নূরজাহান মুর্শিদ
নূরজাহান মুর্শিদ (জন্ম বেগ; মে ২২, ১৯২৪ - সেপ্টেম্বর ১, ২০০৩) ছিলেন একজন সাংবাদিক এবং শিক্ষক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ছিলেন।[১]
নূরজাহান মুর্শিদ | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১ সেপ্টেম্বর ২০০৩ | (বয়স ৭৯)
জাতীয়তা | বাংলাদেশি |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পেশা | রাজনীতিবিদ ও আন্দোলনকর্মী |
দাম্পত্য সঙ্গী | খান সারোওয়ার মুর্শিদ (বি. ১৯৪৮) |
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনামুর্শিদ ২২ মে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদাবাদ এর তারানগরে নূরজাহান বেগ নামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে খান সারোওয়ার মুর্শিদ-কে বিয়ে করেন। তাদের ৪ সন্তান ছিল: অর্থনীতিবিদ খান আহমেদ সায়ীদ মুর্শিদ, ইতিহাসবিদ তাজীন মুর্শিদ, শারমিন মুর্শিদ এবং কুমার মুর্শিদ।[২] কন্যা শারমিন মুরশিদ ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা।[৩]
শিক্ষা
সম্পাদনাজানব আয়ুব হুসেইন বেগ ও বিবি ক্ষতিমুন্নেসা এর ৭ কন্যার মাঝে ৪র্থ কন্যা নূরজাহান পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পিতা ছিলেন ব্রিটিশ পুলিশ সার্ভিসের মুর্শিদাবাদ জেলার লালগোলার পুলিশ প্রধান। তিনি ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন, কলকাতা থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে তার মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।[৪]
কাজ
সম্পাদনানূরজাহান অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে ঘোষিকা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করা প্রথম মুসলিম মহিলা। পূর্ব পাকিস্তান গঠন হওয়ার পরও পাকিস্তান রেডিও-তে তার এই পেশা অব্যাহত থাকে। তবে ধীরে ধীরে তিনি ঘোষক থেকে প্রোগ্রাম প্রযোজক পদে অধিষ্ঠিত হন। এর সুবাদে তিনি শামসুল হুদা, লায়লা আর্জুমান্দ বানু, লায়লা সামাদ এবং কামাল লোহানী এর মত ব্যক্তিত্ত্বের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। পরবর্তীতে তিনি বরিশালের সাইদুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হন এবং পরবর্তীতে ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন যার মাঝে কামরুন্নেসা বিদ্যালয়, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল ও হলি ক্রস কলেজ উল্লেখযোগ্য।
নূরজাহান মুর্শিদ ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হন। যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে তিনি ১৯৫৪-এর নির্বাচনে অংশ নেন এবং পূর্ব বাংলার আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আইন পরিষদ সচিব (পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি) হিসেবে কাজ করেন।[৪]
মুর্শিদ ছিলেন ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক সংসদ নির্বাচনে, যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে সরাসরি অংশ নিয়ে জয়ী হওয়া ২ জন নারীর একজন। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় বিধানসভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানান। এর ফলে তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাকে নিরুদ্দেশ অবস্থাতেই ১৪ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশে, ১৯৭২ সালে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান এর সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং বাংলাদেশের চার জাতীয় নেতা, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এইচ এম কামরুজ্জামানকে জেলখানায় হত্যা করার পর তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন।[৪]
১৯৮৫ সালে তিনি একাল নামে একটি বাংলা সাময়িকী প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেটির সম্পাদক হন। পরবর্তীতে এদেশ একাল নামে প্রকাশিত এই সাময়িকীতে শুধুমাত্র নারীদের সমস্যার কথাই থাকত না বরং সেসময়কার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় যেমন সহিংসতা, দুর্নীতি, গণতন্ত্রের অভাব ইত্যাদিরও উল্লেখ পাওয়া যেত। সাময়িকীটিতে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে একটি ছিল নিরাদ চৌধুরী (প্রজা পার্টি এর এ. কে. ফজলুল হক এর এককালের একান্ত সহকারী]]) কবি শামসুর রাহমান এবং চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান (যিনি সাময়িকটির প্রচ্ছদ এর চিত্রকারও ছিলেন) এর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা। ১৯৯১ সালে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সাময়িকিটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।.[৪]
তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতি এর প্রথম সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।[৫] এছাড়াও তিনি আজিমপুর লেডিস ক্লাব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি বারডেম এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, উন্মেষকালে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এর একজন পৃষ্ঠপোষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্ত্রীদের জন্য ক্লাব শ্রেয়সী এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। [৪]
মৃত্যু
সম্পাদনা২০০২ সালে তার দেহে ক্যানসার ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে তিনি ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মো. মুকবিল হোসেন (২০১২)। "মুর্শিদ, নূরজাহান"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Amin, Sonia। "Noorjehan Murshid"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ, প্রথম আলো, ৯ আগষ্ট ২০২৪
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Murshid, Tazeen। "Noor Jehan Murshid, or a power woman"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১২।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নূরজাহান মুরশিদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ"। Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৪।