নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (জোজা উচ্চারণ: [xoˈliːɬaɬa manˈdeːla]; ১৮ জুলাই ১৯১৮ - ৫ ডিসেম্বর ২০১৩)[১] ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী, রাজনৈতিক নেতা এবং প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দেশটির প্রথম কৃষাঙ্গ রাষ্ট্রপ্রধান। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের ধারক ম্যান্ডেলা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
নেলসন ম্যান্ডেলা | |
---|---|
দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি | |
কাজের মেয়াদ ১০ই মে, ১৯৯৪ – ১৪ই জুন, ১৯৯৯ | |
ডেপুটি | থাবো এম্বেকি এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক |
পূর্বসূরী | এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক |
উত্তরসূরী | থাবো এম্বেকি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা ১৮ জুলাই ১৯১৮ এম্ভেজো, দক্ষিণ আফ্রিকা |
মৃত্যু | ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ জোহানেসবার্গ, গাউটেং, দক্ষিণ আফ্রিকা | (বয়স ৯৫)
জাতীয়তা | দক্ষিণ আফ্রিকা |
রাজনৈতিক দল | আফ্রিকার জাতীয় কংগ্রেস |
দাম্পত্য সঙ্গী | ইভিলিন ন্তকো মাসে (১৯৪৪-১৯৫৭) উইনি মাদিকিজেলা-ম্যান্ডেলা (১৯৫৭-১৯৯৬) গ্রাসা মাচেল (১৯৯৮–বর্তমান) |
সন্তান | মাদিবা থেম্বেকিল মাগগাথো লিওয়ানিকা মাকাজিউই মাকাজিউই জিনানি জিঞ্জিসোয়া |
বাসস্থান | হাফটন এস্টেট, জোহানেসবার্গ, গাউটেং, দক্ষিণ আফ্রিকা |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হ্যায়ার ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এক্সটার্নাল সিস্টেম ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয় |
ধর্ম | খ্রিস্টান ধর্ম (ম্যাথডিজম) |
স্বাক্ষর | |
ওয়েবসাইট | www |
ম্যান্ডেলা ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি উপনিবেশ-বিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন। এর অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপ, পলসমুর কারাগার ও ভিক্টর ভার্স্টার কারাগারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চপের মুখে এবং বর্ণবাদী গৃহযুদ্ধের আতঙ্কে রাষ্ট্রপতি এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি তাকে কারামুক্ত করার নির্দেশ দেন। কারামুক্তি লাভের পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে বর্ণবাদ নিপাতের প্রচেষ্টায় শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ম্যান্ডেলা তার দল এএনসি'র হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়লাভ করে রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভারত সরকার প্রদত্ত ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতরত্ন পুরস্কার ও ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার।[২] তাছাড়াও তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেক পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তার গোত্রের নিকট মাদিবা নামে পরিচিত, যার অর্থ হল "জাতির জনক"।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাজন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
সম্পাদনানেলসন ম্যান্ডেলা ১৯১৮ সালের ১৮ই জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন কেপ প্রদেশের থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় উমতাতার নিকটবর্তী ম্ভেজো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৩][৪] তার নামের মধ্যাংশ রোলিহ্লাহ্লা একটি খোসা ভাষার শব্দ, যার অর্থ "সমস্যা সৃষ্টিকারী";[৫] তার জীবনের শেষভাগে তিনি তার বংশের নাম "মাদিবা" হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন।[৬] তার প্রপিতামহ নগুবেংচুকা (মৃত্যু ১৮৩২) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান পূর্ব কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর ইনকোসি এনখুলু অর্থাৎ রাজা।[৭][৮] এই রাজার এক পুত্র ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার পিতামহ। নেলসনের বংশগত নাম ম্যান্ডেলাই এই পিতামহ থেকেই পাওয়া।[৯] তবে নেলসনের পিতামহী ইক্সহিবা গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তার ক্যাডেট শাখার বংশধরদের কেউ থেম্বু রাজবংশে আরোহণ করার অধিকার রাখেন না, কিন্তু উত্তরাধিকারসূত্র রাজকীয় উপদেষ্টা হয়ে থাকেন।[১০]
ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা ম্যান্ডেলা (১৮৮০-১৯২৮) ম্ভেজো গ্রামের মোড়ল ও শাসকের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একজন শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক তার পূর্ববর্তী পদাধিকারী দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হলে তিনি ১৯১৫ সালে এই পদে আসীন হন।[১১] ১৯২৬ সালে গাদলাও দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত হন, তবে ম্যান্ডেলাকে বলা হয়েছিল যে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগভাজন হওয়ায় ও ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তার পিতাকে পদচ্যুত হয়েছিলেন।[১২] তিনি তখন তার পরিবারসহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। পদচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও গাদলা ইনকোসিদের প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন এবং থেম্বুর শাসনকর্তা হিসাবে জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবোকে নির্বাচিত করায় ভূমিকা রাখেন।[১৩] গাদলা ছিলেন কাতামা দেবতার অনুসারী।[১৪] তার চার স্ত্রী, চার পুত্র ও নয় কন্যা ছিল।[১৩] তারা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে বাস করতেন। ম্যান্ডেলার মাতা ছিলেন গাদলার তৃতীয় স্ত্রী নোসেকেনি ফ্যানি। ফ্যানি ছিলেন ম্পেম্ভু খোসা গোত্রের ন্কেদামার কন্যা।[১৫]
শৈশব: ১৯১৮-১৯৩৪
সম্পাদনাআমার পরিবারের কেউ কখনো বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেননি ... বিদ্যালয়ের প্রথম দিন আমার শিক্ষিকা ম্দিঙ্গানে আমাদের প্রত্যেকের ইংরেজি নাম রাখেন। সে সময়ে আফ্রিকানদের মধ্যে এটি একটি রীতি ছিল এবং তা নিঃসন্দেহে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্রিটিশ পক্ষপাতের কারণে। সেদিন ম্দিঙ্গানে আমাকে বলেন আমার নতুন নাম নেলসন। এই নামটিই কেন তা সম্পর্কে আমার কোন ধারণ নেই।
—ম্যান্ডেলা, ১৯৯৪[১৬]
ম্যান্ডেলা পরবর্তী কালে বলেন যে তার প্রারম্ভিক জীবন ঐতিহ্যবাহী থেম্বু প্রথা ও নিষেধে জেলে আবদ্ধ ছিল।[১৭] তার শৈশব কাটে তার দুই বোনের সাথে তার মাতামহের বাড়ি কুনু গ্রামে।[১৮] তার পিতামাতা দুজনেই অশিক্ষিত ছিলেন। তার মাতা খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি ম্যান্ডেলার যখন সাত বছর বয়স, তখন তাকে স্থানীয় মেথডিস্ট বিদ্যালয়ে পাঠান। তিনি তার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ম্যান্ডেলা রাজপ্রাসাদের কাছে একটি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। মেথডিস্ট হিসেবে অভিসিঞ্চিত ম্যান্ডেলাকে স্কুলে পড়ার সময়ে তার শিক্ষিকা ম্দিঙ্গানে তার ইংরেজি নাম রাখেন "নেলসন"।[১৯] ম্যান্ডেলার বয়স যখন ৯ বছর, তখন তার পিতা কুনুতে আসেন। সেখানেই তিনি এক চিকিৎসার অযোগ্য এক রোগে মারা যান। ম্যান্ডেলার ধারণা তিনি যক্ষ্মা রোগে মারা গিয়েছিলেন।[২০] ম্যান্ডেলা পরবর্তী কালে বলেন তিনি বংশ পরম্পরা অনুযায়ী তার পিতার "বিদ্রোহচারণ" ও "পক্ষপাতহীনতার একগুঁয়ে জ্ঞান" লাভ করেছিলেন।[২১]
ম্যান্ডেলার পিতার মৃত্যুর পর তার মাতা তাকে মকেকেজেনিতে নিয়ে যান। সেখানে থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার গোত্রে বরণ করে নেওয়া হয়। থেম্বু শাসক জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবো তখন তার অভিভাবক নিযুক্ত হন।[১৩] এরপর অনেক বছর তিনি তার মাতাকে দেখেননি। জোঙ্গিন্তাবা ও তার স্ত্রী নোয়েঙ্গল্যান্ড তাকে তাদের নিজেদের সন্তানের মত স্নেহ করতেন এবং তাদের পুত্র জাস্টিস ও কন্যা নমাফুর সাথে লালনপালন করেন।[২২] ম্যান্ডেলা তার অভিভাবকদের সাথে প্রতি রবিবার গির্জায় যেতে, ফলে খ্রিস্টধর্ম তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।[২৩] তিনি রাজপ্রাসাদের নিকটবর্তী মেথডিস্ট মিশন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি, খোসা, ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন।[২৪] রাজপ্রাসাদে আগত বয়োজ্যেষ্ঠ আগন্তুকদের নিকট থেকে গল্প শোনে আফ্রিকান ইতিহাস সম্পর্কে তার ভালোবাসা জন্মে এবং তিনি জোয়ি নামক একজন সাম্রাজ্যবিরোধী আগন্তুকের দ্বারা প্রভাবিত হন।[২৫] সেই সময়ে তিনি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতাবাদীদের অত্যাচারী নয় বরং উপকারী মনে করতেন, কারণ তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসেছিল।[২৬] ১৬ বছর বয়সে তিনি, জাস্টিস ও আরও কয়েকজন বালক তিহালার্হায় উলওয়ালুকু খতনা করতে যান। এই প্রথাকে বালক থেকে প্রাপ্ত বয়স্কে রূপান্তরের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। এরপর ম্যান্ডেলার নামকরণ করা হয় দালিবুঙ্গা।[২৭]
ক্লার্কবারি, হেল্ডটাউন ও ফোর্ট হেয়ার: ১৯৩৪-১৯৪০
সম্পাদনাথেম্বু রাজদরবারের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৩৩ সালে ম্যান্ডেলা এঙ্গকোবোর ক্লার্কবারি মেথডিস্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তি হন। পশ্চিমা-ধারার এই প্রতিষ্ঠানটি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জন্য থেম্বুল্যান্ডের সর্ববৃহৎ বিদ্যালয়।[২৮][২৯] সেখানে ম্যান্ডেলা ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন।[৩০][২৮] ১৯৩৭ সালে ম্যান্ডেলা ফোর্ট বোফোর্ট শহরের মিশনারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হন। জাস্টিসসহ থেম্বু রাজপরিবারের অধিকাংশ সদস্য এখানেই পড়াশোনা করত।[৩১] এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইংরেজি সংস্কৃতি ও সরকারের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতেন, কিন্তু ম্যান্ডেলা স্থানীয় আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। এইখানের তার প্রথম খোসা বংশের বাইরের কারও সাথে বন্ধুত্ব হয়, যে সতো ভাষী ছিল। এছাড়া এখানে তিনি তার প্রিয় একজন শিক্ষকের দ্বারা প্রভাবিত হন, যিনি খোসা বংশীয় হয়েও একজন সতোকে বিয়ে করে এই রীতি ভেঙ্গে দেয়।[৩২] ম্যান্ডেলা হেল্ডটাউনে থাকাকালীন অবসর সময়ে দৌড় ও মুষ্টিযুদ্ধের মতো খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন।[৩৩]
জোঙ্গিন্তাবার সহায়তায় বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস কোর্সে ভর্তি হন। ফোর্ট হেয়ার হল পূর্ব কেপের অ্যালিসে অবস্থিত কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য একটি অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ১৫০ জনের মত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে তিনি ইংরেজি, নৃতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, স্থানীয় প্রশাসন, ও রোমান ওলন্দাজ আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তার লক্ষ্য ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুবাদক বা কেরানি হওয়া।[৩৪] ম্যান্ডেলা ওয়েসলি হাউজ ছাত্রাবাসে থাকতেন এবং এখানেই তার নিজের গোত্রীয় কে. ডি. মাটানজিমা এবং অলিভার টাম্বোর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। টাম্বো আর ম্যান্ডেলা আজীবন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং পরবর্তী দশকে কমরেড হন।[৩৫] অন্যদিকে কাইজার (কে ডি) মাটানজিমা ছিলেন ট্রান্সকেইয়ের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী।[৩৬] এই বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা বান্টুস্থানের রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে জড়িত হন। তবে এসব নীতিমালার ক্ষেত্রে ম্যান্ডেলা ও মাটানজিমার মতবিরোধ হয়।[৩৭]
ম্যান্ডেলা বলরুম নৃত্য শিখেন,[৩৮] এবং নাট্য সংঘের মঞ্চস্থ আব্রাহাম লিঙ্কন সম্পর্কিত একটি নাটকে অভিনয় করেন।[৩৯] এছাড়া তিনি স্টুডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের অংশ হিসেবে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য বাইবেল শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।[৪০] যদিও তার বন্ধুরা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সাথে জড়িত ছিলেন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীনতা চাইতেন, ম্যান্ডেলা সাম্রাজ্য-বিরোধী আন্দোলনের সাথে সহাবস্থান এড়িয়ে চলতেন,[৪১] এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ব্রিটিশদের যুদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতি মৌখিক সমর্থন জানান।[৪২] বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের শেষে ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সংসদের ডাকা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। এর ফলে ফোর্ট হেয়ার তাকে চলে যেতে বলা হয়। শর্ত দেওয়া হয়, কেবল ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সদস্য হতে পারলেই তিনি সেখানে ফেরত আসতে পারবেন।[৪৩] কিন্তু তিনি তার ডিগ্রি অর্জনের জন্য আর ফিরে আসেননি।[৪৪]
জোহানেসবার্গে আগমন: ১৯৪১-১৯৪৩
সম্পাদনাম্যান্ডেলা ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে ফোর্ট হেয়ার ছাড়ার অল্প পরেই জানতে পারেন, জোঙ্গিন্তাবা তার সন্তান জাস্টিস (যুবরাজ ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী) এবং ম্যান্ডেলার বিয়ে ঠিক করার ঘোষণা দিয়েছেন। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলেননা। তাই তারা দুজন কুইন্সটাউন হয়ে জোহানেসবার্গে চলে যান।[৪৫] তারা ১৯৪১ সালের এপ্রিলে জোহানেসবার্গে পৌঁছান।[৪৬] সেখানে ম্যান্ডেলা শুরুতে একটি খনিতে প্রহরী হিসেবে কাজ নেন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার পুঁজিবাদী কার্যক্রম দেখতে পান। তবে অল্পদিন পরেই খনির মালিক ইদুনা জেনে যান যে, ম্যান্ডেলা বিয়ে এড়াতে জোঙ্গিন্তাবার কাছ থেকে পালিয়ে এসেছেন। এটা জানার পর খনি কর্তৃপক্ষ ম্যান্ডেলাকে ছাঁটাই করেন।[৪৭] তিনি তার এক আত্মীয়ের সাথে জর্জ গচ টাউনশিপে থাকা শুরু করেন, যিনি তাকে স্থাবর সম্পত্তি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ও আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের কর্মী ওয়াল্টার সিসুলুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। সিসুলু ম্যান্ডেলাকে ইহুদি উদারপন্থী ল্যাজার সিডেল্স্কি পরিচালিত জোহানেসবার্গের আইনি প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেল্স্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসেবে চাকুরি পেতে সহায়তা করেন।[৪৮] এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে তিনি গৌর রাডেবে এবং নাট্য ব্রেগম্যানের সাথে পরিচিত হন। রাডেবে ছিলেন এএনসি ও কমিউনিস্ট পার্টির খোসা সদস্য এবং ব্রেগম্যান ছিলেন একজন ইহুদি কমিউনিস্ট, যিনি ম্যান্ডেলার প্রথম শ্বেতাঙ্গ বন্ধু।[৪৯] ম্যান্ডেলা কমিউনিস্ট পার্টির সমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন, যেখানে তিনি ইউরোপীয়, আফ্রিকান, ভারতীয় ও বিভিন্ন বর্ণের মানুষদের সম-মিশ্রণ দেখে মুগ্ধ হন। তিনি পরবর্তী কালে বলেন তিনি এই দলে যোগ দেননি কারণ এই দলের নাস্তিক্যবাদ তার খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তিনি মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রামের মূল কারণ বর্ণবৈষম্য, শ্রেণিভিত্তিক দ্বন্দ্ব নয়।[৫০] এই সময়ে ম্যান্ডেলা তার উচ্চ শিক্ষা চালু রাখার জন্য ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকার দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের ভর্তি হন।[৫১]
স্বল্প পারিশ্রমিকে চাকরি করা ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের উত্তরের দিকের শহর আলেক্সান্দ্রাতে এক খোমা পরিবারের বাড়িতে একটি কক্ষে বাস করতেন। দারিদ্রে জর্জরিত এবং অপরাধ ও দূষণেরঙ্গেই শহরটি ম্যান্ডেলার মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল।[৫২] দারিদ্রপীড়িত হওয়া স্বত্বেও অল্প কিছুদিনের জন্য একজন সোয়াজি তরুণীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল।[৫৩] অর্থ সঞ্চয় ও জোহানেসবার্গের নিকটে থাকার লক্ষ্যে তিনি ভিটভাটারস্র্যান্টে নেটিভ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন গোত্রের খনিকর্মীদের সাথে বসবাস শুরু করেন। এই প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রধান ব্যক্তিবর্গ আসতেন, এরই ফলে তিনি একবার বসতোল্যান্ডের রানীর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন।[৫৪] ১৯৪১ সালের শেষভাগে জোঙ্গিতাবা জোহানেসবার্গে আসেন এবং থেম্বুল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার পূর্বে তিনি ম্যান্ডেলাকে পালিয়ে আসার জন্য ক্ষমা করে দেন। থেম্বুল্যান্ডে যাওয়ার পর ১৯৪২ সালের শীতকালে তিনি মারা যান। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস শেষকৃত্যের একদিন পরে সেখানে পৌঁছান।[৫৫] ১৯৪৩ সালের শুরুতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গে ফিরে আসেন এবং থেম্বুল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলর হওয়ার পরিবর্তে আইনজীবী হিসেবে তার রাজনৈতিক পথ অনুসরণ করেন।[৫৬] তিনি এই প্রসঙ্গে পরবর্তী কালে বলেন যে তিনি কোন আগমন বার্তা পাননি, কিন্তু তিনি নিজেকে এই কাজ জড়িয়ে ফেলেন এবং অন্য কিছু করতে পারতেন না বলে মনে করেন।[৫৭]
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
সম্পাদনাআইন অধ্যয়ন ও এএনসি ইয়ুথ লিগ: ১৯৪৩-১৯৪৯
সম্পাদনাম্যান্ডেলা ভিটভাটারস্র্যান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। এখানে তিনিই একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বর্ণবাদের শিকার হন। এখানে উদারপন্থী ও কমিউনিস্ট ইউরোপীয়, ইহুদি ও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, তাদের মধ্যে ছিলেন জো স্লোভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফার্স্ট।[৫৮] পরবর্তী কালে এই বন্ধুরা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশ নেন। রাজনীতির সাথে অধিকতর সম্পৃক্ত হয়ে ম্যান্ডেলা ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘটে যোগ দেন।[৫৯] আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনি ওয়াল্টার সিসুলুর দ্বারা প্রভাবিত হন এবং তার পুরনো বন্ধু অলিভার টাম্বোসহ অন্যান্য সক্রিয় কর্মীদের নিয়ে সিসুলুর ওরল্যান্ডোর বাড়িতে সময় কাটাতেন।[৬০] ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান জাতীয়তাবাদের "আফ্রিকানিস্ট" শাখার সাথে সম্পৃক্ত এএনসির সদস্য অ্যান্টন লেম্বেডের সাথে সাক্ষাৎ করেন। আফ্রিকান জাতীয়তাবাদ উপনিবেশিকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বা কমিউনিস্টদের সাথে সম্পৃক্ততার ঘোর বিরোধী ছিল।[৬১] কৃষ্ণাঙ্গের বাইরে ও কমিউনিস্টদের সাথে তার বন্ধুত্ব থাকা স্বত্ত্বেও ম্যান্ডেলা লেম্বেডের মতাদর্শকে গ্রহণ করেন এবং মনে করেন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের পুরোপুরিভাবে স্বাধীন হতে হবে।[৬২] তাদের বশ্যতা স্বীকারের বিপরীতে আফ্রিকানদের গণ-আন্দোলনের জন্য তরুণ শাখার গুরুত্ব অনুধাবণ করে এএনসির সভাপতি আলফ্রেড বিটিনি জুমার সাথে আলোচনা করতে ম্যান্ডেলা একটি প্রতিনিধি দলের সাথে জুমার সোফিয়াটাউনের বাড়িতে যান। ১৯৪৪ সালের পুণ্য রবিবারে বান্টু মেন্স সোশ্যাল সেন্টারে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হন লেম্বেড এবং ম্যান্ডেলা এই দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন।[৬৩]
সিসুলুর বাড়িতে ম্যান্ডেলা ইভলিন মেসের সাথে পরিচিত হন। মেস ছিলেন প্রশিক্ষণাধীন নার্স ও এএনসি কর্মী। তিনি ট্রান্সকেইয়ের এংকোবোর থেকে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে অচিরেই সম্পর্ক তৈরি হয় এবং ১৯৪৪ সালের অক্টোবরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শুরুতে তারা মেসের এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। পরে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের গোড়ার দিকে অরল্যান্ডো শহরে একটি ভাড়া বাড়িতে চলে যান।[৬৫] তাদের প্রথম সন্তান, মাদিবা "থেম্বি" থেম্বেকিলে, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে জন্মগ্রহণ করে। এরপর ১৯৪৭ সালে তাদের কন্যা, মাকাজিউই, জন্মগ্রহণ করে, কিন্তু মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মাত্র নয় মাস বয়সে মারা যায়।[৬৬] ম্যান্ডেলা তার মাতা ও বোন লিবিকে তার সাথে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানান।[৬৭]
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ম্যান্ডেলা অসুস্থ লেম্বেডকে দেখতে হাসপাতালে যান। লেম্বেড সেখানে মারা যান। ম্যান্ডেলা এএনসি ইয়ুথ লিগের সভাপতি হন। পিটার ম্দা কমিউনিস্ট ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যতীত অন্যদের সাথে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।[৬৮] ম্যান্ডেলা ম্দার এই প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানান এবং ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এএনসি ইয়ুথ লিগ থেকে কমিউনিস্টদের বহিষ্কার করার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। তার মতে কমিউনিস্টদের মতাদর্শ ছিল অ-আফ্রিকান।[৬৯] ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসির ট্রান্সভাল প্রদেশ শাখার নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত হন এবং আঞ্চলিক সভাপতি সি. এস. রামোহানোর অধীনে দায়িত্ব পালন করেন। যখন রামোহানো কমিটির বিরুদ্ধে গিয়ে ভারতীয় ও কমিউনিস্টদের সহযোগিতার ইচ্ছাপোষণ করেন, তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা সদস্যদের মধ্যে ম্যান্ডেলা অন্যতম ছিলেন।[৭০]
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ নির্বাচনে কেবল শ্বেতাঙ্গদের ভোট দেওয়ার অনুমতি ছিল। দানিয়েল ফ্রঁসোয়া মালানের নেতৃত্বে আফ্রিকানদের নিয়ন্ত্রিত হেরেনিজ নাসিওনালে পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করে। তারা আফ্রিকানার পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে ন্যাশনাল পার্টি গঠন করে। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার পক্ষপাতী ছিল।[৭১][৭২] ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এই সম্মেলনে মুক্তি সনদ প্রণয়ন করা হয়, যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি।[৭৩][৭৪] এএসনিতে ম্যান্ডেলার প্রভাব আরও বাড়তে থাকলে তিনি ও তার দলের সদস্যরা সরাসরি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় হয়ে পড়েন। সেই কার্যাবলির মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয় সম্পদ্রায়ের কৌশল অনুসারে বর্জন ও ধর্মঘট ডাকা। জুমা এইসব কার্যক্রমকে সমর্থন দেননি এবং তাকে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। জেমস মরোকা তার স্থলাভিষিক্ত হন এবং বিপ্লবী নির্বাহী সদস্য হিসেবে যুক্ত হন সিসুলু, ম্দা, ট্যাম্বো, ও গডফ্রি পিটজে।[৭৫] এই সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠায় ম্যান্ডেলা তৃতীয় বারের মত ভিটভাটারস্র্যান্টে শেষ বর্ষে অকৃতকার্য হন। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেন।[৭৬]
প্রকাশ্যে বিরোধিতা ও এএনসির সভাপতিত্ব: ১৯৫০-১৯৫৪
সম্পাদনাম্যান্ডেলা ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)-এর জাতীয় নির্বাহী হিসেবে জুমার স্থলাভিষিক্ত হন,[৭৮] এবং একই বছর এএনসির যুব লীগের জাতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।[৭৯] মার্চ মাসে জোহানেসবার্গে মুক্ত আলোচনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আফ্রিকান, ভারতীয় ও কমিউনিস্ট কর্মীরা একত্রিত হয়ে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন ও শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যালঘু আইনের বিরুদ্ধে মে দিবসের সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ম্যান্ডেলা এই ধর্মঘটের বিরোধিতা করেন, কারণ এটি বিভিন্ন উপজাতির সংমিশ্রণে ডাকা এবং এএনসির নেতৃত্বে ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকেরা এতে অংশ নেয়, ফলে পুলিশি দমন-পীড়ন বেড়ে যায় এবং সকল প্রকার বিপ্লবী দলকে প্রতিহত করতে কমিউনিজম দমন আইন, ১৯৫০ চালু করা হয়।[৮০] ১৯৫১ সালে এএনসির জাতীয় সম্মেলনে তিনি জাতিগত সম্মিলিত দল গঠনের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদর্শন করেন, তবুও সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।[৮১]
এরপর ম্যান্ডেলা লেম্বেডের আফ্রিকানবাদের ধারণা বাতিল করেন এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বহু-উপজাতীয় দলের ধারণাটি গ্রহণ করেন।[৮২] তার বন্ধু মোজেস কোটানে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন থেকে অনুপ্রাণিত হয়, কমিউনিজমের প্রতি তার ভুল ধারণা ভাঙ্গে এবং তিনি কার্ল মার্ক্স, ভ্লাদিমির লেনিন, ও মাও জেদঙের রচনাবলি পড়তে শুরু করেন। ফলে তিনি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের জন্য মার্ক্সবাদী দর্শন গ্রহণ করেন।[৮৩] কমিউনিজম সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি পরবর্তী কালে বলেন শ্রেণিহীন সমাজের ধারণাটি তাকে আকৃষ্ট করে, যা তার কাছে ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান সংস্কৃতির সমতুল্য বলে মনে হয়।[৮৪] ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ম্যান্ডেলা এইচ.এম. ব্যাজনার ল ফার্মে কাজ শুরু করেন, যার মালিক ছিলেন একজন কমিউনিস্ট।[৮৫] কাজের প্রতি তার দায়িত্ববোধ ও রাজনৈতিক কার্যাবলির কারণে তিনি তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারতেন না।[৮৬]
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে এএনসি ভারতীয় ও কমিউনিস্টদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রকাশ্যে বিরোধিতার প্রস্তুতি নেয়, এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের লক্ষ্যে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বোর্ড গঠন করে। এই আন্দোলনের মূলত মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিল। কয়েকজন এই দর্শনকে নৈতিক বিবেচনায় সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু ম্যান্ডেলা এই দর্শনকে প্রায়োগিক বলে গণ্য করেন।[৮৭][৮৮] ২২শে জুন ডারবানে এক মিছিলে ম্যান্ডেলা ১০,০০০ লোকের এক সমাবেশ সহযোগে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং অল্প সময়ের জন্য মার্শাল স্কয়ার কারাগারে বন্দি রাখা হয়।[৮৯] এই সকল কার্যাবলি ম্যান্ডেলাকে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে খ্যাতি পাইয়ে দেয়।[৯০] আরও বিক্ষোভের পর এএনসির সদস্য ২০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বৃদ্ধি পায়। সরকার গণ-গ্রেফতার শুরু করে এবং মার্শাল আইন জারি অনুমতি সাপেক্ষে জন-নিরাপত্তা আইন, ১৯৫৩ চালু করে।[৯১] মে মাসে কর্তৃপক্ষ ট্রান্সভাল এএনসির সভাপতি জে. বি. মার্কসের জনসম্মুখে উপস্থিতি নিষিদ্ধ করে দেয়। তার পদে থেকে কাজ বজায় রাখতে না পারায় তিনি ম্যান্ডেলাকে তার উত্তরসূরি হিসেবে সুপারিশ করেন। আফ্রিকানপন্থীরা তার প্রার্থিতার বিরোধিতা করলেও ম্যান্ডেলা অক্টোবরে অঞ্চলিক সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।[৯২] বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উগ্র আফ্রিকানপন্থী উপদলের কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীরা বাধা দিতে শুরু করে। আফ্রিকানবাদীরা বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে চরমপন্থী আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিল।[৯৩]
গণ-কংগ্রেস ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা: ১৯৫৫-১৯৬১
সম্পাদনা১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের জনগণের সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এএনসি-র নেতা অ্যালবার্ট লুথুলি, অলিভার ট্যাম্বো ও ওয়াল্টার সিসুলু অনুভব করেন, আফ্রিকানিস্টরা এই আন্দোলনে খুব তাড়াহুড়া করছে, আর তাদের নেতৃত্বকে অস্বীকার করছে।[৯৩] তার বন্ধু আইনজীবী অলিভার টাম্বো মিলে ম্যান্ডেলা অ্যান্ড টাম্বো নামের আইনি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। এই প্রতিষ্ঠানটি উকিল নিয়োগ করার মতো টাকা নেই, এমন দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের স্বল্প মূল্যে আইনগত সাহায্য প্রদান করত।[৯৪] দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার অপরাধে গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামি নির্দোষ প্রমাণিত হন।[৯৫] ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলা এএনসি-র সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ে (অর্থাৎ "দেশের বল্লম", সংক্ষিপ্ত নাম MK)-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।[৯৬] তিনি বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলা পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না-হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ার জন্যও ম্যান্ডেলা পরিকল্পনা করেন।[৯৭] এছাড়া ম্যান্ডেলা বিদেশে এমকে-র জন্য অর্থ জোগাড় ও সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ শুরু করেন।[৯৭]
ম্যান্ডেলার সহকর্মী উলফি কাদেশ ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র আন্দোলনের ব্যাপারে বলেন, "When we knew that we [sic] going to start on 16 December 1961, to blast the symbolic places of apartheid, like pass offices, native magistrates courts, and things like that ... post offices and ... the government offices. But we were to do it in such a way that nobody would be hurt, nobody would get killed."[৯৮] উলফির ব্যাপারে ম্যান্ডেলা বলেন, "His knowledge of warfare and his first hand battle experience were extremely helpful to me."[৯৯]
ম্যান্ডেলা নিজে তার এই সশস্ত্র আন্দোলনকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিতান্তই শেষ চেষ্টা বলে অভিহিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন সফল হবেনা বলে তিনি উপলব্ধি করেন এবং এ জন্যই সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নেন।[৯৯][১০০]
পরবর্তীকালে বিশ শতকের আটের দশকে এমকে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। এতে অনেক বেসামরিক লোক হতাহত হন।[১০১] ম্যান্ডেলা পরে স্বীকার করেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে গিয়ে এএনসি অনেক সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। বর্ণবাদের অবসানের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (সত্য ও আপোস কমিশন)-এর রিপোর্ট থেকে এএনসি-র অনেক নেতা এই বিষয়ের তথ্য অপসারণ করতে চেয়েছিল--ম্যান্ডেলা এর তীব্র সমালোচনা করেন।[১০২]
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ও এএনসি কর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা থেকে নিষিদ্ধ ছিল। কেবলমাত্র নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তাদের আসার অনুমতি ছিল। এর কারণ ছিল ম্যান্ডেলার ষাটের দশকের সশস্ত্র আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন সরকার ম্যান্ডেলা ও এএনসিকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করেছিল। ২০০৮ খ্রস্টাব্দের জুলাইতে এসেই কেবল ম্যান্ডেলাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রণীত সন্ত্রাসবাদীদের তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।[১০৩][১০৪]
কারাবাস
সম্পাদনাগ্রেফতার ও রিভোনিয়ার মামলা: ১৯৬২-১৯৬৪
সম্পাদনাপ্রায় ১৭ মাস ধরে ফেরারি থাকার পর ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই আগস্ট পুলিশ তাকে ও সহ-বিপ্লবী সেসিল উইলিয়ামসকে হোউইকের নিকটবর্তী স্থান থেকে গ্রেফতার করে।[১০৫] অনেক এমকে সদস্য সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে কর্তৃপক্ষ ম্যান্ডেলা সম্পর্কে ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, যদিও ম্যান্ডেলা এই ধারণাগুলো তেমন বিশ্বাস করেননি।[১০৬] পরবর্তী সময়ে সাবেক মার্কিন কুটনীতিক ডোনাল্ড রিকার্ড প্রকাশ করে যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি কমিউনিস্টদের সাথে ম্যান্ডেলার সহযোগিতার আশঙ্কা করে ম্যান্ডেলার গতিবিধি ও ছদ্মবেশ সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছিল।[১০৭][১০৮][১০৯][১১০] তাকে জোহানেসবার্গের দুর্গে আটক রাখা হয়।[১১১] জোহানেসবার্গের মার্শাল স্কোয়ার কারাগারে কারারুদ্ধ ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে শ্রমিক ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বেআইনিভাবে দেশের বাইরে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ম্যান্ডেলাকে এই দুই অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর দু-বছর পর ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে এএনসি-র সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্বদানের অভিযোগ আনা হয় ও শাস্তি দেওয়া হয়।[১১২]
ম্যান্ডেলা কারাগারে বন্দি থাকার সময়ে পুলিশ এএনসি-র প্রথম সারির নেতাদের ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জুলাই জোহানেসবার্গের কাছের রিভোনিয়ার লিলেসলিফ ফার্ম থেকে গ্রেপ্তার করে। 'রিভোনিয়ার মামলা' নামে খ্যাত এই মামলায় ম্যান্ডেলাকেও অভিযুক্ত করা হয়। সরকারের প্রধান আইনজীবী ডক্টর পারসি ইউটার ম্যান্ডেলাসহ এএনসি-র নেতাদের অন্তর্ঘাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়।[১১৩] ম্যান্ডেলা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রের দালাল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য আনা দেশদ্রোহিতার অভিযোগটি ম্যান্ডেলা অস্বীকার করেন।[১১৩]
প্রিটোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ম্যান্ডেলা ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল তারিখে তার জবানবন্দি দেন। ম্যান্ডেলা ব্যাখ্যা করেন, কেনো এএনসি সশস্ত্র আন্দোলন বেছে নিয়েছে।[১১৪] ম্যান্ডেলা বলেন যে, বহু বছর ধরে এএনসি অহিংস আন্দোলন চালিয়ে এসেছিল। কিন্তু শার্পভিলের গণহত্যার পর তারা অহিংস আন্দোলনের পথ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।[১১৫] এই গণহত্যা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারকে অবজ্ঞা করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা, জরুরি অবস্থার ঘোষণা এবং এএনসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে ম্যান্ডেলা ও তার সহযোদ্ধারা অন্তর্ঘাতমূলক সশস্ত্র সংগ্রামকেই বেছে নেন। তাদের মতে সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো কিছুই হত বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের নামান্তর।[১১৫] ম্যান্ডেলা আদালতে আরো বলেন, ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে তারা উমখোন্তো উই সিযওয়ে অর্থাৎ এমকে-এর ম্যানিফেস্টো লেখেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য হিসেবে তারা বেছে নেন সশস্ত্র সংগ্রাম। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশি বিনিয়োগকে তারা নিরুৎসাহিত করবেন, আর এর মাধ্যমে বর্ণবাদী ন্যাশনাল পার্টির সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন।[১১৬] জবানবন্দির শেষে ম্যান্ডেলা বলেন, "During my lifetime I have dedicated myself to the struggle of the African people. I have fought against white domination, and I have fought against black domination. I have cherished the ideal of a democratic and free society in which all persons live together in harmony and with equal opportunities. It is an ideal which I hope to live for and to achieve. But if needs be, it is an ideal for which I am prepared to die."[১০০]
ম্যান্ডেলার পক্ষে ব্র্যাম ফিশার, ভার্নন বেরাঞ্জ, হ্যারি শোয়ার্জ, জোয়েল জফ, আর্থার চাসকালসন এবং জর্জ বিজোস ওকালতি করেন।[১১৭] মামলার শেষভাগে হ্যারল্ড হ্যানসন আইনি সহায়তার জন্য যোগ দেন। [১১৮] কিন্তু মামলায় রাস্টি বার্নস্টেইন ছাড়া অন্য সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন দেওয়া রায়ে ফাঁসির বদলে তাদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। [১১৮]
রবেন দ্বীপ: ১৯৬৪-১৯৮২
সম্পাদনাম্যান্ডেলার কারাবাস শুরু হয় রবেন দ্বীপের কারাগারে। এখানে তিনি তার ২৭ বছরের কারাবাসের প্রথম ১৮ বছর কাটান।[১১৯] জেলে থাকার সময়ে বিশ্বজুড়ে তার খ্যাতি বাড়তে থাকে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন।[২] সশ্রম কারাদণ্ডের অংশ হিসেবে রবেন দ্বীপের কারাগারে ম্যান্ডেলা ও তার সহবন্দিরা একটি চুনাপাথরের খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হন।[১২০] কারাগারের অবস্থা ছিল বেশ শোচনীয়। কারাগারেও বর্ণভেদ প্রথা চালু ছিলো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্দিদের সবচেয়ে কম খাবার দেয়া হত।[১২১] সাধারণ অপরাধীদের থেকে রাজনৈতিক বন্দিদের আলাদা রাখা হত। রাজনৈতিক বন্দিরা সাধারণ অপরাধীদের চেয়েও কম সুযোগসুবিধা পেত।[১২২] ম্যান্ডেলা তার জীবনীতে লিখেছেন, তাকে ডি-গ্রুপের বন্দি হিসেবে গণ্য করা হত, অর্থাৎ সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকায় তাকে রাখা হয়েছিল। তাকে প্রতি ৬ মাসে একটিমাত্র চিঠি দেওয়া হত এবং একজনমাত্র দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হত।[১২৩] ম্যান্ডেলাকে লেখা চিঠি কারাগারের সেন্সর কর্মীরা অনেকদিন ধরে আটকে রাখত। চিঠি ম্যান্ডেলার হাতে দেওয়ার আগে তার অনেক জায়গাই কালি দিয়ে অপাঠযোগ্য করে দেওয়া হত।[৯৯]
কারাগারে থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[১২৪] পরবর্তীকালে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তাকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রিন্সেস অ্যানের কাছে সেই নির্বাচনে হেরে যান।[১২৪]
দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা বিভাগের গুপ্তচর গর্ডন উইন্টার ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে আত্মজীবনী লেখেন, যার শিরোনাম ছিল Inside BOSS।[১২৫] এই আত্মজীবনীতে উইন্টার দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের একটি গোপন ষড়যন্ত্রের কথা ফাঁস করে দেন। এই ষড়যন্ত্র অনুসারে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে কারাগারে হামলা চালাবার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। উইন্টারের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার গুপ্তচরেরা এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয় ও মদত দেয়। উদ্দেশ্য ছিল, কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে পালাতে দেওয়া, যাতে তাকে ধাওয়া করে পুনরায় গ্রেপ্তারের নামে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা যায়। এই ষড়যন্ত্রের খবর ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলায় তা নস্যাৎ হয়ে যায়।[১২৬]
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলস্মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ম্যান্ডেলার সঙ্গে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা ওয়াল্টার সিসুলু, অ্যান্ড্রু ম্লাগেনি, আহমেদ কাথরাদা এবং রেমন্ড ম্লাবাকেও সেখানে নেওয়া হয়।[১২৩] ধারণা করা হয়, রবেন দ্বীপে কারারুদ্ধ নতুন প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর ম্যান্ডেলা ও অন্যান্য নেতার প্রভাব কমানোর জন্যই এটা করা হয়। তরুণ কর্মীদের ওপর ম্যান্ডেলা ও তার সহযোদ্ধাদের এই প্রভাবকে ব্যঙ্গ করে 'ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয়' বলা হত।[১২৭] তবে ন্যাশনাল পার্টির তদানীন্তন মন্ত্রী কোবি কোয়েটসির মতে ম্যান্ডেলাকে স্থানান্তর করার মূল লক্ষ্য ছিল ম্যান্ডেলার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গোপন বৈঠক ও আলোচনার ব্যবস্থা করা।[১২৮]
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি বোথা পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শর্তটি ছিল, ম্যান্ডেলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করতে হবে।[১২৯] কোয়েটসিসহ অন্যান্য মন্ত্রী অবশ্য বোথার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা মত প্রকাশ করেন যে, ম্যান্ডেলা ব্যক্তিগত কারামুক্তির লোভে পড়ে কখনোই নিজের সংগঠনকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে আনবেননা।[১৩০] ম্যান্ডেলা আসলেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তিনি তার মেয়ে জিন্দজির মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন, যাতে তিনি বলেন,
“ | "What freedom am I being offered while the organisation of the people remains banned? Only free men can negotiate. A prisoner cannot enter into contracts." (আমাকে মুক্ত করার জন্য দেওয়া এ কেমনতরো প্রস্তাব, যেখানে জনগণের সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে রাখা হচ্ছে? কেবল মুক্ত মানুষই আলোচনায় বসতে পারে। বন্দিরা কখনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারেনা।)[১২৮] | ” |
ম্যান্ডেলা ও ন্যাশনাল পার্টি সরকারের মধ্যকার প্রথম আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। কোবি কোয়েটসি ম্যান্ডেলার সঙ্গে কেপ টাউনের ভোক্স হাসপাতালে দেখা করেন। ম্যান্ডেলা তখন প্রস্টেট গ্রন্থির শল্য চিকিৎসা শেষে আরোগ্য লাভ করছিলেন।[১৩১] পরের চার বছর ধরে ম্যান্ডেলার সঙ্গে সরকার একাধিকবার আলোচনায় বসে। কিন্তু এসব আলোচনায় বিশেষ কিছু অগ্রগতি হয়নি।[১২৮]
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্যান্ডেলাকে ভিক্টর ভার্সটার কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়। মুক্তির আগে পর্যন্ত ম্যান্ডেলা এখানেই বন্দি ছিলেন। আস্তে আস্তে তার ওপর কড়াকড়ি কমানো হয় এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। ম্যান্ডেলার ছাত্রজীবনের বন্ধু হ্যারি শোয়ার্জ এসময় তার সঙ্গে দেখা করেন।
ম্যান্ডেলার কারাবন্দিত্বের সময়ে তার মুক্তির জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য এই আন্দোলনের বহুল ব্যবহৃত শ্লোগানটি ছিল, Free Nelson Mandela! (ম্যান্ডেলার মুক্তি চাই)[১৩২] ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি বোথা হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার স্থলাভিষিক্ত হন ফ্রেডেরিক উইলেম ডি ক্লার্ক।[১৩৩] রাজনৈতিক এই পটপরিবর্তনের পরেই ডি ক্লার্ক ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।[১৩৪]
ম্যান্ডেলার কারাবন্দিত্বের সময়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির দূতেরা বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে রবেন দ্বীপ ও পোলস্মুর কারাগারে দেখা করেন। এই সাক্ষাতগুলো সম্পর্কে ম্যান্ডেলা বলেন, "to me personally, and those who shared the experience of being political prisoners, the Red Cross was a beacon of humanity within the dark inhumane world of political imprisonment." (ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এবং আমার মতো অন্য রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য রেড ক্রস ছিল কারাগারের অমানুষিক নিষ্ঠুর অন্ধকার জগতে আলোর দিশা।)[১৩৫][১৩৬]
মুক্তি
সম্পাদনা১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসেরসহ অন্যান্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, ম্যান্ডেলাকে অচিরেই মুক্তি দেওয়া হবে।[১৩৭] ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে ম্যান্ডেলাকে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মুক্তি দেওয়া হয়। ম্যান্ডেলার কারামুক্তির ঘটনাটি সারা বিশ্বে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।[১৩৮]
মুক্তির দিনে ম্যান্ডেলা জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন।[১৩৯] এই ভাষণে তিনি শান্তি রক্ষা করা ও দেশের শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আহবান জানান। একই সঙ্গ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। এই বিষয়ে তিনি বলেন,
“ | "our resort to the armed struggle in 1960 with the formation of the military wing of the ANC (Umkhonto we Sizwe) was a purely defensive action against the violence of apartheid. The factors which necessitated the armed struggle still exist today. We have no option but to continue. We express the hope that a climate conducive to a negotiated settlement would be created soon, so that there may no longer be the need for the armed struggle." (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আমরা সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করতে বাধ্য হই। বর্ণবাদের হিংস্রতার হাত থেকে আত্মরক্ষার খাতিরেই আমরা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখান্তো উই সিযওয়ে গঠন করেছিলাম। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করার পেছনের কারণগুলো এখনো রয়ে গিয়েছে। তাই এই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো পথ নেই। আমরা আশা করি, শান্তি আলোচনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অচিরেই সৃষ্টি হবে এবং আমাদের আর সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দরকার হবেনা।) | ” |
ম্যান্ডেলা আরো বলেন, তার মূল লক্ষ্য হল সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য শান্তি নিয়ে আসা, আর স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করা।[১৩৯]
শান্তি আলোচনা
সম্পাদনাকারামুক্তির পর ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত তিনি এই দলের নেতা ছিলেন। এই সময়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এই শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[১৪০]
আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে এই দলের প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে ম্যান্ডেলাকে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। ম্যান্ডেলার পুরোনো বন্ধু ও সহকর্মী অলিভার টাম্বো ম্যান্ডেলার বন্দিত্বের সময়ে প্রবাসে এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে টাম্বোকে দলের জাতীয় সভাপতি নির্বাচন করা হয়।[১৪১]
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য ম্যান্ডেলা এবং রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লু ডি ক্লার্ককে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়। তবে সব সময় এই শান্তি আলোচনা নির্বিঘ্নে চলেনি। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে একবার মতানৈক্য হলে ম্যান্ডেলা রেগে গিয়ে ডি ক্লার্ককে অবৈধ সরকারের নেতা বলে অভিহিত করেছিলেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে বৈপাটোংয়ের গণহত্যার ঘটনা ঘটলে আলোচনা ভেস্তে যায়। ম্যান্ডেলা সেসময় ডি ক্লার্কের সরকারকে এই গণহত্যায় জড়িত থাকার জন্য অভিযোগ করেন।[১৪২] তবে এর ৩ মাস পর ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে বিসো গণহত্যা ঘটলে আবার আলোচনা শুরু হয়। দুই পক্ষই উপলব্ধি করেন যে, শান্তি আলোচনাই হল শান্তি ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা ক্রিস হানিকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।[১৪৩] ম্যান্ডেলা এসময় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানান। সেসময় ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেননা। তা সত্ত্বেও ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রপতিসুলভ এই ভাষণে বলেন,
“ | "tonight I am reaching out to every single South African, black and white, from the very depths of my being. A white man, full of prejudice and hate, came to our country and committed a deed so foul that our whole nation now teeters on the brink of disaster. A white woman, of Afrikaner origin, risked her life so that we may know, and bring to justice, this assassin. The cold-blooded murder of Chris Hani has sent shock waves throughout the country and the world. ...Now is the time for all South Africans to stand together against those who, from any quarter, wish to destroy what Chris Hani gave his life for – the freedom of all of us".[১৪৪] | ” |
ম্যান্ডেলার এই আহ্বানে কাজ হয়। দেশের কিছু অংশে দাঙ্গা হলেও মোটের ওপর শান্তি বজায় থাকে। শান্তি আলোচনা আবার জোরদারভাবে শুরু হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল তারিখে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।[১২৮]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাম্যান্ডেলা তিনবার বিয়ে করেন। তার ৬টি সন্তান, ২০ জন নাতি-নাতনি এবং অনেক প্রপৌত্র রয়েছে। থেম্বুর উপজাতীয় নেতা মান্দলা ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি।[১৪৫]
প্রথম বিয়ে
সম্পাদনাম্যান্ডেলার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভিলিন ন্তোকো মাসে। ম্যান্ডেলার মতোই তারও বাড়ি ছিল ট্রান্সকেই অঞ্চলে। জোহানেসবার্গে তাদের দুজনের পরিচয় হয়।[১৪৬] ১৩ বছর সংসার করার পর ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ম্যান্ডেলার অনুপস্থিতি এবং সংসার ফেলে রাজনৈতিক আন্দোলনে ম্যান্ডেলার বেশি সময় দেওয়াই ছিলো এই বিয়ে ভাঙার কারণ। তার ওপর ইভিলিন ছিলেন খ্রিস্টধর্মের জেহোভা'স উইটনেস মতাদর্শের অনুসারী, যাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ছিল।[১৪৭] Evelyn Mase died in 2004.[১৪৮] ইভিলিন ও ম্যান্ডেলার দুই পুত্র সন্তান (মাদিবা থেম্বেকিল (থেম্বি) (১৯৪৬-১৯৬৯) এবং মাকাগাথ ম্যান্ডেলা (১৯৫০-২০০৫)) এবং দুই কন্যা সন্তান (দুজনের নামই মাকাযিওয়ে ম্যান্ডেলা, জন্ম ১৯৪৭ ও ১৯৫৩ সালে)। প্রথম কন্যা সন্তানটি ৯ মাস বয়সে মারা যায়। দ্বিতীয় কন্যার নামটি ম্যান্ডেলা প্রথম কন্যার নামানুসারেই রাখেন।[১৪৯] ম্যান্ডেলার এই চারজন সন্তানই ওয়াটারফোর্ড কামহ্লাভা এলাকার ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজে পড়াশোনা করে।[১৫০] ম্যান্ডেলার জ্যেষ্ঠ পুত্র থেম্বি ২৫ বছর বয়সে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এসময় ম্যান্ডেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ম্যান্ডেলাকে তার পুত্রের অন্তেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে দেয়নি।[১৫১] মাকাতাথ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ৫৪ বছর বয়সে এইডসে মারা যান। [১৫২]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাআরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "নেলসন ম্যান্ডেলা আর নেই"। মতিউর রহমান। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ ক খ "Nelson Mandela - Biography"। Nobelprize.org। The Nobel Foundation। ১৯৯৩। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০০৯।
- ↑ "South Africa: Celebrating Mandela At 90"। অলআফ্রিকা। ১৭ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৩; বোয়েহমার ২০০৮, p. ২১; স্মিথ ২০১০, p. ১৭; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ১৬; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৩; স্মিথ ২০১০, p. ১৭; মেরেডিথ ২০১০, p. ২; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৪; লজ ২০০৬, p. ২; স্মিথ ২০১০, p. ১৬.
- ↑ কোপকাইন্ড, অ্যান্ড্রু (১৬ মার্চ ১৯৯০)। "Book Review - Higher than Hope"। এন্টারটেইনমেন্ট উয়িকলি। টাইম ইঙ্ক.। ২২ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ মির ১৯৮৮, p. ৩; গিলিনো & রো ২০০২, p. ২৩; মেরেডিথ ২০১০, p. ১.
- ↑ গিলিনো & রো ২০০২, p. ২৬.
- ↑ গিলিনো & রো ২০০২, p. ২৬; লজ ২০০৬, p. ১; মাফেলা ২০০৮, pp. ১০২–১০৩.
- ↑ গিলিনো & রো ২০০২, p. ১৩; স্মিথ ২০১০, p. ১৯.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৮–৯; স্মিথ ২০১০, pp. ২১–২২; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৪.
- ↑ ক খ গ Aikman (2003), pp 70–71
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৮; মেরেডিথ ২০১০, p. ১.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ১৫; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৭–৮; স্মিথ ২০১০, pp. ১৬, ২৩-২৪; মেরেডিথ ২০১০, pp. ১, ৩; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৪.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, পৃ. ১৯।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৫; মেরেডিথ ২০১০, p. ৩.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ১৬; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১২; স্মিথ ২০১০, pp. ২৩-২৪; মেরেডিথ ২০১০, pp. ২, ৪.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৮–১৯; লজ ২০০৬, p. ৩; স্মিথ ২০১০, p. ২৪; মেরেডিথ ২০১০, pp. ২, ৪–৫; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৫, ৭; ফরস্টার ২০১৪, pp. ৯১-৯২.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ২০; লজ ২০০৬, p. ৩; স্মিথ ২০১০, p. ২৫; মেরেডিথ ২০১০, p. ৫; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৭.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, পৃ. ৮, ২০।
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ১৭; মির ১৯৮৮, p. ৪; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ২২–২৫; লজ ২০০৬, p. ৩; স্মিথ ২০১০, pp. ২৬–২৭; মেরেডিথ ২০১০, p. ৫; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৭-৯.
- ↑ মির ১৯৮৮, p. ৭; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ২৭–২৯; মেরেডিথ ২০১০১, pp. ৮-৯.
- ↑ মির ১৯৮৮, p. ৭; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ২৫; স্মিথ ২০১০, p. ২৭; মেরেডিথ ২০১০, p. ৯.
- ↑ মির ১৯৮৮, pp. ১১–১২; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৩৬-৪২; লজ ২০০৬, p. ৩; স্মিথ ২০১০, p. ১৮; মেরেডিথ ২০১০, p. ৮.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৪৩; মেরেডিথ ২০১০, p. ১১.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ১৭; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৩৬-৪২; লজ ২০০৬, p. ৮; স্মিথ ২০১০, pp. ২৯–৩১; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৯–১১; স্যাম্পসন ২০১১, p. ১৪.
- ↑ ক খ "Mandela celebrates 90th birthday"। BBC। ১৭ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৪৫–৪৭; স্মিথ ২০১০, pp. ২৭, ৩১; মেরেডিথ ২০১০, pp. ১২–১৩; স্যাম্পসন ২০১১, p. ১৫.
- ↑ স্যাম্পসন ২০১১, পৃ. ১৭।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৫২; স্মিথ ২০১০, pp. ৩১–৩২; মেরেডিথ ২০১০, p. ১৪; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ১৭–১৮.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৫৩–৫৪; স্মিথ ২০১০, p. ৩২; মেরেডিথ ২০১০, pp. ১৪–১৫; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ১৮–২১.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৫৬; স্মিথ ২০১০, p. ৩২; মেরেডিথ ২০১০, p. ১৫.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৬২–৬৫; লজ ২০০৬, p. ৯; স্মিথ ২০১০, pp. ৩৩–৩৪; মেরেডিথ ২০১০, pp. ১৫–১৮; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ২১, ২৫.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৬২–৬৩; স্মিথ ২০১০, pp. ৩৩–৩৪; মেরেডিথ ২০১০, pp. ১৭–১৯; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ২৪–২৫.
- ↑ মাফেলা ২০০৮, পৃ. ৯৯-১০৭।
- ↑ ম্যান্ডেলা ২০০৬, পৃ. ১৩।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৬৭–৬৯; স্মিথ ২০১০, p. ৩৪; মেরেডিথ ২০১০, p. ১৮; স্যাম্পসন ২০১১, p. ২৫.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৬৮; লজ ২০০৬, p. ১০; স্মিথ ২০১০, p. ৩৫; মেরেডিথ ২০১০, p. ১৮; স্যাম্পসন ২০১১, p. ২৫.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৬৮; লজ ২০০৬, p. ১০; মেরেডিথ ২০১০, p. ১৮; ফরস্টার ২০১৪, p. ৯৩.
- ↑ স্যাম্পসন ২০১১, পৃ. ২৫।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৭০–৭১; লজ ২০০৬, p. ১১; মেরেডিথ ২০১০, p. ১৯; স্যাম্পসন ২০১১, p. ২৬.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৬, পৃ. ১৮-১৯।
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ২১; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৭৮–৮৬; লজ ২০০৬, pp. ১২–১২; স্মিথ ২০১০, pp. ৩৪–৩৫; মেরেডিথ ২০১০, pp. ১৯–২০; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ২৬–২৭.
- ↑ Mandela 1996, pp. 10, 20.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ২১; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৭৩–৭৬; লজ ২০০৬, p. ১২; স্মিথ ২০১০, pp. ৩৬–৩৯; মেরেডিথ ২০১০, pp. ২০–২২; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ২৭–২৮.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ২৩; মির ১৯৮৮, pp. ২৫–২৬; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৮৯–৯৪; লজ ২০০৬, pp. ১২–১৩; স্মিথ ২০১০, p. ৪০; মেরেডিথ ২০১০, pp. ২৭-২৮; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ২৯-৩০.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৯৬-১০১; লজ ২০০৬, pp. ১৩, ১৯–২১; স্মিথ ২০১০, p. ৪১; মেরেডিথ ২০১০, pp. ২৮-৩০; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৩০-৩১.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১০৪-১০৫; লজ ২০০৬, pp. ২২, ৩১-৩২; স্মিথ ২০১০, pp. ৪৩, ৪৮; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৩১-৩২; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৩২–৩৩.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১০৬; স্মিথ ২০১০, pp. ৪৮-৪৯.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১০০; স্মিথ ২০১০, p. ৪৪; মেরেডিথ ২০১০, p. ৩৩; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৪.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ২৩; মির ১৯৮৮, p. ২৬; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ৯৯, ১০৮–১১০; স্মিথ ২০১০, pp. ৪৪–৪৫; মেরেডিথ ২০১০, p. ৩৩; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৩.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৪৪, pp. ১১৩-১১৬; লজ ২০০৬, p. ২৩; স্মিথ ২০১০, pp. ৪৫-৪৬; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৩.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১১৮-১১৯; লজ ২০০৬, p. ২৪; মেরেডিথ ২০১০, p. ৩৩; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৪.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১১৬-১১৭, ১১৯-১২০; লজ ২০০৬, p. ২২; স্মিথ ২০১০, p. ৪৭; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৩৩–৩৪; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৩.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১২২, ১২৬–১২৭; স্মিথ ২০১০, p. ৪৯; মেরেডিথ ২০১০, p. ৩৪; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৪.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, পৃ. ১৩৫।
- ↑ মির ১৯৮৮, pp. ৩৩–৩৪; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১২৭-১৩১; স্মিথ ২০১০, pp. ৬৪-৬৫; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৩৪-৩৫; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৩৪-৩৫.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১২২-১২৩; লজ ২০০৬, pp. ২৭-২৮; স্মিথ ২০১০, p. ৪৮; মেরেডিথ ২০১০, p. ৪৪; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৭.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৩৬; স্মিথ ২০১০, p. ৫৩; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৩৬, ৪৩.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৩৭-১৩৯; লজ ২০০৬, pp. ৩৩-৩৪; স্মিথ ২০১০, p. ৫৩; মেরেডিথ ২০১০, p. ৪২-৪৩; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৩৮-৩৯.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ৩১; মির ১৯৮৮, pp. ৩৪-৩৫; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৪২-১৪৩; স্মিথ ২০১০, p. ৫৪.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, pp. ২৮-২৯; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৩৯-১৪৩; লজ ২০০৬, p. ৩৫; স্মিথ ২০১০, pp. ৫২–৫৬; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৪৪-৪৬; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৩৯-৪১.
- ↑ স্মিথ ২০১০, পৃ. ইনসেট ছবি।
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ২৪; মির ১৯৮৮, pp. ৩৯-৪০; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৪৪, ১৪৮–১৪৯; লজ ২০০৬, pp. ২৪, ২৫; স্মিথ ২০১০, pp. ৫৯-৬২; মেরেডিথ ২০১০, p. ৪৭; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৬.
- ↑ মির ১৯৮৮, pp. ৪০–৪১; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৪৯, ১৫২; লজ ২০০৬, p. ২৯; স্মিথ ২০১০, pp. ৬০-৬৪; মেরেডিথ ২০১০, p. ৪৮; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৬.
- ↑ মির ১৯৮৮, p. ৪০; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৫০, ২১০; লজ ২০০৬, p. ৩০; স্মিথ ২০১০, p. ৬৭; মেরেডিথ ২০১০, p. ৪৮; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৬.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ৩৬; মির ১৯৮৮, p. ৪৩; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৫৩–১৫৪; স্মিথ ২০১০, p. ৬৬; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৪৮.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৫৪; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৪২.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৫৪–১৫৭; লজ ২০০৬, p. ৩৭; স্মিথ ২০১০, p. ৬৬; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৪৯.
- ↑ "The 1948 election and the National Party Victory"। South African History Online। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ৩৫; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৫৯-১৬২; লজ ২০০৬, pp. ৪১–৪২; স্মিথ ২০১০, pp. ৭০-৭২; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৭৬-৭৮; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৫১-৫২.
- ↑ "The Defiance Campaign"। African National Congress। ৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Congress of the People, 1955"। African National Congress। ৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, pp. ৩৬-৩৭; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৬২–১৬৫; লজ ২০০৬, p. ৪৪; স্মিথ ২০১০, pp. ৭২-৭৩; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৭৮-৭৯; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৫৩-৫৫.
- ↑ স্মিথ ২০১০, pp. ৬৮-৭০; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৩৫.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, পৃ. ২৬।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৬৮; লজ ২০০৬, p. ৪৪; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৫৫-৫৬.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ৪১; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৭৬; লজ ২০০৬, p. ৪৭; স্মিথ ২০১০, p. ৭৮; মেরেডিথ ২০১০১, p. ৮৮; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৬৩-৬৪.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, pp. ৩৮-৪০; মির ১৯৮৮, pp. ৪৮-৪৯; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৬৫–১৬৭; স্মিথ ২০১০, pp. ৭৪-৭৫; মেরিডিথ ২০১০, pp. ৮১-৮৩; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৬১-৬২.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৭৬; স্মিথ ২০১০, p. ৭৮; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৬৩-৬৪.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ৪২; মির ১৯৮৮, p. ৫৫; লজ ২০০৬, p. ৪৮; মেরেডিথ ২০১০, p. ৯৪.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৭৭-১৮২; লজ ২০০৬, pp. ৪৫, ৪৭; স্মিথ ২০১০, pp. ৭৫-৭৬; মেরেডিথ ২০১০, p. ৮৭; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৬৪-৬৫.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, পৃ. ১৭২।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৬৫; লজ ২০০৬, p. ৫৩; স্মিথ ২০১০, p. ৭৭; মেরেডিথ ২০১০, p. ৯২.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ১৭০; স্মিথ ২০১০, p. ৯৪; মেরেডিথ ২০১০, p. ১০৩.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, pp. ৪৪–৪৬; মির ১৯৮৮, pp. ৫৬–৫৮; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৮২–১৮৩; স্মিথ ২০১০, pp. ৭৭, ৮০; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৮৮–৮৯; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৬৬–৬৭.
- ↑ Bhana, Surendra; Vahed, Goolam (২০০৫)। The Making of a Political Reformer: Gandhi in South Africa, 1893–1914। পৃষ্ঠা 149।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৮৩–১৮৮; লজ ২০০৬, p. ৫২, ৫৩; মেরেডিথ ২০১০, pp. ৮৮–৮৯; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৬৯.
- ↑ Lodge 2006, পৃ. 47।
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৮৮–১৯২; স্যাম্পসন ২০১১, p. ৬৮.
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, p. ৫১; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ১৯৪–১৯৫; লজ ২০০৬, p. ৫৪; স্মিথ ২০১০, p. ৮৫; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ৭২–৭৩.
- ↑ ক খ "ANC - Statement to the Truth and Reconciliation Commission"। African National Congress। আগস্ট ১৯৯৬। ১৭ মে ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Callinicos, Luli (২০০৪)। Oliver Tambo: Beyond the Engeli Mountains। New Africa Books। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 0864866666।
- ↑ "Nelson Mandela's Testimony at the Treason Trial 1956-60"। African National Congress। ৪ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Umkhonto is Born"। African National Congress। ৮ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ Whittaker, David J. (২০০৩)। The Terrorism Reader (Updated সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 244। আইএসবিএন 0415301017।
- ↑ "Tell me about the bomb at the brickworks - Frontline The Long Walk of Nelson Mandela"। PBS।
- ↑ ক খ গ Mandela, Nelson (১৯৯৪)। Long Walk to Freedom। Little, Brown and Company।
- ↑ ক খ Mandela, Nelson (২০ এপ্রিল ১৯৬৪)। ""I am Prepared to Die" — Nelson Mandela's statement from the dock at the opening of the defence case in the Rivonia Trial"। African National Congress। ১৭ অক্টোবর ১৯৯৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৮।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;TerrorismReader
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Mandela admits ANC violated rights, too"। Financial Times। ২ নভেম্বর ১৯৯৮।
- ↑ "BBC News: US shamed by Mandela terror link"। ১০ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ "Mandela taken off US terror list"। BBC News। ১ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০০৮।
- ↑ বেনসন ১৯৮৬, pp. ১১৬–১১৭; মির ১৯৮৮, pp. ২০১–২০২; ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, p. ৪৩৫; মেরেডিথ ২০১০, pp. ২১৫-২১৬; স্মিথ ২০১০, pp. ২৭৫-২৭৬; স্যাম্পসন ২০১১, pp. ১৭০–১৭২.
- ↑ ম্যান্ডেলা ১৯৯৪, pp. ২৭৮-২৭৯; মেরেডিথ ২০১০, p. ২১৬; স্যাম্পসন ২০১১, p. ১৭২.
- ↑ মেরেডিথ ২০১০, pp. ২১৬-২০১৭; স্যাম্পসন ২০১১, p. ১৭২; ওয়াইনার ২০০৭, p. ৩৬২.
- ↑ "Ex-CIA spy admits tip led to Nelson Mandela's long imprisonment"। দ্য গার্ডিয়ান। ১৫ মে ২০১৬। ১৬ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২০।
- ↑ ব্লুম, উইলিয়াম। "How the CIA sent Nelson Mandela to prison for 28 years"। থার্ড ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলার। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৮।
- ↑ স্টেইন, জেফ (১৪ নভেম্বর ১৯৯৬)। "Our Man in South Africa"। সালুন.কম। ৮ ডিসেম্বর ২০০০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৮।
- ↑ "5 August - This day in history"। The History Channel। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ কাটওয়ালা, সুন্দর (১১ ফেব্রুয়ারি ২০০১)। "The Rivonia Trial"। দ্য গার্ডিয়ান। London। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ "ANC Lilliesleaf Farm arrests"। South African History Online। ১১ জুলাই ১৯৬৩। ২০০৫-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Mandela, Nelson (২০ এপ্রিল ১৯৬৪)। "An ideal for which I am prepared to die"। The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ "The Sharpeville Massacre"। TIME। ৪ এপ্রিল ১৯৬০। ২৪ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Manifesto of Umkhonto we Sizwe"। African National Congress। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৬১। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৮।
- ↑ "Rivonia Trial Papers"। Aluka। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ "Toward Robben Island: The Rivonia Trial"। African National Congress। ১৩ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Mandela's jail overrun by rabbits"। BBC। ১৫ অক্টোবর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "A monument to Mandela: the Robben Island years"। The Independent। London: Independent Print Limited। ২ সেপ্টেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Political prisoner recalls time on Robben Island"। The Michigan Daily। ১৭ অক্টোবর ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১০।
- ↑ Holmes, Steven A. (২২ জুন ১৯৯৪)। "Robben Island Journal; South Africa Ponders Fate of Apartheid's Bastille"। NY Times। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ Kathrada, Ahmed (২০০৪)। Memoirs। Zebra। পৃষ্ঠা 246। আইএসবিএন 1868729184। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ ক খ "The Big Read: Nelson Mandela: a living legend"। Daily Observer। ২৫ জুলাই ২০০৮। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Winter, Gordon (১৯৮১)। Inside BOSS। Penguin Books।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;InsideBOSS
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Hallengren, Anders (১১ সেপ্টেম্বর ২০০১)। "Nelson Mandela and the Rainbow of Culture"। Nobelprize.org। The Nobel Foundation। ২২ আগস্ট ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ Sparks, Allister (১৯৯৪)। Tomorrow is Another Country। Struik।
- ↑ Cowell, Alan (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫)। "South Africa hints at conditional release for jailed black leaders"। NY Times। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Mandela's response to being offered freedom"। ANC। ২২ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Key Dates in South African History"। Nelson Mandela Children's Fund। ২৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Free Nelson Mandela"। ANC। জুলাই ১৯৮৮। ১১ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "PW Botha, unrepentant defender of apartheid, dies aged 90"। The Independent। London: Independent Print Limited। ১ নভেম্বর ২০০৬। ২৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Malam, John (২০০২)। The Release of Nelson Mandela: 11 February 1990। Cherrytree Books। আইএসবিএন 1842341030।
- ↑ http://icrc.org/web/eng/siteeng0.nsf/html/south-africa-feature-020709 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ এপ্রিল ২০১০ তারিখে South Africa: commemorating 150 years since the battle of Solferino
- ↑ http://icrc.org/web/eng/siteeng0.nsf/htmlall/5pkj9a[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Nelson Mandela: Red Cross a "beacon of humanity" for political prisoners
- ↑ "1990: Freedom for Nelson Mandela"। BBC। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Ormond, Roger (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০)। "Mandela free after 27 years"। The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ ক খ "Nelson Mandela's address to Rally in Cape Town on his Release from Prison"। ANC। ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০। ২৮ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "A Crime Against Humanity - Analysing the Repression of the Apartheid State"। South African History Online। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Profile of Nelson Rolihlahla Mandela"। African National Congress। ১০ জুন ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মে ২০০৭।
- ↑ "Boipatong Massacre"। African National Congress। ১৮ জুন ১৯৯২। ১৪ মে ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৮।
- ↑ "Chris Hani assassinated. (Obituary)"। Social Justice। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Statement of the President of the ANC, Nelson Mandela on the assassination of Martin Chris Hani"। ১০ এপ্রিল ১৯৯৩। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ Soszynski, Henry। "Genealogical Gleanings"। University of Queensland। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০০৮।
- ↑ "Nelson Mandela - Timeline"। Nelson Mandela Foundation। ১২ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Mandela's life and times"। BBC। ১৬ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Madiba bids final farewell to his first wife"। Independent Online। Independent News & Media। ৮ মে ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "Nelson Mandela Biography - Black History"। Biography.com। ১৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ "UWC - Presidents and Patrons"। United World Colleges। ১৮ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০০৮।
- ↑ Smith, Charlene (২০০৪)। Mandela: In Celebration of a Great Life। Struik। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 1868728285। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Timberg, Craig (৭ জানুয়ারি ২০০৫)। "Mandela Says AIDS Led to Death of Son"। The Washington Post। The Washington Post Company। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০১০।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- ওয়াইনার, টিম (২০০৭)। Legacy of Ashes। পেঙ্গুইন গ্রুপ। পৃষ্ঠা ৩৬২। আইএসবিএন 978-1-846-14046-4।
- Ellis, Stephen (২০১১)। "The Genesis of the ANC's Armed Struggle in South Africa 1948–1961"। Journal of Southern African Studies। 37 (4): 657–676। hdl:2263/19620 । ডিওআই:10.1080/03057070.2011.592659।
- Ellis, Stephen (২০১৬)। "Nelson Mandela, the South African Communist Party and the origins of Umkhonto we Sizwe"। Cold War History। 16 (1): 1–18। ডিওআই:10.1080/14682745.2015.1078315।
- Forster, Dion (২০১৪)। "Mandela and the Methodists: Faith, Fallacy and Fact"। Studia Historiae Ecclesiasticae। 40: 87–115।
- Freund, Bill (২০১৪)। "The Shadow of Nelson Mandela, 1918–2013"। African Political Economy। 41 (140): 292–296। ডিওআই:10.1080/03056244.2014.883111।
- Glad, Betty; Blanton, Robert (১৯৯৭)। "F. W. de Klerk and Nelson Mandela: A Study in Cooperative Transformational Leadership"। Presidential Studies Quarterly। 27 (3): 565–590। জেস্টোর 27551769।
- Guiloineau, Jean; Rowe, Joseph (২০০২)। Nelson Mandela: The Early Life of Rolihlahla Madiba । Berkeley: North Atlantic Books। পৃষ্ঠা 9–26। আইএসবিএন 978-1-55643-417-4।
- Herbst, Jeffrey (২০০৩)। "The Nature of South African Democracy: Political Dominance and Economic Inequality"। Theodore K. Rabb; Ezra N. Suleiman। The Making and Unmaking of Democracy: Lessons from History and World Politics। London: Routledge। পৃষ্ঠা 206–224। আইএসবিএন 978-0-415-93381-0।
- Houston, Gregory; Muthien, Yvonne (২০০০)। "Democracy and Governance in Transition"। Yvonne Muthien; Meshack Khosa; Bernard Magubane। Democracy and Governance Review: Mandela's Legacy 1994–1999। Pretoria: Human Sciences Research Council Press। পৃষ্ঠা 37–68। আইএসবিএন 978-0-7969-1970-0।
- Kalumba, Kibujjo M. (১৯৯৫)। "The Political Philosophy of Nelson Mandela: A Primer"। Journal of Social Philosophy। 26 (3): 161–171। ডিওআই:10.1111/j.1467-9833.1995.tb00092.x।
- Lodge, Tom (২০০৬)। Mandela: A Critical Life। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-921935-3।
- Lukhele, Francis (২০১২)। "Post-Prison Nelson Mandela: A 'Made-in-America Hero'"। Canadian Journal of African Studies। 46 (2): 289–301। ডিওআই:10.1080/00083968.2012.702088।
- Ndlovu-Gatsheni, Sabelo J. (২০১৪)। "From a 'Terrorist' to Global Icon: A Critical Decolonial Ethical Tribute to Nelson Rolihlahla Mandela of South Africa"। Third World Quarterly। 35 (6): 905–921। ডিওআই:10.1080/01436597.2014.907703।
- Oppenheim, Claire E. (২০১২)। "Nelson Mandela and the Power of Ubuntu"। Religions। 3 (2): 369–388। ডিওআই:10.3390/rel3020369 ।
- তোমাসেল্লি, কেয়ান; তোমাসেল্লি, রুথ (২০০৩)। "The Media and Mandela"। Safundi: The Journal of South African and American Studies। ৪ (২): ১–১০। ডিওআই:10.1080/17533170300404204।
- নেলসন, স্টিভেন (২০১৪)। "Nelson Mandela's Two Bodies"। ট্রানজিশন। ১১৬ (১১৬): ১৩০–১৪২। ডিওআই:10.2979/transition.116.130।
- বার্বার, জেমস (২০০৪)। Mandela's World: The International Dimension of South Africa's Political Revolution 1990–99। অ্যাথেন্স, ওহাইও: ওহাইও ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-8214-1566-5।
- বার্নার্ড, রিটা (২০১৪)। "Introduction"। রিটা বার্নার্ড। The Cambridge Companion to Nelson Mandela। ক্যামব্রিজ: ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা ১–২৬। আইএসবিএন 978-1-107-01311-7।
- ব্যাটারসবি, জন (২০১১)। "Afterword: Living Legend, Living Statue"। অ্যান্থনি স্যাম্পসন। Mandela: The Authorised Biography। লন্ডন: হ্যার্পারকলিন্স। পৃষ্ঠা ৫৮৭–৬১০। আইএসবিএন 978-0-00-743797-9।
- বেনিওয়ার্থ, গার্থ (২০১১)। "Armed and Trained: Nelson Mandela's 1962 Military Mission as Commander in Chief of Umkhonto we Sizwe and Provenance for his Buried Makarov Pistol"। South African Historical Journal। 63 (1): 78–101। ডিওআই:10.1080/02582473.2011.549375।
- বেনসন, ম্যারি (১৯৮৬)। Nelson Mandela। হার্মন্ডসওয়ার্থ: পেঙ্গুইন বুকস। আইএসবিএন 978-0-14-008941-7।
- বোমার, এলেকে (২০০৫)। "Postcolonial Terrorist: The Example of Nelson Mandela"। প্যারলাক্স। ১১ (৪): 46–55। ডিওআই:10.1080/13534640500331666।
- বোমার, এলেকে (২০০৮)। Nelson Mandela: A Very Short Introduction। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-280301-6।
- ব্রুমলি, রজার (২০১৪)। "'Magic Negro', Saint or Comrade: Representations of Nelson Mandela in Film"। আল্ত্র মদের্নিতা (১২): ৪০–৫৮।
- ব্রুন, কেনেথ এস. (২০১২)। Saving Nelson Mandela: The Rivonia Trial and the Fate of South Africa। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আইএসবিএন 978-0-19-974022-2।
- মাফেলা, মুঞ্জেজি জেমস (২০০৮)। "The Revelation of African Culture in Long Walk to Freedom"। অ্যানা হ্যাবিখ; ফ্রান্সেস পিটার্স-লিটল; পিটার রিড। Indigenous Biography and Autobiography। সিডনি: Humanities Research Centre, Australian National University। পৃষ্ঠা ৯৯–১০৭। ২৪ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৩।
- মাংচু, জোলেলা (২০১৩)। "Retracing Nelson Mandela through the Lineage of Black Political Thought"। ট্রানজিশন। ১১২ (১১২): ১০১–১১৬। ডিওআই:10.2979/transition.112.101।
- ম্যান্ডেলা, নেলসন (১৯৯৪)। Long Walk to Freedom Volume I: 1918–1962। লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানি। আইএসবিএন 978-0-7540-8723-6।
- ম্যান্ডেলা, নেলসন (২০০৪) [১৯৯৪]। Long Walk to Freedom Volume II: 1962–1994 (বৃহৎ মুদ্রণ সংস্করণ)। লন্ডন: বিবিসি অডিওবুকস অ্যান্ড টাইম ওয়ার্নার বুকস লিমিটেড। আইএসবিএন 978-0-7540-8724-3।
- মির, ফাতিমা (১৯৮৮)। Higher than Hope: The Authorized Biography of Nelson Mandela। লন্ডন: হ্যামিশ হ্যামিলটন। আইএসবিএন 978-0-241-12787-2।
- মুথিয়েন, ইভোন; খোসা, মেশাক; মাগুবানে, বার্নার্ড (২০০০)। "Democracy and Governance in Transition"। ইভোন মুথিয়েন; মেশাক খোসা; বার্নার্ড মাগুবানে। Democracy and Governance Review: Mandela's Legacy 1994–1999। প্রিটোরিয়া: হিউম্যান সায়েন্স রিসার্স কাউন্সিল প্রেস। পৃষ্ঠা ৩৬১–৩৭৪। আইএসবিএন 978-0-7969-1970-0।
- মেরেডিথ, মার্টিন (২০১০)। Mandela: A Biography । নিউ ইয়র্ক: পাবলিক অ্যাফেয়ার্স। আইএসবিএন 978-1-58648-832-1।
- সডিয়েন, ক্রেইন (২০১৫)। "Nelson Mandela, Robben Island and the Imagination of a New South Africa"। জার্নাল অব সাউদার্ন আফ্রিকান স্টাডিজ। ৪১ (২): ৩৫৩–৩৬৬। ডিওআই:10.1080/03057070.2015.1012915।
- সাটনার, রেমন্ড (২০০৭)। "(Mis)Understanding Nelson Mandela"। আফ্রিকান হিস্ট্রিক্যাল রিভিউ। ৩৯ (২): ১০৭–১৩০। ডিওআই:10.1080/17532520701786202।
- সাটনার, রেমন্ড (২০১৪)। "Nelson Mandela's Masculinities"। আফ্রিকান আইডেন্টিটিস। ১২ (৩-৪): ৩৪২–৩৫৬। ডিওআই:10.1080/14725843.2015.1009623।
- সাটনার, রেমন্ড (২০১৬)। "'I Was Not Born With a Hunger to Be Free': Nelson Mandela's Early Journeys towards Political Awareness"। জার্নাল অব এশিয়ান অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ। ৫১ (১): ১৭–৩১। ডিওআই:10.1177/0021909614541973।
- রিড, জেমস এইচ. (২০১০)। "Leadership and power in Nelson Mandela's Long Walk to Freedom"। জার্নাল অব পাওয়ার। ৩ (৩): ৩১৭–৩৩৯। ডিওআই:10.1080/17540291.2010.524792।
- স্যাম্পসন, অ্যান্থনি (২০১১) [১৯৯৯]। Mandela: The Authorised Biography। লন্ডন: হার্পারকলিন্স। আইএসবিএন 978-0-00-743797-9।
- স্মিথ, ডেভিড জেমস (২০১০)। Young Mandela। লন্ডন: ওয়েইডেনফেল্ড অ্যান্ড নিকলসন। আইএসবিএন 978-0-297-85524-8।
- হাটন, বারবারা (১৯৯৪)। Robben Island: Symbol of Resistance। বেলভিল: পিয়ারসন সাউথ আফ্রিকা। আইএসবিএন 978-0-86877-417-6।