মির্যা আগা মুহম্মদ বাকের

(মির্জা আগা বাকের থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মির্যা আগা মুহম্মদ বাকের ছিলেন একজন পারসিক অভিজাত। তিনি তৎকালীন বরিশাল জেলার প্রধান অংশ বুযুর্গ উমেদপুর এবং সলিমাবাদ পরগনার জমিদার ছিলেন। মুঘল আমলের এ-দুটি পরগনা বৃহত্তর বরিশাল জেলার বিশাল অংশে বিস্তৃত ছিল।[] বাকের ছিলেন নবাব সরফরাজ খানের অধীনে উড়িষ্যার নায়েব নাযিম দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খানের জামাতা। উড়িষ্যার অধিকার নিয়ে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি এবং আলীবর্দী খানের মধ্যকার সংঘর্ষে তার বিশেষ ভূমিকা ছিল।[]

মির্যা আগা মুহম্মদ বাকের
ব্যক্তিগত বিবরণ
মৃত্যু১৭৫৪
ঢাকা, বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ)
সন্তানমির্জা আগা সাদেক বেগ

১৭৪০ সালের ৯ এপ্রিল[][] মুর্শিদাবাদের অদূরে গিরিয়ার প্রান্তরে আলিবর্দী খানের সঙ্গে সরফরাজ খানের যুদ্ধ হয়।[] এ-যুদ্ধে সরফরাজ খানের পতনের পর আলীবর্দী খান বাংলার নবাব হন। কিন্তু উড়িষ্যা তখন বাংলার অন্তর্ভুক্ত হলেও আলীবর্দী খান তা অধিকার করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। উড়িষ্যার নায়েব নাযিম দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি আলীবর্দীর আধিপত্য অস্বীকার করেন, ফলে উড়িষ্যা তার অধীনেই থেকে যায়। এ অবস্থায় আলীবর্দীর নিকট থেকে বাংলা পুনর্দখলের জন্য আগা বাকের তার শ্বশুর দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির সাথে যোগ দেন। তিনি উড়িষ্যা রাজ্যের কটক থেকে বালাসোর অভিমুখে অগ্রসর হন এবং ১৭৪০ সালের ডিসেম্বরের দিকে বিহার রাজ্যের ফুলওয়ারী শরিফে শিবির স্থাপন করেন। তিনি যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত এবং ১৭৪১ সালের ৩ মার্চ পরাজিত হন। এরপর তিনি তার আহত জামাতা বাকেরকে নিয়ে মসলিপল্টমে পালিয়ে যান। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির বন্ধু উড়িষ্যার খুর্দা জেলার জমিদারের সমোচিত হস্তক্ষেপের ফলে তাদের পরিবার আলীবর্দীর সৈন্যদের কবল থেকে রক্ষা পায়। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির সেনাপতি শাহ মুরাদ তাদেরকে বাকেরের নিকট নিয়ে যান। দাক্ষিণাত্যে তাদেরকে চরম দুঃখকষ্টের মধ্যে দিনযাপন করতে হয়। এরপর আলীবর্দী তার ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা সৈয়দ আহমদ খানকে উড়িষ্যার নায়েব নাযিম নিযুক্ত করে মুর্শিদাবাদে ফিরে যান। আরোগ্য লাভের পর আগা বাকের ১৭৪১ সালের আগস্ট মাসে মীর হাবিবের নেতৃত্বাধীন একদল মারাঠা পদাতিক সৈন্য সহযোগে কটকে পৌঁছেন। তারা সৈয়দ আহমদকে তার পরিবার-পরিজনসহ বন্দি করে কড়া পাহারায় আটকে রাখেন এবং মেদিনীপুর এবং হিজলি দখল করে নেন। আলীবর্দী এ সংবাদ পাবার পর বাকেরের বিরূদ্ধে অগ্রসর হন এবং ১৭৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাকে মহানদীর দক্ষিণ তীরবর্তী রায়পুরে এক যুদ্ধে পরাজিত করেন। ফলে বাকের এবং তার সহযোগী মারাঠা সৈন্যগণ দাক্ষিণাত্যে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আগা বাকের সম্ভবত ১৭৪২ সালের গোড়ার দিকে আলীবর্দীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন। মির্জা আগা বাকেরকে বুযুর্গ উমেদপুর এবং সলিমাবাদ পরগনার জায়গিরদার নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৭৫৪ সালে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন।[]

১৭৪১ সালে আগা বাকের বুযুর্গ উমেদপুরে একটি বড় গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের নামে এ গঞ্জের নামকরণ করেন বাকেরগঞ্জ। বাকেরগঞ্জ তৎকালীন একটি গুরূত্বপূর্ণ বন্দর-শহর রৃপে গড়ে ওঠে। এ অঞ্চলে পারসিকআর্মেনীয় বণিক এবং কাশ্মীরি খাজারা লবণ ও চামড়ার ব্যবসা করতেন। আগা বাকের সম্ভবত ঢাকায় অবস্থান করতেন এবং তার প্রতিনিধির মাধ্যমে জমিদারি পরিচালনা করতেন। আগা বাকের ও তার পুত্র আগা সাদেক মুর্শিদাবাদ প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন এবং তারা স্পষ্টভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার অনুসারী ছিলেন। ঢাকার নায়েব নাযিম নওয়াজিশ মুহম্মদ খানের দুজন প্রতিনিধি ছিলেন হোসেন কুলি খান এবং হোসেনউদ্দিন খান, যাঁরা তার ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা হোসেন কুলি খান ও হোসেনউদ্দিন খানকে ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে অভিযুক্ত করেন এবং আগা সাদেকের সহায়তায় ১৭৫৪ সালে হোসেনউদ্দিনকে হত্যা করান। একই বছর ১৭৫৪ সালে নিহত হোসেনউদ্দিনের আত্মীয় এবং ঢাকা শহরের কোতোয়াল মির্জা আলী নকী এ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য আগা বাকেরের বাড়ি আক্রমণ করেন। আগা সাদেক তার বৃদ্ধ পিতা মির্জা আগা বাকেরকে জনতার রোষের মধ্যে ফেলে রেখে পেছনের দরজা দিয়ে মুর্শিদাবাদে পালিয়ে যান। বর্তমান ঢাকার আগা সাদেক ময়দানের উত্তর পাশের একটি সমাধিতে মির্জা আগা বাকেরকে সমাহিত করা হয়।[]

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান (২০১২)। "আগা মুহম্মদ বাকের, মির্যা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম, (বাংলাদেশের ইতিহাস), নবাব আলীবর্দী খান, পৃ. ২৯০–২৯১
  3. Nitish K. Sengupta। "Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib" 
  4. তাহমীদুল ইসলাম (৭ আগস্ট ২০১১)। "মির্জা মুহম্মদ আলিবর্দী খাঁ"। কিশোরগঞ্জ ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা