টালিগঞ্জ
টালিগঞ্জ দক্ষিণ কলকাতার একটি অঞ্চল। এর উত্তর সীমায় পূর্ব রেলওয়ের দক্ষিণ শহরতলি লাইন, পূর্বে লেক গার্ডেন্স ও গল্ফ গ্রীণ, দক্ষিণে পশ্চিম পুটিয়ারি ও পূর্ব পুটিয়ারি এবং পশ্চিমে নিউ আলিপুর ও বেহালা অবস্থিত।
টালিগঞ্জ | |
---|---|
কলকাতা উপনগরীয় অঞ্চল | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৮′ উত্তর ৮৮°১৫′ পূর্ব / ২৩.৮° উত্তর ৮৮.২৫° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
মেট্রো স্টেশন | টালিগঞ্জ |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় সময় (ইউটিসি+৫.৩০) |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |
ইতিহাস
সম্পাদনাকলকাতার দ্য ফার্দিনান্দ দে লেসপ্স মেজর উইলিয়াম টলির নামে টালিগঞ্জের নামকরণ হয়। এই টলি সাহেবই ১৭৭৫-৭৬ সালে কলকাতার সঙ্গে অসম ও পূর্ববঙ্গের যোগসূত্র হিসাবে টালির নালা খনন ও ড্রেজ করার কাজ শুরু করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই টালির নালাটিও টলি সাহেবের নামেই নামাঙ্কিত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি টলি সাহেবকে এই নালা দিয়ে যাতায়াতকারী নৌকাগুলি থেকে টোল আদায় ও নালার ধারে একটি গঞ্জ বা বাজার স্থাপনের অনুমতি দিয়েছিল। ১৭৭৬ সালে তার এই স্বপ্নের প্রকল্পটি সম্পন্ন হয় এবং পরের বছরেই এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই এই সতেরো মাইল দীর্ঘ খালটি টালির নালা (ইংরেজিতে টলি’জ ক্যানেল) ও তার প্রতিষ্ঠিত বাজারটি টালিগঞ্জ নামে পরিচিত হয়। নালার পূর্ব পাড়ে বর্তমান টালিগঞ্জ রোডের কাছেই কোথাও এই বাজারটি অবস্থিত ছিল। বর্তমানে টালির নালার দুধারে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল টালিগঞ্জ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।
আজ টালিগঞ্জ কলকাতার অন্যতম প্রধান একটি অঞ্চল। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের কেন্দ্র টলিউড এই অঞ্চলে অবস্থিত এবং টালিগঞ্জ ও হলিউড নামের মিশ্রণে নামাঙ্কিত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাটালিগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনটি কলকাতা শহরতলি রেলওয়ের বজবজ শাখার লাইনে অবস্থিত। বালিগঞ্জ ও বিবাদীবাগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী একটি ট্রাম পরিষেবাও টালিগঞ্জে উপলব্ধ। শহরের উত্তর শহরতলি অঞ্চলে অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে টালিগঞ্জের সহজ যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে মহানগরের পরিবহন সংস্থাগুলির চালু করা নিয়মিত বাতানুকূল বাসগুলির দৌলতে।
কলকাতা মেট্রোর মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনটি টালিগঞ্জ অঞ্চলের যাত্রী পরিষেবা প্রদান করে। এটি আগে কলকাতা মেট্রোর দক্ষিণের প্রান্তিক স্টেশন ছিল। টালিগঞ্জ অঞ্চলের দ্বিতীয় মেট্রো স্টেশনটি হল রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন।
প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ
সম্পাদনা- ক্যালকাটা ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
- গণযোগাযোগ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন স্টাডিজ ইনস্টিটিউট
- কলকাতা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট
- ফটোগ্রাফি জাতীয় একাডেমী
- মনসুর হাবিবুল্লাহ মেমোরিয়াল স্কুল
- মিলনগড় গার্লস হাইস্কুল
- বি ডি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট
- নর্মদা হাইস্কুল
- শ্রুতিনন্দন
দ্রষ্টব্য স্থানসমূহ
সম্পাদনা- রবীন্দ্র সরোবর জাতীয় হ্রদ (পূর্বনাম ঢাকুরিয়া লেক)
- টালিগঞ্জ ক্লাব
- রয়্যাল ক্যালকাটা গলফ ক্লাব (আরসিজিসি)
- আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি
- ইন্দ্রপুরী ফিল্ম স্টুডিও
- টেকনিশিয়ানস স্টুডিও (এনটি ১ ও এনটি ২)
- নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডে শ্বেতাম্বর জৈন মন্দির
- মালঞ্চ সিনেমা হল
- চার্নক সিটি ২
- এম জি রোডে করুণাময়ী কালী মন্দির
- স্পেনসার্স রিটেল স্টোর – ডেইলি অ্যান্ড এক্সপ্রেস
- প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে সাউথ সিটি শপিং মল
- মেনকা সিনেমা হল
- টালিগঞ্জ রোডে সাধু তারাচরণের আশ্রম
- মধুবন সিনেমা হল
- নাট্যকার ও অভিনেতা উৎপল দত্তের বাসভবন
- উত্তমকুমারের মর্মর মূর্তি
ক্রীড়া
সম্পাদনা১৯৪৩ সালে রসা অগ্রগামী সমিতি টালিগঞ্জের প্রসিদ্ধ ফুটবল ক্লাব টালিগঞ্জ অগ্রগামী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৫ সাল থেকে টালিগঞ্জ অগ্রগামী নামে পরিচিত এই দল কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ বা ভারতীয় জাতীয় ফুটবল লিগে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। এই ক্লাবের হোম গ্রাউন্ড বা ঘরোয়া মাঠ হল ১৭,০০০ দর্শকাসন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম, যেটি টালিগঞ্জ অঞ্চলের একটি উল্লেখনীয় খেলার মাঠ।
রাজনীতি
সম্পাদনা২০০৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে টালিগঞ্জ আসন থেকে জয়লাভ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের অরূপ বিশ্বাস। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআইএম) মনোনীত প্রার্থী ডঃ পার্থপ্রতিম বিশ্বাসকে পরাস্ত করেন। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০১ সালে সিপিআইএম-এর গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়কে ও ১৯৯৬ সালে সিপিআইএম-এর আশিষ রায়কে পরাস্ত করেছিলেন। তারও আগে সিপিআইএম-এর প্রশান্ত শূর ১৯৯১ ও ১৯৮৭ সালে কংগ্রেসের পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৯৮২ সালে কংগ্রেসের অসীম দত্ত ও ১৯৭৭ সালে কংগ্রেসের পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাস্ত করেছিলেন।[১]
টালিগঞ্জ যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একটি অংশ এই কেন্দ্রটি থেকে বর্তমানে মিমি চক্রবর্তী ভারতের সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।[২]
বিশিষ্ট অধিবাসী
সম্পাদনা- আলি মহম্মদ সিবলি (১৮৭৯ - ?) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব, অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
- এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, (১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৬ – ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৭) ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা।
- উৎপল দত্ত, (মার্চ ২৯, ১৯২৯ - আগস্ট ১৯, ১৯৯৩) নাট্যকার ও অভিনেতা।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব
সম্পাদনা- রাজ্জাক - বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা
পাদটীকা
সম্পাদনা- ↑ "150 - Tollygunge Assembly Constituency"। Partywise comparison since 1977। Election Commission of India। ২০০৫-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-৩০।
- ↑ "General election to the Legislative Assembly, 2001 – List of Parliamentary and Assembly Constituencies" (পিডিএফ)। West Bengal। Election Commission of India। ২০০৬-০৫-০৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৮।