ভূমি সংস্কার হচ্ছে ভূমি মালিকানা ব্যবস্থার সংস্কার বা পরিবর্তন। পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক উভয় সমাজ ব্যবস্থাতেই ভূমি সংস্কার হয়ে থাকে। এক উৎপাদন পদ্ধতি থেকে আরেক উৎপাদন পদ্ধতিতে উত্তরণের অপরিহার্য পথ হচ্ছে পুরনো ভূমি মালিকানা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে ভূমি সংস্কার দারিদ্র দূর করে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। []

ইন্দোনেশিয়ার কৃষকেরা ভূমি সংস্কারের জন্য প্রতিবাদ করছে, ২০০৪

ইতিহাস

সম্পাদনা

সামন্ত ব্যবস্থা ভেঙে পুঁজিবাদী বিকাশ কিংবা শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন পর্বে একের পর এক ভূমি সংস্কারের ঘটনা ঘটেছে। এর রূপ সব জায়গাতে একরকম নয়। একই গতিতে বা একই মাত্রায় বা একই ধরনে সব জায়গায় ভূমি ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। ইউরোপ, জার্মানি, ইংল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্র—একেক স্থানে একেক রকম ভূমি সংস্কার হয়েছে। পুঁজিবাদের পরবর্তী পর্বে তাইওয়ান বা দক্ষিণ কোরিয়ায় ভূমি সংস্কারের ধরন ও এসবের রাজনৈতিক শক্তি বিন্যাসের চরিত্র আবার অন্যদের থেকে আলাদা। এই পার্থক্য তৈরি হয় সামন্ত ব্যবস্থার ধরন, তার প্রতিরোধ ক্ষমতা, উদীয়মান শক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আপেক্ষিক ক্ষমতা ইত্যাদি এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষমতা সমীকরণের ওপর। এসবের মধ্যে পার্থক্যের কারণে কোথাও পরিবর্তন দীর্ঘ হয়েছে, কোথাও সংঘাত হয়েছে অনেক তীব্র।

পুঁজিবাদী ভূমি সংস্কার

সম্পাদনা

পুঁজিবাদী ভূমি সংস্কারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভূমিকে পুঁজির ক্রিয়ার অধীনস্থ করা, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ করা, শিল্পায়নের সম্পূরক হিসেবে কৃষির বিকাশ ঘটানো। আরেকভাবে বলা যায়, মূলধন সংবর্ধনের তাগিদে ভূমির সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা, যে উৎপাদনশীলতার লক্ষ্য থাকে বাজার ও মূলধন সংবর্ধন এবং তার প্রয়োজন ভূমিতে পুঁজি বিনিয়োগের সকল বাধা অপসারণ। এই হিসেবে অনুপস্থিত ভূমি মালিকানা দূর করা পুঁজিবাদী ভূমি সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দাঁড়ায়। পুঁজিবাদী বিকাশের প্রক্রিয়ায় পুঁজির যে কেন্দ্রীভবন এবং আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটে সেখানে বহুজাতিক একচেটিয়া পুঁজির উদ্ভব ঘটে। পুঁজিবাদী কেন্দ্র দেশগুলোতে তো বটেই, প্রান্তস্থ দেশগুলোর জমিও তার দখলের অন্যতম লক্ষ্য। উপনিবেশে তার দখল হয়েছে সরাসরি শারীরিকভাবে, আর বর্তমানে উন্নয়ন কর্মসূচি ও পুঁজি বিনিয়োগ প্রক্রিয়াতেই সম্পন্ন হয় এই দখলপর্ব। উন্নয়ন দর্শনের আধিপত্য এবং ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ কাঠামোর সমর্থন নিয়েই তা অগ্রসর হয়। বর্তমান বিশ্বে কৃষিকেন্দ্রিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাম্প্রতিক তৎপরতা এরই স্বাক্ষর বহন করে।

সমাজতান্ত্রিক ভূমি সংস্কার

সম্পাদনা

ভূমির উৎপাদন শক্তির বিকাশ এবং শিল্পায়ন সম্পর্কিত ভাবে কৃষির বিন্যাস সমাজতান্ত্রিক ভূমি সংস্কারের মূল লক্ষ্য। কিন্তু যে জায়গায় পুঁজিবাদের সঙ্গে তার পার্থক্য তৈরি হয় সেটি হলো ভূমিকে ব্যক্তি মালিকানার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাকে সাধারণ সম্পত্তি হিসেবে রূপান্তরের পথে অগ্রসর হওয়া। সেজন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ যেসব দেশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি উপস্থিত করেছিল সেসব দেশে যৌথকরণ, রাষ্ট্রীয়করণ এবং সাধারণ সম্পত্তিকরণ তিন ধরনের চেষ্টা দেখা গেছে। ভূমি ও তার উৎপাদিকা শক্তিকে নতুন একটি উৎপাদন সম্পর্কের অধীনে আনার চেষ্টা করা হয়। যেখানে মানুষ ও প্রকৃতির এক নতুন সম্পর্কের উদ্ভব ঘটে। প্রকৃতি মানুষের লোভ, দখল ও মুনাফার দাপট থেকে মুক্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে মানুষও মুক্ত হয় তার সৃজনশীলতা ও অধস্তনতার সংঘাতের কারণ ব্যক্তি মালিকানার শৃঙ্খল থেকে। কিন্তু মানব ইতিহাস কখনও একরৈখিকভাবে অগ্রসর হয় না। এসব ব্যবস্থা টিকে থাকার মতো পরিপক্বতা এখনো মানবসমাজে তৈরি হয়নি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

আরও জানতে

সম্পাদনা