নারায়ন চন্দ্র চন্দ
নারায়ন চন্দ্র চন্দ (জন্ম: ১২ মার্চ, ১৯৪৫) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ বিলুপ্তের মাধ্যমে সংসদ সদস্য পদ হারান।[১] শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি প্রথমে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পরে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[৩][৪]
নারায়ন চন্দ্র চন্দ | |
---|---|
বাংলাদেশের ভূমিমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১১ জানুয়ারি ২০২৪ – ৬ আগস্ট ২০২৪ | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
পূর্বসূরী | সাইফুজ্জামান চৌধুরী (মন্ত্রী) |
উত্তরসূরী | এ. এফ. হাসান আরিফ (উপদেষ্টা) |
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১০ জানুয়ারি ২০২৪ – ৬ আগস্ট ২০২৪[১] | |
পূর্বসূরী | মিয়া গোলাম পরওয়ার |
কাজের মেয়াদ ২০ ডিসেম্বর ২০০০ – ১৩ জুলাই ২০০১ | |
পূর্বসূরী | সালাহ উদ্দিন ইউসুফ |
উত্তরসূরী | মিয়া গোলাম পরওয়ার |
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২ জানুয়ারি ২০১৮[২] – ৭ জানুয়ারি ২০১৯ | |
পূর্বসূরী | আব্দুল হাই |
উত্তরসূরী | শ ম রেজাউল করিম |
মৎস্য ও পশু সম্পদ প্রতিমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ – ২ জানুয়ারি ২০১৮ | |
উত্তরসূরী | আশরাফ আলী খান খসরু |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ডুমুরিয়া,খুলনা | ১২ মার্চ ১৯৪৫
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
সন্তান | ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনানারায়ন চন্দ্র খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কালীপদ চন্দ ও মাতার নাম রেণুকা বালা চন্দ। নারায়ন চন্দ্র উলাগ্রামের পাঠশালায় তার শিক্ষাজীবন শুরু করে বান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক্যুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে একই বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। চাকুরীকরাকালীন সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি বিএড পাশ করেন।[৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনানারায়ন চন্দ্র চন্দ ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ২০০৫ সালের ১১ মার্চ চাকরি থেকে অবসর নেন।[৫]
শিক্ষক নেতা
সম্পাদনা১৯৬৮ সালে নারায়ন চন্দ্র চন্দ মাধ্যমিক শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি প্রতিষ্ঠাকালিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন।[৫]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনানারায়ন চন্দ্র চন্দ ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের ডুমুরিয়া থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৮৪ সালে তিনি ডুমুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে গঠিত কমিটিতেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি খুলনা-৫ আসনের ২০০০ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখার সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ছিলেন।[৫]
৫ আগস্ট ২০২৪ সালে অসহযোগ আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে গেলে পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিলে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান।[১][৬][৭][৮]
জনপ্রতিনিধিত্ব
সম্পাদনানারায়ন চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। ছয় মেয়াদে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য, তৎকালিন স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও পরে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে নারায়ন চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৯]
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চারদলীয় জোট সমর্থিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মিয়া গোলাম পরোয়ারের নিকট পরাজিত হন। [১০]
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১১]
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১২]
শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪][১৩]
২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হযন।[৩]
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনানারায়ন চন্দ্র চন্দের স্ত্রী একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাঁদের তিন পুত্র ও এক কন্যা। জ্যেষ্ঠ পুত্র বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনারারী সদস্য। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক এবং পূর্বে পরপর দুই মেয়াদে ডীন ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র ব্যবসায়ী ও কনিষ্ঠ পুত্র খুলনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর জামাতা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম ছিলেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা রাষ্ট্রপতির"। দৈনিক কালের কন্ঠ। ২০২৪-০৮-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১৪।
- ↑ "Cabinet gets 3 new ministers, one state minister"। Dhaka Tribune। ২০১৮-০১-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৪।
- ↑ ক খ "১১তম সংসদের সদস্যবৃন্দ"। জাতীয় সংসদ। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ২০১৯-১০-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ ক খ "বর্তমান ও সাবেক মাননীয় প্রতিমন্ত্রীগণ"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ ক খ গ ঘ "শিক্ষক নেতা ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিক নারায়ণ চন্দ্র চন্দ"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২ জানুয়ারি ২০১৮। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "যা আছে সংসদ ভেঙে দেওয়ার সারসংক্ষেপে"। বাংলা ট্রিবিউন। ৬ আগস্ট ২০২৪। ১৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আসন নং: ১০৩, খুলনা-৫, দল: আওয়ামী লীগ (নৌকা)"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ২০১৬-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৫।
- ↑ "১০ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ২০১৯-০১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৫।
- ↑ "সাবেক মন্ত্রী / উপদেষ্টাবৃন্দ"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১২ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২১।