মেঘে ঢাকা তারা

ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত বাংলা চলচ্চিত্র

মেঘে ঢাকা তারা ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। এটি হল ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চতুর্থ এবং প্রথম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। শক্তিপদ রাজগুরুর মূল কাহিনী অবলম্বনে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখেন মৃণাল সেন। অভিনয়ে ছিলেন, সুপ্রিয়া চৌধুরী, অনিল চট্টোপাধ্যায়, নিরঞ্জন রায়, গীতা ঘটক, বিজন ভট্টাচার্য, গীতা দে, দ্বিজু ভাওয়াল, জ্ঞানেশ মুখার্জী, রনেন রায়চৌধুরী প্রমুখ।[]

মেঘে ঢাকা তারা
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পোস্টার
পরিচালকঋত্বিক ঘটক
প্রযোজকচিত্রকল্প
চিত্রনাট্যকারঋত্বিক ঘটক সমীরণ দত্ত(সহ লেখক)
কাহিনিকারশক্তিপদ রাজগুরু (মূল কাহিনী)
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারজ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র
চিত্রগ্রাহকদীনেন গুপ্ত
সম্পাদকরমেশ জোশি
মুক্তি
  • ১৪ এপ্রিল ১৯৬০ (1960-04-14) (ভারত)
স্থিতিকাল১৩৪ মিনিট
দেশভারত
ভাষাবাংলা

১৯৭৫ সালের বার্ষিক চিত্রবীক্ষণ পত্রিকায় ঋত্বিক ঘটক জানান, দেশবিভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), কোমল গান্ধার (১৯৬১) এবং সুবর্ণরেখা (১৯৬২) এই তিনটি চলচ্চিত্র মিলে ত্রয়ী (ট্রিলজি) নির্মিত হয়েছে।[][]

ভারতে অঁতর ধারার নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্রে ঋত্বিক ঘটকের কাজ উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত ঘটকের আটটি চলচ্চিত্রের মধ্যে 'মেঘে ঢাকা তারা' সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও আলোচিত। ঋত্বিক মারা যাবার পর, এ ছবিসহ তার অন্যান্য কাজ বিশ্বের চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে বেশি পরিচিতি পায়। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড চলচ্চিত্র বিষয়ক মাসিক সাময়িকীতে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায় এটি ২৩১ নম্বরে অবস্থান পেয়েছে।[]

কাহিনীসংক্ষেপ

সম্পাদনা

মেঘে ঢাকা তারা মেলোড্রামা ধাঁচের। কাহিনীর গাঁথুনি রৈখিক। পঞ্চাশ দশকে কলকাতার এক বাঙালি পরিবার ঘিরে কাহিনীর আবর্তন। ১৯৪৭-এর ভারত ভাগের পর এই শরণার্থী পরিবার আশ্রয় নেয় কলকাতা শহরের প্রান্তে। ছবির মূল চরিত্র নীতা, পরিবারের বড় মেয়ে। পড়াশোনার পাঠ চুকানোর আগেই পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। নীতার বৃদ্ধ বাবা স্কুলে পড়ায়; মা ঘরবাড়ি দেখাশোনা করে। নীতার দুই স্কুলপড়ুয়া ভাই-বোন, গীতা আর মন্টু। নীতার বড় ভাই শংকর; সংসারে মন নেই। শংকরের ধ্যান সুর নিয়ে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করে; বড় মাপের সঙ্গীত শিল্পী হতে চায় সে। আশা ছাড়ে না নীতা; স্বপ্ন দেখে ভাই শংকরকে নিয়ে, প্রেমিক সনৎকে নিয়ে। পিএচডি শেষে ফিরে আসবে সনৎ তার কাছে; বিয়ে করবে তাকে।

কাহিনী মোড় নিতে থাকে। নীতার বাবা আর মন্টু দুর্ঘটনায় পড়ে। শংকর চলে যায় বোম্বেতে, গায়ক হবার জন্য। সনৎ ফিরে আসে ঠিকই, কিন্তু নীতাকে বিয়ে করে না, গীতাকে বিয়ে করতে। নীতা অসুস্থ হয়ে পড়ে, যক্ষ্মা হয়, শরীর ভেঙে পড়ে, তবু হাল ছাড়ে না পরিবারের।

শংকর ফিরে আসে বোম্বে থেকে, পুরোদস্তুর ক্ল্যাসিকাল গায়ক হয়ে। নীতার চূড়ান্ত অসুস্থতা তার চোখ এড়ায় না। পাহাড়ের ওপর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় নীতাকে। জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে এসে, শংকরকে জানায়, সে বাঁচতে চায়। আকাশে, পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয় নীতার আকূতি।

অভিনয়ে

সম্পাদনা

তথ্যকণিকা

সম্পাদনা
  • নেদারল্যান্ড আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯১), সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (১৯৯৭), চেক প্রজাতন্ত্রের ফেবিও চলচ্চিত্র উৎসবসহ (২০০৫) নানা আন্তর্জাতিক উৎসবে দেখানো হয়েছে এ সিনেমা।
  • দক্ষিণ ভারতীয় হংসধ্বনি রাগ, এবং এ রাগভিত্তিক খেয়াল ব্যবহৃত হয়েছে সিনেমার আবহ সংগীতে।
  • রবীন্দ্রনাথের যে রাতে মোর দুয়ারগুলি গান ব্যবহৃত হয় ছবিতে।
  • ভারতের একটি নিউজ গ্রুপের পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপে প্রকাশ : এ চলচ্চিত্রের শেষ সংলাপ দাদা, আমি বাঁচতে চাই বাংলা চলচ্চিত্রে বহুল পরিচিত লাইন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)"দ্য নিউ ইযর্ক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৬, ২০১৪ 
  2. "Endnotes"। ejumpcut.org। ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৬, ২০১৪ 
  3. Rosalind Galt, Karl Schoonover (২০১০)। Global Art Cinema: New Theories and Historiesঅক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসআইএসবিএন 0-19-538562-4 
  4. "2002 Sight & Sound Top Films Survey of 253 International Critics & Film Directors"। cinemacom.com। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৬, ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা