পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র
পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র বলতে কলকাতায় অবস্থিত টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক চলচ্চিত্রসমূহকে বোঝানো হয়। এটি টলিউড (ইংরেজি: Tollywood "টলিউড") নামে পরিচিত। যদিও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটি বলিউড, তেলুগু ও তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে অনেক ছোট, তবু এটি সমান্তরাল ও আর্ট ফিল্ম নির্মাণ করে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। বিভিন্ন নির্মাতা ও অভিনেতা ভারতীয় জাতীয় ফিল্ম পুরস্কার সহ আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে টলিউড থেকে রোমান্টিক ও সামাজিক ছবিই বেশি নির্মিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র | |
---|---|
নন্দন প্রেক্ষাগৃহ | |
সিনেমা পর্দার সংখ্যা | ৪৫০ টি |
প্রধান চলচ্চিত্র-পরিবেশক | শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস সুরিন্দর ফিল্মস এসকে মুভিজ রিলায়েন্স এন্টারটেনমেন্ট দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেনচার গ্ৰ্যাসরুট এন্টারটেইনমেন্ট উইন্ডোস প্রোডাকশন |
নির্মিত কাল্পনিক চলচ্চিত্র (২০১৭) | |
মোট | ১৬৩ টি |
মোট আয় (২০১৩) | |
মোট | ১১০ কোটি (₹) |
সত্যজিৎ রায়ের "পথের পাঁচালী(১৯৫৫)" ১৯৫৬ সালের কানস্ ফিল্ম ফেস্টিভালে বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট পুরস্কার লাভ করে।
নামকরণ তত্ত্বসম্পাদনা
"টালিউড" নামটি হলিউড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাখা হয়। এর নেপথ্যে আছেন আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার উইলফোর্ড ই. ডেমিং যিনি ভারতে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে জড়িত। ইন্ডাস্ট্রিটি যেহেতু টালিগঞ্জে অবস্থিত তাই হলিউডের সাথে মিল রেখে এর নাম "টালিউড" বা "টলিউড" রাখা স্বাভাবিকই ছিল। সেই সময়টিতে টালিগঞ্জ ছিল ভারতের অন্যতম সিনেমা কেন্দ্র, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলিউড ।[১]
১৯৩২ সালে ডেমিং টলিউডের নাম হলিগঞ্জ রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আবার টলিউড নামেই ফিরে আসেন কারণ "টালি" একটি নাম ও "গঞ্জ" বলতে বাজার বোঝায়। তাই টলিউডই যথার্থ ছিল।
ইতিহাসসম্পাদনা
বাংলায় চলচ্চিত্রের সূচনা ১৮৯০ সাল থেকে যখন কলকাতার থিয়েটারে বায়োস্কোপ দেখানো হতো। একদশকের মধ্যেই ইন্ডাস্ট্রির বীজবপন করেন হীরালাল সেন। তিনি রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে কলকাতার স্টার থিয়েটার, মিনার্ভা থিয়েটার, ক্লাসিক থিয়েটার ইত্যাদিতে জনপ্রিয় শো দেখাতেন। একটি লম্বা বিরতির পর হাল ধরেন ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি। তিনি ইন্দো-ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন যা বাঙালি মালিকানার প্রথম কোম্পানি (১৯১৮)। প্রথম বাংলা ফিচার ফিল্ম ছিল বিল্বমঙ্গল যেটি ১৯১৯ সালে মদন থিয়েটারের ব্যানারে নির্মিত হয়। "বিলাত ফেরত" ছিল আইবিএফসি'র প্রথম প্রযোজনা (১৯২১)। মদন থিয়েটারের জামাই ষষ্ঠী ছিল প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র এবং প্রেমাঙ্কুর আতর্থী পরিচালিত দেনা পাওনা চলচ্চিত্রটি ছিল বাংলার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। তারপর অনেক ইতিহাস হলো, তারমধ্যে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক এবং অন্যান্য নির্মাতারা তাদের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করে বাংলা চলচ্চিত্রকে অনেকদূর অগ্রসর করেন।
প্রথমদিকের উন্নয়নসম্পাদনা
নির্বাক যুগ: ১৯১৯-১৯৩০সম্পাদনা
হীরালাল সেন বাংলার অন্যতম সম্মানিত ব্যক্তি যিনি ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালক। তখনকার সব চলচ্চিত্রই ছিল নির্বাক।
প্রথম সবাক চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯৩০এর শুরুর দিকে। চলচ্চিত্রগুলো উর্দু কিংবা ফারসি ভাষায় নির্মিত হতো যাতে বড় বাজার ধরতে পারে। একটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানি। প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র হচ্ছে 'জামাই ষষ্ঠী' যেটি ১৯৩১ সনে নির্মিত হয়। প্রথম দিককার জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়া ও দেবকী বোস। প্রমথেশ বড়ুয়া চলচ্চিত্র পরিচালনা করে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন মাত্রা যোগ করেন। দেবকীও চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। তিনি ১৯৩২ সালে 'চণ্ডীদাস' নির্মাণ করেন। চলচ্চিত্রটি শব্দব্যবস্থার জন্য উল্লেখযোগ্য কারণ শব্দগ্রহণকারী মুকুল বোস ডায়লগ স্পেস আউট ও ফ্রিকুয়েন্সি মডুলেশন সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিলেন।
সবাক চলচ্চিত্রের উত্থান: ১৯৩১-১৯৪৭সম্পাদনা
ভারতীয় চলচ্চিত্রে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছবি 'দেনা পাওনা' ১৯৩১ সনের ৩০ ডিসেম্বর শুভমুক্তি পেয়ে কলকাতার চিত্রা সিনেমা হলে প্রথম প্রদর্শিত হয়।
স্বর্ণযুগ: ১৯৫২-১৯৭৫সম্পাদনা
এই সময়ের মধ্যে বাংলা সিনেমা তথা ভারতীয় সিনেমায় একটি বড়, এমনকি অসম্মানিত উপস্থাপনা উপভোগ করেছে। টলিউড সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালক উপহার দিয়েছিল। যিনি ছিলেন অস্কার বিজয়ী,ভারত ও ফ্রান্সের সর্বশ্রেষ্ঠ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন এবং লিজন অব অনার প্রাপক । এছাড়া পরিচালক মৃণাল সেন ফরাসি সম্মাননা প্রাপক দ্য অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস এবং রাশিয়ান অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ পান।
বাজেটসম্পাদনা
প্রতিবছর ১০০-১৬০ টি বাংলা সিনেমা মুক্তি পায় এবং প্রযোজিত হয়। যার বাজেট প্রতি মুভিতে গড়ে হয়ে থাকে ৫০,০০,০০০ টাকা থেকে ৫৫ মিলিয়ন টাকা । হোম এন্টারটেইনমেন্ট, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ২০ কোটি বাজেটে আমাজন অভিযানের মতো কিছু উচ্চ বাজেটের সিনেমা মুক্তি দিয়েছে এবং বক্স অফিসে প্রায় ৫০ কোটি রোজগার করে বক্স অফিসে সাফল্য অর্জন করেছে । এটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সর্বাধিক উপার্জনকারী সিনেমা। অন্যান্য ব্যয়বহুল সিনেমাের মধ্যে ১৫ কোটি টাকা বাজেটে নির্মিত চাঁদের পাহাড় (চলচ্চিত্র) এবং যোদ্ধা: দ্য ওয়ারিয়র কিছু ব্যয়বহুল সিনেমা।
মানের ক্রমসম্পাদনা
জাতীয় পুনর্মূল্যায়ন বোর্ড (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)সম্পাদনা
- জাতীয় পুনর্মূল্যায়ন বোর্ড পুরস্কার বিদেশী ভাষার ফিল্ম: সত্যজিৎ রায় (১৯৫৮-পথের পাঁচালী এবং ১৯৬০- অপুর সংসার)
বার্ষিক একাডেমি পুরস্কার (অস্কার)সম্পাদনা
- একাডেমি সম্মাননা পুরস্কার: সত্যজিৎ রায় (১৯৯২-" চলচ্চিত্রে তার বিরল কৃতিত্ব, গৌরবময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যা সারা বিশ্বের নির্মাতা ও দর্শকদের প্রভাবিত করে -তার স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কারে ভূষিত হন)
আঞ্চলিক পুরস্কারসম্পাদনা
আরো দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Sarkar, Bhaskar (২০০৮)। "The Melodramas of Globalization"। Cultural Dynamics। 20: 31–51 [34]। এসটুসিআইডি 143977618। ডিওআই:10.1177/0921374007088054।