প্রেমের কাহিনী (২০০৮-এর চলচ্চিত্র)

বাংলা চলচ্চিত্র

প্রেমের কাহিনী ২০০৮ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত প্রখ্যাত পরিচালক রবি কিনাগী পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র।[১] চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দেব, কোয়েল মল্লিক, যিশু সেনগুপ্ত এবং রঞ্জিত মল্লিকদেব অভিনীত তৃতীয় চলচ্চিত্র এটি। ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যোগরাজ ভাট পরিচালিত কন্নড় চলচ্চিত্র মুঙ্গুরু মেল-এর বাংলা পুনঃনির্মান এটি।[২]

প্রেমের কাহিনী
প্রেমের কাহিনী চলচ্চিত্রের পোস্টার.jpg
প্রেমের কাহিনী চলচ্চিত্রের পোস্টার
পরিচালকরবি কিনাগী
প্রযোজকশ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস
রচয়িতাযোগরাজ ভাট
চিত্রনাট্যকারএন.কে. সলিল
শ্রেষ্ঠাংশেদেব
কোয়েল মল্লিক
যিশু সেনগুপ্ত
রঞ্জিত মল্লিক
সুরকারজিৎ গাঙ্গুলী
চিত্রগ্রাহকটি. নাইড়ু
সম্পাদকরবি কিনাগী
পরিবেশকশ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস
মুক্তি১১ এপ্রিল ২০০৮
দৈর্ঘ্য১৫০ মিনিট
দেশভারত
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়২ কোটি রুপি
আয়২ কোটি রুপি

কাহিনীসম্পাদনা

আকাশ (দেব) ও বর্ষা (কোয়েল মল্লিক) মেট্রোপুলিশ ফেম মলে এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে পরিচিত হয়। আকাশ তৎক্ষণাৎ বর্ষার প্রেমে পড়ে যায়। তবে সে কোনভাবেই বর্ষার ঠিকানা পায়না এবং তার সাথে আর দেখা করার কোন সুযোগই সে খুঁজে পায়না। তার মায়ের বন্ধুর মেয়ের এনগেজমেন্টে গিয়ে সে দেখে যে পাত্রী হল স্বয়ং বর্ষা

নায়ক আকাশ এম জি রোড (ব্যাঙ্গালোর-এর একটি বিখ্যাত স্থান) এ গিয়ে মারাত্মক বাতাসের মধ্যে বর্ষার সাথে পরিচিত হয়। তাকে দেখামাত্রই সে ম্যানহোলে পড়ে যায়। বর্ষা তাকে বাঁচালেও তার মাত্র ক্রয়কৃত হৃদয়াকৃতির ঘড়িটি হারিয়ে ফেলে।

এদিকে তার মায়ের সাথে মাদিকেরিতে যাবার পথে আকাশ জানু (নিনাসাম আশওয়াথ) নামের এক গুণ্ডার কাছে মার খায়। সে জানত না যে জানু বর্ষার আশেপাশে কাউকে দেখলেই তাকে মারে। আকাশ উলটো তাকে মারে।

মাদিকেরিতে আকাশ বর্ষার সাথে পরিচিত হয়। সে ঘড়িটি ফেরত দিয়ে নিজের ভালবাসা প্রকাশ করে। ইতোমধ্যেই বিয়ের জন্য প্রতিশ্রুত বর্ষা তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। আকাশ প্রতিজ্ঞা করে, যদি তার সাথে আবারও বর্ষার দেখা হয় তবেই সে তাকে বিয়ে করবে। এরমধ্যেই সে বোঝে যে তাদের হোস্ট হল বর্ষার বাবা কর্নেল সুব্বাইয়া (রঞ্জিত মল্লিক)। সে আকাশ-এর দেয়া হৃদয়াকৃতির ঘড়িটি ছুঁড়ে ফেলে। কিন্তু বর্ষা ফোন করে আবারও তাকে ডাকে। খুশী হয়ে আকাশ ঘড়িটি আবার ফেরত নিয়ে আসে। ঘড়িটি খুঁজতে হুঁজতে সে 'দেবদাস' নামের এক খরগোশকে পায় এবং তার সাথে করে ধরে নিয়ে যায়।

যেহেতু বর্ষার বন্ধুরা মুম্বই থেকে তার বিয়েতে যোগদানের জন্য আসবে, আকাশ তাকে রেলওয়ে স্টেশন নিয়ে যায়। মুম্বইয়ের ট্রেনটি পাঁচ ঘণ্টা লেট করে, তাই আকাশবর্ষা পাশের একটি পাহাড়ে মন্দিরে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ফিরতি পথে তারা বৃষ্টির কবলে পড়ে। এক বৃদ্ধ-দম্পতি তাদের রাতে আশ্রয় দেয়। সে মদের বোতল বের করে বাইরে গিয়ে তা পান করে এই ভেবে যে তা হয়ত তাকে বর্ষাকে প্রপোজ করতে সহায়তা করবে। কিন্তু বর্ষা যখন তাকে ছাতা দিতে যায়, মাতাল অবস্থায় সে বরং বলে যে বর্ষার থেকে দূরে থাকাই তার ভাল!

বর্ষাআকাশকে ভালবেসে ফেলে এবং বুঝতে পারে না কারণ কিছুদিনের মধ্যেই তার বিয়ে হবার কথা। বর্ষা তাকে অনুরোধ করে এক জলপ্রপাতের কাছে নিয়ে যেতে। তার কোণায় দাঁড়িয়ে সে তার ভালবাসা প্রকাশ করে।

আকাশ, যে বর্ষাকে বিয়ে করতে চায়, তার বাবা সুব্যাইয়াকে সকালে জগিং করতে নিয়ে যায় এই ব্যাপারে আলোচনা করতে। হার্টের রোগী কর্নেল সুব্যাইয়া বলেন যে তিনি যেকোনদিন মারা যেতে পারেন এবং তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বর্ষার সাথে গৌতম (যিশু সেনগুপ্ত)-এর বিয়ে দেয়া। ঐ রাতে আকাশ দেবদাসকে না নিয়েই গাড়ি চালায় এবং রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে মদ কিনে সারা রাত তা পান করে। এদিকে আসার পথে গৌতম-এর ওপর জানু আক্রমণ করে। যখন জানু গৌতমকে মারতে যায়, আকাশ গৌতমকে বাঁচায় এবং বলে যে বর্ষার জন্য গৌতমই সেরা।

পরের দিন সে গৌতমকে বিয়েবাড়িতে ছেড়ে আসে ঠিক বিয়ের সময়। সে গৌতমের বিয়েতে যোগদান করতে অস্বীকৃতি জানায়। গৌতম হৃদয়াকৃতির ঘড়িটি মনে রাখার এক চিহ্নস্বরূপ চাইলে আকাশ তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সে চলে গেলে বিয়েবাড়ির সবাই আকাশকে খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তার মা-ই একমাত্র সত্যিটা জানত, তাই তিনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, কিন্তু প্রকাশ করেন না।

আকাশ "গৌতম ওয়েডস বর্ষা" লেখা সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে সে যখন চলে যাচ্ছিল, তখন বর্ষা তাকে এক চিঠি লিখে দেবদাসের গলায় তা ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু ভুলবশত দেবদাস চিঠিটি আকাশকে না দিয়ে কর্নেলকে দিয়ে দেয়। চিঠি পড়ে কর্নেল সব জানতে পারে। এরপর তিনি গৌতম-এর অনুমতিপূর্বক বর্ষার হাত আকাশ-এর কাছে তুলে দেন।

অভিনয়েসম্পাদনা

কর্মকর্তাসম্পাদনা

সংগীতসম্পাদনা

প্রেমের কাহিনীর সংগীত পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলী। ১৫ই আগস্ট, ২০০৮ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত মুক্তি পায় ভারতে। এর মিডিয়া পার্টনার ছিল সংগীতের চ্যানেল সঙ্গীত বাংলায়

প্রেমের কাহিনী
জিৎ গাঙ্গুলী কর্তৃক স্টুডিও অ্যালবাম
মুক্তির তারিখ
১৫ই আগস্ট, ২০০৮ (সিডি মুক্তি)
ঘরানাচলচ্চিত্রের গান
সঙ্গীত প্রকাশনী
ভি মিউজিক
জিৎ গাঙ্গুলী কালক্রম
লাভ
(২০০৮)
প্রেমের কাহিনী
(২০০৮)
মন মানে না
(২০০৮)
গান কণ্ঠশিল্পী(রা) ব্যপ্তি
আজ স্বপ্ন সুখের বাবুল সুপ্রিয়, মহালক্ষ্মী আইয়ার ৩:৪১
এসো না শান ৩:৪১
প্রেমের কাহিনী শান ৩:৪১
প্রেমের কাহিনী শ্রেয়া ঘোষাল ৩:৪১
সানাই বাজে শ্রেয়া ঘোষাল ৩:৪১
সংসার সুখী হয় বাবুল সুপ্রিয়, শ্রেয়া ঘোষাল ৩:৪১
তুমি ছাড়া শান, শ্রেয়া ঘোষাল ৩:৪১

সমালোচক গ্রহণসম্পাদনা

দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে চলচ্চিত্রের সাথে এই চলচ্চিত্রের মিল এখানেই শেষ নয়। এখানে জুটি ছাদে রাতের পর রাত কাটায়, যা রাজসিমরান করেছিল। তারা বৃষ্টির মধ্যে গান গায় এবং নাচে, গাছপালার পাশে এবং পাহাড়ের ওপরে। তারা স্পোর্টিং জ্যাকেট এবং চিফন শাড়ি পরে। দেব প্রথম থেকেই দর্শকদের আকর্ষিত করে, সে কোয়েলকে এবং দর্শককে তার সহজাত ভঙ্গিতে ধরে রাখে। কোয়েল লাজুক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে। যিশুর রূপ কলেজ-যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভিড় থেকে অনেক “ওহ্‌” এবং “আহ্‌” নিয়ে আসে।[৩]

রাজ যেভাবে সিমরান-এর সাথে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে চলচ্চিত্রের শেষে এক হয়, সেভাবে আকাশবর্ষা সেভাবে এক হয় না। শাহরুখ-কাজল জুটির দিক থেকে রবি কিনাগী এভাবে প্রেমের কাহিনী চলচ্চিত্রকে আলাদা করেছেন।[৪]

রবি কিনাগী নিজেই লেখেন, পরিচালনা ও সম্পাদনা করেন। এমনকি তিনি সংলাপও লেখেন। তিনি সাধারণত দক্ষিণের বক্স-অফিস হিট চলচ্চিত্রকে বাংলার ভাষায় সফল রূপ দানে খুব দক্ষ। চলচ্চিত্রটি চলে কারণ দর্শক আসল ছবিটা সাধারণত দেখেনি। নতুনদের নিয়ে কাজ করার সাহস তার আছে এবং তিনি জিতকে নিয়ে সাথী চলচ্চিত্রটি করেন। তিনি জনপ্রিয় হিন্দি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র থেকে অ্যাকশন ও মারামারির দৃশ্য ছাড়াও গানের দৃশ্যেও অনুপ্রাণিত হন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সীমানাকে আরো প্রসারিত করেছেন । তিনি নিজে ওড়িষ্যার লোক এবং এখন তিনি কলকাতাতে থেকে এখানেই বাড়ি বানিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। দুই প্রদেশ থেকে এখন নায়ক-নায়িকা এমনকি পরিচালকেরাও একে অন্যের স্থানে গিয়ে তাদের সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে থাকছেন ও সফল ভাবে কাজ করছেন।

কন্নড় চলচ্চিত্রর বিষয়ে অনভিজ্ঞ মানুষ জানবেই না যে প্রেমের কাহিনী কন্নড় চলচ্চিত্র মুঙ্গারু মেল-এর আইনসম্মত অনুমতি নিয়ে পুনঃনির্মান করা হয়েছে। ২.৫ কোটি রুপির বিস্ময়কর বাজেটের ওপর নির্মিত এ চলচ্চিত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এর বড় অংশ ব্যাঙ্গালোর, শকলেশপুর, মালকোট এবং জগ জলপ্রপাত-এর চিত্রানুগ পরিপ্রেক্ষিতের বিপরীতে দৃশ্যধারণ হয়েছে।[৫]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Premer Kahini"। Indian Movies Database। ২০০৯-০৮-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৪ 
  2. Premer Kahini's Rimjhim E Dharate, a romantic song, was a popular song in West Bengal. "Premer Kahini - ScreenIndia.Com"। www.screenindia.com। ২০০৮-১১-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৪ 
  3. Nag, Kushali (২০০৮-০৪-২২)। "Review : Premer Kahini"। www.ilovekolkata.in। ২০০৯-০৮-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৪ 
  4. NAG, KUSHALI (এপ্রিল ১৫, ২০০৮)। "DDLJ revisited"। www.telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৪ 
  5. "Premer Kahini"। www.upperstall.com। ২০১০-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৪ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা