নরম্যান ইয়ার্ডলি

ইংরেজ ক্রিকেটার

নর‌ম্যান ওয়াল্টার ড্রান্সফিল্ড ইয়ার্ডলি (ইংরেজি: Norman Yardley; জন্ম: ১৯ মার্চ, ১৯১৫ - মৃত্যু: ৩ অক্টোবর, ১৯৮৯) ইয়র্কশায়ারের বার্নসলি এলাকার গবারেতে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়র্কশায়ার দলের পক্ষে খেলেছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন নর‌ম্যান ইয়ার্ডলি। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে বোলিং করতেন তিনি।

নরম্যান ইয়ার্ডলি
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম(১৯১৫-০৩-১৯)১৯ মার্চ ১৯১৫
গবার, বার্নসলি, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৩ অক্টোবর ১৯৮৯(1989-10-03) (বয়স ৭৪)
লজ মুর, শেফিল্ড, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকামাঝারীসারির ব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৩০৭)
২৪ ডিসেম্বর ১৯৩৮ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট২০ জুলাই ১৯৫০ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩৫-১৯৩৮কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৩৬-১৯৫৫ইয়র্কশায়ার
১৯৩৮-১৯৫২এমসিসি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২০ ৪৪৬
রানের সংখ্যা ৮১২ ১৮১৭৩
ব্যাটিং গড় ২৫.৩৭ ৩১.১৭
১০০/৫০ ০/৪ ২৭/৮৩
সর্বোচ্চ রান ৯৯ ১৮৩*
বল করেছে ১৬৬২ ২১০৮০
উইকেট ২১ ২৭৯
বোলিং গড় ৩৩.৬৬ ৩০.৪৮
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৩/৬৭ ৬/২৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৪/০ ৩২৮/১
উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ, ২৮ জুলাই ২০১৭

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

বার্নসি এলাকার কাছাকাছি রয়স্টোন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইয়ার্ডলি’র পারিবারিকভাবে ক্রিকেট ঐতিহ্য ছিল না।[১][২] ইয়র্কের সেন্ট পিটার্সে বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন ইয়ার্ডলি। ১৯৩০ থেকে বিদ্যালয় দলের পক্ষে পাঁচ বছর অংশগ্রহণ করেন ও শেষ দুই বছর দলের অধিনায়কত্ব করেন তিনি।[২][৩]

উচ্চমানের প্রতিভাবানসম্পন্ন হিসেবে সর্বক্রীড়ায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। এরপর তিনি কেমব্রিজের সেন্ট জোন্স কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ক্রিকেট, স্কোয়াশ, রাগবি ফাইভসফিল্ড হকিতে ব্লু লাভ করেন। তবে, ক্রিকেট থেকেই প্রধান সফলতা লাভ করেন। কেমব্রিজে থাকাকালীন চার বছরের প্রত্যেকটিতেই ব্লু পেয়েছিলেন।[৩][৪] দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় ৯০ রান, তৃতীয় বর্ষে ১০১ রান ও চূড়ান্ত বর্ষে দলের অধিনায়কত্ব করেন তিনি।

বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ইয়র্কশায়ার ক্লাবের নজরে পড়েন। ফলশ্রুতিতে ইয়র্কশায়ার কোল্টস দলে খেলার সুযোগ পান ও জর্জ হার্স্টের কাছে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ইয়র্কশায়ার দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে একটি, ১৯৩৩ ও ১৯৩৪ সালে দুইটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[৫]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৩৫ সালে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সাসেক্সের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন তিনি। প্রথম ইনিংসে তিনি শূন্য রান ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪ রান তুলেন তিনি।[৬]

১৯৩৬ সালের আগস্টের শেষদিকে ইয়র্কশায়ারের প্রথম একাদশের পক্ষে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে অভিষেক ঘটে তার। ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে একমাত্র ইনিংসটিতে তিনি ১২ রান সংগ্রহ করার পাশাপাশি এক উইকেট পান।[৭] ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট পুনরায় চালু হলে ইয়র্কশায়ার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জয় করে।[৮] ইয়ার্ডলি ২৩.১৭ গড়ে ৭৮৮ রান তুলেন।[৯] তন্মধ্যে, নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরিও করেন তিনি।

ঐ কাউন্টি দলে ১৯৫৫ সালে অবসরগ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত খেলেন। শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ইয়র্কশায়ার দলের অধিনায়কত্ব করেন তিনি। নিয়মিত অধিনায়ক ব্রায়ান সেলার্স পদত্যাগ করলে তিনি এ সুযোগ পান।[৩][১০] এ সময়ে ইয়র্কশায়ারের ড্রেসিং রুমে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। ১৯৪৯ সালে ইয়র্কশায়ার যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়। কিন্তু, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে সারে দলের পর দ্বিতীয় স্থানে চলে যায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পাদনা

যুদ্ধের কারণে ১৯৩৯ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ইয়র্কশায়ারের দলীয় সঙ্গী হেডলি ভেরিটি’র সাথে তিনিও গ্রীন হাওয়ার্ডসের প্রথম ব্যাটলিয়নে যোগ দেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের ওমাগায় প্রশিক্ষণ শেষে বেশকিছুসংখ্যক ক্রিকেট খেলায় ভেরিটি’র সাথে খেলেন।[১১] ভারত, ইরান, সিরিয়া, মিশর, সিসিলি, ইতালি ও ইরাকে যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তন্মধ্যে, জানুয়ারি, ১৯৪৪ সালে ইতালিতে থাকাকালে তিনি আহত হন। সুস্থ দেহে তিনি পুনরায় প্রথম ব্যাটলিয়নে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ও যুদ্ধ শেষ হবার পূর্ব-পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।[২]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৩৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে তার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়ালি হ্যামন্ডের সহকারী মনোনীত হন।[১২] ঐ সফরেই নিজস্ব চতুর্থ ও অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম টেস্টে নিয়মিত অধিনায়ক হ্যামন্ডের অনুপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কত্ব করার সুযোগ পান।[১৩] ১৯৪৭ সালে ওয়ালি হ্যামন্ডের অবসর নেয়ার পর ১৯৫০ সাল পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে ইংল্যান্ড দলকে চৌদ্দবার নেতৃত্ব দেন। তন্মধ্যে, চার টেস্টে জয়, সাত পরাজয় ও তিনবার ড্র করে তার দল।[৮]

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ইনিংসে ৯৯ রান তুলে আউট হন।[১৪][১৫]

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৪৮ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান তিনি।[২][১৬] তার স্মরণে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক মন্তব্য করে যে, স্ট্যানলি জ্যাকসনের পর তিনি ইয়র্কশায়ারের সর্বাপেক্ষা সেরা শৌখিন খেলোয়াড় ছিলেন।[২]

১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলার দল নির্বাচকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৫২ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে হাটনকে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করেন।[৮][১৭] ১৯৫২ সালে নির্বাচকমণ্ডলীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

ইয়র্কশায়ার ক্রিকেট কমিটিতেও কাজ করেছেন।[১৮] ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৮৩ সালে জিওফ্রে বয়কটের ছাড়পত্রের বিষয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।[১][১৯]

৩ অক্টোবর, ১৯৮৯ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে শেফিল্ডের লজ মুরে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তার দেহাবসান ঘটে।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Frith, David। "Norman Yardley (player profile)" (ইংরেজি ভাষায়)। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১০ 
  2. "Norman Yardley (Cricketer of the Year)"Wisden Cricketers' Almanack (ইংরেজি ভাষায়)। John Wisden & Co.। ১৯৪৮। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১০ 
  3. Hodgson, p. 148.
  4. "Norman Yardley (CricketArchive profile)" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 
  5. "Player Oracle NWD Yardley" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১০ 
  6. "Cambridge University v Sussex in 1935" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১০ 
  7. "Yorkshire v Derbyshire in 1936" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১০ 
  8. "Norman Yardley (Obituary)"Wisden Cricketers' Almanack (ইংরেজি ভাষায়)। John Wisden & Co.। ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১০ 
  9. "First-class Batting and Fielding in Each Season by Norman Yardley" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১০ 
  10. Woodhouse, p. 377.
  11. Hill, Alan (২০০০) [1986]। Hedley Verity. Portrait of a Cricketer (ইংরেজি ভাষায়)। Edinburgh: Mainstream Publishing। আইএসবিএন 1-84018-302-0 
  12. Gibson, p. 175.
  13. "North Eastern Transvaal v Marylebone Cricket Club in 1938/39" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১০ 
  14. "England v South Africa 1947 (first Test)"Wisden Cricketers' Almanack (ইংরেজি ভাষায়)। John Wisden & Co.। ১৯৪৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১০ 
  15. "Statistics / Statsguru / Test matches / Batting records"cricinfo (ইংরেজি ভাষায়)। 
  16. "Wisden Cricketers of the Year" (ইংরেজি ভাষায়)। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১ 
  17. Gibson, p. 184.
  18. Woodhouse, p. 378.
  19. "Yardley could give up presidency over rebels"The Times। London। ৫ নভেম্বর ১৯৮৩। পৃষ্ঠা 28। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১০  (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)

আরও দেখুন সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

ক্রীড়া অবস্থান
পূর্বসূরী
ডব্লিউ.আর. হ্যামন্ড
ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক
১৯৪৭
উত্তরসূরী
গাবি অ্যালেন
পূর্বসূরী
গাবি অ্যালেন
ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক
১৯৪৮
উত্তরসূরী
এফ.জি. মান
পূর্বসূরী
এফ.জি. মান
ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক
১৯৫০
উত্তরসূরী
এফ.আর. ব্রাউন