টিপু সুলতান

ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা

টিপু সুলতান (বা ফতেহ আলী সাহাব টিপু জন্ম: ২০ নভেম্বর, ১৭৫০[]- মৃত্যু: ৪ মে, ১৭৯৯) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেন। তিনি তার শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন।[][] [][] [] তিনি তাঁর শাসনকালে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন[] একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ক্যালেন্ডার সহ।[] পাশাপাশি একটি নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা যা মহীশূরের রেশম শিল্পের বিকাশের সূচনা করেছিল।[]

টিপু সুলতান
বাদশা

নাসিব উদ-দৌলা

মীর ফতেহ আলী বাহাদুর টিপু
রাজত্ব১৭৮২ - ১৭৯৯
পূর্বসূরিহায়দার আলী
প্রাসাদমহীসূর
পিতাহায়দার আলী
মাতাফকির-উন-নেসা

দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক ছিলেন টিপু সুলতান ৷ পিতা হায়দার আলী মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন ৷ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার মিত্র ছিল এবং ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে সাহায্য করেছিল। শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামে কাবেরী নদীর একটি ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দুর্গ থেকে রাজ্য শাসন করতেন৷ বর্তমানে শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রাম দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার অন্তর্গত৷ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে নিহত হন। টিপুর এক সেনাপতি মীর সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মেলান৷ পরে তার পরিবারের লোকজনকে ভেলোরের দুর্গে বন্দী করে রাখে ব্রিটিশ শাসকরা৷ জানা যায়, ভেলোরে রাজ পরিবারের সদস্যদের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি করার পর ১৮০৬ সালে একটি বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। সেই বিদ্রোহে ভেতর এবং বাহিরের প্রচন্ড আক্রমণে শতাধিক ইংরেজ সৈন্য সেদিন নিহত হয়। এমন ঘটনা ইংরেজদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করে। পরবর্তীতে মাদ্রাজ এবং আশ পাশের সৈন্য নিয়ে তারা আবার দুর্গটি দখল করে নেয়। ইংরেজরা ওই সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিশোধের নেশায় প্রায় ছয় শতাধিক মানুষকে তারা হত্যা করে বলে জানা যায়। ইংরেজরা এই হামলার জন্য টিপুর পরিবার এবং রাজপুত্রদের সন্দেহ করে। কিন্তু বিদ্রোহে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেনি। পরবর্তীতে টিপু সুলতানের পরিবারের একটি বড় অংশকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর যাদের সন্দেহ করা হয়নি তাদের ভেলোরে রেখে দেওয়া হয়। এখানে যারা নিহত ও মারা যায় তাদেরকে দুর্গ থেকে দুই কিমি দূরের এই টিপু সুলতান গ্রান্ড মসজিদ এর প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। কলকাতা নিয়ে যাওয়ার সময় টিপু সুলতানের সর্ব কনিষ্ট পুত্র শাহজাদা ওয়াহিদ উল্লাহ সুলতান ঐখান থেকে পালিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ এর সুনামগঞ্জে পরিচয় গোপন করে ওয়াহিদ উল্লাহ নামে সেখানে আশ্রয় নেন। এভাবেই হত্যা, রক্ত আর বিভক্তর ক্ষত নিয়ে টিপু সুলতানের বংশধরেরা ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।

শের-ই-মহীশূর

সম্পাদনা
 
টিপু সুলতানের রকেট যুদ্ধে ব্যবহৃত (১৭৮০–১৭৮৪)।

টিপু সুলতানকে ডাকা হতো শের-ই-মহীশূর; উপাধিটা ইংরেজদেরই দেয়া। তার এই বাঘ (শের) হয়ে ওঠার পিছনে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কিত ছিলো। মূল কারণ ছিলো তার অসাধারণ ক্ষীপ্রতা, দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা আর কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা - বাবার সুযোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন টিপু সুলতান। বাবা হায়দার, ১৭৪৯ খ্রিষ্টাব্দে টিপু নামে এক ফকিরের দোয়ায় এক পুত্রসন্তান লাভ করেন এবং আনন্দচিত্তে ঐ ফকিরের নামেই ছেলের নাম রাখেন "টিপু"। মহীশূরের স্থানীয় ভাষায় (কানাড়ী ভাষা) 'টিপু' শব্দের অর্থ হলো বাঘ। হয়তো তাকে 'শের-ই-মহীশূর' ডাকার পিছনে এটাও একটা কারণ ছিলো।[]

ছোটবেলা থেকেই টিপু, বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। বাবাই তাকে বাঘের গল্প শোনাতেন। কিশোর বয়সে টিপু সুলতান বাঘ পুষতে শুরু করেন। বাঘ নিয়ে তার ব্যঘ্রতার শেষ ছিলো না। বাবার মৃত্যুর পর তিনি যখন সিংহাসনে আরোহণ করলেন, তখন বাবার পুরোন সিংহাসনটি তিনি ঠিক পছন্দ করলেন না। তাই তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কারিগর দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তার উপর মণিমুক্তা ও রত্নখচিত একটি সিংহাসন বানিয়ে নিলেন, যাকে বরং "ব্যাঘ্রাসন"ই (Tiger throne) বলা যায়। কারণ আট কোণা ঐ আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণে তৈরি দশটি বাঘের মাথা, আর উপরে উঠার জন্য ছিলো দুধারে, রূপার তৈরি সিঁড়ি। আর পুরো ব্যাঘ্রাসনটাই ছিলো বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা।[]

টিপু সুলতানের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন পণ্ডিত পুরণাইয়া।টিপু সুলতান সামরিক তালিম নেন সরদার গাজী খান এর কাছ থেকে।টিপু সুলতান ছিলেন বহুভাষায় পারদর্শী

টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীক ছিলো বাঘ। এই বাঘ ছিলো তাঁর অনুপ্রেরণার মতো। তাঁর রাজ্যের পতাকায় কানাড়ী ভাষায় লেখা ছিলো "বাঘই ঈশ্বর"। তিনি সিংহাসনে বসে মাঝে মাঝেই বলতেন:

তাঁল সমস্ত পরিধেয় পোশাক ছিলো হলুদ-কালো রঙে ছাপানো আর বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা। তিনি যে তলোয়ার ব্যবহার করতেন, তার গায়েও ছিলো ডোরা দাগ এবং হাতলে ছিলো খোদাই করা বাঘের মূর্তি। তার ব্যবহৃত রুমালও ছিলো বাঘের মতো ডোরাকাটা। তার রাজ্যের সমস্ত সৈনিকের পোশাকে থাকতো বাঘের ছবি। সৈন্যদের ব্যবহার্য তলোয়ার, বল্লম, বন্দুকগুলোর নল, কুদো, হ্যামারেও আঁকা থাকতো বিভিন্ন আকারের বাঘের প্রতিরূপ কিংবা মূর্তি। এমনকি তিনি তার রাজ্যের প্রধান প্রধান সড়কের পাশে, বাড়ির মালিকদেরকে বাড়ির দেয়ালে বাঘের ছবি আঁকার নির্দেশ জারি করেছিলেন। তখনও তার বাঘ পোষার বাতিক যায়নি এবং রাজবাড়িতে বেশ কয়েকটি পোষা বাঘ ছিলো। তার কয়েকটি আবার তার ঘরের দরজার সামনে বাঁধা থাকতো।[]

 
টিপু সুলতানের আত্মসমর্পণ
 
টিপু সুলতান

১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর ও তার বাহিনীর কাছে দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধে টিপু ও তার বাবা মারাত্মক নাজেহাল হন এবং টিপুর রাজ্যে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়, নিহত হয় অনেক সৈন্য। এমনিতেই তিনি প্রচন্ড ইংরেজ বিরোধী ছিলেন, তদুপরি এই পরাজয়ে তিনি আরো বেশি তেজদীপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাক্রমে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্রসুন্দরবনের সাগর দ্বীপে বাঘ শিকার করতে গিয়ে বাঘ আক্রমণে নিহত হয়। এই সংবাদ পেয়ে টিপুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি এই ধারণা কাজে লাগিয়ে একটি বিচিত্র খেলনা বানিয়েছিলেন, যা সারা দুনিয়ায় "টিপু'স টাইগার" (Tipu's Tiger) নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ফরাসি যন্ত্রকুশলীদের দ্বারা নির্মিত প্রমাণ আকারের এই খেলনাটিতে ক্লকওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো। খেলনায় দম দিয়ে ছেড়ে দিলে এর সাথে লাগানো একটি অর্গান পাইপ থেকে রক্ত হীম করা বাঘের প্রচণ্ড গর্জন, আর এক ইংরেজের প্রচণ্ড গোঙানির আওয়াজ বের হতো। পুরো খেলনাটি ছিলো এরকম: একজন ইংরেজ একটি বাঘের থাবার মধ্যে অসহায়ভাবে পড়ে গোঙাচ্ছে আর একটা বাঘ প্রচন্ড আওয়াজ করে সেই ইংরেজের বুকের উপর চেপে গলা কামড়ে ধরতো। তখন ইংরেজটি তার হাত উঠিয়ে চেষ্টা করতো বাঘের মাথাটি এদিক-ওদিক সরিয়ে দিতে। ভিতরকার অর্গান থেকে আরো বেরিয়ে আসতো মহীশূর সুলতানের প্রিয় গজলের সুর। "টিপু'স টাইগার" বানানোর পিছনে একদিকে যেমন ছিলো তার ইংরেজদের প্রতি উষ্মা, তেমনি অন্যদিকে ছিলো প্রচন্ড ব্যঘ্রপ্রীতি। সময় পেলেই তিনি বাঘটিতে দম দিতেন; কখনও কখনও রাতের পর রাত একই জিনিস দেখে গায়ের জ্বালা মেটাতেন।[]

পরিবার

সম্পাদনা

টিপু সুলতানের ৪ জন স্ত্রী, ১৫ জন পুত্র এবং কমপক্ষে ৮ জন কন্যা সন্তান ছিল। কন্যাদের পরিচিতি অজানাই রয়ে যায়। ১৮০৬ সালে বিদ্রোহের পর যখন টিপু সুলতানের পরিবার কে ভেলোর থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার সর্ব কনিষ্ট পুত্র শাহজাদা মুহাম্মদ ওয়াহিদ উল্লাহ সুলতান সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন পরে বর্তমান বাংলাদেশ এর সুনামগঞ্জে এসে পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নেন ।

সন্তানদের বিবরণ
ক্রমিক নং নাম জীবনকাল
১। শাহজাদা হায়দার আলী সুলতান ১৭৭১ - ৩০ জুলাই, ১৮১৫
২। শাহজাদা আব্দুল খালিক সুলতান ১৭৮২ - ১২ সেপ্টেম্বর, ১৮০৬
৩। শাহজাদা মুহি-উদ-দীন সুলতান ১৭৮২ - ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৮১১
৪। শাহজাদা মু'ইজ-উদ-দীন সুলতান ১৭৮৩ - ৩০ মার্চ, ১৮১৮
৫। শাহজাদা মি'রাজ-উদ-দীন সুলতান ১৭৮৪? - ?
৬। শাহজাদা মু'ইন-উদ-দীন সুলতান ১৭৮৪? - ?
৭। শাহজাদা মুহাম্মদ সুবহান সুলতান ১৭৮৫ - ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৪৫
৮। শাহজাদা মুহাম্মদ শুকরুল্লাহ সুলতান ১৭৮৫ - ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৩৭
৯। শাহজাদা সারওয়ার-উদ-দীন সুলতান ১৭৯০ - ১৮৩৩
১০। শাহজাদা মুহাম্মদ নিজাম-উদ-দীন সুলতান ১৭৯১ - ২০ অক্টোবর, ১৭৯১
১১। শাহজাদা মুহাম্মদ জামাল-উদ-দীন সুলতান ১৭৯৫ - ১৩ নভেম্বর, ১৮৪২
১২। শাহজাদা মুনির-উদ-দীন সুলতান ১৭৯৫ - ১ ডিসেম্বর, ১৮৭৩
১৩। শাহজাদা গুলাম মুহাম্মদ সুলতান, কেসিএসআই মার্চ, ১৭৯৫ - ১১ আগস্ট, ১৮৭২
১৪। শাহজাদা গুলাম আহমদ সুলতান ১৭৯৬ - ১১ এপ্রিল, ১৮২৪
১৫। শাহজাদা মুহাম্মদ ওয়াহিদ উল্লাহ সুলতান ১৭৯৭?-?

টিপু সুলতান জয়ন্তী

সম্পাদনা

২০১৫ সালে, কংগ্রেসের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধরামাইয়ের নেতৃত্বে কর্ণাটক সরকার টিপুর জন্মবার্ষিকীটিকে "টিপু সুলতান জয়ন্তী" হিসাবে পালন করা শুরু করে। কংগ্রেস সরকার এই জয়ন্তি ১০ নভেম্বর পালিত হওয়ার বার্ষিক অনুষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করেছিল। কর্ণাটকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংখ্যালঘু কল্যাণ বিভাগ এবং পরে কন্নড় ও সংস্কৃতি বিভাগ দ্বারা উদযাপিত হচ্ছিল। তবে, ২৯ জুলাই ২০১৯, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদিউরপ্পা, যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)[১০], তিন্নি এই জয়ন্তি বাতিল করার আদেশ দিয়ে বলেছিলেন: "কোডাগু থেকে বিধায়করা টিপু জয়ন্তীর সময় সহিংসতার হিংস্রতার ঘটনা তুলে ধরেছিলেন।" উদ্‌যাপন বাতিল করার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে পূর্ববর্তী মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া বলেছিলেন: “সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের ঘৃণার কারণে বিজেপি সরকার এটিকে বাতিল করেছে। তিনি [টিপু] মহীশুরের একজন শাসক ছিলেন ও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তাঁর সময়ে কৃষ্ণ রাজা সাগর বাঁধের ভিত্তি স্থাপন তৈরি হয়েছিল। তিনি শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নতিরও চেষ্টা করেছিলেন। লোকসভা কংগ্রেস নেতা, মল্লিকার্জুন খড়গও এর আগে বিজেপি এবং আরএসএসের উদ্‌যাপনের বিরোধিতা করার জন্য সমালোচনা করে বলেছিলেন:“ আরএসএস যখন নাথুরাম গডসে উদ্‌যাপন করতে পারে, তখন আমরা কি টিপু সুলতান উদ্‌যাপন করব না?

প্রশাসন ব্যবস্থা

সম্পাদনা
 
যুদ্ধ

ধর্মীয় নীতিমালা

সম্পাদনা

ব্যক্তিগত পর্যায়ে টিপু ধার্মিক মুসলিম ছিলেন। নিয়মিত প্রার্থনা করতেন এবং এবং তার এলাকার মসজিদ গুলোর উপর তার বিশেষ নজরদারি ছিল।[১১] একটি হিন্দু রাষ্ট্রের মুসলিম শাসক হিসেবে তার কিছু নীতিমালা বিতর্কের সৃষ্টি করে। মূলধারার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনামতে টিপু সুলতানের শাসনব্যবস্থা সহনশীল ছিল।[১২][১২][১৩] তার শাসনকালে তিনি ১৫৬ টা হিন্দু মন্দিরে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ দিতেন[১৪] বরাদ্দ পাওয়া এরকম এক বিখ্যাত মন্দির হলো শ্রীরাঙ্গাপাটনার রঙ্গন অষ্টমী মন্দির[১৩]

তার শাসনকার্য যদি ধর্মীয় দিক থেকে বিশ্লেষণ করা হয় তাবে তা নিয়ে ভারতে বেশ কিছু দ্বিমত রয়েছে। কেউ তাকে মনে করে গাজী বা তিনি বিশ্বাস এর জন্য শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। অন্যদিকে অনেকে তাকে মনে করেন তিনি এক ধর্মান্ধ মুসলিম যে হিন্দু [১৫][১৬] ও খ্রিষ্ঠানদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে।[১৭][১৮]

তিনি বেশ কিছু সম্প্রদায়ের ওপর অবরোধ আরোপ করেছিলেন। তার এ অবরোধ আরোপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কোরোগের হিন্দুরা ম্যাঙ্গালোরের খ্রিস্টানরা, মালাবারের নাইর, মালাবাবের মাফিলা মুসলিম, মহাদেবী মুসলিম, সোহানুর এবং নিজামবাদ জেলার নবাব। এ অবরোধ আরোপের পিছনে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক উভয় কারণই দায়ী ছিল।[১৩]

ব্রিটিশদের বর্ণিত ইতিহাস

সম্পাদনা

ব্রিটলব্যাংক, হাসান, চেটি, হাবিব এবং সালেটারে এবং অন্যরা মনে করেন হিন্দু খ্রিষ্ঠানদের প্রতি টিপু সুলতানের আচরণের যে ইতিহাস প্রচলিত আছে তা প্রথমদিকের ব্রিটিশ ঐতিহাসিক (এসব গ্রন্থপ্রণেতারা টিপুর স্বাধীন চেতার বিরোধী ছিলেন) বিশেষত কির্কপ্যাট্রিক[১৯] এবং মার্ক উইলকস,[২০] এর মত ঐতিহাসিকদের প্রণীত ইতিহাস। তাদের কাজ সম্পুর্ণভাবে নির্ভরযোগ্য নয়, এবং সম্ভবত সত্যের সাথে সুকৌশলে অনেক মিথ্যা মিশিয়ে দিয়েছেন।[২১] এ. এস শেঠী মনে করেন উল্কের ইতিহাস কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।[২২]

ইরফান হাবিব এবং মহিবুল হাসান এ বিষয়ে যে বলতে গিয়ে বলেন পূর্বোক্ত ব্রিটিশ গ্রন্থ প্রণেতাদের মধ্যে টিপু সুলতান কে নিষ্ঠুরভাবে উপস্থাপন করার জন্য একপ্রকার প্রবণতা ছিল। ইতিহাসে টিপুকে এভাবে চিত্রায়িত করতে পারলে দিনশেষে ব্রিটিশদেরই উপকার হয়, কারণ ব্রিটিশরা টিপু সুলতান এর কবল থেকে মাইসোর মুক্ত করেছিল। আর নিষ্ঠুরতার সাথে টিপুকে চিত্রায়িত করতে পেরে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা এটাই বুঝাতে চেয়েছে, মাইসোরবাসীকে টিপুর মত অত্যাচারী শাসকের কবল থেকে মুক্ত করে ব্রিটিশরা তাদের জন্য শান্তির দূত হিসেবে এসেছে।[২১] ব্রিটলব্যাংকের সাম্প্রতিক কাজেও একই ধরনের বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তার লেখনীতে উঠে এসেছে যে কির্কপ্যাট্রিক এবং উইলকের কাজ খুবই সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার কারণ এই দুই ঐতিহাসিক শুধুমাত্র ইতিহাসই লিখেননি তারা উভয়ই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং তারা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে লর্ড কর্নওয়ালিস এবং রিচার্ড ওয়েলসলি, প্রথম মার্কোয়েস ওয়েলসীর প্রশাসনের সাথে যুক্ত ছিলেন।[২৩]

জনপ্রিয় সংষ্কৃতি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Hasan, Mohibbul (২০০৫)। History of Tipu Sultan (ইংরেজি ভাষায়)। Aakar Books। আইএসবিএন 978-81-87879-57-2 
  2. "Tipu Sultan killed at Seringapatam | History Today"www.historytoday.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৫ 
  3. "Tipu Sultan killed at Seringapatam | History Today"www.historytoday.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-০৪ 
  4. Ram Nath Kovind (২৫ অক্টোবর ২০১৭)। "ADDRESS BY THE PRESIDENT OF INDIA, SHRI RAM NATH KOVIND AT THE JOINT SESSION OF KARNATAKA LEGISLATIVE ASSEMBLY AND LEGISLATIVE COUNCIL ON 60TH ANNIVERSARY OF VIDHAN SOUDHA"। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯Tipu Sultan died a heroic death fighting the British. He was also a pioneer in the development and use of Mysore rockets in warfare. This technology was later adopted by the Europeans. 
  5. Allana, Gulam (১৯৮৮)। Muslim political thought through the ages: 1562-1947 (ইংরেজি ভাষায়)। Royal Book Company। পৃষ্ঠা ৭৮। 
  6. Allana, Gulam (১৯৮৮)। Muslim political thought through the ages: 1562-1947 (ইংরেজি ভাষায়)। Royal Book Company। 
  7. Shahane, Girish। "Tipu Jayanti debate: Akbar is the hero India should really celebrate"Scroll.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৫ 
  8. R.k.datta (২০০৭)। Global Silk Industry: A Complete Source Book (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। আইএসবিএন 978-81-313-0087-9 
  9. খন্দকার জাহিদ মুরাদ (সেপ্টেম্বর ১৯৯২)। "ইতিহাস:বাঘ ও টিপু সুলতান"। নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট (প্রিন্ট)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৪৫-৪৭। 
  10. Benjir। "কর্ণাটকে স্কুলের পাঠ্যবই থেকে টিপু সুলতানের গৌরবগাথা মুছে ফেলা হবে, ঘোষণা ইয়েদুরাপ্পার"। ABP Media। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. Yadav, Bhupendra (১৯৯০)। "Tipu Sultan: Giving 'The Devil' His Due"। Economic and Political Weekly25 (52): 2835–2837। জেস্টোর 4397149 
  12. Binita Mehta (২০০২)। Widows, Pariahs, and Bayadères: India as SpectacleBucknell University Press। পৃষ্ঠা 110–111। আইএসবিএন 9780838754559 
  13. B. N. Pande (১৯৯৬)। Aurangzeb and Tipu Sultan: Evaluation of Their Religious PoliciesUniversity of Michiganআইএসবিএন 9788185220383 
  14. A. Subbaraya Chetty "Tipu's endowments to Hindus and Hindu institutions" in Habib (Ed.) Confronting Colonialism
  15. Brittlebank, pp. 1–3
  16. Valath, V. v. k. (১৯৮১)। Keralathile Sthacharithrangal – Thrissur Jilla (Malayalam ভাষায়)। Kerala Sahithya Academy। পৃষ্ঠা 74–79। 
  17. The Chaldean Syrian Church of the East। ISPCK। ১৯৮৩। পৃষ্ঠা 30। 
  18. Balakrishna, S. (২০১৩)। Tipu Sultan-The Tyrant of Mysore (1st সংস্করণ)। Rare Publications। আইএসবিএন 978-81-927884-7-0 
  19. W. Kirkpatrick Select Letters of Tipu Sultan, London 1811
  20. M. Wilks Report on the Interior Administration, Resources and Expenditure of the Government of Mysore under the System prescribed by the Order of the Governor-General in Council dated 4 September 1799, Bangalore 1864, and Historical Sketches of the South of India in an Attempt to Trace the History of Mysore, 2 vols, ed. M. Hammick, Mysore 1930.
  21. Irfan Habib "War and Peace. Tipu Sultan's Account of the last Phase of the Second War with the English, 1783-4" State and Diplomacy Under Tipu Sultan (Delhi) 2001 p5; Mohibbul Hasan, The History of Tipu Sultan (Delhi) 1971 p368
  22. A. Subbaraya Chetty "Tipu's endowments to Hindus and Hindu institutions" in Habib (Ed.) Confronting Colonialism p111
  23. Brittlebank, pp. 2-12

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা