রূহ
রূহ বা আত্মা (আরবি: الروح, আর-রূহ) কুরআনে একুশ বার উল্লেখিত হয়েছে, যেখানে এটিকে আল্লাহর আদেশ থেকে উৎসারিত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ঈশ্বরীয় কার্য বা বার্তা পৌঁছানোর এক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

কুরআনে রূহকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিকে আরবি: الروح القدس (আর-রূহ আল-কুদুস, অর্থাৎ ‘পবিত্র আত্মা’) এবং আর-রূহ আল-আমিন (অর্থাৎ ‘বিশ্বস্ত আত্মা’) বলা হয়েছে, যেগুলো সাধারণভাবে জিবরাঈল (আ.)-এর প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে বোঝা হয়। কুরআনে এটিকে “আমার/তাঁর রূহ” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে—যা আদম (আ.)-এর মধ্যে ফুঁক দেওয়া হয়েছিল—এবং যেটিকে মানবজীবনের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ তাফসিরকার এই “আমার/তাঁর রূহ” (১৫:২৯, ৩২:৯, ৩৮:৭২) বাক্যাংশটিকে রূপক অর্থে—আল্লাহর শক্তি এবং আদমের প্রতি এক বিশেষ সম্মান—হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যদিও কিছু তাফসিরে এটি আরো আক্ষরিকভাবে বোঝানো হয়েছে।
এই রূহ মানুষের শরীর থেকে মৃত্যুর সময় বের হয়ে যায় এবং পরকালেও তার অস্তিত্ব বজায় রাখে। উপরন্তু, রূহ একটি অধিবাস্তব (metaphysical) সত্তা হিসেবেও প্রতীয়মান হয়, যেমন ফেরেশতা।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
সম্পাদনাকুরআনের ব্যাখ্যা
সম্পাদনাকুরআনে রুহ সম্পর্কে বলা হয়েছে:
তারা আপনাকে রুহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, রুহ আমার রবের আদেশ।
ডক্টর জাকারিয়া কামালের মতে, এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে রুহ হল এক বিশেষ সৃষ্টি, যা মানুষের জ্ঞানের পরিধির বাইরে।
রুহ এবং বল ক্ষেত্র (Force Field)
সম্পাদনাডক্টর কামালের তাফসিরে বলা হয়েছে যে রুহের কার্যপদ্ধতি প্রাকৃতিক বলের (চৌম্বকীয় বল, নিউক্লিয়ার ফোর্স) মতো হতে পারে। যেমন:
- চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সৌর বাতাসকে প্রতিরোধ করে, তেমনি রুহ মানবদেহ নিয়ন্ত্রণ করে।
- এটি দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত কিন্তু দেহ থেকে আলাদা সত্তা।
হাদিসের ব্যাখ্যা
সম্পাদনাআত্মাগুলো একে অপরের সাথে পরিচিত হলে মিলিত হয়, আর অপরিচিত হলে দূরে থাকে।
— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
ডক্টর কামাল বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, আত্মার পারস্পরিক আকর্ষণ পরমাণুর নিউক্লিয়ার ফোর্সের মতো কাজ করতে পারে।
রুহের প্রকারভেদ
সম্পাদনাডক্টর জাকারিয়া কামাল অনুযায়ী রুহ দুই ধরনের হতে পারে:
- রুহ (Elementary Soul) – এটি মৌলিক আত্মা, যা আল্লাহর বিশেষ আদেশের অংশ।
- নফস (Composite Soul) – এটি বিভিন্ন আত্মার সংমিশ্রণে গঠিত, যা ব্যক্তির চরিত্র নির্ধারণ করে।
বিশেষ রুহ ও মানবসত্তা
সম্পাদনা- জন্মের সময় মানুষ একটি বিশেষ রুহ পায়, যা তার চেতনার উৎস।
- প্রথম কান্না রুহের শারীরিক প্রকাশের প্রথম ধাপ।
- এটি সরাসরি আল্লাহর তরফ থেকে আসে এবং এটি অন্যান্য সৃষ্টির রুহ থেকে আলাদা।
ডক্টর জাকারিয়া কামালের বিশ্লেষণে রুহ হলো **আল্লাহর এক বিশেষ আদেশ**, যা সৃষ্টিজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন যে বিভিন্ন **শক্তিক্ষেত্র (force fields)** ও **পদার্থবিজ্ঞানীয় উপাদান** রুহের কার্যপদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে।
এই নিবন্ধটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
কুরআনি আয়াতসমূহ
সম্পাদনা"অতঃপর তিনি তাকে সুসজ্জিত করলেন এবং তার মধ্যে তাঁর রূহ ফুঁকে দিলেন।"
— সূরা আস-সাজদাহ (৩২:৯)যতক্ষণ না আমি তাকে সোজা করে বানিয়ে তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকেছি।"
— সূরা আল-হিজর (১৫:২৯)যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে একটি লেইল থেকে, আর তার মধ্যে রূহ দিয়ে।"
— সূরা আল-আলাক (৯৬:৫)
ড. জাকারিয়া কামাল তার তাফসীরে উল্লেখ করেছেন যে, রূহ আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে একটি শক্তিরূপ, যা জীবিত দেহে প্রভাব বিস্তার করে। রূহের প্রকৃতি ও তার শক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ কুরআনের আয়াতসমূহের সাথে মিল রেখে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
রূহের মৃত্যুর পর অবস্থা
সম্পাদনাইসলামে, রূহ মানুষের মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে ফিরে যায় এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হয়। মৃত্যুর পর রূহের অবস্থান এবং আধ্যাত্মিক জীবন ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিষয়।[২]
রূহ মানবজীবনের একটি অমূল্য উপাদান হিসেবে ইসলামে বিবেচিত। ড. জাকারিয়া কামালের সাইন্টিফিক তাফসীরের মাধ্যমে, রূহের প্রকৃতি এবং তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়, যা পাঠকদের মধ্যে ইসলামের শিক্ষার গভীরতা ও আধুনিক বিজ্ঞানের মাঝে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক।
সম্পর্কিত বিষয়
সম্পাদনা- পবিত্র আত্মা
- আত্মা
- মাওত (মৃত্যু)
- আখিরাত (পরে জীবনের ধারণা)
- সলুক
আরও দেখুন
সম্পাদনা- [সাইন্টিফিক তাফসীর](https://www.youtube.com/shorts/Y1Yw6QTeEzc?utm_source=chatgpt.com) - ড. জাকারিয়া কামালের ভিডিও
- ↑ "BOOKS"। al-quran-tafsir (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-১৪।
- ↑ "গ্রন্থঃ রূহ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত মাসআলাসমূহ | লেখক/পাবঃ ইসলামহাউজ.কম"। www.hadithbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-১৪।