটি গভীর সমুদ্রে ডুব দেয় এবং নাবিকেরা সিন্দাবাদকে ফেলেই জাহাজ ছেড়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে সিন্দাবাদ এক কাঠের খণ্ডে ভেসে প্রাণ বাঁচায়। সমুদ্রে ভেসে ভেসে সিন্দাবাদ এক ঘন জঙ্গলাকীর্ণ দ্বীপে এসে পৌঁছায়। মানবশূন্য দ্বীপে ঘুরতে ঘুরতে সে এক রাজার সহিসের দেখা পায়। সিন্দাবাদ রাজার ঘোড়াকে এক সামুদ্রিক দানব ঘোড়ার (কাল্পনিক প্রাণী, সিন্ধুঘোটক নয়) থেকে বাঁচায়। সহিস সিন্দাবাদকে রাজার কাছে নিয়ে যায়। সিন্দাবাদ ক্রমে রাজার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সভাসদে পরিণত হয়। একদিন সিন্দাবাদের পণ্যবোঝাই সেই জাহাজটি দ্বীপে ভেড়ে। সিন্দাবাদ তার সমস্ত বাণিজ্য পণ্য রাজাকে প্রদান করে এবং রাজাও বিনিময়ে সিন্দাবাদকে অঢেল পুরস্কার প্রদান করে। সিন্দাবাদ সেসব পুরস্কারের কিছু বিক্রি করে অনেক অর্থ উপার্জন করে। সিন্দাবাদ বাগদাদে ফিরে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতে থাকে। এই গল্পের শেষে নাবিক সিন্দাবাদ কুলি সিন্দাবাদকে একশ সোনার টুকরা উপহার দেয় এবং তার আরও অভিযানের গল্প শোনার জন্য পরের দিন আবার আসতে আমন্ত্রণ জানায়।

সিন্দাবাদের দ্বিতীয় অভিযান

সম্পাদনা
 
সিন্দাবাদ এবং হীরার উপত্যকা

সিন্দাবাদের কাহিনির দ্বিতীয় দিন (কিন্তু শেহরেজাদের গল্পের ৫৪৯তম দিন) সিন্দাবাদ বলে যে সে আরাম-আয়েশের জীবনে আগ্রহ হারিয়ে মানুষের শহর এবং দ্বীপসমূহ দর্শন করতে আবার সমুদ্রে যাত্রা করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তার জাহাজের সহযাত্রীরা রকপাখির ডিমে পূর্ণ এক দ্বীপে তাকে আবার ফেলে যায়। সিন্দাবাদ তার পাগড়ির সাহায্যে একটি রকপাখির দেহে আটকে বিশাল সাপের দ্বীপে পৌঁছে যায়। সেই বিশাল সাপেরা এমনকি আস্ত হাতিও খেয়ে নিতে পারতো। রকপাখিরা আবার এই সাপেদের শিকার করতো। এই উপত্যকার মাটি হীরায় পরিপূর্ণ ছিল। বণিকেরা বিশাল বিশাল মাংসের খণ্ড উপত্যকায় ছুঁড়ে দিয়ে হীরা সংগ্রহ করে: প্রথমে তারা মাংস ছুঁড়ে দেয়, রকপাখিরা সেগুলো বাসায় নিয়ে যায় এবং বণিকেরা পাখিদের তাড়িয়ে মাংসে আটকে থাকা হীরা সংগ্রহ করে। বুদ্ধিমান সিন্দাবাদ নিজের পিঠের ওপর মাংস বেঁধে নেয়; রকপাখিরা তাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায় এবং সে ইচ্ছামতো হীরা পকেটে পুরে নেয়। বণিকেরা তাকে উদ্ধারের পর সে বাগদাদে ফিরে আসে এবং হীরাগুলো বিক্রির মাধ্যমে আবার সুখে দিন কাটায়।

সিন্দাবাদের তৃতীয় অভিযান

সম্পাদনা
 
তৃতীয় অভিযানে সিন্দাবাদ মানুষ-খেকো দৈত্যের মুখোমুখি হয়।

সিন্দাবাদ বসরা নগরী থেকে আবার অভিযান শুরু করে। দুর্ভাগ্যক্রমে সহযাত্রীদের নিয়ে সিন্দাবাদ এক দ্বীপে আটকা পড়ে এবং এক বিশাল দৈত্যের হাতে বন্দি হয়। দৈত্যটি বিশাল মানুষের মতো, গায়ের রং কালো, চোখ কয়লার আগুনের মতো লাল, শূকরের দাঁতের মতো বিশাল দাঁত এবং বিশাল কুয়ার মতো মুখের হা। তার ওপর ঠোঁটগুলো উটের ঠোঁটের মতো বুকের ওপর ঝুলানো, প্রকাণ্ড ঝাড়বাতির মতো কান কাঁধের ওপর পড়ে আছে আর নখগুলো সিংহের নখরের মতো। দৈত্যটি জাহাজের যাত্রীদের খাওয়া শুরু করে। তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন সবচেয়ে মোটা হওয়ায় তাকে দিয়েই খাওয়া শুরু করে। (বার্টন এখানে মন্তব্য করেন যে দৈত্যটি “নিঃসন্দেহে পলিফেমাস ছিল”।)

সিন্দাবাদ দৈত্যের ভেড়া পোড়ানোর শিক দিয়ে তাকে অন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। দৈত্যের হাত থেকে বেঁচে থাকা সহযাত্রীরা আগের দিন বানানো ভেলায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু দৈত্যের সঙ্গীটি তাদের পাথর ছুঁড়ে মারে আর তাদের অধিকাংশই মারা যায়। এরপর আরও অনেক অভিযানের পর (বিশেষ করে এক বিশাল সাপের থেকে উপস্থিত বুদ্ধির জোরে বেঁচে ফিরে) সিন্দাবাদ আগের চেয়েও অনেক ধনী হয়ে বাগদাদে ফিরে আসে।

সিন্দাবাদের চতুর্থ অভিযান

সম্পাদনা

বাইরে ঘুরে বেড়ানোর তাড়নায় সিন্দাবাদ আবার সমুদ্রে বেড়িয়ে পড়ে এবং আবারও জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়। এক নরখাদক জঙ্গলি জাতি তাদের সমুদ্র থেকে তুলে আনে এবং নেশাজাতীয় কিছু পাতা খাওয়ায় (বার্টনের মতে এট সম্ভবত ভাং)। সিন্দাবাদ বুঝতে পারে কী হতে যাচ্ছে; তাই পাতা খেতে অস্বীকৃতি জানায়। নরখাদকেরা যখন তার ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তখন সিন্দাবাদ পালিয়ে যায়। এক ভ্রাম্যমাণ মরিচ সংগ্রাহকের দল সিন্দাবাদকে উদ্ধার করে নিজেদের দেশে নিজে যায়। সেখানকার রাজা সিন্দাবাদের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং সিন্দাবাদকে এক সুন্দরী ও ধনবতী নারীর সাথে বিবাহ দেয়।

অনেক দিন পর সিন্দাবাদ সেই দেশের এক অদ্ভুত রীতির কথা জানতে পারে: সেখানকার কারও স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে, অন্যজনকেও সুন্দর ও দামী কাপড় ও গয়না পরিয়ে মৃত স্বামী বা স্ত্রীর সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। সিন্দাবাদের স্ত্রী এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। লোকেরা সিন্দাবাদকে এক জগ পানি আর সাত টুকরা রুটি দিয়ে এক গর্তে ফেলে দেয়। এই সামান্য খাদ্য যখন প্রায় শেষের পথে তখন আরেক দম্পতিকে (স্বামী মৃত, স্ত্রী জীবিত) সেখানে ফেলা হয়। সিন্দাবাদ স্ত্রীটিকে মুগুর দিয়ে হত্যা করে তার খাবার নিয়ে নেয়।

এভাবে চলতে থাকে এবং সিন্দাবাদের কাছে যথেষ্ট খাবার ও পানি জমা হয়। মৃতদেহের থেকে যথেষ্ট ধন-রত্নও লাভ করে; কিন্তু সেই গর্ত থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায় না। এমনি এক সময় এক বন্য জন্তু সমুদ্র থেকে অনেক উঁচুতে বের হওয়ার পথ দেখায়। সেখান থেকে এক জাহাজ তাকে উদ্ধার করে এবং বাগদাদে ফিরিয়ে আনে। বাগদাদে ফিরে সিন্দাবাদ দান-খয়রাত করে এবং আরাম-আয়েশে দিনযাপন করতে থাকে। (এই গল্পের নিচে বারটন মন্তব্য করেন: “এই গল্পটি দৃশ্যতই মেসীয় অ্যারিস্টোমেনিসের গর্ত থেকে উদ্ধার পাওয়ার কিংবদন্তি থেকে গৃহীত, যেখানে একটি শেয়াল অ্যারিস্টোমেনিসকে পথ দেখিয়েছিল। তৎকালের আরবেরা গ্রিক সাহিত্যের উৎসুক পাঠক ছিলেন।”) অনুরূপভাবে, সিন্দাবাদের চতুর্থ অভিযানের প্রথম অংশটি দ্য ওডিসি-র সার্সি সর্গের সাথে প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে, সিন্দাবাদের কাহিনিতে নরখাদকদের দেওয়া গাছের পাতা নাবিকদের মাতাল করে; অন্যদিকে ওডিসিতে সার্সির জাদু অডিসিউসের লোকদের সম্মোহিত করে। এটি একটি আদি সর্গ, যেখানে ‘পদ্মফুল ভক্ষক’দের উল্লেখ পাওয়া যায়। অডিসিউসের লোকদের অনুরূপ কিছু খাওয়ানোয় তারা তাদের জ্ঞান হারায়।

সিন্দাবাদের পঞ্চম অভিযান

সম্পাদনা
 
সিন্দাবাদের পঞ্চম অভিযান

“চতুর্থ অভিযানের পর যখন দেশে ফিরলাম আর উপার্জিত ধনরাজি থেকে আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে লাগলাম, তখন বিগত অভিযানের সব দুর্দশার কথা আমার মন থেকে চলে গেল আর আমিও সমুদ্রে বেরিয়ে পড়ার জন্য ছটফট করতে লাগলাম।” আবার সমুদ্রে ভেসে পড়ার পর সিন্দাবাদের জাহাজের সহযাত্রীরা এক দ্বীপে বিশাল বিশাল ডিম দেখতে পায়। সিন্দাবাদ বুঝতে পারে, এগুলো রকপাখির ডিম। নিতান্ত কৌতূহল থেকে তারা সেই দ্বীপে নোঙর করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ডিমগুলো ভেঙে খাওয়ার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হয়। সিন্দাবাদ তৎক্ষণাৎ তাদের মূর্খামির পরিচয় পায় আর সবাইকে জাহাজে ফিরে যেতে আদেশ দেয়। কিন্তু রকপাখির শাবকের বাবা-মা তাদের বাসায় ফিরে এসে ক্ষিপ্ত হয় এবং পায়ে করে বিশাল পাথর নিয়ে এসে সিন্দাবাদদের জাহাজে নিক্ষেপ করে।[]

সিন্দাবাদ আবার জাহাজডুবির কবলে পড়ে। সমুদ্রবুড়ো সিন্দাবাদকে উদ্ধার করে তাকে তার দাসে পরিণত করে। সমুদ্রবুড়ো দিনরাত তার ঘাড়ে চেপে ঘোরে; আর পা দুটো সিন্দাবাদের ঘাড়ের চারপাশে জড়িয়ে রাখে, যাতে সে পালাতে না পারে। (বার্টন এই কাহিনির উৎস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওরাং-ওটাং, গ্রিক পৌরাণিক দেবতা ট্রাইটন কিংবা দাসের ঘাড়ে চেপে ঘুরে বেড়ানোর আফ্রিকান প্রথার উল্লেখ করেন।[])

এক সময়, সিন্দাবাদ মদ তৈরি করে এবং কৌশলে বুড়োকে কিছুটা পান করায়। বুড়ো লোকটি মাতাল হয়ে পড়ে গেলে সিন্দাবাদ তাকে হত্যা করে এবং পালিয়ে আসে। একটি জাহাজ তাকে উদ্ধার করে উল্লুকদের দেশে নিয়ে আসে। সেখানকার লোকেরা দিনের বেলায় শহরে থাকে আর রাতের বেলায় মানুষখেকো উল্লুকদের ভয়ে জাহাজে বাস করে। তাসত্ত্বেও সেই শহরে থেকে সিন্দাবাদ তার ভাগ্য ঠিক কর নেয় এবং এক সময় অন্য এক জাহাজে করে অনেক ধন-সম্পদ নিয়ে আবার বাগদাদে ফিরে আসে।

সিন্দাবাদের ষষ্ঠ অভিযান

সম্পাদনা
 
সিন্দাবাদের ষষ্ঠ অভিযান

“আমার মন সমুদ্র আর বাণিজ্যের জন্য আকুল হয়ে উঠল।” সমুদ্রে আবার সিন্দাবাদের জাহাজডুবি হলো। এবার বিশাল বিশাল ডুবোপাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ে জাহাজ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। তীব্র খাবারের অভাবে সিন্দাবাদের সব সহযাত্রী মারা গেলো। সিন্দাবাদ পাহাড়ের নিচে একটি গুহা আবিষ্কার করল, যার মধ্যে একটি নদী বয়ে চলছিল। সে একটি ভেলা তৈরি করল আর গুহায় ঢুকে পড়ল। ক্রমেই সে বুঝতে পারল: নদীর পানি মূল্যবান পাথরে পরিপূর্ণ এবং পানির সাথে অতিমূল্যবান আম্বর ভেসে যায়। অন্ধকারে ভাসতে ভাসতে সিন্দাবাদ একসময় ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুম ভেঙে নিজেকে সেরেনদ্বীপের (শ্রীলঙ্কা/সিলন) রাজধানী শহরে আবিষ্কার করে। “সেখানকার নদী হীরায় পূর্ণ আর মাটি মুক্তায় ঝলমল।” সেরেনদ্বীপের রাজা সিন্দাবাদের কাছ থেকে মহান খলিফা হারুনুর রশিদের ব্যাপারে জেনে অভিভূত হয়। রাজার পক্ষ থেকে বাগদাদে খলিফার নিকট পাঠানোর জন্য পদ্মরাগমনিকাটা বাটি, হস্তিভুক সাপের[] চামড়া দিয়ে বানানো বিছানা (“যেখানে যে শয়ন করে, সে কখনো অসুস্থ হয় না”), “এক সহস্র মিস্কাল সিন্ধুস্তানি আগর” এবং চাঁদের মতো চেহারার এক দাসী উপহার হিসেবে দেন। সেসব নিয়ে সিন্দাবাদ বাগদাদে ফিরে আসে এবং তার কাছ থেকে সিলন দ্বীপের বর্ণনা শুনে খলিফা অভিভূত হয়ে তাকে অনেক পুরস্কার প্রদান করেন।

সিন্দাবাদের সপ্তম ও শেষ অভিযান

সম্পাদনা
 
“সিন্দাবাদের সপ্তম ও সর্বশেষ অভিযান”-এর “ক্যারাভান” বোঝাইয়ের দৃশ্য

সদা-চঞ্চল সিন্দাবাদ আবার সমুদ্রে ভেসে পড়ে এবং যথারীতি আবার জাহাজডুবি ঘটে। সমুদ্রে ভেসে সিন্দাবাদ এক মানবশূন্য বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ে। বেলাভূমিতে ঘুরতে ঘুরতে সে একটি নদী আবিষ্কার করে এবং একটি ভেলা বানিয়ে তাতে চড়ে এক শহরে উপনীত হয়। শহরের প্রধান বণিক সিন্দাবাদকে তার মেয়ের সাথে বিবাহ দেন এবং সিন্দাবাদকে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার ঘোষণা করে মৃত্যুবরণ করেন। সেই শহরের বাসিন্দারা মাসে একবার পাখির বেশ ধারণ করে। সেই পাখি-মানবদের একজন সিন্দাবাদকে নিয়ে আসমানের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায়; সেখানে গিয়ে সিন্দাবাদ আল্লাহ্‌র প্রশংসারত ফেরেশতাদের দেখতে পায়। যেই-না পাখি-মানবেরা তাদের নিকটবর্তী হয়, তখনই আকাশ থেকে অগ্নিবর্ষণ হতে থাকে। পাখি-মানবেরা সিন্দাবাদের ওপর রুষ্ট হয় এবং তাকে এক পাহাড়ের চূড়ায় ছেড়ে আসে। সেখানে তার সাথে আল্লাহ্‌র বান্দা দুই যুবকের সাথে দেখা হয়, যারা তাকে অঢেল স্বর্ণ প্রদান করে। শহরে ফিরে সিন্দাবাদকে তার স্ত্রীর জানায় যে এই পাখি-মানবেরা আসলে শয়তান; এই শহরে কেবল সে আর তার বাবাই ছিল মানুষ। তাই স্ত্রীর পরামর্শে সিন্দাবাদ শহরে তাদের সব সম্পত্তি বিক্রি করে বাগদাদে ফিরে আসে এবং সমুদ্র অভিযানের ইতি টেনে স্ত্রীর সাথে চিরস্থায়ীভাবে বাস করতে থাকে।

বার্টন সপ্তম গল্পের কিছু রকমফেরের উল্লেখ করেন। এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, খলিফা হারুনুর রশিদ সেরেনদ্বীপের রাজার কাছে পালটা উপহার নিয়ে যেতে সিন্দাবাদকে অনুরোধ জানায়। সিন্দাবাদ প্রত্যুত্তরে বলে, “সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র কসম! অভিযানের নামে আমার ঘৃণা জন্মে গেছে। যখনই ‘অভিযান’, ‘যাত্রা’ এই শব্দগুলো শুনি, তখনই আমার হাত-পা কাঁপতে থাকে।” এরপর সে খলিফাকে তার সমুদ্র অভিযানে দুর্ভাগ্যের কথা জানায়। হারুনুর রশিদ তার কথা শুনে সমব্যথী হন এবং জানান “যার এমন দুর্ভাগ্য, তার কাছে আর যাত্রার কথা বলা উচিত নয়।” তবুও, খলিফার অনুরোধ রেখে সিন্দাবাদ এবার এক ভিন্ন উদ্দেশ্যে (কূটনৈতিক প্রয়োজনে) সমুদ্রে যাত্রা করে। সেরেনদ্বীপের রাজা খলিফার অসাধারণ উপহার (যার মধ্যে বাদশাহ সুলাইমানের খাবারপাত্রও ছিল) পেয়ে অনেক খুশি হন এবং সিন্দাবাদকে অঢেল উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। ফিরতি পথে সিন্দাবাদ আবারও দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং এবার একদল লোক তাকে বন্দি করে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। সিন্দাবাদের প্রভু তাকে তীর-ধনুক দিয়ে হাতি শিকারে পাঠায়। সেখান থেকে হাতিদের রাজা তাকে হাতিদের কবরস্থানে তুলে নিয়ে যায়৷ সিন্দাবাদ সেখান থেকে অনেক হাতির দাঁত নিয়ে এলে, তার প্রভু খুশি হলে সিন্দাবাদকে মুক্ত করে দেয়। সিন্দাবাদ অনেক হাতির দাঁত, সোনা আর ধনরত্ন নিয়ে বাগদাদে ফিরে আসে। এরপর সে খলিফার কাছে যায় এবং তার অভিয়ানের কথা সবিস্তারে বলে এবং এবারও রক্ষা করার জন্য আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ জানায়। এরপর খলিফা সিন্দাবাদের কাহিনিকে সোনার অক্ষরে লিখে রাখার আদেশ দেন। এরপর সে বাড়ি ফিরে আসে এবং আত্মীয়-পরিজন নিয়ে সুখে ঘর করতে থাকে।

কিছু কিছু বর্ণনায় গল্প আবার মূল সময়ে ফিরে যায়, যেখানে কুলি সিন্দাবাদ নাবিক সিন্দাবাদের কাছ থেকে সর্বশেষ উপহার গ্রহণ করে। আবার কিছু কিছু বর্ণনায় গল্পের শেষে কুলি সিন্দাবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় না।

অভিযোজনা

সম্পাদনা

পশ্চিমা বিশ্বে সিন্দাবাদের জনপ্রিয়তার কারণে বিভিন্ন খ্যাত-অখ্যাত স্থানে তার নাম ব্যবহৃত হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সিন্দাবাদের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন আবহ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। অদ্যাবধি সিন্দাবাদকে নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ধারাবাহিক, অ্যানিমেটেড কার্টুন, উপন্যাস ও ভিডিও গেম তৈরি করা হয়েছে, যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিন্দাবাদকে কোনো বণিক হিসেবে নয়, বরং সমুদ্রে দুঃসাহসী অভিযান করে বেড়ানো এক সুদর্শন নাবিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মঞ্চনাটক

সম্পাদনা
স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র সিনবাদ দ্য সেইলর (১৯৩৫)

ইংরেজি ভাষায় অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

অন্যান্য ভাষায় অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

ইংরেজি ভাষার লাইভ-অ্যাকশন মঞ্চ চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

ইংরেজি ভাষার লাইভ-অ্যাকশন ডিরেক্ট-টু-ভিডিও চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

অন্যান্য ভাষার লাইভ-অ্যাকশন চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

টেলিভিশন

সম্পাদনা

ইংরেজি ভাষার ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

অন্যান্য ভাষার ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র

সম্পাদনা
 
উইলিয়াম স্ট্র‍্যাংয়ের সিনবাদ দ্য সেইলর অ্যান্ড আলিবাবা অ্যান্ড দ্য ফর্টি থিভস-এর ছবি

টীকা: অন্তত এক জোড়া বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রের ডাবিংকৃত সংস্করণ উত্তর আমেরিকায় মুক্তি পায়, যার মূল চরিত্রকে ডাবে “সিনবাদ” নাম দেওয়া হলেও মূল সিন্দাবাদের সাথে এর কোনো সাযুজ্য ছিল না। ১৯৫২ সালের রাশিয়ান চলচ্চিত্র সাদকো-এর (রিমস্কি-করসাকভের অপেরা সাদকো অবলম্বনে) ইংরেজি অতি-ডাবিংকৃত সংস্করণ ১৯৬২ সালে দ্য ম্যাজিক ভয়েজ অব সিনবাদ নামে মুক্তি পায়। অন্যদিকে ১৯৬৩ সালের জাপানি চলচ্চিত্র দাই তজকু (যার মূল চরিত্র “সুকেজেমন” নামের এক দুঃসাহসী পাইরেট) ইংরেজিতে অতিমাত্রায় ডাবিং করে ১৯৬৫ সালে দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড অব সিনবাদ নামে মুক্তি পায়।

ভিডিও গেম

সম্পাদনা

সঙ্গীত

সম্পাদনা

সাহিত্য

সম্পাদনা

কমিক্স

সম্পাদনা
  • “সিনবাদ দ্য সেইলর” (১৯২০) হলো পল ক্লিয়ের (সুইস-জার্মান শিল্পী, ১৮৭৯–১৯৪০) একটি শিল্পকর্ম
  • ১৯৫০ সালে সেন্ট জন পাবলিকেশন সন অব সিনবাদ নামে একটি এক শটের কমিক প্রকাশ করে।[৩৪]
  • ১৯৫৮ সালে ডেল কমিক্স দ্য সেভেন্থ ভয়েজ অব সিনবাদ চলচ্চিত্রকে উপজীব্য করে একটি এক শটের কমিক বের করে।[৩৫]
  • ১৯৬৩ সালে গোল্ড কি কমিক্স ক্যাপ্টেন সিনবাদ চলচ্চিত্র অবলম্বনে একটি এক শটের কমিক প্রকাশ করে।[৩৬]
  • ১৯৬৫ সালে ডেল কমিক্স সিনবাদ জুনিয়র নামে একটি তিন খণ্ডের ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[৩৭]
  • ১৯৬৫ সালেই গোল্ড কি কমিক্স দ্য ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজেস অব সিনবাদ নামে একটি দুই খণ্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[৩৮]
  • ১৯৭৪ সালে মার্ভেল কমিক্স দ্য গোল্ডেন ভয়েজ অব সিনবাদ চলচ্চিত্র অবলম্বনে ওয়ার্ল্ডস আননোন ধারাবাহিকের #৭ ও #৮ নং কিস্তিতে দুই খণ্ড কমিক প্রকাশ করে।[৩৯][৪০] পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে দ্য সেভেন্থ ভয়েজ অব সিনবাদ চলচ্চিত্র অবলম্বনে মার্ভেল স্পটলাইট #২৫ নং কিস্তিতে একটি এক শটের কমিক প্রকাশিত হয়।[৪১]
  • ১৯৭৭ সালে ব্রিটিশ কমিক কোম্পানি জেনারেল বুক ডিস্ট্রিবিউটর্স সিনবাদ অ্যান্ড দ্য আই অব দ্য টাইগার অবলম্বনে একটি এক শটের কমিক/ম্যাগাজিন প্রকাশ করে।[৪২]
  • ১৯৮৮ সালে কাতালান কমিউনিকেশনস দ্য লাস্ট ভয়েজ অব সিনবাদ নামে একটি এক শটের গ্রাফিক উপন্যাস প্রকাশ করে।[৪৩]
  • ১৯৮৯ সালে মালিবু কমিক্স শুধুমাত্র সিনবাদ নামে চার খণ্ডের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[৪৪] পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে সিনবাদ বুক ২: ইন দ্য হাউজ অব গড নামে আরেকটি চার খণ্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশিত হয়।[৪৫]
  • ২০০১ সালে মার্ভেল কমিক্স ফ্যান্টাস্টিক ফোরের সাথে সিন্দাবাদকে এনে ফ্যান্টাস্টিক ফোর্থ ভয়েজ অব সিনবাদ নামে একটি এক শটের কমিক প্রকাশ করে।[৪৬]
  • ২০০৭ সালে টাইডালওয়েভ প্রোডাকশনস সিনবাদ: রগ অব মার্স নামে একটি তিন খণ্ডের স্বল্পদৈর্ঘ্য ধারাবাহিক কমিক প্রকাশ করে।[৪৭]
  • ২০০৮ সালে লার্নার পাবলিশিং গ্রুপ সিনবাদ: সেইলিং ইনটু পেরিল নামে একটি গ্রাফিক উপন্যাস প্রকাশ করে।[৪৮]
  • ২০০৯ সালে জেনেস্কোপ এন্টারটেইনমেন্ট তাদের গ্রিম ফেইরি টেলস ইউনিভার্সে সিন্দাবাদকে একটি নিয়মিত চরিত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। ১০০১ অ্যারাবিয়ান নাইটস: দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব সিনবাদ নামে ১৪ খণ্ডের একটি ধারাবাহিক কমিকের মাধ্যমে তার প্রথম আবির্ভাব ঘটে।[৪৯] পরবর্তীতে ড্রিম ইস্টার সাগা-এর বিভিন্ন খণ্ডে,[৫০] এমনকি ২০১১ অ্যানুয়াল,[৫১] জায়ান্ট-সাইজ[৫২]স্পেশাল এডিশন[৫৩] প্রভৃতি এক শটের কমিকেও সিন্দাবাদের আবির্ভাব ঘটে।
  • ২০১২ সালে ক্যাম্পফায়ার বুক সিনবাদ: দ্য লিগ্যাসি নামের গ্রাফিক উপন্যাস মুক্তি দেয়। বিল উইলিংহাম লিখিত ধারাবাহিক কমিক বই ফেবলস বইয়ে সিন্দাবাদের আবির্ভাব ঘটে। রয় থমাস লিখিত অ্যারাক, সন অব থান্ডার বইয়ে কিশোর আলসিন্দ হিসেবে সিন্দাবাদ আবির্ভূত হয়; এই বইয়ের কাহিনি ৯ম শতাব্দীতে সংঘটিত হয়। অ্যালান মুরের দ্য লিগ অব এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেল্টলমেন: ব্ল্যাক ডোজিয়ার-এ সিন্দাবাদ অষ্টম অভিযানে বের হয়ে আর কখনো ফেরে না; এই অভিযানের পূর্বে সিন্দাবাদকে ইম্মর্টাল অর্ল্যান্ডোর ত্রিশ বছরের প্রেমিক হিসেবে সিন্দাবাদকে পাওয়া যায়।
  • দ্য সিম্পসন্‌স-এর কমেডি কমিক সিরিজ “গেট সাম ফেন্সি বুক লার্নিন’”-এ “সিনবার্ট দ্য সেইলর” নামে সিন্দাবাদের কাহিনির প্যারোডি প্রকাশ করা হয়।
  • রিচার্ড করবেন এবং জ্যান স্ট্রন্যাডের নিউ টেলস অব দ্য অ্যারাবিয়ান নাইটস মূলত হেভি মেটাল ম্যাগাজিনে #১৫–২৮ খণ্ডে (১৯৭৮–৭৯) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এগুলো পরবর্তীতে সংকলিত হয় এবং বাণিজ্যিক পেপারব্যাক বই আকারে প্রকাশিত হয়।
  • সিন্দাবাদ জাপানি মাঙ্গা সিরিজ মাগি: দ্য ল্যাবিরিন্থ অব ম্যাজিক-এর অন্যতম প্রধান চরিত্র। শিনোবু ওতাকা এটির লেখক ও অঙ্কনশিল্পী।

থিম পার্ক

সম্পাদনা

অন্যান্য

সম্পাদনা
  • অভিনেতা ও কমেডিয়ান ডেভিড অ্যাডকিনস মঞ্চনাম হিসেবে সিনবাদ ব্যবহার করেন।
  • মানবদেহের পরজীবী শিস্টোসোমা ম্যানসনি-র একটি জিনোমের এলটিআর রেট্রোট্রান্সপোসনের নাম সিন্দাবাদের নামে রাখা হয়েছে।[৫৪] ভ্রাম্যমাণ জেনেটিক উপাদানগুলোর নাম পৌরাণিক, ঐতিহাসিক বা সাহিত্যিক অভিযাত্রিকদের নামে করার একটি প্রথা প্রচলিত আছে; উদাহরণস্বরূপ অতিপরিচিত ভ্রাম্যমাণ জেনেটিক উপাদান জিপসিমেরিনার-এর নাম উল্লেখ করা যায়।

আরও দেখুন

সম্পাদনা
  1. এখানের হস্তিভুক সাপের ধারণাটি অঁতোয়ান দ্য স্যাঁত-এগজ্যুপেরি তার ল্য প্যতি প্র্যাঁস্‌ গ্রন্থে ব্যবহার করেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

উদ্ধৃতি

সম্পাদনা
  1. Pinault 1998, পৃ. 721–722।
  2. The new Arabian winter nights entertainments. Containing one thousand and eleven stories, told by the Sultaness of the Indies, to divert the Sultan from performing a bloody vow he had made to marry a virgin lady every day, and have her beheaded next morning, to avenge himself for the adultery committed by his first Sultaness. The whole containing a better account of the customs, manners, and religions of the Indians, Persians, Turks, Tartarians, Chineses, and other eastern nations, than is to be met with in any English author hitherto set forth. Faithfully translated into English from the Arabick manuscript of Haly Ulugh Shaschin., London: John de Lachieur, ১৭১১, ৩ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০২১ .
  3. The Adventures of Houran Banow, etc. (Taken from the Arabian Nights, being the third and fourth voyages of Sinbad the Sailor.), London: Thornhill and Sheppard, ১৭৭০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ].
  4. The seven voyages of Sinbad the sailor. And The story of Aladdin; or, The wonderful lamp, Philadelphia: Philadelphia, ১৭৯৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Burton, Richard। "The Book of one thousand & one nights" (translation online)। CA: Woll amshram। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  6. Marzolph, Ulrich; van Leeuwen, Richard (২০০৪), The Arabian nights encyclopedia, 1, পৃষ্ঠা 506–8 .
  7. Irwin, Robert (২০০৪), The Arabian nights: a companion .
  8. JPG image. stefanmart.de
  9. JPG image. stefanmart.de
  10. Lenburg, Jeff (১৯৯৯)। The Encyclopedia of Animated Cartoons। Checkmark Books। পৃষ্ঠা 122–123। আইএসবিএন 0-8160-3831-7 
  11. Lenburg, Jeff (২০০৯)। The Encyclopedia of Animated Cartoons (3rd সংস্করণ)। New York: Checkmark Books। পৃষ্ঠা 226আইএসবিএন 978-0-8160-6600-1 
  12. "映画ドラえもんオフィシャルサイト_Film History_12"dora-movie.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৪ 
  13. "The Adventures of Sinbad"The Times of India 
  14. Article on Arabian Nights at Turner Classic Movies accessed 10 January 2014
  15. Swires, Steve (এপ্রিল ১৯৮৯)। "Nathan Juran: The Fantasy Voyages of Jerry the Giant Killer Part One"Starlog Magazine। নং 141। পৃষ্ঠা 61। 
  16. "Captain Sinbad (1963) - Byron Haskin | Synopsis, Characteristics, Moods, Themes and Related | AllMovie" 
  17. "Dread Central - The Asylum Breeding a Mega Piranha"। ১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০২১ 
  18. Sinbad and the Minotaur on IMDB
  19. DVD review: Sinbad and the Minotaur
  20. Rajadhyaksha, Ashish; Willemen, Paul (১৯৯৯)। Encyclopaedia of Indian cinema । British Film Institute। আইএসবিএন 9780851706696। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১২ 
  21. Roberto Poppi, Mario Pecorari। Dizionario del cinema italiano. I film। Gremese Editore, 2007। আইএসবিএন 8884405033 
  22. Paolo Mereghetti। Il Mereghetti - Dizionario dei film। B.C. Dalai Editore, 2010। আইএসবিএন 8860736269 
  23. Erickson, Hal (২০০৫)। Television Cartoon Shows: An Illustrated Encyclopedia, 1949 Through 2003 (2nd সংস্করণ)। McFarland & Co। পৃষ্ঠা 322। আইএসবিএন 978-1476665993 
  24. Milligan, Mercedes (২৭ জানুয়ারি ২০১৬)। "'Sindbad & The 7 Galaxies' Launches with Presales"Animation Magazine। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  25. Dickson, Jeremy (২৬ জানুয়ারি ২০১৯)। "Creative Media Partners debuts Sindbad & the 7 Galaxies"KidScreen 
  26. "Shahnawaz Pradhan who plays Hariz Saeed in 'Phantom' talks about the film's ban in Pakistan"dnaindia.com। ২২ আগস্ট ২০১৫। 
  27. "Gottlieb 'Sinbad'"Internet Pinball Machine Database। IPDb। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  28. "Gottlieb 'Eye Of The Tiger'"Internet Pinball Machine Database। IPDb। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  29. "Internet Pinball Machine Database: Williams 'Tales of the Arabian Nights'"। Ipdb.org। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  30. "Sinbad for ZX Spectrum (1984)"। MobyGames। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  31. "Sinbad & the Golden Ship for ZX Spectrum (1986)"। MobyGames। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  32. "Lemon – Commodore 64, C64 Games, Reviews & Music!"। Lemon64.com। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  33. "Sinbad and the Throne of the Falcon – Amiga Game / Games – Download ADF, Review, Cheat, Walkthrough"। Lemon Amiga। ২৩ আগস্ট ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  34. "Son of Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  35. "The 7th Voyage Of Sinbad Comic No. 944 – 1958 (Movie)"। A Date In Time। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  36. "Captain Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  37. "Sinbad Jr"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  38. "The Fantastic Voyages of Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  39. "Worlds Unknown No. 7"। Comics। ২৪ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  40. "Worlds Unknown No. 8"। Comics। ২৪ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  41. "Marvel Spotlight No. 25"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  42. "The Comic Book Database"। ৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  43. "The Last Voyage of Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  44. "Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  45. "The Comic Book Database"। Comic Book DB। ৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  46. "Fantastic 4th Voyage of Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  47. "Sinbad: Rogue of Mars"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  48. Comic vine, ১২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল (JPEG) থেকে আর্কাইভ করা .
  49. "1001 Arabian Nights: The Adventures of Sinbad"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১১ 
  50. "Grimm Fairy Tales: Dream Eater Saga"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১২ 
  51. "Grimm Fairy Tales 2011 Annual"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১২ 
  52. "Grimm Fairy Tales Giant-Size 2011"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১২ 
  53. "Grimm Fairy Tales 2011 Special Edition"। Comics। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১২ 
  54. Copeland, Claudia S.; Mann, Victoria H.; Morales, Maria E.; Kalinna, Bernd H.; Brindley, Paul J. (২০০৫-০২-২৩)। "The Sinbad retrotransposon from the genome of the human blood fluke, Schistosoma mansoni, and the distribution of related Pao-like elements"BMC Evolutionary Biology5 (1): 20। আইএসএসএন 1471-2148ডিওআই:10.1186/1471-2148-5-20পিএমআইডি 15725362পিএমসি 554778  

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  • Mart, Stefan, Story of Sindbad the Sailor .
  • Mart, Stefan (১৯৩৩), "Sindbad the Sailor: 21 Illustrations by Stefan Mart", Tales of the Nations (illustrations)