সরফরাজ খান

বাংলার নবাব

সরফরাজ খান (ফার্সি: سرفراز خان; ১৭০০ – ২৯ এপ্রিল ১৭৪০) ছিলেন বাংলার দ্বিতীয় নবাব এবংং জাহাঙ্গীরনগরের পঞ্চম নায়েব নাজিম। তার আসল নাম মির্জা আসাদুল্লাহ। সরফরাজ খানের নানা নবাব মুর্শিদ কুলি খান সরফরাজকে বাংলা, বিহারউড়িষ্যার নবাব হিসেবে তাঁর উত্তরাধীকারী মনোনীত করেন। ১৭২৭ সালে মুর্শিদ কুলি খানের মৃত্যুর পর যখন তিনি সিংহাসনে আরোহণ করবেন তখন জানতে পারেন তার পিতা উড়িষ্যার সুবেদার সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান[] ও তার প্রতিনিধি আলীবর্দী খাঁ বিশাল বাহিনী নিয়ে সিংহাসন দখলের জন্য মুর্শিদাবাদ অগ্রসর হচ্ছেন। পরিবারের মধ্যে কলহ এড়ানোর জন্য তাঁর মাতা দেওজার বেগম তাঁর পিতার সম্মানে সিংহাসন ছেড়ে দিতে বলেন। পরবর্তীতে সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান তাঁর উত্তরাধীকারী হিসেবে সরফরাজকেই মনোনীত করেন এবং ১৭৩৯ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে বসার পর তিনি আলাউদ্দিন হাইদার জং উপাধি লাভ করেন।

সরফরাজ খান
'মুতামুল মুলক (দেশের রক্ষক)
আলা-উদ-দৌলা (রাষ্ট্রের প্রবর্তক)
হায়দার জং (যুদ্ধের সিংহ)
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব নাজিম
রাজত্ব১৭২৭ ও ১৭৩৯-১৭৪০
রাজ্যাভিষেক১লা জুলাই ১৭২৭ ও ১৩ই মার্চ ১৭৩৯
পূর্বসূরিসুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান
উত্তরসূরিআলীবর্দী খাঁ (গিরিয়ার যুদ্ধ (১৭৪০) এর মাধ্যমে)
জাহাঙ্গীর নগরের নায়েব নাজিম
রাজত্ব১৭৩৪–১৭৩৯
পূর্বসূরিমির্জা লুতফুল্লাহ তাবরিজি
উত্তরসূরিগালিব আলী খান
জন্ম১৭০০ সালের পর (সম্ভবত)
মৃত্যু২৯শে এপ্রিল ১৭৪০
সমাধি
নাগিনাবাগ, মুর্শিদাবাদ
বংশধরপুত্র: মীর্জা হাফিজুল্লা খান (মৃত্যু. নভেম্বর ১৭৭১)

মীর্জা মুঘল
মীর্জা আমানী
মীর্জা বোরহান (মৃত্যু. এপ্রিল ১৭৯৫)
শুকরুল্লাহ (মীর্জা আগা বাবা) (জন্ম. এপ্রিল ২৯, ১৭৪০)

৫ কন্যা
রাজবংশনাসিরি
পিতাসুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান
মাতাজয়নব উন-নিসা বেগম (আজিম উন-নিসা বেগম)
ধর্মশিয়া ইসলাম[][][]

পরাজিত, মৃত্যু ও উত্তরাধীকার

সম্পাদনা

সরফরাজ খানের দুর্ভাগ্য যে তিনি আলীবর্দী খাঁর মত একজন প্রতিপক্ষ পেয়েছিলেন যার ৭০ বছর বয়সেও নেতৃত্ত্ব দেওয়ার অসাধারন গুন ছিল এবং তিনি সরফরাজ খানের দূর্বলতাগুলো জানতেন। সরফরাজ খান ভাগীরথী নদীর তীরে গিরকার যুদ্ধে নিহত হন। তার প্রতিপক্ষ আজিমাবাদের (বর্তমান পাটনা) সুবেদার আলীবর্দী তাকে সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত করেন। যুদ্ধটি ক্ষণস্থায়ী ছিল কিন্তু এর ভয়াবহতা ছিল মারাত্মক। যুদ্ধের প্রথম দিকেই সরফরাজ খান গুলিবিদ্ধ হন কিন্তু তার সেনাবাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আলীবর্দী খানের নিপুন রণকৌশলের কাছে সরফরাজের সেনাবাহিনী পরাজিত হয়।

প্রাথমিক ছত্রভঙ্গের কারণ ছিল সরফরাজ খান কখনো আলীবর্দী খাঁর কাছ থেকে এরকম যুদ্ধ আশা করেন নি এবং আলীবর্দী খাঁ সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সরফরাজকে সময় দেন নি। সিংহাসনে বসার ১৩ মাসের মাথায়ই তিনি আক্রমণ করেন। অপর দিকে সরফরাজ খান আরো বড় হুমকি নাদির শাহকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন যিনি দিল্লি ও পাঞ্জাব আক্রমণ করেছিলেন।

সরফরাজ খান মৃত্যুর সময় পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যা রেখে যান যারা কখনো ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেন নি। আলীবর্দী খাঁ বাংলার নবাব হিসেবে অভিষিক্ত হন ও একই সাথে মুর্শিদ কুলির নাসিরি রাজবংশের পতন ঘটে। আলীবর্দী খাঁ আফসার রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সরফরাজ খানকে মুর্শিদাবাদের নাগিনাবাগে সমাধিস্থ করা হয়। তার নির্মিত ফুটি মসজিদ মুর্শিদাবাদে একটি দর্শনীয় স্থান।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. S. A. A. Rizvi, A Socio-Intellectual History of Isna Ashari Shi'is in India, Vol. 2, pp. 45–47, Mar'ifat Publishing House, Canberra (1986).
  2. K. K. Datta, Ali Vardi and His Times, ch. 4, University of Calcutta Press, (1939)
  3. Andreas Rieck, The Shias of Pakistan, p. 3, Oxford University Press, (2015).
  4. কে.এম করিম (২০১২)। "সুজাউদ্দীন মুহম্মদ খান"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
সরফরাজ খান
জন্ম: ১৭০০-এর পূর্বে মৃত্যু: এপ্রিল ২৯, ১৭৪০
পূর্বসূরী
মুর্শিদ কুলি খান (১৭২৭-এর পূর্বে) ও সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান (১৭৩৯-এর পূর্বে)
বাংলার নবাব
১৭২৭ ও ১৭৩৯-১৭৪০
উত্তরসূরী
সুজা উদ্দিন মুহাম্মদ খান (১৭২৭-এর পর) ও আলীবর্দী খাঁ (১৭৪০-এর পর)