ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি ও প্রদেশসমূহ

ব্রিটিশ ভারতের প্রশাসনিক বিভাগ

ভারতীয় প্রদেশ যা পূর্বে ছিল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া প্রেসিডেন্সি কিছুকাল আগেও প্রেসিডেন্সি শহর, যা একত্রে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া হিসেবে অভিহিত, ১৬১২ থেকে ১৯৪৭ এগুলোই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী অথবা ব্রিটিশ রাজত্বের সার্বভৌম প্রশাসনিক ইউনিট ছিল।

ঔপনিবেশিক ভারত
British Indian Empire
ঔপনিবেশিক ভারত
ওলন্দাজ ভারত১৬০৫–১৮২৫
দিনেমার ভারত১৬২০–১৮৬৯
ফরাসি ভারত১৭৬৯-১৯৫৪
পর্তুগিজ ভারত
(১৫০৫–১৯৬১)
কাসা দা ইন্দিয়া১৪৩৪–১৮৩৩
পর্তুগিজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি১৬২৮–১৬৩৩
ব্রিটিশ ভারত
(১৬১২–১৯৪৭)
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি১৬১২–১৭৫৭
কোম্পানি রাজ১৭৫৭–১৮৫৮
ব্রিটিশ রাজ১৮৫৮–১৯৪৭
বার্মায় ব্রিটিশ শাসন১৮২৪–১৯৪৮
দেশীয় রাজ্য১৭২১–১৯৪৯
ভারত বিভাজন
১৯৪৭
কলকাতায় ১৭৩৫ সালে স্থাপিত ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ।

ব্রিটিশ ইন্ডিয়া- কে তিন সময়কালে ভাগ করা যেতে পারে। সপ্তদশ শতক-এর শুরু থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ; এই সময় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থানীয় রাজন্যবর্গের সহায়তায় ব্যবসা পরিচালনা করে। এই সময় হল্যান্ড এবং ফ্রান্সের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। পরবর্তী একশত বৎসর যা ভারতে কোম্পানী শাসন হিসেবে অভিহিত, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী একক ব্যবসায়িক কোম্পানী হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে ধীরে ধীরে ব্রিটিশ রাজ তাদের কার্যকলাপ-এ হস্তক্ষেপ করে, এক পর্যায়ে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের একক ব্যবসায়িক অধিকার হারায়। সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানীর ক্ষমতা ব্রিটিশ রাজের নিকট হস্তান্তরিত হয়, যা ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বের (১৮৫৮-১৯৪৭) সূচনা করে। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া মূলতঃ ভারতে ব্রিটিশ জাতি বা the British nation in India- এর সংক্ষিপ্ত রূপ।[১]

ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সম্পাদনা

 
ব্রিটিশ ভারত
ঔপনিবেশিক ভারত
 
ঔপনিবেশিক ভারত
ওলন্দাজ ভারত১৬০৫–১৮২৫
দিনেমার ভারত১৬২০–১৮৬৯
ফরাসি ভারত১৭৬৯-১৯৫৪
পর্তুগিজ ভারত
(১৫০৫–১৯৬১)
কাসা দা ইন্দিয়া১৪৩৪–১৮৩৩
পর্তুগিজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি১৬২৮–১৬৩৩
ব্রিটিশ ভারত
(১৬১২–১৯৪৭)
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি১৬১২–১৭৫৭
কোম্পানি রাজ১৭৫৭–১৮৫৮
ব্রিটিশ রাজ১৮৫৮–১৯৪৭
বার্মায় ব্রিটিশ শাসন১৮২৪–১৯৪৮
দেশীয় রাজ্য১৭২১–১৯৪৯
ভারত বিভাজন
১৯৪৭

ইউরোপীয় বাণিজ্যিক কোম্পানীর পরে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৬১২ সালে প্রথম স্থায়ী কারখানা স্থাপন করে।[২] যাইহোক, ১৭০৭ হতে মুঘল সাম্রাজ্য ক্ষয়িষ্ণু হওয়ায় ১৭৫৭ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পলাশীর যুদ্ধ ও ১৭৬৪- এ বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ক্রমান্বয়ে তারা ক্ষমতার প্রসারণ ঘটায়।[৩] ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী মূলত এই উপমহাদেশের প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি ছিল। একই সঙ্গে ব্রিটিশ রাজের আস্থাভাজন হিসেবে ছিল।[৪]

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার গভার্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট-১৮৫৮ জারি করার ফলে ভারতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের অবসান ঘটে।[৪] এরপর থেকে ব্রিটিশ রাজ ব্রিটিশ ইন্ডিয়াকে যুক্তরাজ্যের একটি উপনিবেশ হিসেবে সরাসরি শাসন করতে থাকে এবং ১৮৭৬ থেকে ভারতের সরকারি নামকরণ হয় ভারত সাম্রাজ্য[৫] ভারত সাম্রাজ্যের কিছু অঞ্চল দেশীয় রাজ্য [৬] হিসেবে দেশীয় রাজাগণ শাসন করতো। বাকি বিশাল অঞ্চল ব্রিটিশ রাজ সরাসরি শাসন করতো।[৭] দেশীয় রাজ্যগুলো ব্রিটিশ সরকারের সাথে তাদের সার্বভৌমত্ব বিনিময়ের মাধ্যমে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছিল। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া এ সময় ভারতের একটি বড় এলাকা এবং জনগণ শাসন করে। উদাহরণ হিসেবে ১৯১০ সালে প্রায় ৫৪% এলাকা এবং জনসংখ্যার ৭৭% ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৮] এছাড়াও সেসময় ভারতে পর্তুগীজ ও ফরাসি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপনিবেশ ছিল। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে দুটি রাষ্ট্র; ভারত ও পাকিস্তান হিসেবে পরিণত হয়— অবশ্য পরে পাকিস্তানের একাংশ (পূর্বাংশ) বাংলাদেশ হিসেবে স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করে।

অবশ্য বার্মাও কিছু সময়ের জন্য -১৮২৪ সালে কিয়দংশ-১৮৮৬ সালে দুই তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অধীনে আসে।[৭] এই বন্দোবস্ত ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। পরে বার্মা পৃথক ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে শাসিত হয়েছে। এই এলাকার অন্যান্য দেশ কিন্তু ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল না, শ্রীলঙ্কা (পরে সিলোন) ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক সরাসরি নিয়ন্ত্রিত কলোনী (British Crown Colony) ও মালদ্বীপ ব্রিটিশ কর্তৃক সংরক্ষিত (British Protectorate) রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত ছিল। বিশ শতকের শুরুর দিকে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কলেবর বেড়ে পশ্চিমে পার্সিয়ার সীমানা, উত্তর পশ্চিমে আফগানিস্তান, উত্তর পূর্বে তিব্বত এবং চীন, পূর্বে ফ্রেঞ্চ ইন্দো-চীন এবং শ্য্যাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আরব প্রণালীর[৯] আদেন কলোনীও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রেসিডেন্সী নগরসমূহ (১৬০০-১৭৬৫) সম্পাদনা

  • মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী: ১৬৪০ সালে স্থাপিত
  • বোম্বে প্রেসিডেন্সী: ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মূল কার্য্যালয় সুরাট থেকে ১৬৮৭ সালে বোম্বে (মুম্বাই)-এ স্থানান্তরিত হয়
  • বেংগল প্রেসিডেন্সী: ১৬৯০ সালে স্থাপিত

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী - যা ৩১শে ডিসেম্বর ১৬০০ তে প্রতিষ্ঠিত- ১৬১১ সালে পূর্ব উপকূলের মাসুলিপত্তমে, ১৬১২ সালে পশ্চিম উপকূলের সুরাটের ভারতীয় শাসকদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।[১০] ১৬৩৯ সালে কোম্পানী মাদ্রাজে একটি ব্যবসায়িক শাখা খোলে।[১০][১০] বোম্বে, যা পর্তুগাল সরকার ক্যাথারিন ব্রাগাঞ্জার বিয়ের যৌতুক হিসেবে ১৬৬১ সালে ব্রিটিশ রাজকে উপঢৌকন দিয়েছিল, পরবর্তীতে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশ রাজের নিকট প্রাপ্ত হয়।[১০]

ইতিমধ্যে, পূর্ব ভারতে, মুঘল সম্রাট শাহজাহান-এর নিকট ব্যাবসায়িক অনুমতি নিয়ে বাংলায় ব্যবসা শুরু করে এবং ১৬৪০ সালে হুগলীতে কারখানা স্থাপন করে।[১০] প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পরে, সম্রাট আওরংগজেব কোম্পানীকে হুগলী থেকে বের করে দিলে ১৬৮৬ সালে জব চার্নক কলকাতায় কোম্পানীকে প্রতিষ্ঠা করেন।[১০] অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে তিনটি প্রধান ব্যবসায়িক স্থাপনা গড়ে উঠে- মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী (অথবা ফোর্ট জর্জ প্রেসিডেন্সী), বোম্বে প্রেসিডেন্সী এবং বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী (অথবা ফোর্ট উইলিয়াম প্রেসিডেন্সী)- যেগুলি একেক জন গভর্নর দ্বারা শাসিত ছিল।[১১]

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্সীসমূহ (১৭৭২-১৮৫৮) সম্পাদনা

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভ বিজয়ী হবার ফলে বাংলার পরবর্তী পুতুল নওয়াব মুলতঃ তারই আঙ্গুলি হেলনে তথা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী[১২] দ্বারা পরিচালিত হত। যাই হোক, পরবর্তীতে অযোধ্যার নওয়াব কর্তৃক বাংলা দখল, পরে বক্সারের যুদ্ধে হেরে যাওয়ার ফলে কোম্পানী বাংলার দিওয়ানী গ্রহণ করে-- বাংলার ভূমি সংক্রান্ত প্রশাসনিক ক্ষমতাসহ ভূমি কর আদায়ের ক্ষমতা তাদের উপর ন্যস্ত হয়। তৎকালীন বাংলার সীমা ছিল বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিম বঙ্গবিহার[১২] ১৭৭২ সালে, কোম্পানী বাংলার নিযামত - অর্থাৎ ফৌজদারি বিচারের দ্বায়িত্ব—গ্রহণ করে, এভাবেই কোম্পানীর পূর্ণ ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে বেংগল প্রেসিডেন্সী প্রতিষ্ঠিত হয়।[১২] ১৭৭৩ থেকে ১৭৮৫ পর্যন্ত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সামান্যই পরিবর্তন হয়—পশ্চিমে বেনারসের রাজা এর অধিভূক্ত এলাকা অন্তর্ভুক্ত হয়, তদ্রূপ সালসাত্তি দ্বীপ বম্বে প্রেসিডেন্সীতে অন্তর্ভুক্ত হয়।[১৩]

১৭৯২ সালের তৃতীয় এংলো-মহীশূর যুদ্ধের পরমহীশূর রাজ্যের কিয়দংশ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী-এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়। পরবর্তী ১৭৯৯ সালে চতুর্থ এংলো-মহীশূর যুদ্ধে টিপু সুলতানের পরাজয়ের পর তার অধিকাংশ এলাকা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়।[১৩] কর্ণাটক, যা এর আগে থেকেই কোম্পানী শাসনাধীনে ছিল, ১৮০১ সাল থেকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীর অধীনে শাসিত হতে থাকে।[১৪]

  • মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সীঃ অষ্টাদশ শতকের মধ্য ও শেষাংশে কর্ণাটক যুদ্ধ ও এংলো-মহীশূর যুদ্ধের পর অধিকৃত ও বিস্তৃত।
  • বোম্বে প্রেসিডেন্সীঃ এংলো-মারাঠা যুদ্ধের পর অধিকৃত ও বিস্তৃত ।
  • বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীঃ পলাশী (১৭৫৭), বক্সার (১৭৬৪), দ্বিতীয় ও তৃতীয় এংলো-মারাঠা যুদ্ধের পর অধিকৃত ও বিস্তৃত।
  • আজমীর-মারাবাড়-কাকরিঃ [[তৃতীয় এংলো-মারাঠা যুদ্ধের ফল স্বরূপ গোয়ালিয়রের সিন্ধীয়া]] কর্তৃক সমর্পিত এলাকা।
  • কূর্গঃ ১৮৩৪ সালে সংযুক্ত।
  • সমর্পিত ও অধিকৃত প্রদেশ সমূহঃ ১৮০২ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীর অধীনে প্রতিষ্ঠিত। ১৮৩৫ সালে আগ্রা প্রেসিডেন্সী নামে একটি পৃথক গভর্নরের অধীনে একটি প্রেসিডেন্সী স্থাপনের প্রস্তাব থাকলেও তা কার্যকর হয় নাই।
  • উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ সমূহঃ পূর্বের সমর্পিত ও অধিকৃত প্রদেশ সমূহ হতে পৃথকিকৃত ও লেফটেনেন্ট - গভর্নর এর অধীনে ১৮৩৬ সালে স্থাপিত
  • সিন্ধঃ ১৮৪৩ সালে বোম্বে প্রেসিডেন্সীর সঙ্গে সংযুক্ত।
  • পাঞ্জাবঃ ১৮৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। প্রথম ও দ্বিতীয় এংলো- শিখ যুদ্ধের মাধ্যমে দখলকৃত এলাকা নিয়ে গঠিত।
  • নাগপুর প্রদেশঃ ১৮৫৩ সালে গঠিত। নাগপুর রাজ্য " উত্তরাধিকারবিহীন রাজ্য'{/১] এই নীতিমালার অধীনে দখল করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় প্রদেশের সঙ্গে ১৮৬১ সালে একীভূত করা হয়।
  • অযোধ্যাঃ ১৮৫৬ সালে সংযুক্ত। ১৯০৫ সাল পর্যন্ত চীফ কমিশনারের অধীনে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের অংশ হিসেবে শাসিত।

ভারতের প্রদেশসমূহ (১৮৫৮-১৯৪৭) সম্পাদনা

  • কেন্দ্রীয় প্রদেশ সমূহঃ ১৮৬১ সালে নাগপুর প্রদেশ এবং সাগর ও নর্বুদা এলাকা নিয়ে গঠিত। Berar administered since 1903, renamed the Central Provinces and Berar in 1936. বেরার ১৯০৩ সাল পর্যন্ত শাসিত হয়। পরে ১৯৩৬ সালে নতুন নামকরণ হয়- কেন্দ্রীয় প্রদেশ ও বেরার।
  • বার্মাঃ বার্মার নিচের অংশ ১৮৫২ সালে সংযুক্ত হয়, পরে ১৮৬২ সালে প্রদেশ এর মর্যাদা লাভ করে। বার্মার উপরাংশ ১৮৮৬ সালে এই প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। বার্মা ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া থেকে পৃথক করে স্বতন্ত্র ভাবে নতুনভাবে গঠিত ব্রিটিশ সরকার বার্মা অফিস হিসেবে শাসিত হতে থাকে।
  • আসামঃ ১৮৭৪ সালে বাংলা থেকে পৃথক করা হয়।
  • আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জঃ ১৮৭৫ সালে প্রদেশ হিসেবে গঠিত হয়।
  • বেলুচিস্তান: ১৮৮৭ সালে প্রদেশ হিসেবে সংগঠিত।
  • উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ: ১৯০১ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহ নিয়ে গঠিত।
  • পূর্ববঙ্গ ও আসাম: বেঙ্গল থেকে ১৯০৫ সালে পৃথকীকৃত। পুনরায় ১৯১২ সালে বঙ্গ প্রদেশের সঙ্গে একত্রিকৃত।
  • বঙ্গ প্রদেশ: ১৯১২ সালে গঠিত।
  • বিহার ও উড়িষ্যা: ১৯১২ সালে বেঙ্গল থেকে পৃথকীকৃত। ১৯৩৫ সালে বিহারের নতুন নামকরণ করা হয় ও উড়িষ্যাকে পৃথক প্রদেশে রুপান্তর করা হয়।
  • দিল্লী: ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী হিসেবে মর্যাদা দেবার সময় পাঞ্জাব থেকে পৃথক করা হয়।
  • এডেন: ১৯৩২ সালে বোম্বে প্রেসিডেন্সী থেকে পৃথক করে ভারতের একটি প্রদেশ হিসেবে পরিগণিত হয়, তবে ১৯৩৭ সালে ভারত থেকে পৃথক করে "ক্রাউন কলোনী অব এডেন" গঠন করা হয়।
  • উড়িষ্যা: ১৯৩৫ সালে বিহার থেকে পৃথক করা হয়।
  • সিন্ধ: ১৯৩৫ সালে বোম্বে থেকে পৃথক করা হয়।
  • পান্থ-পিপ্লোডা: ১৯৪২ দেশীয় রাজার নিকট থেকে দখলকৃত

প্রধান প্রদেশসমূহ সম্পাদনা

 
A map of the British Indian Empire in 1909 during the partition of Bengal (1905–1911), showing British India in two shades of pink (coral and pale) and the princely states in yellow.

বিংশ শতাব্দীর শূরুতে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া আটটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত ছিল, যেগুলি গভর্নর বা লেফটেনেন্ট গভর্নর দ্বারা শাসিত ছিল। নিচের টেবিলে প্রদেশগুলোর এলাকা, জনসংখ্যা দেয়া হল। (তবে দেশীয় রাজ্যগুলোর হিসাব এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নাই।) [১৫]

বঙ্গ-ভঙ্গ এর সময় (১৯০৫-১৯১১), আসাম এবং পূর্ব বাংলা নামে একটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়- যা লেফটেনেন্ট গভর্নর দ্বারা শাসিত ছিল। ১৯১১ সালে পূর্ব বাংলা পুনরায় বেঙ্গল এর সঙ্গে একত্রিকৃত করা হয় এবং নতুন প্রদেশের নামকরণ হয় আসাম, বেঙ্গল, বিহার ও উড়িষ্যা।[১৫]

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার প্রদেশসমূহ[১৫] এলাকা (প্রতি হাজার বর্গমাইল হিসেবে) জনসংখ্যা (মিলিয়ন) প্রধান প্রশাসনিক নির্বাহী
বার্মা ১৭০ লেফটেনেন্ট গভর্নর
বেঙ্গল ১৫১ [৭৫] লেফটেনেন্ট গভর্নর
মাদ্রাজ ১৪২ ৩৮ গভর্নর- ইন- কাউন্সিল
বম্বে ১২৩ ১৯ গভর্নর - ইন- কাউন্সিল
উত্তর প্রদেশ/যুক্তপ্রদেশ ? ১০৭ ৪৮ লেফটেনেন্ট গভর্নর
কেন্দ্রীয় প্রদেশ এবং বেরার ১০৪ ১৩ চীফ কমিশনার
পাঞ্জাব ৯৭ ২০ লেফটেনেন্ট গভর্নর
আসাম ৪৯ চীফ কমিশনার

ক্ষুদ্র প্রদেশসমূহ সম্পাদনা

এছাড়াও কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রদেশ একত্রে একজন চীফ কমিশনার দ্বারা শাসিত হতঃ [১৬]

ক্ষুদ্র প্রদেশসমূহ[১৬] এলাকা (প্রতি হাজার বর্গ মাইল) জনসংখ্যা (হাজারে) প্রঘান প্রশাসনিক নির্বাহী
উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ১৬ ২,১২৫ চীফ কমিশনার
ব্রিটিশ বেলুচিস্তান ৪৬ ৩০৮ ব্রিটিশ পলিটিকাল এজেন্ট পদাধিকার বলে চীফ কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করত।
কুর্গ ১.৬ ১৮১ মহীশূরের ব্রিটিশ রেসিডেন্ট পদাধিকার বলে চীফ কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করত।
আজমীর- মাড়বার ২.৭ ৪৭৭ রাজপুতানার পলিটিকাল এজেন্ট পদাধিকার বলে চীফ কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করত।
আন্দমান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ২৫ চীফ কমিশনার

স্বাধীনতাকালীন সময়ে যে প্রদেশগুলো ছিল-১৯৪৭ (১৭টি প্রদেশ) সম্পাদনা

১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার সময় ভারত বিভাগ হয়ে ১২টি প্রদেশ(আজমীর-মাড়বার-কাকরি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, আসাম, বিহার, বোম্বে, কেন্দ্রীয় প্রদেশ এবং বেরার, কূর্গ, দিল্লী, মাদ্রাজ, পান্থ-পিপলোদা, উড়িষ্যা, আগ্রা ও আযোধ্যা যুক্ত প্রদেশ) ভারতের অধীনে, ৩টি (বেলুচিস্তান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধ) পাকিস্তানের অধীনে এবং দুটি প্রদেশ (বেঙ্গল, পাঞ্জাব) পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিভক্ত হয়।

১৯৫০ সালে ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হলে, প্রদেশসমূহ দেশীয় রাজ্য ও প্রজাতন্ত্র গুলো বিন্যস্ত করা হয়। পাকিস্তান প্রদেশগুলোর এলাকা অপরিবর্তিত রাখে, কেবল ১৯৫৬ সালে পূর্ব বাংলার নামকরণ করে পূর্ব পাকিস্তান, যা পরে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ নামে আত্মপ্রকাশ করে।


আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1908, পৃ. 5 Quote: "The history of British India falls ... into three periods. From the beginning of the seventeenth to the middle of the eighteenth century the East India Company is a trading corporation, existing on the sufferance of the native powers, and in rivalry with the merchant companies of Holland and France. During the next century the Company acquires and consolidates its dominion, shares its sovereignty in increasing proportions with the Crown, and gradually loses its mercantile privileges and functions. After the Mutiny of 1857, the remaining powers of the Company are transferred to the Crown ..." (p. 5)
  2. Imperial Gazetteer of India vol. II 1908, পৃ. 452–472
  3. Imperial Gazetteer of India vol. II 1908, পৃ. 473–487
  4. Imperial Gazetteer of India vol. II 1908, পৃ. 488–514
  5. Imperial Gazetteer of India vol. II 1908, পৃ. 514–530
  6. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1908, পৃ. 58–103
  7. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1908, পৃ. 46–57
  8. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1908, পৃ. 59–61
  9. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1908, পৃ. 104–125
  10. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 6
  11. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 7
  12. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 9
  13. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 10
  14. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 11
  15. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 46
  16. Imperial Gazetteer of India vol. IV 1907, পৃ. 56
  • Imperial Gazetteer of India vol. II (১৯০৮), The Indian Empire, Historical, Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. xxxv, 1 map, 573 
  • Imperial Gazetteer of India vol. III (১৯০৭), The Indian Empire, Economic (Chapter X: Famine, pp. 475–502), Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. xxxvi, 1 map, 520 
  • Imperial Gazetteer of India vol. IV (১৯০৭), The Indian Empire, Administrative, Published under the authority of His Majesty's Secretary of State for India in Council, Oxford at the Clarendon Press. Pp. xxx, 1 map, 552 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Bandyopadhyay, Sekhar (২০০৪), From Plassey to Partition: A History of Modern India, New Delhi and London: Orient Longmans. Pp. xx, 548., আইএসবিএন 8125025960 
  • Brown, Judith M. (১৯৯৪), Modern India: The Origins of an Asian Democracy, Oxford and New York: Oxford University Press. Pp. xiii, 474, আইএসবিএন 0198731132 
  • Copland, Ian (২০০১), India 1885-1947: The Unmaking of an Empire (Seminar Studies in History Series), Harlow and London: Pearson Longmans. Pp. 160, আইএসবিএন 0582381738 
  • Harrington, Jack (২০১০), Sir John Malcolm and the Creation of British India, New York: Palgrave Macmillan., আইএসবিএন 978-0-230-10885-1 
  • Judd, Dennis (২০০৪), The Lion and the Tiger: The Rise and Fall of the British Raj, 1600-1947, Oxford and New York: Oxford University Press. Pp. xiii, 280, আইএসবিএন 0192803581 
  • Majumdar, R. C.; Raychaudhuri, H. C.; Datta, Kalikinkar (১৯৫০), An Advanced History of India, London: Macmillan and Company Limited. 2nd edition. Pp. xiii, 1122, 7 maps, 5 coloured maps. 
  • Markovits, Claude (ed) (২০০৫), A History of Modern India 1480-1950 (Anthem South Asian Studies), Anthem Press. Pp. 607, আইএসবিএন 1843311526 
  • Metcalf, Barbara; Metcalf, Thomas R. (২০০৬), A Concise History of Modern India (Cambridge Concise Histories), Cambridge and New York: Cambridge University Press. Pp. xxxiii, 372, আইএসবিএন 0521682258 .
  • Peers, Douglas M. (২০০৬), India under Colonial Rule 1700-1885, Harlow and London: Pearson Longmans. Pp. xvi, 163, আইএসবিএন 058231738 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: length (সাহায্য) 
  • Sarkar, Sumit (১৯৮৩), Modern India: 1885-1947, Delhi: Macmillan India Ltd. Pp. xiv, 486, আইএসবিএন 0333904257 
  • Smith, Vincent A. (১৯২১), India in the British Period: Being Part III of the Oxford History of India, Oxford: At the Clarendon Press. 2nd edition. Pp. xxiv, 316 (469-784) 
  • Spear, Percival (১৯৯০), A History of India, Volume 2: From the sixteenth century to the twentieth century, New Delhi and London: Penguin Books. Pp. 298, আইএসবিএন 0140138366 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা