বাঘ

স্তন্যপায়ী, মাংসাশী প্রাণী

বাঘ (Panthera tigris) বিড়াল জাতের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। সিংহ, চিতাবাঘজাগুয়ারের সঙ্গে প্যানথেরা গণের চারটি বিশালাকার সদস্যের মধ্যে এটি সর্ব বৃহৎ ও শক্তিশালী প্রাণী। এটি ফেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে বড় প্রাণী। বাঘ ভারতবাংলাদেশ সহ মোট ৬ টি দেশের জাতীয় পশু। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় একে দেখা যায়। 'অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট' চ্যানেলের সমীক্ষা অনুযায়ী বাঘ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাণী।[]

বাঘ
সময়গত পরিসীমা: প্লাইস্টোসিন–বর্তমান
Tiger in Bangladesh.jpg
একটি বেঙ্গল টাইগার (P. tigris tigris),
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: স্তন্যপায়ী
বর্গ: শ্বাপদ
পরিবার: ফেলিডি
গণ: প্যানথেরা
প্রজাতি: P. tigris
দ্বিপদী নাম
Panthera tigris
(লিনিয়াস, ১৭৫৮)
উপপ্রজাতি

প্যা. টি. টিগ্রিস
প্যা. টি. করবেটি
প্যা. টি. জ্যাকসনি
প্যা. টি. সুমাট্রে
প্যা. টি. আলটাইকা
প্যা. টি. অ্যামোইএনসিস
প্যা. টি. ভার্গাটা
প্যা. টি. বালিকা
প্যা. টি. সনডাইকা
প্যা. টি. অ্যাকুটিডেনস্
প্যা. টি. ট্রিনিলেনসিস
প্যা. টি. সোলোএনসিস্

বাঘের ঐতিহাসিক বিস্তার ১৮৫০-এ (কপিশ) এবং ২০০৬-এ (সবুজ).[]
প্রতিশব্দ
Felis tigris Linnaeus, 1758

Tigris striatus Severtzov, 1858

Tigris regalis Gray, 1867

শব্দতত্ব

সম্পাদনা

সংস্কৃত শব্দ

ব্যাঘ্র থেকে বাঘ কথাটি এসেছে। বাংলা ভাষায় প্যানথেরা টাইগ্রিসই বাঘ নামে পরিচিত হলেও সিংহ এবং বাঘ দুটোকেই বুঝানোর জন্য যেভাবে ফার্সি ভাষায় শীর বা শের শব্দটি ব্যবহার হয়, তেমনি বাঘ শব্দটির দ্বারা মূলত বড় শিকারী প্রাণীকে বুঝানো হতো যেমন চিতাবাঘ, নেকড়ে বাঘ

স্বভাব

সম্পাদনা
 
বাঘরা জলে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে এবং প্রায়শই তাদের স্নান করতে দেখা যায়।

বাঘেরা জলে থাকতে খুব পছন্দ করে। এরা শুধু শরীর ঠাণ্ডা রাখতেই জলে নামে না বরং অনেক সময় জলে এরা শিকারও করে!

 
শাবকসহ বাঘিনী

বাঘ সাধারণত একা একা থাকে ও শিকার করে। তবে বাচ্চারা ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের সাথে থাকে।

খাদ্যাভাস ও শিকার

সম্পাদনা

বাঘ সহসা বাধ্য না হলে খাঁচার মতো আবদ্ধ জায়গায় ঢুকতে সাহস করে না। এমনকি মানুষখেকো হলেও না। তবে আক্রান্ত বাঘ খুব মারমুখী হয়ে থাকে।[] বিভিন্ন নিরামিষাশী, বুনো বা গৃহপালিত প্রাণী (চিত্রা হরিণ, সম্বর হরিণ, মহিষ, গৌড়, বুনো শূকর, বানর ইত্যাদি, সুযোগ পেলে গরু- ছাগল,কুকুর ইত্যাদি) বাঘের খাদ্য। তবে খিদে পেলে বাঘ চিতাবাঘ,কুমির, ভাল্লুক বা অজগরকেও ছাড়েনা। এমনকি হাতিগণ্ডারের বাচ্চার উপরো বাঘ হামলা করে। কিছু সময়ে বাঘ নরখাদক হয়ে যায়। বাঘ ঘন ঝোপে লুকিয়ে আচমকা হামলা করে শিকার করে। মুলত জলাশয়ের কাছে বাঘ লুকিয়ে থাকে।

বাঘ রাতেই বেশি শিকার করে। বড় প্রাণী শিকারের সময় বাঘ শ্বাসনালি কামড়ে ধরে এবং সম্মুখপেশীর সাহায্যে শিকারকে আঁকড়ে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলে। শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলা আঁকড়ে ধরেই থাকে।

দৈনিক খাদ্য চাহিদা

সম্পাদনা

বাঘেরা দৈনিক ৫-১৫ কেজি মাংস খায়, তবে সুযোগ পেলে বড় পুরুষ বাঘ ৩০ কেজি মাংসও খেতে পারে।

 
একটি শিকারকৃত খুর-যুক্ত চতুষ্পদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাঘ

শিকার কৌশল

সম্পাদনা

বাঘেরা ওৎ পেতে শিকার করে। এরা নিঃশব্দে শিকারের পিছু নেয়,আর অতর্কিত আক্রমণ করে। এদের গতিবেগ ৫০-৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত হয়, তবে এ গতিবেগ খুব অল্প সময়ের জন্য। এরা পানিতেও শিকার করতে পারে, এদের সাঁতারের গতিবেগ ৩২ কি.মি./ঘণ্টা যা অলিম্পিক এর সাঁতারুদের থেকেও বেশি।

শিকারের জন্য অস্ত্র

সম্পাদনা
 
রাগী তরুণ বাঘের দাঁত।

এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, যা বিড়াল পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বড়। এদের কামড়ের জোর ১০৫০ পিএসআই পর্যন্ত হয়। এদের আছে গুটিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা যুক্ত ব্লেডের মত ধারালো বাঁকানো নখর। সামনের পায়ের নখর ৩ ইঞ্চিরও বেশি লম্বা হয়। সব মিলিয়ে এরা অনেক ভয়ংকর হয়। কিন্তু এরা যদি একটির বেশি শিকারের সাথে একাই মারামারি করে, সংখ্যা কম হওয়ায় এরা একটু দুর্বল হয়ে যায়।

পারিবারিক জীবন

সম্পাদনা

বাঘ একা থাকতেই ভালোবাসে। কেবল জননের সময় বাঘিনীর সাথে মিলিত হয়। শাবকসহ বাঘিনীকে দেখা যায়।

বাঘ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিড়াল প্রজাতি। বাঘ বিড়াল প্রজাতির অন্য সকল প্রাণী এমন কি সিংহ হতেও বড় এবং শক্তিশালী প্রাণী।

 
বাঘের সাথে জাগুয়ার-এর তুলনা

বাঘ সর্বোচ্চ লম্বায় ৩.৩ মিটার (১১ ফিট) এবং ওজনে ৩০০ কিলোগ্রাম (৬৬০পাউন্ড) পর্যন্ত হয়। এর উপরে শুধু কয়েকটি বাঘই হয়েছে।

 
বাঘের ও সিংহের চোয়াল

তবে পুরুষ বেঙ্গল টাইগার গড়ে ১৬০-২৮৯ কিলোগ্রাম ওজনের হয়, আর স্ত্রী বাঘিনী গড়ে ৯১-১৬২ কিলোগ্রাম ওজনের হয়। বাঘদের ওজন-আকার এসব এর উপপ্রজাতি ভেদে ভিন্ন হয়।

যেমন, বেঙ্গল টাইগার ও সাইবেরিয়ান বাঘ আকারে অনেক বড় হয়।

 
সাইবেরিয় বাঘ

কিন্তু সুমাত্রান বাঘ, বালির বাঘ, জাভা দেশীয় বাঘ আকার আকৃতিতে তুলনামূলক ভাবে ছোট ও দুর্বল হয়।

 
তরুণ পুরুষ বাঘ বাঘিনীর গন্ধ শুকে ফ্লেহমেন প্রতিক্রিয়া (flehmen response) দেখাচ্ছে।

বাঘের মিলন বছরের যেকোন সময় হতে পারে।তবে নভেম্বর-এপ্রিলের মধ্যেই সর্বাধিক মিলন ঘটে।

 
পুরুষ ও স্ত্রী বাঘ

বাঘিনীদের গর্ভাবস্থাকাল ১০৩-১০৫ দিন, এক সাথে ২-৪টি বাচ্চা দিয়ে থাকে।

 
বাঘের বাচ্চা

হাইব্রিড/সংকর

সম্পাদনা
 
লাইগার দম্পতি

বাঘ নিজের প্রজাতির বাইরেও প্রজনন করতে পারে, যেমন, পুরুষ সিংহ ও স্ত্রী বাঘিনী এর মিলনে সৃষ্টি হয় লাইগার (Lion+Tiger=Liger) এর। যা বাঘ বা সিংহ দুটোর থেকেই বড়।

 
লাইগার

পুরুষ লাইগার এর ওজন ৩৫০-৪৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।

আবার, পুং বাঘ আর স্ত্রী সিংহী এর মিলনে সৃষ্টি হয় টাইগন (Tiger+Lion=Tigon) এর। টাইগন বাঘ, সিংহ বা লাইগার এর তুলনায় অনেক ছোট হয়।

 
Tigon

টাইগন এর ওজন ১০০-১৮০ বা এরও চেয়ে কম হয়।

আশ্চর্যজনকভাবে, বাঘেরা স্ত্রী লাইগার এর সাথেও বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

 
World's first tiliger at G.W. Zoo

এবং বাচ্চাও হতে পারে। এদের টালাইগার (tiliger) বলা হয়। এরা হল আশ্চর্য এক দ্বিতীয় প্রজন্মের হাইব্রিড বা হাইব্রিডের হাইব্রিড। এরাও লাইগারের মত বড় হয়।

উপপ্রজাতি

সম্পাদনা

বিলুপ্ত

সম্পাদনা

উপপ্রজাতির বর্ণনা

সম্পাদনা

বর্ণসংকর

সম্পাদনা

বিভিন্ন কারণে (বিশেষত পরিব্যক্তি) বাঘের পরিচিত চেহারার বাইরেও দেখা মেলে। যেমনঃ সাদা বাঘ, সোনালী বাঘ

সাদা বাঘ

সম্পাদনা
 
 
গুনমা সাফারি পার্কে সাদা বাঘ

সাদা বাঘ বাঘের এক মিউট্যান্ট। বিশেষ জিন মিউটেশনএর ফলে বাঘ সাদা হয়। পৃথিবীর অনেক চিড়িয়াখানায় সাদা বাঘ পাওয়া যায়।

 
সাদা বাঘ

সাদা বাঘ বাঘদের মিউট্যান্ট এর মধ্যে বিশেষ পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন চিড়িয়াখানাতে এই বাঘ আছে। বাংলা বাঘও সাইবেরিয়ার বাঘ উপ প্রজাতীর মধ্যে এই বাঘের বর্ণসংকরের কথা জানা যায়। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীরা মত দিয়েছেন,সাদা বাঘ মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগার এরই মিউট্যান্ট। ঢেঙ্কানলের বন থেকে প্রথম এই বাঘ ধরা হয় বলে জানা গেছে। কিছু কিছু সাদা বাঘ ডোরাহীন হয়। এখন এই বাঘ বনে দেখা যায় না।

কালো বাঘ

সম্পাদনা

মনে করা হোত দাবানলের ফলে বাঘের গায়ের রং কালো হয়ে যায়। কিছুদিন আগে উড়িষ্যার সিম্লিপাল বনে এই বাঘের দেখা পাওয়ার কথা জানা গেছে।

সোনালী বাঘ

সম্পাদনা
 
সোনালি বাঘ

সোনালী বাঘএর সংখ্যা ৩০-এরও কম। বাংলা বাঘসাইবেরিয় বাঘের মধ্যেও এই পরিব্যক্তির কথা জান গেছে। সোনালী বাঘ golden tabby বা Strawberry Tiger নামেও পরিচিত।

 
The Golden tiger's coat is lighter than that of a normal tiger

বিংশ শতকের শুরুর দিকে এই বাঘ বনে পাওয়া যেতো বলে জানা যায়। শেষ বন্য সোনালি বাঘকে মহীশুরের বনে শিকার করা হয়েছিলো। এই বাঘগুলি ডোরাহীন বা প্রায় ডোরাহীন হয়। বিশেষত পেটের দিকে ডোরা থাকেই না। ভীম নামে এক পোষা বাঘকে পালিত সোনালি বাঘের পুর্বপুরুষ মনে করা হয়।

মাল্টীজ বাঘ

সম্পাদনা
 
মাল্টীজ বাঘ

এই বাঘের গায়ের রং নীলচে। বেশিরভাগ মাল্টীজ বাঘ দক্ষিণ চীনের বাঘ উপ প্রজাতী বর্ণসংকর। এই বাঘ চরম বিপন্ন। নীলবর্ণসংকর সম্ভবত বিলুপ্ত। সাইবেরিয়ার বাঘদের মধ্যেও নীলবাঘের খবর পাওয়া গেছে। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন, এরকম বর্ণসংকর হওয়া প্রায় অসম্ভব।

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার

সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় যে সুদর্শন বাঘ দেখা যায় তা দুনিয়াব্যাপী রয়েল বেঙ্গল টাইগার (en: Royal Bengal Tiger) বা বাংলা বাঘ নামে পরিচিত। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের বন বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত বাঘশুমারী অনুযায়ী সুন্দরবনে ৩৮৫টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে। ভারতের সুন্দরবন ও অন্যত্র, নেপাল এবং ভুটানের বন-জঙ্গলেও এই উপপ্রজাতির বাঘ সচরাচর দেখা যায়। ২০১৫ সালের ২৯ শে জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ এর সুন্দরবন অংশে বাঘ আছে মাত্র ১০৬ টি।পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯৬ টি। []

মানুষের সাথে সম্পর্ক

সম্পাদনা

বাঘশিকার

সম্পাদনা

বাঘ শিকারের জনপ্রিয়তা মূলত ১৮০০-১৯০০ বেড়ে উঠে । মূলত ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা এবং রাজপরিবার এর সদস্যরা বাঘ শিকার করতে পছন্দ করতেন।মানুষ আত্নরক্ষা, আনন্দ ও আস্ফালন প্রকাশের জন্য বাঘের শিকার করেছে। সমগ্র এশিয়া জুড়ে বাঘ নিধন চলছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনে বন ধ্বংস করছে, এতে বাঘের ক্ষতি হচ্ছে। বাঘের নরখাদকবৃত্তিও বাড়ছে।

নরখাদক বাঘ

সম্পাদনা

মানুষ বাঘের স্বাভাবিক খাদ্য নয়। বয়সজনিত দুর্বলতা, আঘাত, ও আকালে রক্তের স্বাদ পেলে বাঘ নরখাদকে পরিণত হয়। নরখাদক হওয়ার পরেও বাঘ অন্যান্য জীবকে শিকার করে।

বাঘ প্রতিপালন

সম্পাদনা

সার্কাস ও ধনী ব্যক্তিদের ঘরে বাঘ পোষার ঘটনা জানা যায়। বিখ্যাত বক্সার মাইক টাইসনও বাঘ পুষেছেন। তবে এভাবে বাঘ পোষা বাস্ত‌ুতন্ত্রের ক্ষতি করে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব

সম্পাদনা

বহুদেশের সংস্কৃতিতে বাঘের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন যুগে বাঘ মানুষের আতঙ্ক, অণুপ্রেরণা ও শ্রদ্ধার কারণ হয়ে আছে। বাঘকে ভারত, বাংলাদেশমালয়েশিয়া জাতীয় পশু ঘোষণা করেছে। আজাদ হিন্দ ফৌজের পতাকায় বাঘের নিশান ছিলো। টিপু সুলতানের পতাকায় লেখা থাকতো "বাঘই ভগবান"।

বাংলাদেশ এর সংস্কৃতি তে বাঘ এক কিংবদন্তি। বাঘ আর বাংলাদেশ এর সংস্কৃতি অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত। বাংলাদেশ এর সাহিত্যে বাঘের কথা এসেছে বহুবার। বাঘ বাংলাদেশ এর অন্যতম প্রতীকে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর প্রতীকও বাঘ।

সংরক্ষণ প্রকল্প

সম্পাদনা

বাঘ এখন এক বিপন্ন প্রাণী। বাঘ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে বিভিন্ন দেশে।

ব্যাঘ্র প্রকল্প ১৯৭২ সালে বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভারতে গৃহীত একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প। ১৯৭৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই প্রকল্প কার্যকর করা হয় এবং পরবর্তীকালে সর্বাপেক্ষা সফল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগে পরিণত হয়। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জৈবভৌগোলিক ক্ষেত্রে স্থাপিত বিভিন্ন ব্যাঘ্র সংরক্ষণাগারে (টাইগার রিজার্ভ) বাঘ সংরক্ষণ করাই ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। দেশে প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলে সংরক্ষিত বাঘের সংখ্যাবৃদ্ধিতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের ৩১,৭৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৪০টি ব্যাঘ্র প্রকল্প বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগার রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে যেখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ১,২০০টি সেখানে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফলে ১৯৯০-এর দশকে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩,৫০০টিতে। অবশ্য ২০০৮ সালের ব্যাঘ্রগণনা থেকে জানা যায়, এই সংখ্যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ১,৪১১টিতে। তখনই সরকার প্রকল্পটিকে আরও ১৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থসাহায্য দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় টাইগার প্রোটেকশন ফোর্স গঠন ও মানব-ব্যাঘ্র সংঘাত এড়ানোর উদ্দেশ্যে ২০০,০০০ জন গ্রামবাসীর পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য অর্থসাহায্যেরও।

২০০৫ সালে সারিস্কা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে বাঘ সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাওয়ার পর যখন ২০০৮ সালের জুলাই মাসে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্থানান্তরণ স্কিমে দুটি বাঘ আবার এখানে নিয়ে আসা হয়, তখনই এই প্রচেষ্টা কার্যকর করার সূচনা ঘটে।

রাশিয়া

সম্পাদনা

১৯৪০ এর দশকে সাইবেরিয়ান বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে ৪০ এ ঠেকেছিলো।তৎকালীন সোভিয়েত সরকারের হস্তক্ষেপে এবং কঠোর সংরক্ষণ আইন প্রবর্তনের ফলে এই সংখ্যা বেড়ে কয়েকশ হয়েছিলো।সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধস নামে ফলে আবার বাঘ নিধন বেড়ে যায়।বর্তমানে রাশিয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রায় ৪০০-৫৫০ বাঘ রয়েছে।

বাঘের দেহাবশেষ জনিত চীনা কুসংস্কার ও তিব্বতে বাঘের চামড়ার অপব্যবহার বাঘের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলেছে। অন্য দিকে বাঘ খামার চালু হওয়ায় বাঘের দেহাবশেষের ব্যবহার বেড়ে গেছে। Save China's Tiger নামে সম্প্রতি আন্দোনন শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ

সম্পাদনা
 
মিরপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ

সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। তবে তার পরও ক্রমেই সুন্দরবন এ বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের ২৯ শে জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে বাঘ আছে মাত্র ১০৬টি। তাছাড়া বাংলাদেশ এর ঢাকা মিরপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ সংরক্ষণ এর চেষ্টা চলছে।

চিতোয়ান অরণ্যে বাঘকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে। আশার কথা এই, নেপালে বাঘের সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে।

মালয়েশিয়া

সম্পাদনা

মালয়ের বাঘকে মালয়েশিয়ায় সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রাণীবিদরা আশাবাদী।

বনে স্থানাতর

সম্পাদনা

সুন্দরবন এলাকায় বাঘ মাঝে মাঝেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এদের ধরে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। বন্দী বাঘকেও বনে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই পদ্ধতির সাফল্য সীমিত। তারা নামে বাঘিনীকে বিলি আরজান সিংএর উদ্যোগে ছেড়ে দেওয়ার পর বাঘের নরখাদক হয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়।সন্দেহ করা হয় এই বাঘটিই তারা। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বনে দুটি দক্ষিণ চীনের বাঘকে ছাড়া হয় যার মধ্যে একটি মারা গেছে। এছাড়াও, ২০০৩ সালে বিখ্যাত প্রাণীবিজ্ঞানী ও big cat expert "ডেভ স্যালমনি" ও বিখ্যাত প্রাণীবিজ্ঞানী "জন ভার্টি" Ron ও Julie নামে দুটি বেঙ্গল টাইগার কে ৩ বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাতে ছাড়ে। এটি ডিসকোভারি চ্যানেলে Living with Tigers নামের অনুষ্টানে অনেক সময় দেখায়। এর পরবর্তীকালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফীতে Tiger man of Africa নামে John Verty এর একটা অনুষ্ঠান দেখায়, যাতে দেখা যায় বাঘ গুলো সফল ভাবে বেঁচে আছে ও প্রজননও করেছে, সেই সাথে সেখানে আরও কয়েকটি বাঘ যোগ করা হয়েছে।

বন্দী বাঘ

সম্পাদনা

বাঘ খুব বুদ্ধিমান প্রাণী। এদের সার্কাস এর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। এরা খুব সহজেই বুঝতেও পারে।

 
Tigers performing at Ringling Brothers and Barnum and Bailey Circus
 

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Chundawat, R.S., Habib, B., Karanth, U., Kawanishi, K., Ahmad Khan, J., Lynam, T., Miquelle, D., Nyhus, P., Sunarto, Tilson, R. & Sonam Wang (2008). Panthera tigris. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 9 October 2008.
  2. "Wild Tiger Conservation"। Save The Tiger Fund। ২০১১-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ 
  3. Independent Online। "Tiger tops dog as world's favourite animal"। Int.iol.co.za। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. খসরু চৌধুরী (৭ আগস্ট ২০১০)। "সুন্দরবনে রোমাঞ্চকর ত্রয়ী"। ছুটির দিনে, দৈনিক প্রথম আলো (প্রিন্ট)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৭। 
  5. ডি.ডি.বাংলা-০৬/০৫/২০২০সন্ধ্যা ৬টা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা