পাকিস্তানের ইসলামি অর্থনীতি

(পাকিস্তানের ইসলামিক অর্থনীতি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

পাকিস্তানে ‘ইসলামীকরণ’-এর ব্যানারের আওতাধীন প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে যাকাত (গরীবের হক), ‍ঊশর (ফসলের উপর যাকাত) এর উপর নির্বাহী আদেশ জারিকরণ, কিছু বিচারবিভাগীয় পরিবর্তন যা দরিদ্রদের মাঝে ভূমি পূনর্বণ্টনে সহায়তা করে এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুদ পরিহারকরণ।[১] পাকিস্তানি শাসকদের মধ্যে জেনারেল মুহাম্মদ জিয়া-উল-হক[২] ই ইসলামীকরণের সর্বপ্রথম সূচনাকারী- যিনি ১৯৭৮ সালে (জিয়া এবং তার সমর্থকদের ভাষ্যমতে) পাকিস্তানি আইনকে শরীয়াহ আইন এর নীতিমালায় স্থাপন করতে কর্মসূচি হাতে নেন।[১][৩]

শাহ ফয়সাল মসজিদ এর রাতের দৃশ্য। মসজিদটি পাকিস্তানের এক অনন্য সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ধারণ করে আছে।

ধারণা করা হয়, ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে এবং তার শাসনামলে সম্পন্ন করা এই কর্মসূচী ইসলামী সক্রিয়তাবাদের উত্থান এবং জিয়া'র পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর নীতির সাথে সম্পর্কিত সমস্যা ও বিতর্কের জন্ম দেয়। জিয়ার এ কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ছিল ঋণ এবং সিকিউরিটিজগুলির উপর ‘সুদের অভিশাপ’ দূর করা,[৪] এবং ‘সুদ মুক্ত অর্থনীতি’ প্রতিষ্ঠা করা। [৩] ১৯৮০ সালের ১লা জানুয়ারী, সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিতে প্রায় 7,000 সুদ মুক্ত কাউন্টার খোলা হয়, যা ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানকে প্রথম স্থনে নিয়ে যায়। [৩]

যাই হোক, ১৯৮৪ সালের ইসলামীকরণ গণভোট এর মাধ্যমে জনগণের সমর্থন (এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী নীতিমালা) সত্ত্বেও কার্যক্রমটির প্রাথমিক অর্জন ও সাফল্য বিবেচনায় এটি আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনে এবং অন্যান্য প্রধান আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলির সাথে বাণিজ্যিক মিথস্ক্রিয়া পূরণে ব্যর্থ হয়। জিয়া’র অধ্যাদেশ ও ঘোষণাপত্রগুলি সুদ পরিশোধের অ্যাকাউন্টগুলি নিষিদ্ধ করেনি বলে ইসলামপন্থী কর্মীরাও অসন্তুষ্ঠ ছিল।[৩]

জিয়া’র উত্তরসূরীরা ইসলামীকরণের প্রয়াসে অতটা সক্রিয় ছিল না। রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ প্রকাশ্যে ইসলামীকরণকে সমর্থন করেছিলেন বটে, তবে তার অর্থনৈতিক নীতিগুলি বেসরকারিকরণঅর্থনৈতিক উদারীকরণ এর দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল।[৫] অনেক পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা এটা চিন্তা করতেন যে পাকিস্তানকে জোরপূর্বক ইসলামিক অর্থনীতির দেশে পরিণত করার প্রচেষ্টা “দেশের জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ধংসাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।”[৬][৭] যদিও স্টেইট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের গভর্নর ইশরাত হোসাইনের মতো অন্যান্যরা পশ্চিমা রীতিভিত্তক ইসলামপন্থার ভয়কে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। যদিও পারভেজ মোশাররফ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকজন সক্রিয় কর্মী বিচারককে অবসর নিতে চাপ দিয়েছিলেন, তারপরও সুপ্রিম কোর্ট এর শরিয়া আপিল বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত কর্মীসহ জিয়া কর্তৃক সৃস্ট ইসলামী আদালতের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ইসলামীকরণ অব্যাহত ছিল।[৪]

ইতিহাস এবং পটভূমি সম্পাদনা

বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য নির্মিত রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানে, সেই দেশটিকে আরও ব্যাপকভাবে ইসলামীকরণের পক্ষপাতি এবং বিশেষ করে রিবা (ঋণের স্বার্থ হিসাবে সংজ্ঞায়িত) নির্মূল করার পক্ষপাতি বিপুলসংখ্যক ইসলামী কর্মী রয়েছে। কিন্তু দেশটির প্রভাবশালী অবস্থানে ইসলামী আধুনিকতাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরাও রয়েছে এবং অর্থনীতিবিদ ফায়সাল খান[৮] এর মতে সেখানে সম্মানিত উলামার ফতোয়া দ্বারা সমর্থিত ‘মুসলমানদের রীতিনীতি এবং প্রথা যা নিম্নহারের সুদকে গ্রহণযোগ্য এবং রিবা কে সুদ হিসেবে ধরা হয় না’ সমর্থনকারী প্রজন্মও রয়েছে। [৮] এমনকি পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা ইকবাল (মুফাক্কির-ই-পাকিস্তান) উল্লেখ করেন যে ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত মুক্তাঞ্চলগুলি (Princely State) আধুনিক ব্যাংকিংকে সীমিত করেনি বা সুদ মুক্ত আর্থিক লেনদেনের মতো কিছু ইসলামী ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেনি।[Note ১][৯] এর ফলে ইসলামীকরণের প্রেরণা পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বত্র জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যখন দেশভাগ, ১৯৭৭ সালের নিজাম-ই-মুস্তফা আন্দোলন এবং ২০০০ সালের পর মৌলবাদীদের উত্থানের এর মতো ধর্মীয় উপাদানগুলির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন ইসলামীকরণের ধারণাটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অন্য সময়ে সেটা কেবলমাত্র মৌখিক আশ্বাসপ্রদানের পর্যায়েই ছিল[১০][১১] মাওলানা মওদুদী এবং অন্যান্য ইসলামি বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানকে ‘নতুন মদিনা’ বানানোর আশা করেছিলেন যা বিংশ শতাব্দীতে ইসলামি বিশ্বের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে। তারা আশা করেছিলেন পাকিস্তান হবে একটি গবেষণাগার যেখানে নতুন ইসলামী পূনর্জাগরণের জন্য ইসলামী আধুনিকত্বের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফলভাবে পরিচালিত হবে। [১২]

আশরাফ কুরেইশি এবং সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী ছিলেন ইসলামী ব্যাংকিং এর দু’জন অগ্রণী তাত্ত্বিক, যারা প্রচার করেছিলেন যে ‍কুরআনে বর্নিত রিবা’ই হল সুদ যা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ এবং 1940 সালে বর্তমান ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থ সংস্থার ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ায়। (মওদুদী পাকিস্তানে চলে যান যেখানে তিনি একজন প্রভাবশালী ইসলামপন্থী নেতা হয়েছিলেন)। ফিসাল খানের মতে, ‘ইসলামী ব্যাংকিং’ এর তাত্ত্বিক ও অনুশীলনকারীদের মধ্যে সাধারণভাবে দক্ষিণ এশীয়দের এবং বিশেষকরে পাকিস্তানিদের সবার ওপরে গণ্য করা হয়। পারস্য উপসাগর জুড়ে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে কথক থেকে পর্ষদকক্ষ পর্যন্ত সর্বস্তরে পাকিস্তনীদের পাওয়া যায়।"[১৩]

পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদটি যত দ্রুত সম্ভব রিবা(সুদ) কে নির্মূল করার আহ্বান জানায়। ১৯৫৬ সালের সংবিধান নীতির নীতিগুলিতে সুদ বিলুপ্ত হওয়া উচিত বলে মত প্রদান করেছিল। ১৯৭৩ সালের সংবিধানে অনুরূপ বিধান পাওয়া যায়।[৪] রাষ্ট্রীয় মদদে পরিচালিত কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডিওলজি (সিআইআই) নামে পরিচিত উপদেষ্টা সংস্থা ১৯৬৯ সালে ঘোষণা করে যে পাকিস্তানের ব্যাংকিং ব্যবস্থা "মৌলিকভাবে রিবা ভিত্তিক" এবং সর্বসম্মতিক্রমে এর নির্মূলের আহ্বান জানায়।[৪]

১৯৭০ এর দশকের মাঝামাঝি ও শেষের দিকের সময়টা ছিল পাকিস্তানসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ইসলামী পুণর্জাগরণের সময়। জিয়ার পূর্বসূরি, বামপন্থী প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতীয়করণভূমি সংস্কার কর্মসূচীর বিরোধিতা এবং অর্থনৈতিক মন্দার মতো কিছু অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হন। ১৯৭৬ এবং ১৯৭৭ সালে ভুট্টোর নীতিমালার শক্তিশালীবিরোধীরা 'নিযাম-ই-মুস্তফা'[১৪] (রসুল এর শাসন) তথা ইসলামী পুনর্জাগণের ব্যানারে এক কাতারে চলে আসে। তারা প্রচার করেছিলেন- শরিয়াহ আইন ভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার ফিরে আসবে। ইসলামের প্রথম দিকে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (স) মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে যে সফলতা পেয়েছিলেন তাও ফিরে আসবে।[১৫] রাস্তায় ইসলামীকরণের জোয়ারকে দমন করার প্রচেষ্টা হিসেবে ভুট্টোও ইসলামীকরণের আহ্বান জানান । এর অংশ হিসেবে তিনি নাইটক্লাব, ঘৌড়দৌড় এবং মুসলিম কর্তৃক মদ্যপান ও মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করেন।[১৫][১৬] ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি) এবং বিরোধী দল পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স এর মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষােভ, প্রাণহানী ও সম্পদহানীর কারণে ১৯৭৭ সালে জিয়া কর্তৃক এক সামরিক অভ্যুত্থানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পতন ঘটে।[১৭] ক্ষমতায় আসার পর জিয়া ‘নিযাম-ই- মুস্তফা’ [১৫] কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন যা ব্রিটিশদের কাছথেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাকিস্তানের মূলত ধর্মনিরপেক্ষ আইনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটায়।

এই অভ্যুত্থানের দু'বছরেরও কম সময় পরে, পাকিস্তানের শিয়া প্রতিবেশী দেশ ইরানে একটি অতি অপ্রত্যাশিত ইসলামি বিপ্লব ঘটে যায় যা দেশটির পশ্চিমাপন্থী অর্থনৈতিকভাবে সুগঠিত,ধর্মনিরপেক্ষ রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে দেয়। নতুন স্বঘোষিত বিপ্লবী ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইসলামকে টিকিয়ে রাখা ও সমৃদ্ধ করার জন্য এবং এই মতবাদকে অন্যান্য মুসলিম রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনে ইসলামী শরিয়া আইনের প্রয়োজনীয়তায় বিশ্বাসী ছিল। অবশ্য ইসলামী পুনর্জাগণের অংশ হিসেবে, এই বিপ্লবটি ইসলামী বিশ্বের নেতৃত্বের প্রশ্নে বিপ্লবী শিয়া ইরানকে তার আদর্শিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহাবিবাদী রাজতান্ত্রিক দেশ সৌদি আরব এর বিরোদ্ধে দাঁড় করিয়ে ইসলামী বিশ্বে একটি নতুন দ্বন্দ্ব সৃস্টি করেছিল। অন্যদিকে গরীব এবং প্রধানত সুন্নি দেশ হিসাবে, পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম-রফতানীকারক দেশ সৌদি আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িত ছিল যেখানে বহু পাকিস্তানি অতিথি শ্রমিককে সৌদি আরব নিয়োগ দিয়েছে। প্রভাব খাটানোর এই প্রতিযোগিতা মুসলিম দেশগুলির অর্থনৈতিক নীতিসহ অনেক বিষয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ব্যাংকিং ও সুদের সময়রেখা সম্পাদনা

  • ১৯৫৬ - পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিবা নির্মূল করা’র কথা বলা হয (অনুচ্ছেদ ২৯ (চ)), তবে রিবার সংজ্ঞা দেয়নি। [১৮]
  • ১৯৬৯ - Council of Islamic Ideology (CII) ‘রিবা বিলুপ্ত করা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি পুনর্নির্মাণ করা উচিত’ বলে সুপারিশ করে, সরকার সুপারিশকে উপেক্ষা করে।
  • ১৯৭১ - Council of Islamic Ideology (CII) ‘রিবা বিলুপ্ত করা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি পুনর্নির্মাণ করা উচিত’ বলে সুপারিশ করে, সরকার এবারও সুপারিশকে উপেক্ষা করে।
  • ১৯৭৯, জুলাই - জেনারেল জিয়ার আদেশে তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সুদ অপসারণ করা হয়। [১৯]। (১ জুলাই ১৯৭৯ - কার্যকর) জেনারেল জিয়া ঘোষণা করেছিলেন যে লাভ-লোকসান ভাগাভাগি (পিএলএস) পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে জাতীয় বিনিয়োগ ট্রাস্ট, হাউজ বিল্ডিং ফিনান্স কর্পোরেশন এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ পাকিস্তান কে সুদমুক্ত ভিত্তিতে পরিচালিত করা হবে। ।
  • ১৯৮০ - ক্ষমতাসীন জেনারেল জিয়া-উল-হকের অনুরোধে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক রিসার্চ অর্থনীতি থেকে সুদ নির্মূলকরণ সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রতিবেদন ১৯৮০, জারি করে। পাঁচ বছরের মধ্যে পাকিস্তানের অর্থনীতি থেকে সুদ সম্পূর্ণ বিলোপ করার আহ্বান জানানো হয়।[২০]
  • ১৯৯১, নভেম্বর - পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়া আদালত এক "স্মরণীয় সিদ্ধান্ত" গ্রহণের মাধ্যমে ২০ টি ফেডারেল এবং প্রাদেশিক আর্থিক আইনকে ইসলাম-বিরোধী হিসাবে বাতিল করে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে রিবাকে একেবারে নিষিদ্ধ করে। অবসরপ্রাপ্ত তানজিল-উর-রেহমানকে অবসর বাতিল করে ফেডারেল শরিয়া কোর্ট(এফএসসি) এর প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করে জিয়ার আর্থিক ইসলামীকরণকে অপর্যাপ্ত বলে রায় দেয়।
  • ১৯৯৯ - শরিয়াহ আপিল বেঞ্চ জিয়ার আর্থিক ইসলামীকরণের অপ্রতুলতা খুঁজে পেয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন।[২১] সরকার ও আমলাতন্ত্র কর্তৃক প্রচুর স্থবিরতার পরে সুদমুক্ত অর্থনীতি শুরু করার বিস্তারিত আদেশ দিয়ে আসলাম খাকির সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্টের শরীয়া আপিল বেঞ্চে(এসএবি) এর দ্বারা ফয়সাল মামলাটি বহাল রাখা হয়।
  • ১৯৯৯ - শরীয়া আপিল বেঞ্চ পাকিস্তান সরকারকে ইসলামীকরণের জন্য এক বছর অতিরিক্ত সময় দেয়। এই রায় বাস্তবায়নের ফলে দেশীয়, পাশ্চাত্য ধাঁচের ব্যাংকিং ও অর্থনীতিতে তীব্র সমস্যা যেমন তৈরি হবে, তেমনি পাকিস্তানের বাইরের বিশ্বের সাথে সরকারী ও বেসরকারী ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেন থাকার কারণে আপিল বেঞ্চ সরকারকে ইসলামীকরণের জন্য একবছর অতিরিক্ত সময় দেয়।
  • ২০০২, ২৪ মে - নতুন রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মোশাররফ শরীয়া আপিল বেঞ্চ(এসএবি) পুনর্গঠন করেন। মোশারফের আদেশে একজন ইসলামিবাদীকে অপসারণ করা হয় এবং দু'জন ওলামা বিচারক নিযুক্ত করা হয়।[২২]
  • ২০০২ সালের ২৪ শে জুন - পূনর্গঠিত শরীয়া আপিল বেঞ্চ ‘ব্যাংক-লোনের ওপর সমস্ত সুদ নিষিদ্ধকরণ’ রায়কে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সমস্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের জন্য [২৩] ১৯৯৯ মামলাটি ফেডারেল শরীয়া আদালতে (এফএসসি) ফেরত পাঠানো হয় [২৩]
  • ২০০২ - ইসলামী ব্যাংকিং এর পূনরুজ্জীবন । স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান ঘোষণা করে যে জেনারেল জিয়ার ১১৯৭৯ এর ইসলামীকরণের অংশ হিসাবে যেসব ব্যাংক এবং "উইন্ডো" গুলো ইসলামিক করা হয়েছিল সেসব সত্যিকার অর্থে ইসলামী নয়, বরং প্রচলিত ব্যাংক। পাকিস্তানে নতুন কোনও প্রচলিত ব্যাংক অনুমোদিত হওয়ার দরকার নেই।[২৪] মিজান ব্যাংক এবং আল বারাকা ব্যাংক এর মতো ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাপী শরিয়াহ-সম্মত মান[২৫] অনুসরণ করে শরিয়াহ বোর্ড গঠন[২৬] করার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়,[২৭] তবে এসব ব্যাংক Basel Acords এর মতো প্রচলিত বৈশ্বিক ব্যাংকিং নিয়মগুলি অনুসরণ করে[২৫]

নীতি ও অসুবিধাসমূহ সম্পাদনা

প্রথম পাঁচ বছরে এর সাফল্য সত্ত্বেও, অনেকগুলো স্পষ্ট কারণেই ইসলামীকরণ কর্মসূচিটি ভেঙে পড়ে, এবং আবারও অর্থনৈতিক স্থবিরতা শুরু হয় যা দেশের সম্পদসমূহ গ্রাস করে, পাশাপাশি নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক সমস্যা দেখা দেয় যে সামরিক সরকার এবং জিয়া- উল হক নিজেই সমাধান করতে সক্ষম হননি।[২৮] প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ খান জুনেজো এর নতুন নির্বাচিত কিন্তু টেক্নোক্রেট সরকার শরিয়া বিলের নতুন এবং আরও কঠোর সংস্করণটি পাস করতে অস্বীকৃতি জানায়। জিয়া হঠাৎ করেই ১৯৯৮ সালের ২৯ শে মে এ সরকারকে বাতিল করে দেন[২৯] এবং পরদিন বিলীন সংসদকে , দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি,অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা ও ইসলামীকরণের ধীরগতির জন্য অভিযুক্ত করে।[২৯]

রিবা নিষিদ্ধ করণ, ইসলামী ব্যাংকিং এর প্রস্তুতি সম্পাদনা

জেনারেল জিয়া ঘোষণা করেছিলেন যে (১ জুলাই ১৯৭৯ সালে কার্যক)'জাতীয় বিনিয়োগ ট্রাস্ট', 'হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন' এবং 'ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ পাকিস্তান' সম্পর্কিত বিষয়গুলি লাভ-লোকসান ভাগাভাগি পদ্ধতি(পিএলএস) অবলম্বনের মাধ্যমে সুদমুক্ত ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। [৪] ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাতীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে একটি 'লাভ ও লোকসান শেয়ারিং সিস্টেম' প্রবর্তন করার ঘোষণা দেন, যা অ্যাকাউন্টধারীদের ব্যাংকের লোকসান ও লাভ ভাগভাগি করে নিতে হয়।[৩০]

১৯৮০ সালে Council of Islamic Ideology(CII) সুদ নির্মূল করার জন্য 'বিস্তারিত ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার' সহ একটি প্রতিবেদন জারি করে। সামরিক সরকার অধ্যাপক খুরশিদ আহমদ এর নেতৃত্বে ইসলামী পণ্ডিত এবং অর্থনীতিবিদদের ইসলামী অর্থায়ন সম্পর্কিত আইন সংকলনের জন্য নিযুক্ত করেছিল।[৩০] জিয়ার সরকার সংস্থাটির প্রতিবেদনে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের পাঁচটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সুদবাহী সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টগুলিকে (সুদমুক্ত) 'লাভ-লোকসান ভাগাভাগি' একাউন্টে রূপদান করে। মুদারাবা বা মুশারাকা নীতিমালার ভিত্তিতে অর্থায়ন-প্রকল্প অবলম্বন করার জন্য সরকার এসব ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করে। [৪]

  • মুরাবাহা হলো এমন একটি অনুশীলন যা 'ধার প্রদানকারী'(সাধারণত কোন ব্যাংক) নিজের নামে, ঋণগ্রহীতার(সাধারণত কোন আমদানিকারক বা ব্যবসায়ী) চাহিদামোতাবেক পণ্য খরিদ করে এবং তারপরে বিধিসম্মত লাভ ক্রয়মূল্যের সাথে যোগ করে পণ্যটি তাকে(ঋণগ্রহীতা) বিক্রি করে। কৌশলটি ব্যবসায়ে অর্থায়ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে যেহেতু ব্যাংক পণ্যগুলির মালিকানা গ্রহণ করে এবং কেনা বেচাতে নিযুক্ত থাকে,তাই তার লাভটি একটি আসল পরিষেবা থেকে প্রাপ্ত হয় এবং ন্যূনতম এক ডিগ্রি হলেও ঝুঁকির মধ্যে থাকে।[৪]
  • মুশারাকা হলো এমন একটি অনুশীলন যা ঋণদাতা (সাধারণত কোন ব্যাংক) ঋণগ্রহীতা/ক্লায়েন্টের সাথে একটি অংশীদারত্বে প্রবেশ করে যেখানে উভয়ই কোনও প্রকল্প বা চুক্তির ইক্যুইটি, মূলধন এবং এমনকি ম্যানেজমেন্ট ভাগাভাগিকরে এবং উভয়ই তাদের ইক্যুইটি শেয়ারহোল্ডিং অনুসারে লাভ-লোকসান ভাগাভাগি করে।[৪]

তবে এই ইসলামীকরণ নীতিগুলি সুদ প্রদানকারী অ্যাকাউন্টগুলিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি ব্যাংকগুলি স্থির সুদের হারযুক্ত অ্যাকাউন্ট নিবেদন করতে থাকে।[৩১] উদাহরণস্বরূপ, মেয়াদী আমানতের ক্ষেত্রে, ব্যাংকগুলি 'মুনাফার প্রত্যাশিত হার' দিয়ে 'সুদের হার' শব্দযুগলটি প্রতিস্থাপন করে এবং সুদ ভিত্তিক আমানতের পুরো ব্যবস্থাটি অক্ষত রাখে।[৩২]

জেনারেল জিয়ার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ফেডারেল শরীয়া আদালত (এফএসসি) যখন - অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে বিদ্যমান আইনগুলি পরীক্ষা করে দেখে এবং যেগুলি শরিয়া আইন মেনে চলেন না সেগুলোকে ঝেড়ে ফেলে[Note ২] । যেহেতু এ ধরনের সুদ প্রদানকারী হিসাবগুলো বন্ধ করার উপায় ছিল, তাই ​​জিয়া সংবিধানে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করেছিলেন (২০৩খ) যা বিশেষত ফেডারেল শরীয়া আদালতের(এফএসসি)এখতিয়ার থেকে 'আর্থিক আইন বা কর এবং ফি আদায় বা অবকাশ সম্পর্কিত বা বীমা বা ব্যাংকিং অনুশীলন ও প্রক্রিয়া সংক্রান্ত যেকোন আইন' সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাকে উপযুক্ত বলে মনে করে।

অধিকন্তু, জিয়া-উল-হকএর মৃত্যুর পরে, এই কর্মসূচি তার দীর্ঘসময়ের বিরোধী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছিল, এবং জিয়ার মিত্র নওয়াজ শরীফ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত করার জন্য একটি দ্বিগুণ তীব্র কর্মসূচি, বেসরকারীকরণ কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক উদারীকরণ কর্মসূচি চালু করেছিলেন। তার পাশাপাশি অর্থনীতিকে পশ্চিমা অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনেন [Note ৩]

এই বাধা কাটিয়ে উঠতে, ইসলামী কর্মীরা নিম্নোক্ত জায়গাগুলোতে কাজ করে যানঃ[৩৪]

  1. জনগণকে শিক্ষিত বা বোঝান যে একটি সুদমুক্ত অর্থনীতি টেকশই এবং ধর্মীয় উভয় কারণেই প্রয়োজন।
  2. সংবিধানে শরীয়াকে ঊর্ধস্তন (Superordinate) করার জন্য একটি বিল পাস করেন।
  3. উচ্চতর আদালতকে তাদের সংবিধানের প্রশ্নে শরীয়তের এখতিয়ারের সংজ্ঞা প্রসারিত করতে উৎসাহিত করেন।[৩৪]
শিক্ষা

কুরআন যে রিবার নিন্দা করে সে বিষয়ে মুসলমানরা একমত[৩৫], তবে রিবা কী তা নিয়ে সকলেই একমত হয় না।[৩৬] যদিও মুসলিম কর্মীরা (বেশিরভাগ পাকিস্তানি) একমত যে রিবা হলো ঋণের উপর সুদ, অন্যরা বিশ্বাস করে যে রিবা হলো মহাজনী ঋণের উপর চড়াসুদ (অনৈতিক ঋণের উপর সুদ যা ঋণদানকারীকে অন্যায়ভাবে সমৃদ্ধ করে) যা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং পদ্ধতির আওতায় নেওয়া সুদ নয়।[৩৭] এই ধরনের লোকদের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের মধ্যে বিক্ষিপ্ততভাবে খুঁজে পাওয়া যারা ‘সুদমুক্ত ব্যবস্থা’ পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ। এইসব লোকজন এবং অন্যদের বোঝাতে জামায়াতে ইসলামী এবং সমমনা দলগুলি পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং সৌদি আরব সুদমুক্ত অর্থনীতির পদ্ধতি নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন সভা-সম্মেলন আয়োজনে অর্থায়ন করে। এইসব সম্মেলনগুলি থেকে অনেক প্রাণবন্ত সাহিত্যের উদ্ভব হয়, তবে মূলধারার অনেক অর্থনীতিবিদই নিরবচ্ছিন্ন রয়ে যান।[৩৭] নেতাকর্মীদেরও সংবিধানকে শরিয়তের অধীনস্থ করার জন্য আইন পাশ করার সুযোগ ছিল না, তবে আদালতে তাদের সুযোগ বেশিই ছিল।

উচ্চতর আদালত

জিয়া শরীয়াহ আদালতের (২০৩খ অনুচ্ছেদে) সুদ নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন, তিনি সংবিধানের সাথে অনুচ্ছেদ (২ক) (উদ্দেশ্যমূলক রেজোলিউশন নামেও পরিচিত) যুক্ত করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল মুসলমানদের ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক জীবনের সর্বস্তরকে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত ইসলামের শিক্ষা ও প্রয়োজনীয়তা মোতাবেক সাজানো উচিত । একজন দক্ষ ইসলামী কর্মী ও বিচার বিভাগীয় কর্মী হিসাবে পরিচিত উচ্চতর আদালতের বিচারক[৩৮] তানজিল-উর-রহমান - যুক্তি দিয়েছিলেন যে অনুচ্ছেদ 2(ক)- এ শরীয়া আইন প্রয়োগ করা প্রয়োজন এবং এটি ছিল পাকিস্তানে আইনেরgrund norm ’অধি –সাংবিধানিক’ শালীন প্রথাসিদ্ধ আচরণ,[৩৯] যার অর্থ এই ছিল যে আদালত অন্যথায় সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত আইনের অংশগুলিকে বাতিল করার জন্য উচ্চতর আদালতকে এখতিয়ার দেয় যদি এইগুলো অনুচ্ছেদ (২ক) কে লংগন করে, যদি না করে তবে আদালতকে বিশেষভাবে বাদ দেওয়া হয়।[৪০] (২০৩ খ অনুচ্ছেদে ইসলামের প্রতি বৈরীতার জন্য আর্থিক আইন পরীক্ষা থেকে বিশেষত Federal Sharia Court(FSC) কে বাদ দেওয়া হয়, তবে উচ্চ আদালত নয়।[৪০]) ১৯৮০এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে তানজিল-উর-রহমান এর ব্যাখ্যাকে[৪১] সমর্থন করে এমন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত, [৪২] তবে বেশিরভাগ উচ্চ আদালতের বিচারপতি তার উদ্দেশ্যমূলক রেজোলিউশনের (Objective Resolution) আবেদনটি গ্রহণ করেননি, বা সুদের উপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষেও ছিলেন না। তানজিল-উর- রেহমান ১৯৯০ সালে বেঞ্চ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

ফয়সাল মামলা

তবে ১৯৯০ সালে, বেনজির ভুট্টো সরকার রাষ্ট্রপতি দ্বারা বরখাস্ত হন এবং তানজিল-উর-রেহমানকে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে ফেডারেল শরিয়া কোর্টের (এফএসসির) প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করেন। ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাসে এক স্মারক সিদ্ধান্তে তিনি ২০ টি ফেডারেল এবং প্রাদেশিক আর্থিক আইনকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করে দেন।[৪২][৪৩]

সিদ্ধান্তটি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া রিবা কে একেবারেই নিষেধ করেছিল, এটাকে মার্কআপের যেকোন পদ্ধতি, মূল্যস্ফীতির জন্য যেকান সূচকীকরণ, রকম এর পরিবর্তে মূল্য দ্বারা শোধ সহ মূলের সাথে অতি অল্প হলেও যেকোন সংযোজন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এটি ’উৎপাদন ঋণের’ পাশাপাশি ’ক্ষয়কারী ঋণের’ রিবা কে নিষিদ্ধ করে। এটি নির্দিষ্টকরে দুজন ইসলামী আধুনিকতাবাদীর ব্যাখ্যাকে অবৈধ ঘোষণা করে যা রিবা বিরোধী কুরআন এর আয়াত (২: ২৭৫-৮) কে রূপক হিসাবে বিবেচনা করে এবং জনসাধারণের কল্যাণ (মশালাহ) সন্ধানের ভিত্তিতে ইজতিহাদ (স্বাধীন যুক্তি) ব্যবহার করার মাধ্যমে কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়ে চলে।[৪৪]

সরকার প্রকাশ্যে ইসলামীকরণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, তবে পাকিস্তানের অর্থনীতিকে উদারীকরণের চেষ্টাও করেছিল এবং একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে একটি আবেদন দায়ের করেছিল। সরকার ও আমলাতন্ত্র কর্তৃক দীর্ঘসূত্রীতার পরে, সুদমুক্ত অর্থনীতির শুরু করার বিস্তারিত নির্দেশ দিয়ে আসলাম খাকি সিদ্ধান্তে শরিয়াহ আপিল বেঞ্চ ১৯৯৯ সালে ফয়সাল-মামলাটি বহাল রাখে।[৪][৪৫] এই রায় বাস্তবায়নের ফলে দেশীয়, পাশ্চাত্য ধাঁচের ব্যাংকিং ও অর্থনীতিতে যেমন তীব্র সমস্যা তৈরি হবে, তেমনি পাকিস্তানের বাইরের বিশ্বের সাথে সরকারী ও বেসরকারী ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেন হওয়ার কারণে ইসলামীকরণের জন্য বেঞ্চ সরকারকে এক বছর অতিরিক্ত সময় দিয়ে ছিল।[১১]

তবে এই সময়ের মধ্যে পারভেজ মোশাররফ একটি সামরিক অভ্যুত্থান করেছিলেন এবং ক্ষমতায় এসে আদালতের ক্ষমতা সীমিত করেছিলেন। তিনি বিচারকদের একটি "নতুন পদে শপথ গ্রহণ" করার প্রয়োজন মনে করেছিলেন যাতে তারা অভ্যুত্থানের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ’অস্থায়ী সংবিধানের আদেশ‘ বহাল রাখার উদ্যোগ নেবে, যাতে বিচারকদের "প্রধান কার্যনির্বাহী বা ক্ষমতা প্রয়োগকারী অন্য কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও আদেশ দিতে না পারে। শরিয়া আপিল বেঞ্চের দুজন বিচারপতি শপথ নেওয়ার পরিবর্তে পদত্যাগ করেন, নতুন বিচারকদের নিয়ে গঠিত নতুন আপিল বিভাগ আসলাম খাকি মামলায় অনেক ত্রুটি পেয়েছিল এবং কয়েক মাস আগে রায় বাতিল করে দেয়।[১১][৪৬]

পরিণাম

২০০৬ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের আর্থিক খাতে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি পদ্ধতি গৃহীত হয় যা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে সমান্তরালভাবে কাজ করে। পাকিস্তানিরা অর্থায়নের দুটি পদ্ধতির মধ্যে বেছে নিতে পারেন। সর্বাধিক অবহিত পাকিস্তানিরা জোর দিয়েছিলেন যে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাটি পুরোপুরিভাবে সরিয়ে নিতে বা আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারের সাথে বিদ্যমান যোগসূত্র এবং সম্পর্ক প্রতিস্থাপনের জন্য কোনও সম্মিলিত পদক্ষেপ নেই।[৪৭]

২০১৪ সালের মার্চ অবধি নতুনকরে চালু হওয়া ইসলামী ব্যাংকিং খাত পাকিস্তানের ব্যাংকিং সম্পদের[৪৮] ৯.৪% গঠন করে, তবে তা এখনও পুরাতন ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টরের মতো মার্কআপের উপর ভিত্তি করে হয়েছে, লাভ-লোকসান ভাগাভাগি পদ্ধতিতে নয়।[৪৯] ২০১৫ সাল নাগাদ ফয়সাল মামলার সিদ্ধান্ত যে ব্যাংক ঋণের উপর সমস্ত সুদ নিষিদ্ধ করেছিল কিন্তু ২০০২ সালে সমস্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানের জন্য ..." ফেডারেল শরীয়া আদালতে (এফএসসি) ফেরত পাঠানো হয়েছিল তবে ফেডারেল শরীয়া আদালতে তার শুনানি হয়নি।[৫০]

এম. আকরাম খান এর মতো ইসলামী কর্মীরা  বলেন যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব, ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা, ব্যাংকিং খাতের অনভিজ্ঞতা সম্পর্কে অজ্ঞতা জনগণকে আগ্রহী করে তুলতে ব্যর্থতা [৫১] ইত্যাদি  কারণে ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি কার্যকরভাবে ব্যর্থ হয়।[৫২]

শিল্প এবং গ্রাহকদের গবেষণা

সমালোচক এবং অর্থনীতিবিদ ফয়সাল খান উল্লেখ করেছেন যে, পাকিস্তানের ইসলামী ব্যাংকিং শিল্প চাহিদার চেয়ে(গ্রাহকের আগ্রহ বা জনপ্রিয় আন্দোলনের চেয়ে স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান,আদালতের আদেশ এবং জেনারেল জিয়া-উল-হকের হুকুম) সরবরাহ দ্বারা চালিত হয়েছে।[৫৩] ২০০৮ ও ২০১০ সালে পাকিস্তানি ব্যাংকিং পেশাদারদের (প্রচলিত ও ইসলামী ব্যাংকার, শরিয়াহ ব্যাংকিং পরামর্শদাতা, অর্থ-ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী এবং পরিচালনা পরামর্শদাতাদের) সাথে ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে খান উল্লেখ করেছিলেন যে, অনেক ইসলামী ব্যাংকাররা প্রচলিত ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ভিন্নতা বা প্রচলিত এবং ইসলামী ব্যাংক পণ্যের মধ্যে পার্থক্যের অভাব,[৫৪] পাকিস্তানের ইসলামী ব্যাংকগুলির বহিঃস্থ শরিয়াহ-পরিপালন নিরীক্ষণের প্রয়োজনীয়তার অভাব[৫৫], শরিয়াহ বোর্ডগুলিতে তাদের ব্যাংকের শরিয়াহ পরিপালন না করার অনুশীলন সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব বা এই অনুশীলন বন্ধ করার ক্ষমতার অভাবের [৫৬] ওপর হতাশাজনক মতামত প্রকাশ করেন। তবে এটি মুত্তাকীদের পৃষ্ঠপোষকতা রোধ করতে পারেনি (যাদের মধ্যে একজন ব্যাখ্যা করেছিলেন যে যদি তার ইসলামী ব্যাংক সত্যই শরিয়াহ পরিপালিত না হয়, তবে 'পাপটি এখন তাদের মাথায় রয়েছে, আমার নয়! আমি যা করতে পারি, তা করেছি।')[৫৭]

ব্যাংকিং গ্রাহকের পছন্দের একটি অনুমান (একজন পাকিস্তানি ব্যাঙ্কারের দেওয়া) ছিল যে পুরো পাকিস্তানি ব্যাংকিং খাতের মধ্যে প্রায় ১০% গ্রাহক ছিলেন কঠোরভাবে প্রচলিত ব্যাংকিং ক্লায়েন্ট, ২০% ছিলেন কঠোরভাবে শরিয়াহ পরিপালিত ব্যাংকিং ক্লায়েন্ট এবং ৭০ % শরিয়াহ-অনুগত ব্যাংকিং পছন্দ করতো তবে যদি মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকতো তবে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবহার করতো।[৫৮] ইসলামী এবং প্রচলিত ব্যাংকিং গ্রাহকদের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে (আশ্চর্যজনকভাবে) ইসলামী ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা (হজে অংশ নেওয়া, নামাজ আদায় , দাড়ি রাখা প্রমূখ ব্যক্তি) বেশি পরিমাণে পর্যবেক্ষণশীল ছিলেন। তবে প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহকদের চেয়ে তাদের বেশি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ছিল, যারা বয়স্ক, অধিক শিক্ষিত, বেশি বিদেশে ভ্রমণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে প্রচলিত ব্যাংকে দ্বিতীয় অ্যাকাউন্ট খোলার প্রবণতাও ছিল।[Note ৪] সরকারি উপাত্ত ব্যবহার করে স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানকে দেওয়া অন্য একটি গবেষণা-প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ঋণদাতারা যারা প্রচলিত ও ইসলামী (মুরাবাহা পদ্ধতি) উভয় পদ্ধতিতে অর্থায়ন করেছে তাদের ক্ষেত্রে প্রচলিত ঋণের তুলনায় মুরাবাহা খেলাপি ঋণের হার দ্বিগুণেরও বেশি ছিল। ঋণগ্রহীতারা রমজানএর সময় কম খেলাপি হয় এবং বড় শহরগুলোতে যদি ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের ভোটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তবে তা এই পরামর্শ দেয় যে ব্যাষ্টিক ধার্মিকতার মাধ্যমে হোক অথবা দলগত প্রভাবেই হোক ঋণখেলাপি নির্ধারণে ধর্ম একটা ভূমিকা রাখতে পারে।[৬০][Note ৫]

সমালোচনা

অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের ভিন্ন ভিন্ন এবং আরও কঠোর  সমালোচনামূলক ব্যাখ্যা এবং পর্যবেক্ষণ ছিল। ২০০০ সালে, পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্কের গভর্নর, ইশরাত হুসেন যুক্তি দিয়েছিলেন যে পাকিস্তান সেদিন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে যখন সে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকবে। ...  ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে যেসব (বৈজ্ঞানিক) অনুসিদ্ধান্ত বা অনুমানের গঠন করা হয়েছিলো তার বেশিরভাগ অনুমান ও জায়গাই ছিল গুরুতর ত্রুটিযুক্ত ...।[৬২]  আইএমএফের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে সরকার বাজেট ঘাটতির জন্য সুদবিহীন ভিত্তিক দলিলপত্র  তৈরি করতে অক্ষম হয়েছে, সুতরাং সরকার, যা ইসলামী ব্যবস্থা বাস্তবায়নের প্রধান উদ্গাতা, জোরপূর্বক নির্দিষ্ট হারে লাভের ভিত্তিতে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়।[৬৩]

অর্থনীতির "ইসলামীকরণ" এর আরেক সমালোচক ফয়সাল খান যুক্তি দেখান যে ইসলামী অর্থশাস্ত্রের প্রবক্তাদের প্রস্তাবিত ইক্যুইটি বিনিয়োগ ব্যর্থ হওয়ার একটি কারণ হ'ল একটা বিষয়ে "দীর্ঘস্থায়ী ঐকমত্য" আর তা হল- ঋণ ফিনান্স ইক্যুইটি বিনিয়োগের চেয়ে উচ্চতর, কারণ ঋণগ্রহীতা / বিনিয়োগকারীদের ঋণ-যোগ্যতা সঠিকভাবে নির্ধারণ সময়গ্রাসী এবং ব্যয়বহুল এবং ঋণদাতাদের চেয়ে ইক্যুইটি বিনিয়োগকারীদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কর ফাঁকি বেশি হলে এবং কালো টাকার পরিমাণ (অপ্রদর্শিত অর্থের পরিমান) বড় হলে এই জাতীয় তথ্যের গুণমান এবং পরিমাণ বিশেষত সমস্যাযুক্ত হয়। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এটি অনেকটাই বেশি যেখানে ২০০০সালে ট্যাক্স ফাঁকির ঘটনা ছিল জিডিপির ৫.৫% থেকে ৫.৭% এর মধ্যে এবং অনানুষ্ঠানিক/ অপ্রদর্শিত অর্থনীতির আকার ছিল জিডিপির ৫৪.৬ থেকে ৬২.৮ শতাংশের মধ্যে,[৬৪] যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।[৬৫] (এশিয়াতে এই অপ্রদর্শিত অর্থনীতির গড় আকার প্রায় ৩০%)[৬৬]

অর্থনীতিবিদ ইজুদ-দীন পাল যুক্তি দিয়েছেন যে,পাকিস্তানের অর্থনীতিকে "ইসলামীকরণে" ধর্মকে ব্যবহার করে জনগণের সমর্থন অর্জন করা, নিম্ন স্তরের বৈধতা এবং জনপ্রিয়তার অধিকারী সরকার এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের কাছ থেকে বিস্তৃত প্রচেষ্টা দেখা যায় না।[৬৭][৬৮] দুর্ভাগ্যক্রমে, অন্য লেখক যোগিন্দর সিকান্দের মতে, কুরআনের বিষয়বস্তুর সাথে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ "সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো ইসলামিক অপরিহার্য বিষয়গুলির দিকে দৃষ্টিপাত করার পরিবর্তে, পাকিস্তানের পর্যায়ক্রমিক শাসনকর্তারা কোরানের বিশেষ অর্থনৈতিক আদেশের উপর মনোনিবেশ করার চেষ্টা করেছিল যা ন্যায়বিচার এবং সাম্যের বিস্তৃত বিষয় থেকে বিমূর্ত।[৬৭] কারণ পাকিস্তানের জাতীয় অর্থনীতিকে "ইসলামীকরণ" সম্পর্কিত বিতর্কটি সুদমুক্ত ব্যাংকিং, রিবা (সুদ) বিলুপ্তি, উত্তরাধিকার আইন এবং "জাকাত"(কর) অবকাশ সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল, সিকান্দ বিশ্বাস করেন, যে সমস্ত প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তার সবই পাকিস্তানের অর্থনীতির জটিল আধুনিক সমস্যার "জাদুকরী সমাধান"।[৬৭][৬৮]

ফয়সাল খান আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে শরিয়াহ আপিল বেঞ্চের ১৯৯৯ সালে আসলাম খাকি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুদারাবা ও মুশারাকাভিত্তিক কঠোরভাবে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করলে আর্থিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যদি মুরবাহা এবং অন্যান্য স্থির আয়ের দলিলপত্র নিষিদ্ধ করা হয় এবং তা আরও বেশি প্রকৃত লাভ এবং লোকসান ভাগাভাগি পদ্ধতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় তবে ব্যাংকগুলো কেবল মুদারাবা ও মুশারাকার 'ডাইরেক্ট ইক্যুইটি স্টেট' গ্রহণ করে উদ্যোগক্তা প্রতিষ্ঠান কে অর্থায়ন করতে পারত। ঋণ চুক্তি হতো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ প্রসারিত করতে বন্ড, বাণিজ্যিক কাগজ ইত্যাদি কিনে তারল্য সংকট রোধ করতে সক্ষম হতো না।[৬৯]

ভূমি সংস্কার এবং ইসলামীকরণ সম্পাদনা

পাকিস্তানের ভূমি-মালিকানা ঘনিভূত - ২০১৫ সালের হিসাবে, পাকিস্তানের অর্ধেক গ্রামীণ পরিবার ভূমিহীন হয়, যখন দেশের মোট জনসংখ্যার ৫% দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি জমির মালিক।[Note ৬] কিছু সংস্কারক বিশ্বাস করেন কেন্দ্রীভূত ভূমি-মালিকানা পাকিস্তানের ‘দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা’[৭০] বজায় রাখতে এবং কৃষক ও ভূমিহীনদের (১৯৫৯, ১৯৭২ এবং ১৯৭৭ সালে নির্মিত আইন) জমি পুনরায় বিতরণে বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালানে হয়েছে। তবে, এই আইনগুলির বেশিরভাগ বিধানকে পাকিস্তানের আদালতসমূহ অনৈসলামিক হিসাবে বাতিল করে দেয়।[৭১][৭২]

১৯৫৯ সালে আইয়ুব খান এর সরকারের অধীনে পাকিস্তানে ভূমি সংস্কারের প্রথম প্রচেষ্টা হয়েছিল, যা ‘ইসলামে ব্যক্তিগত সম্পত্তির পবিত্রতা’ রক্ষার কথা বলে ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীকে হাতে নিয়ে ভূ-স্বামীরা সফলভাবে প্রতিরোধ করে দিয়েছিল।[৭৩]

১৯৭১ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি ক্ষমতায় এলে পাকিস্তানকে একটি ‘গণতান্ত্রিক ইসলামী সমাজতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র হিসাবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সরকারি পরিকল্পনার কেন্দ্রস্থলে ভূমি সংস্কার ছিল। সরকার দুটি ভূমি সংস্কার আইন জারি করেছিল। ১৯৭২ সালের একটি আইন (মার্শাল রেগুলেশন - এমএলআর ১১৫, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদ দ্বারা পাস করার পরিবর্তে প্রচারিত) তৈরী করা হয়েছিল যা পাকিস্তানের বড় বড় জমিদারদের কৃষিজমি ধারনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল (সাধারণত ১৫০ একর, যদি চাষাবাদযোগ্য জমি না হয় তবে ৩০০ একর, ট্রাক্টর ব্যবহার বা নলকূপ স্থাপনের [৭৪] ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মঞ্জুরী দেওয়া হয়েছিল)। এ আইনের মাধ্যমে রাজ্য দ্বারা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি দখল করা হতো এবং ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল।[৭৫] আইনের আরেকটি বিধান বিদ্যমান ভাড়াটিয়াদের ‘ক্রয়-পূর্ব-নিরপত্তির প্রথম অধিকার’ (জমি কেনার প্রথম অস্বীকারের অধিকার) দিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে, জাতীয় সংসদ কর্তৃক একটি বিল পাস হয়েছিল, যা ভূমি-ধারণ-সীমা আরও কমিয়ে ১০০ একর করা হয়েছিল - যদিও এই আইনটি ভূ-স্বামীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিল।[৭৫]

কৃষকদের মাঝে পুণর্বণ্টনের জন্য স্বল্প পরিমাণ জমি দখল, মজ্জাগতভাবে অনৈসলামিক হওয়ার কারণে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানে ভুট্টোর বিরোধীরা শক্তিশালী ছিল বলে সেখানে কম-ন্যায়সঙ্গত প্রশাসন-বাস্তবায়ন- এসব কারণে ভূমি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়টি সমালোচিত[৭৬] হয়েছিল।[৭৬] পাকিস্তানের বড় বড় জমিদারদের অনেকেই এই সংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন যাকে তারা পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তাদের দীর্ঘস্থায়ী আগ্রহের প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকি হিসেবে দেখেছিল।

সর্বনাশের কারণ

আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে, ভূমি সংস্কারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূস্বামীরা ভুট্টোর উত্তরসূরি জেনারেল জিয়া-উল-হক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত "ইসলামিক আদালত" (অর্থাৎ শরিয়াহ আপিল বেঞ্চ এবং ফেডারেল শরীয়া আদালত) কাছে আবেদন করেছিলেন, এবং পাকিস্তানের কার্যনির্বাহী বা আইনসভার পরিবর্তে, এইগুলো আলী ভুট্টোর সংস্কার কর্মসূচির অনেকটাই অস্বীকার করে। পণ্ডিত চার্লস এইচ কেনেডির মতে- আদালত ভূমি সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন স্থগিত করে, সংস্কার বাতিল করে নতুন আইন তৈরি করেছিলেন এবং নতুন আইনগুলির অর্থ ব্যাখ্যা করেছিলেন।[৭৭]

১৯৭৯ সালের গোড়ার দিকে, পেশোয়ার হাইকোর্টের শরীয়া বেঞ্চ দেখতে পায় -১৯৭২ সালের আইন অনুসারে অন্যদের নিবেদন করার আগে ভাড়াটেদেরকে জমি কেনার অধিকার প্রদান করা (" প্রিম্পশন রাইট ") ইসলামের বিরোধী এবং একারণে এটা বাতিল। আইনের বিরুদ্ধে আবেদনকারীরা সফলভাবে যুক্তি দিয়েছিলেন যে ভাড়াটিয়ার 'প্রি-এম্পশন রাইট' বা 'ক্রয়পূর্ব অধিকার' সম্পর্কে পবিত্র কুরআন বা সুন্নাহর কোথাও উল্লেখ নেই।[৭৮] শরীয়া বেঞ্চে পিটিশন দায়েরকারী ও শরিয়া বেঞ্চের বিচারকগণের মতে হাদীস(ইসলামের নবী মুহাম্মাদ স. এর শিক্ষা, কর্ম ও বাণী সম্পর্কিত রেকর্ডিত প্রতিবেদন) অনুসারে 'প্রিএম্পশন অধিকার' এর পরিবর্তে[৭৮]

  1. 'শফি শরিক', (শরীয়া আইন অনুসারে, "কোশারার্স" বা জমির সহ-মালিক)[৭৯]
  2. 'শফি খালিত', ('অনাক্রম্যতা এবং সংযোজনে অংশগ্রহণকারী' অর্থাৎ যাঁরা সম্পত্তির উপর বিশেষ অধিকার ভোগ করে যেমন চলাচলের অধিকার, সেচের অধিকার ইত্যাদি);[৭৯]
  3. 'শফি জার', (স্বতঃস্ফূর্ত মালিকরা যারা " বিক্রিত স্থাবর সম্পত্তি সংলগ্ন একটি স্থাবর সম্পত্তির মালিক")। ---এর পক্ষে মত দেয়।[৭৮]

এই সিদ্ধান্তটি ১৯৮১[৮০][৮১] সালে ফেডারেল শরীয়া আদালত পুনরায় নিশ্চিত করেছিলেন(যদিও আদালত স্বীকার করে যে 'ইসলাম দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বা জনসাধারণের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে সম্পদের উপর রাষ্ট্র-আরোপিত সীমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে', যা ছিল ভূমি সংস্কার আইনের একটি লক্ষ্য[৭৯]) এবং ১৯৮৬ সালে একটি ৩ থেকে ২ সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্টের শরিয়াহ আপিল বেঞ্চ কর্তৃক বহাল রয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্তে এই সিদ্ধান্তটিকে বারবার স্পষ্টিকরণ করা হয়েছিল,[৮২] (তবে ১৯৮৬ সালের আগস্টে রায় দেওয়ার আগে "চূড়ান্ত ডিক্রি" দিয়ে আইনি কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য থাকায় পুরানো আইনের অধীনে জমি স্থানান্তর বৈধ ছিল কি না তা নিয়ে বিভ্রান্তি থেকে যায়।[৮২][Note ৭]).

১৯৮৯ সালের আগস্টে শরীয়া আপিল বেঞ্চ ১৯৭২ সালের ভূমি সংস্কার আইনের আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নষ্ট করে দেয়।[৮৩] এটি সর্বসম্মতিক্রমে রায় দেয় যে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি বাজেয়াপ্ত করার যে বিধান ছিল তা অনৈসলামিক ছিল। অন্যান্য পদক্ষেপের উপর এটি ৩ থেকে 2 বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এতে রায় দেওয়া হয়েছিল যে ওয়াকফ (একটি ইসলামী ধর্মীয় সম্পদ, সাধারণত জমি বা বিল্ডিংয়ের একটি অনুদানযুক্ত প্লট) করা জমি ভূমি সংস্কার আইনের যেকোনও বিধানের আওতা মুক্ত  থাকবে;[৮৪] 'দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে ইসলাম ধন-সম্পদ বা জমির বাধ্যতামূলক পুনর্বণ্টনকে সমর্থন করে না, তবে দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্য প্রশংসনীয় হতে পারে'-এই ভিত্তি বিবেচনায় নিলে মালিকানাধীন জমির পরিমান-সীমা ছিল সম্পত্তির অধিকারের উপর একটি অযৌক্তিক বিধিনিষেধ।[৭২] ভিন্নমতপোষণকারী বিচারপতিরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ইসলামী বিধানমতে, সম্পত্তিধারীদের অধিকার অবশ্যই সম্প্রদায়ের প্রয়োজনের তুলনায় ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে।[৮৫] (তার কন্যার শাসনামলে আলী ভুট্টোর দেশীয় নীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করা বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা (অর্থাৎ ক্ষমতা) এবং নির্বাচিত সরকারের দুর্বলতাকেই গুরুত্ব দিয়েছিল।)[৮৪])

পাকিস্তানের বিখ্যাত ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ডন ( Dawn) এর অনলাইন ভার্সন- ডন ডটকম এ-একজন ব্যারিস্টারের লেখা অনুযায়ী, "কাজলবাশ ওয়াকফ বনাম চিফ ল্যান্ড কমিশনার(১৯৮৯ শরীয়া আপিল বেঞ্চের সিদ্ধান্ত) এর চূড়ান্ত ফলাফল হলো- পাকিস্তানের ভূমি সংস্কার ১৯৪৭ সালে যে স্তরে ছিল এখন  সেই স্তরেই আছে, যেমন ১৯৭২ সালের বিধি এবং ১৯৭৭ সালের আইন হতে মূল বিধানগুলি হ্রাস পেয়েছে এবং ১৯৫৯ এর বিধিবিধান বাতিল করা হয়েছে।[৭১]

অন্যান্য বিষয় সম্পাদনা

শুল্কের ইসলামীকরণের জন্য ইসলামী অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য অধ্যাদেশগুলো ১৯৮০ সালের ২০ জুন প্রবর্তিত জাকাতউশর অধ্যাদেশসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে। নতুন সিস্টেমটি ধর্মনিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নির্মূল করেছিল এবং কেবল ইসলামী সংগঠন, সমিতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে সমন্বয় করেছিল।[৩০] যেসব মুসলমানদের ব্যাংক হিসাবে ৩০০০ এর বেশি রূপায়া থাকত সেসব মুসলমানদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বার্ষিক ২.৫% হারে যাকাত কেটে নেওয়া হত।[৩০] কৃষিজমির কর হিসেবে বার্ষিকভাবে কৃষিজ ফলনের ১০% হারে নগদ বা সমজাত ফসল উশর নেওয়া হত।[৩০]

জেনারেল জিয়া-উল-হক কর্তৃক অনুমোদিত, সরকার অভাবী, দরিদ্র, এতিম ও বিধবা মহিলাদের কাছে যাকাত তহবিল বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক, জেলা ও  তহশিল যাকাত কাউন্সিল নিয়োগ করে।[৩০] শিয়া মুসলমানদেরকে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে যাকাত কর্তন করা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।[৩০] সমালোচক আরসকল সেলিম এর মতে প্রোগ্রামটি খুব একটা সফল হতে পারেনিঃ

"যেহেতু এটি ১৯৮০ সালের ১৭ নং যাকাত ও উশর অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়েছিল ... লক্ষ লক্ষ পাকিস্তানি নাগরিকের বাস্তব জীবন এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে অপরিবর্তিত থেকে যায়, তবে যাকাত প্রশাসনে রাষ্ট্রের জড়িত থাকার ফলে প্রচুর সংখ্যক সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার উদ্ভব হয়েছে।"[৮৬]

পারভেজ হাসান নামক আরেকজন অর্থনীতিবিদ ২০০৪ সালে লিখেন যে জাকাত সংগ্রহ দরিদ্রদের সহায়তার জন্য অপ্রতুল ছিল কারণ এটি ছিল ৫-৬ বিলিয়ন রুপাইয়া যা জিডিপির মাত্র ০.১৭ শতাংশ। বর্তমান অনুদানের স্তরে পাকিস্তানের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর  ১.২ মিলিয়ন পরিবারের আয়ের মধ্যে মাত্র ৫-৬ শতাংশ যুক্ত হবে, এমনকি যদি জাকাতের প্রতিটি টাকা প্রত্যক্ষভাবে এই দরিদ্রদের কাছে গেলেও।[৮৭]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Haq, Ziaul-। "Islamization of Economy in Pakistan (1977-1988): An Essay on the Relationship on Economic and Religion"। Zia-ul-Haq। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১২ 
  2. "Islamization Under General Zia-ul-Haq | Islamization and Implementation of Islamic Laws in Pakistan"Story Of Pakistan (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৩-০৬-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-০৩ 
  3. Mehboob, Aurangzaib (২০০২)। "Executive Initiative I"। Islamization of Economy (পিডিএফ)। Islamic Studies। পৃষ্ঠা 682–686। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১২ 
  4. Hathaway, Robert M.; Lee, Wilson, সম্পাদকগণ (২০০৬)। "Pakistan's Superior Courts and the Prohibition of Riba"। ISLAMIZATION AND THE PAKISTANI ECONOMY (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center or Scholars। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  5. See: Privatization in Pakistan and Economic liberalisation in Pakistan
  6. Hathaway, Robert M (২০০৪)। Hathaway, Robert M; Lee, Wilson, সম্পাদকগণ। ISLAMIZATION AND THE PAKISTANI ECONOMY (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center for Scholars। পৃষ্ঠা 3। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৫Many economists and members of the business community worry that an attempt to impose an Islamic economy on Pakistan could undercut this progress and have devastating economic, political, and social consequences for the country. ... Fears about the Islamization of the country's economy, asserted the governor of the State Bank of Pakistan, Ishrat Husain, in the January 27 conference's keynote address, are absurd, and serve merely to underscore the clichés and stereotypes of Pakistan and Islam widely held in the West. `Most of the assumptions and premises on which the hypotheses about the Islamic economic system have been constructed are serious flawed` ... 
  7. Noman, Omar (২০০৪)। "The Profit Motive in Islam: Religion and Economics in the Muslim World"। Hathaway, Robert M; Lee, Wilson। ISLAMIZATION AND THE PAKISTANI ECONOMY (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center for Scholars। পৃষ্ঠা 77। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৫adopting a comprehensive mandatory Islamic system ... makes no political or economic sense ... proponents for Islamic economics have not made any rigorous case of how adopting their recommendations would accelerate growth, reduce poverty, or improve the status of women. The arguments tend to be purely on grounds of piety, not socio-economic performance. 
  8. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.79
  9. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.80
  10. Asi, Anwar, "Towards Islamic banking system", 2002 (dead link)
  11. Nisar, Shariq"Contemporary Issues Facing Islamic Banking" (পিডিএফ)shariqnisar.com। পৃষ্ঠা 6। ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  12. Dhulipala, V. (২০১১)। ""A nation state insufficiently imagined? Debating Pakistan in Late Colonial North India""। Indian Economic & Social History Review48: 381। 
  13. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.2, 60-64
  14. Nasr, Seyyed Vali Reza Nasr (১৯৯৬)। Mawdudi and the Making of Islamic Revivalism। New York, Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 45–6। আইএসবিএন 0195096959 
  15. Kepel, Gilles (২০০২)। Jihad: The Trail of Political Islam (2006 সংস্করণ)। I.B.Tauris। পৃষ্ঠা 100–101। আইএসবিএন 9781845112578। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  16. Michael Heng Siam-Heng, Ten Chin Liew (২০১০)। State and Secularism: Perspectives from Asia§General Zia-ul-Haq and Patronage of Islamism। Singapore: World Scientific। পৃষ্ঠা 360। আইএসবিএন 9789814282383 
  17. Shafqat, Saeed (২০০৪)। "Re-inventing Pakistan: Islam, Security and Democracy—What is Changing?"। Hathaway, Robert M.। Islamization and the Pakistani Economy (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center for Scholars। পৃষ্ঠা 122। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৫ 
  18. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.40
  19. ThirdWay। Hymns Ancient & Modern Ltd.। সেপ্টে ১৯৮৫। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৭ 
  20. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.78
  21. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.7
  22. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.123
  23. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.124
  24. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.96
  25. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.159
  26. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.97
  27. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.127-134
  28. Nisar, PhD, Dr. Professor Shariq। "Problems in Islamization of Economy" (google docs)Dr. Sharif Nisar, PhD in Economics, is Joint Editor Islamic Economics Bulletin, India। Joint Editor Islamic Economics Bulletin of India। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১২ 
  29. UG Govt., United States Government। "ZIA-UL-HAQ"This work is the copyright of the United States Government। Library of Congress Country Studies। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১২ 
  30. Administration। "Islamization Under General Zia-ul-Haq"June 1, 2003। The Story of Pakistan: The Rules of Democracy। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১২ 
  31. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.128-9
  32. Khan, What Is Wrong with Islamic Economics?, 2013: p.297
  33. Kennedy, Charles (১৯৯৬)। "Introduction"। Islamization of Laws and Economy, Case Studies on Pakistan। Anis Ahmad, Author of introduction। Institute of Policy Studies, The Islamic Foundation। পৃষ্ঠা 25। 
  34. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.129-30
  35. কুরআন ২:২৭৫-৮
  36. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.130-1
  37. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.131
  38. in the Sindh High Court at the time
  39. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.95
  40. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.132-3
  41. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.99-100
  42. Case: Mahmood-ur-Rehman Faisal vs. Secretary, Ministry of Law and Parliamentary Affairs
  43. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.134-7
  44. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.135-6
  45. "Islamic Law on Interest: 1999 Pakistan Supreme Court Ruling on Riba"। The World Bank Legal Review। Walters Kluwer। ২০০৩। পৃষ্ঠা 393। আইএসবিএন 9789041120014। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  46. Kennedy, Pakistan's Superior Courts and the Prohibition of Riba, 2006: p.111-113
  47. Hathaway, Islamization and the Pakistani Economy, 2006: p.2
  48. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.130
  49. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.131
  50. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.162
  51. Khan, M. Fahim, "Islamic Banking as Practiced now in the World" in Ahmad Ziauddin et al(ed.), Money and Banking in Islam, Institute of Policy Studies, Islamabad, Pakistan, 1983.
  52. Khan, M. Akram, "Islamic Banking in Pakistan: The Future Path", All Pakistan Islamic Education Congress, Lahore, 1992.
  53. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.151
  54. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.138, 142
  55. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.144
  56. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.138-9
  57. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.146
  58. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.138
  59. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.147-9
  60. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: p.149-50
  61. Baele, Lieven; Farooq, Moazzam; Ongena, Steven (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Of Religion and Redemption: Evidence from Default on Islamic Loans"CentER Discussion Paper Series No. 2012-014 European Banking Center Discussion Paper No. 2012-008। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০১৭ 
  62. Hathaway, Islamization and the Pakistani Economy, 2006: p.4
  63. NISAR, SHARIQ। "Contemporary Issues Facing Islamic Banking" (পিডিএফ)shariqnisar.com। পৃষ্ঠা 7। ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৫ 
  64. Kemal, M.A. (২০০৭)। A Fresh Assessment of the Underground Economy and Tax Evasion in Pakistan: Causes, Consequences, and Linkages with the Formal Economy, (পিডিএফ)। PIDE Working Paper। Pakistan Institute of Development Economics। পৃষ্ঠা 28। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৭ 
  65. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015, p.99
  66. Schneider, F. (২০০৬)। Shadow Economies and Corruption All Over the World: What Do We Really Know? (পিডিএফ)। Institute for the Study of Labor, Discussion Paper #2315। পৃষ্ঠা 23, 24, 27। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৭ 
  67. Yoginder Sikand। "Failure of Islamisation in Pakistan [Book Review of Pakistan, Islam and Economics—Failure of Modernity, by Izzud-Din Pal]"Yoginder Sikand। Oxford University। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১২ 
  68. Sikand, PhD, Yoginder; Izzud-Din Pal (সেপ্টেম্বর ২৩, ১৯৯৯)। "Failure of Islamisation in Pakistan"। Pakistan, Islam and Economics: Failure of Modernity। Karachi, Sindh Province, Pakistan: Oxford University Press, Karachi। পৃষ্ঠা 195। আইএসবিএন 978-0195790689। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  69. Khan, Islamic Banking in Pakistan, 2015: pp.160-61
  70. Ghosh, Palash (অক্টোবর ১১, ২০১৩)। "Give Me Land, Lots Of Land: Only 5% Of Pakistanis Own Two-Thirds of Farmlands; One-Half Of Farmers Are Landless"ibtimes.com। International Business Times। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ 
  71. "Land reforms in Pakistan"। dawn.com। অক্টো ১১, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৪ 
  72. Kennedy, Charles (১৯৯৬)। Islamization of Laws and Economy, Case Studies on Pakistan। Institute of Policy Studies, The Islamic Foundation। পৃষ্ঠা 120। 
  73. Nasr, Vali (২০০৪)। "Islamization, the State and Development"। Hathaway, Robert M; Lee, Wilson। ISLAMIZATION AND THE PAKISTANI ECONOMY (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center for Scholars। পৃষ্ঠা 93। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৫Throughout the 1950s, the landed elite resisted attempts at land reform by mobilizing religious support for its position. The Islamist party, Jama’ati Islami (the Islamic Party), helped galvanize support for the landed elite by underscoring the sanctity of private property in Islam. The alliance was able to undo the government's plans. 
  74. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.122
  75. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.109
  76. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.110
  77. Kennedy, Charles (১৯৯৬)। Islamization of Laws and Economy, Case Studies on Pakistan। Institute of Policy Studies, The Islamic Foundation। পৃষ্ঠা 121। 
  78. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.111
  79. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.114
  80. in Hafiz Muhammad Ameen vs Islamic Republic of Pakistan PLD 1981, FSC 23.
  81. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.112
  82. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.117
  83. Case: Qazalbash Waqf and Others vs. Chief Land Commissioner
  84. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.119
  85. Kennedy, Islamization of Laws and Economy, 1996: p.120
  86. Salim, Arskal (২০০৮)। Challenging the Secular State: The Islamization of Law in Modern Indonesia। University of Hawaii Press.। পৃষ্ঠা 117–119। আইএসবিএন 9780824832377। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  87. Hathaway, Robert M (২০০৪)। Hathaway, Robert M; Lee, Wilson, সম্পাদকগণ। ISLAMIZATION AND THE PAKISTANI ECONOMY (পিডিএফ)। Woodrow Wilson International Center for Scholars। পৃষ্ঠা 3। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ 

পাদটিকাসমূহ সম্পাদনা

  1. in his Presidential Address to the annual meeting of the All-India Muslim League in 1930
  2. He also established a Shariat Appellate Bench[৩৩]
  3. See:the pages of Privatization programme and the economic liberalisation
  4. Survey of 5133 bank customers of 30 branches of an Islamic and a conventional bank led by Ayesha Khalid Khan[৫৯]
  5. a study of "conventional and Islamic loans using a comprehensive monthly dataset from Pakistan that follows more than 150,000 loans over the period 2006:04 to 2008:12".[৬১]
  6. only 5 percent of the country's population owns almost two-thirds (64 percent) of its farmlands. ... about one-half (50.8 percent) of rural households are landless -- a direct result of a feudal system that has existed for centuries. ... That bit of data came from The Society For Conservation and Protection of The Environment (SCOPE), a Pakistan-based NGO.[৭০]
  7. for example, over 5000 cases on pre-emption were pending before provincial courts in Punjab.

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

বিদ্বান তথ্যসূত্র সম্পাদনা