গীতা দে
গীতা দে (৫ আগস্ট ১৯৩১ - ১৭ জানুয়ারি ২০১১) বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাঙালি লোকনাট্যের একজন ভারতীয় অভিনেত্রী ছিলেন।[১] তিনি মাত্র ছয় বছর বয়সে একজন মঞ্চ শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেছিলেন। শিশু অভিনেত্রী হিসাবে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আহুতি (১৯৪১)। তিনি দুই শতাধিক বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র এবং দুই হাজারেরও বেশি মঞ্চ নাট্যে অভিনয় করেছিলেন। তিনি সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, কতো আজানারে, তিন কন্যার মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন; যার মধ্যে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীতপরিণীতা উল্লেখযোগ্য।[২] তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রচারিত শ্রুতি নাটক অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় ড. এপিজে আবদুল কালামের কাছ থেকে তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছেন।
গীতা দে | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৭ জানুয়ারি ২০১১ কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স ৭৯)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | গীতা মা |
পেশা | অভিনেত্রী, গায়িকা |
কর্মজীবন | ১৯৩৮–২০০৮ |
সন্তান | অসিত দে, রুপা শেঠ, অমিত দে |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৯৩৮ সালে তিনি কলকাতার টালিগঞ্জের বাংলা চলচ্চিত্র জগতে অভিনেত্রী হিসাবে শুরু করেছিলেন। ধীরেন গাঙ্গুলি পরিচালিত আহুতিতে মাত্র ছয় বছর বয়সে একজন শিশু শিল্পী হিসাবে সর্বপ্রথম অভিনয় করেছিলেন।[৩]
তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং রেডিও নাটকে বেশ কয়েকটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে তাঁর শেষ নাটকটি ছিল বাদশাহী চাল (১৯৯৬); গণেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই নাটকটি উত্তর কলকাতার রঙ্গনা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়েছিল।
তিনি নানা ধরনের চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি এই সকল চলচ্চিত্রে তাঁর বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য অধিক পরিচিত। এমনকি তাঁর অভিনয় কিংবদন্তি লরেন্স অলিভিয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।[৪]
নেতিবাচক এবং হাস্যকর উভয় চরিত্রেই তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারাতে ষড়যন্ত্রকারী মায়ের ভূমিকায় তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন।[৫]
তাঁর দীর্ঘ কর্ম জীবন জুড়ে তিনি শিশির ভাদুড়ি, ঋত্বিক ঘটক, দেবকী বোস এবং সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালকদের সাথে কাজ করেছিলেন। তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিণীতা অবলম্বনে নির্মিত সঙ্গীতভিত্তিক বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন; যেখানে তাঁর সাথে সাইফ আলী খান এবং বিদ্যা বালানের মতো অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছিলেন। [৩]
অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও তিনি টলি লাইটস এবং চিরদিনই তুমি যে আমারের মতো সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।
গীতা দে ২০১১ সালের ১৭ই জানুয়ারি তারিখে ৭৯ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনা- ইন্দ্রাণী (১৯৫৮)
- মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)
- কোমল গান্ধার (১৯৬১)
- ডাইনী (১৯৬১)
- কাঠিন মায়া (১৯৬১)
- কাঞ্চন মূল্য (১৯৬১)
- সাথী হারা (১৯৬১)
- দুই ভাই (১৯৬১)
- তিন কন্যা (১৯৬২)
- কাঁচের স্বর্গ (১৯৬২)
- শুভ দৃষ্টি (১৯৬২)
- বন্ধন (১৯৬২)
- বর্ণচোরা (১৯৬৩)
- সাত পাকে বাঁধা(১৯৬৩)
- দুই বাড়ী (১৯৬৩)
- ছায়া সূর্য (১৯৬৩)
- অভয়া ও শ্রীকান্ত (১৯৬৫)
- শেষ পর্যন্ত (১৯৬৯)
- পিতা পুত্র (১৯৬৯)
- নিশিপদ্মা (১৯৭০)
- ময়দান (১৯৭১)
- মৌচাক (১৯৭৪)
- বাঘ বন্দী খেলা (১৯৭৫)
- দম্পতি (১৯৭৬)
- দত্তা (১৯৭৬)
- সূর্য সখি (১৯৮১)
- হিরের শিকল (১৯৮৮)
- মহাপৃথিবী (১৯৯১)
- সন্তান (১৯৯৯)
- কথবশেশান (২০০৪)
- পরিণীতা (২০০৫)
- টলি লাইটস (২০০৮)
- চিরদিনি তুমি যে আমার (২০০৮)
- নৌকা ডুবি (২০১০)
- আহবান (চলচ্চিত্র)
পুরস্কার
সম্পাদনা১৯৮৮ সালে তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আজীবন অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন গভর্নর সৈয়দ নুরুল হাসানের কাছ থেকে একটি তারকা পদক পেয়েছিলেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যশালায় আজীবন অবদানের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Gita Dey movies, filmography, biography and songs - Cinestaan.com"। Cinestaan। ২০১৯-০৩-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২৬।
- ↑ "Gita Dey dies at 79"। ১৯ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২০।
- ↑ ক খ "Thespian Gita Dey dies at 79"। ১৯ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২০।
- ↑ "Transition from a child star to character artiste"। ২২ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০২০।
- ↑ Mukerjea, Anit। "Gita Dey – Transition from a child star to character artiste"। Screen। ২২ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১০।