যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌

যোগচূড়ামণি উপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: योगचूडामणि उपनिषत्, অনুবাদ'যোগের শিরোরত্ন' [৩]) বা যোগচূড়ামণ্যুপপনিষদ্‌ (সংস্কৃত:योगचूडामण्युपनिषत्) হল হিন্দুধর্মের একটি অপ্রধান উপনিষদ্‌। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত।[৪][৫] সামবেদ গ্রন্থের সঙ্গে যুক্ত এই উপনিষদ্‌টি কুড়িটি যোগ উপনিষদের অন্তর্গত।[৬]

যোগচূড়ামণি
দেবনাগরীयोगचूडामणि
IASTYogacūḍāmaṇi
নামের অর্থযোগের শিরোরত্ন
উপনিষদের
ধরন
যোগ[১][২]
সম্পর্কিত বেদসামবেদ
শ্লোকসংখ্যা১২১[২]
মূল দর্শনতন্ত্র

এই গ্রন্থটি কুণ্ডলিনী যোগ সংক্রান্ত আলোচনার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৭][৮]

ইতিহাস সম্পাদনা

যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌ কুণ্ডলিনী তত্ত্ব[৯] ও তন্ত্র[১০] অধ্যয়নের একটি সূত্র। রিচার্ড রোজেনের মতে, এই উপনিষদ্‌টি খ্রিস্টীয় ১৪শ থেকে ১৫শ শতাব্দীর মধ্যে কোনও এক সময়ে রচিত।[১১] স্বামী সত্যধর্ম সরস্বতী বলেছেন যে, এই উপনিষদ্‌টি যোগীদের উচ্চস্তরের সাধনা সংক্রান্ত একটি উৎকৃষ্ট সন্দর্ভ। এই গ্রন্থের কুণ্ডলিনী আলোচনা পরবর্তীকালে এই বিষয়ে লেখা বইগুলির পূর্বসূরি।[১২]

এই গ্রন্থটিকে যোগচূড়ামণি উপনিষদ্‌যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌ উভয় নামেই অভিহিত করা হয়।[১][১৩] মুক্তিকোপনিষদ্‌ নামক একটি আধুনিক কালের সংকলন গ্রন্থে রামহনুমানের কথোপকথনের আকারে ১০৮টি উপনিষদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে এই গ্রন্থটির ক্রম ৪৬তম।[১৪] উল্লেখ্য, মুক্তিকোপনিষদ্‌ ১৮৮৩ সালে তেলুগু ভাষায় প্রকাশিত হয় এবং এই গ্রন্থে কিছু ভুল রয়েছে। [১৫] সামবেদ গ্রন্থের সঙ্গে যুক্ত যে দশটি উপনিষদ রাজযোগ গোত্রের অন্তর্গত, তার মধ্যে একটি হল যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌[১৬]

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

যোগের উদ্দেশ্য

যোগের উদ্দেশ্য হল শিব ও শক্তির ন্যায় দুটি সত্ত্বাকে আত্মায় একীভূত করা।

যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌[১৭]

যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌ মূলত কাব্যিক শ্লোকে রচিত। এটি একটি অধ্যায়ে ১২১টি শ্লোকে বিন্যস্ত।[৭][১৮] প্রাথমিক শ্লোকগুলিতে এই উপনিষদের উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছে। উদ্দেশ্যটি হল ‘কৈবল্য’ (মুক্তিদায়ী একাকিত্ব) প্রাপ্তি। প্রথম ৭০টি শ্লোকে কুণ্ডলিনী যোগের তত্ত্ব ব্যাখ্যাত হয়েছে। এর মধ্যেই আলোচিত হয়েছে চক্র (শক্তিকেন্দ্র), নাড়ি (রক্ত সংবহন নালিকা), প্রাণবায়ু (জীবনীশক্তিরূপ বায়ু), মুদ্রা ও শক্তি (মহাশক্তি)।[৭][৮][৯] গ্রন্থের অবশিষ্টাংশে প্রণব ধ্যানের পদ্ধতি আলোচনা করে বলা হয়েছে হঠযোগ, কুণ্ডলিনী যোগ ও আত্মচৈতন্যের প্রতিফলনের সমন্বয়ে কৈবল্য লাভ করা সম্ভব।[১৯] শেষের শ্লোকগুলিতে বলা হয়েছে যে, সিংহ বা হস্তীকে যেমন ধীর পদক্ষেপে পোষা যায়, তেমনই শরীরের বিভিন্ন ব্যাধিকেও আসন ও প্রাণায়মের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।[২০] মুক্তিদায়ী চৈতন্য ও মানসিক শক্তি যোগের উচ্চস্তরের পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে পাওয়া যায়।[২১]

নিদ্রিত দেবী কুণ্ডলিনী

মহাদেবী (কুণ্ডলিনী) মুখ দ্বারা দ্বার রুদ্ধ করে নিদ্রা যান। প্রাণবায়ু সহযোগে অগ্নি ও মনের যুগ্মক্রিয়ায় তিনি তাঁর শরীরকে একত্রিত করে সুষুম্নার পথ ধরে একটি সূচের ন্যায় উপর দিকে ওঠেন।

যোগচূড়ামণ্যুপনিষদ্‌ ৩৮-৩৯[২২]

এই উপনিষদে বলা হয়েছে যে, নাভির নিচে ও জননস্থানের উপরে অবস্থিত একটি “ডিম্বাকার বা জটে”র আকৃতিবিশিষ্ট স্নায়ুকেন্দ্র থেকে ৭২,০০০ স্নায়ু উৎসারিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে ৭২টি স্নায়ুরই মাত্র নামকরণ করা হয়েছে।[২৩] এই গ্রন্থের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এই যে, ৫৫ থেকে ৬৪ সংখ্যক শ্লোকে যৌন রস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই দুটিকে বলা হয়েছে ‘বিন্দু’। এই গ্রন্থ অনুসারে, বিন্দু দুই প্রকার: ‘শুক্ল’ (পাণ্ডুবর্ণ, পুরুষ) ও ‘রজঃ’ (রক্তবর্ণ, স্ত্রী)।[২৪] এই গ্রন্থ অনুসারে, দুটি বিন্দুরই সৃষ্টিশক্তি রয়েছে। শুক্ল হল ব্রহ্ম (বিশ্বজনীন সত্ত্বা) এবং রজঃ হল শক্তি (মহাশক্তি)।[২৪] সর্বোচ্চ স্তরের মিলন হল যোনিমুদ্রায় এই দুইয়ের মিলন।[২৪] পরবর্তী শ্লোকগুলিতে নারী ও পুরুষ এর আলোচনার অংশ। বলা হয়েছে, ‘পরাশক্তি’ হল শুদ্ধ আনন্দের সার, ব্রহ্মা হলেন গতি, বিষ্ণু হলেন ছন্দ, রুদ্র হলেন নিষ্ক্রিয়তা এবং ইন্দ্র হলেন উপভোগ।[২৫] এই গ্রন্থ মতে, ধ্যেয় প্রণবে এই দেবদেবীগণ অবস্থান করেন।[২৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Ayyangar 1938, পৃ. 279।
  2. Larson ও Bhattacharya 2008, পৃ. 616।
  3. Callahan 2007, পৃ. 289।
  4. Deussen 1997, পৃ. 557।
  5. Hattangadi 2000
  6. Ayyangar 1938, পৃ. vii, 279।
  7. Larson ও Bhattacharya 2008, পৃ. 616-617।
  8. Ayyangar 1938, পৃ. 279-289।
  9. Daren Callahan (2007), Yoga: An Annotated Bibliography of Works in English 1981-2005, McFarland, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৮৬৪৩১৬২৫, page 289
  10. SS Saraswati (2003), Yoga chudamani Upanishad: Crown Jewel of Yoga, Yoga Publications, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১৮৬৩৩৬২৭৪
  11. Richard Rosen (2006), Pranayama beyond the Fundamentals, Shambala, আইএসবিএন ৯৭৮-১৫৯০৩০২৯৮৯, page 184
  12. Saraswati 2003, পৃ. review।
  13. Sastri 1920, পৃ. 337।
  14. Deussen 1997, পৃ. 556-557।
  15. Deussen 1997, পৃ. 558।
  16. Daniélou 1991, পৃ. 168।
  17. Tiwari 2011, পৃ. 355।
  18. Sastri 1920
  19. Ayyangar 1938, পৃ. 289-300।
  20. Ayyangar 1938, পৃ. 299-300।
  21. Ayyangar 1938, পৃ. 298।
  22. Ayyangar 1938, পৃ. 284।
  23. Gajendragadkar 1959, পৃ. 62।
  24. Ayyangar 1938, পৃ. 287-288।
  25. Ayyangar 1938, পৃ. 289-290।
  26. Ayyangar 1938, পৃ. 291-292।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা