শক্তিপদ রাজগুরু

ভারতীয় বাঙালি লেখক

শক্তিপদ রাজগুরু (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ - ১২ জুন ২০১৪)[১][২] একজন ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তাকে বাংলা জনপ্রিয় ধারার লেখক গণ্য করা হয়। মেঘে ঢাকা তারা তার জনপ্রিয়তম গ্রন্থ। দীর্ঘজীবী এই সাহিত্যিক তিন শতাধিক গ্রন্থের লেখক।[৩][৪]

শক্তিপদ রাজগুরু
Shaktipada Rajguru
জন্ম (1922-03-26) ২৬ মার্চ ১৯২২ (বয়স ১০২)
বাঁকুড়া জেলা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যু১২ জুন ২০১৪(2014-06-12) (বয়স ৯২)
কলকাতা, ভারত
পেশাঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক
জাতীয়তাভারতীয়
সময়কাল১৯৩৪ – ২০১৪
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিজনপদ
অচিন পাখি
ভাঙাগড়ার পালা
মেঘে ঢাকা তারা
অমানুষ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারবিভূতিভূষণ পুরস্কার
সর্বভারতীয় লায়ন্স পুরস্কার

জীবনী সম্পাদনা

শক্তিপদ রাজগুরুর জন্ম ১৯২২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার গোপবান্দি গ্রামে। পিতা মণীন্দ্র নাথ ছিলেন মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের পোস্টমাস্টার। [৫]। তার স্কুল জীবন কেটেছে মুর্শিদাবাদের পাঁচথুপি টি এন ইন্সটিটিউশন স্কুলে। পরে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ ও কলকাতা রিপন কলেজ পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পরিণত বয়সে কলকাতায় আবাস গড়েন। কলকাতার সিঁথিতে তার বাড়ির সামনের রাস্তার নাম রাখা হয়েছে শক্তিপদ রাজগুরু সরণি।[৩] ছোটো থেকেই অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল তাল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘ কবিতাগুলিও মুখস্থ আবৃত্তি করতেন তিনি। পড়াশুনোর পাশাপাশি তিনি বেড়াতে ভালোবাসতেন। ছোটোনাগপুরের জঙ্গল, দণ্ডকারণ্যের বনানী তাকে গভীরভাবে আকর্ষণ করতো। অবসর পেলেই ভ্রমণে যেতেন এই জায়গাগুলিতে।[৬] উদ্বাস্তুদের নিয়ে লিখে তার জীবনে যশ আসে। কিন্তু তিনি উদ্বান্তু ছিলেন না। তিনি বলেছেন, “আমি উদ্বাস্তু নই, পশ্চিমবঙ্গের আদি বাসিন্দা৷ বাঁকুড়ায় আমাদের সাত পুরুষের ভিটে ছিল৷ কিন্ত্ত আমার বাবা চাকরি করতেন ‘পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফস’-এ৷ মুর্শিদাবাদ জেলার পাঁচথুপি গ্রামের পোস্ট মাস্টার ছিলেন৷ আমার বারো বছর বয়স অবধি সেখানে কেটেছে৷ তখন আমি ভাবতাম যে ওই জায়গাটা আমার জায়গা৷ কিন্ত্ত বারো বছর পর বাবা যখন ট্রান্সফার হয়ে গেলেন তখন আমি আবিষ্কার করলাম যে এই মাটির আমি কেউ নই৷ সরকারের এক কলমের খোঁচায় আমার পায়ের তলা থেকে মাটিটা সরে গেল৷ বন্ধুবান্ধব, বারো বছরের ইতিহাস, স্মৃতি সব কিছু ছেড়ে আমি উদ্বাস্তু হয়ে পথে নামলাম৷”

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

তার লেখালেখির সূচনা ১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে। ১৯৪২-এ দেশ পত্রিকায় প্রথম গল্প “আবর্তন” লিখে তিনি সকলের নজর কাড়েন। ১৯৪৫-এ প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস দিনগুলি মোর। আদ্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হয়ে ছিন্নমূল পূর্ববঙ্গীয়দের সুখ-দুঃখ-বেদনা-যন্ত্রণা উপলব্ধি করার জন্য ঘুরেছেন 'তবু বিহঙ্গ' উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য। গল্প-উপন্যাস ও বিবিধ রচনার সমগ্র সম্ভার প্রায় তিনশতাধিক । উল্টোরথ পত্রিকায় ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় তার একটি বড়গল্প, যার নাম “চেনামুখ" । এ গল্পের আখ্যান ছিল উদ্বাত্তদের অসহনীয় জীবন সংগ্রাম। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক এ গল্পের কাহিনী অবলম্বনে তৈরী করে একটি চলচ্চিত্র যার নাম “মেঘে ঢাকা তারা”। এ চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং শক্তিপদ রাজগুরুকে জনসাধারণ্যে পরিচিত করে তোলে। ঋত্বিক ঘটকের প্রশিক্ষণে এ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন শক্তিপদ নিজেই।

তার নয়া বসত” গল্পের কাহিনী অবলম্বনে থেকে শক্তি সামন্ত নির্মাণ তৈরি করেন “অমানুষ” ছবিটি যা ১৯৭৫ সালে মুক্তি লাভ করে এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৮১-তে শক্তি সামান্ত তার আরেকটি গল্প নিয়ে দ্বিতীয় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার নাম ছিল “অনুসন্ধান”। বিখ্যাত হয়ে আছে অমিতাভ বচ্চনের অভিনয়ে। হিন্দিতে হয়েছে 'বরসাত কি এক রাত'। একই সঙ্গে ছবিটির বাংলা সংস্করণ বের হয় এবং তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।[৩] অন্যায় অবিচার শক্তিপদ রাজগুরুর উপন্যাস নিয়ে তৈরি আরেকটি চলচ্চিত্র।

ছোটদের জন্য তিনি অনেক উপন্যাস লিখেছেন। এ সবের কেন্দ্রীয় নায়ক “পটলা” বেশ খ্যাতি লাভ করেছিল।[৭]

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ তালিকা সম্পাদনা

  • মেঘে ঢাকা তারা
  • মনি বেগম
  • অন্তরে অন্তরে
  • জীবন কাহিনী
  • অনুসন্ধান
  • অমানুষ
  • জনপদ
  • অধিগ্রহণ
  • স্বপ্নের শেষ নেই
  • আজ-কাল-পরশূ
  • মাশুল
  • স্মৃতি টুকু থাক
  • অচিন পাখি
  • ভাঙাগড়ার পালা
  • দিনের প্রথম আলো
  • শেষ প্রহর
  • গোঁসাইগঞ্জের পাঁচালী
  • নিঃসঙ্গ সৈনিক
  • পরিক্রমা
  • অনিকেত
  • দূরের মানুষ
  • নবজন্ম
  • গ্রামে গ্রামান্তরে
  • দিন অবসান
  • অধিকার
  • বাঘা বায়েন
  • পটলা সমগ্র
  • পথের বাউল

স্বীকৃতি সম্পাদনা

তার প্রধান স্বীকৃতি পাঠকপ্রিয়তা। সম্মানিত হয়েছেন সারা জীবনের সাহিত্যকীর্তির জন্য 'সাহিত্যব্রহ্ম' পুরস্কারে। পেয়েছেন 'বিভূতিভূষণ পুরস্কার' ও সর্বভারতীয় সায়ন্স পুরস্কারও। [৫] তার জীবন ও কর্ম নিয়ে নিয়ে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ: “কথাসাহিত্যে ও চলচ্চিত্রে শক্তিপদ রাজগুরু: স্রষ্টা ও সৃষ্টি”। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন নিতাই নাগ।[৩] তার অনেক লেখাগ হিন্দি, তামিল, মলয়ালমমারাঠি ইত্যাদি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[৬] ২০১৮’র জুন মাসে প্রাবন্ধিক মানস চক্রবর্তী রচিত জীবনী গ্রন্থ “প্রসঙ্গঃ শক্তিপদ রাজগুরু” প্রকাশিত হয়।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. [লেখক কে?] (2014 [last update])। "'মেঘে ঢাকা তারা'র দেশে শক্তিপদ রাজগুরু - EI-Samay"indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ 13 June 2014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. [লেখক কে?] (2014 [last update])। "চলে গেলেন মেঘে ঢাকা তারার স্রষ্টা শক্তিপদ রাজগুরু"jugantor.com। সংগ্রহের তারিখ 13 June 2014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন
  4. প্রয়াত সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরু[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৩৬৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  6. সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরুর জীবনাবসান
  7. "বাল্যসখা ন্যাড়াই ছিল শক্তিপদর সর্বক্ষণের সঙ্গী"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৭ 
  8. "আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ পেল প্রাবন্ধিক মানস চক্রবর্তীর লেখা প্রসঙ্গঃ শক্তিপদ রাজগুরু"। ১৭ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮