কি যাদু করিলা

২০০৮-এর চন্দন চৌধুরী পরিচালিত চলচিত্র
(কি জাদু করিলা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কি যাদু করিলা ২০০৮-এর একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র[১] ছবিটি পরিচালনা করছেন চন্দন চৌধুরী এবং এটাই তার পরিচালিত প্রথম ছবি এর আগে তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও টিভি ব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন এর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ছবির প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামবাংলার পটভূমিতে চিত্রায়ণ করা হয়েছে। গ্রামবাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান কি যাদু করিলা পিরিতি শিখাইয়া এর শিরোনাম অনুসরন করে ছবির নামকরণ করা হয়েছে।

কি যাদু করিলা
ভিসিডির প্রচ্ছদ
পরিচালকচন্দন চৌধুরী
প্রযোজকআনোয়ার হোসেন মিন্টু
রচয়িতাচন্দন চৌধুরী
শ্রেষ্ঠাংশেরিয়াজ
পপি
মীর সাব্বির
রত্না
সাগরিকা
হুমায়ুন ফরীদি
ডলি জহুর
রেহানা জলি
সুরকারআলম খান
চিত্রগ্রাহকমাহফজুর রহমান খান
সম্পাদকসহিদুল হক
পরিবেশকসাদিয়া হোসেন কথাচিত্র
মুক্তি২০০৮
স্থিতিকাল১৪৩ মিনিট
দেশ বাংলাদেশ
ভাষাবাংলা ভাষা

ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- রিয়াজ, পপি, মীর সাব্বির (নবাগত), রত্না, সাগরিকা, হুমায়ুন ফরীদি, ডলি জহুর ও রেহানা জলি। এই ছবিতে অসাধারণ অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ রিয়াজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এর শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার ২০০৮ লাভ করেন।

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

ইউনিয়ন পরিষদের একজন চেয়ারম্যান কামাল (হুমায়ুন ফরীদি)। যার কাছে কোকিলের "কুহু কুহু" ডাকের চেয়ে কাকের "কা কা" ডাক বেশি পছন্দ। মানুষকে ঠকানো ও গরিবের সম্পদ দখলে তার কোনো জুড়ি নেই। নিজের মেয়েকে অপয়ার অপবাদ দিয়ে ছোট বেলা থেকে তার শালীকার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। একই ইউনিয়ন বসবাস করে এক প্রতিবাদী যুবক সাগর গায়েন (রিয়াজ)। সে তার গানে গানে সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদী করে তোলে এবং শোষকদের ধিক্কার দেয়। বিষয়টি কামাল চেয়ারম্যান মোটেও পছন্দ করেন না, তিনি সাগরের মাকে (রেহানা জলি) শাসিয়ে যান। মা তার একমাত্র সন্তান হারানোর ভয়ে পাশের ইউনিয়নে সাগরের মামার (কাবিলা) দোকান দেখাশোনা করার জন্য পাঠিয়ে দেয়।

সেই দোকানে একদিন একটি সুন্দরী মেয়ে এসে সাগরের মামার কাছে একটি গোলাপী রঙের চুলের ফিতা চায়লে মামা মেয়েটিকে বেগুলি রঙের ফিতা গছিয়ে দেয়। এতে প্রশ্ন জাগে সাগরের মনে। সাগর তার মামার কাছে থেকে জানতে পারে মেয়েটি অন্ধ এবং সে তাদের ইউনিয়নের কামাল চেয়ারম্যানের মেয়ে ঝিনুক (পপি) কিন্তু মেয়েটি অন্ধ এটা সাগর বিশ্বাস করতে পারছিল না। সন্দেহ দূর করতে সাগর ঝিনুকের পিছু নেয় এবং জানতে পারে ঝিনুক সত্যিই অন্ধ। কিন্তু এত সুন্দর যার চোখ দুটি সে কি করে অন্ধ হতে পারে। সেই চোখের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাগর গায়েন সুন্দর একটি গান গায়, গান শুনে ঝিনুক বুঝতে পারে এটা গায়েনের কণ্ঠ এবং সে চলে আসে গানের আওয়াজ অনুসরণ করে। এক সময় সাগর ও ঝিনুক দুজন দুজনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ঝিনুক সাগরের মুখমন্ডল ভালো করে স্পর্শ করে এবং সাগরের একটি মূর্তি তৈরী করে। হঠাৎ সেখানে আগমন ঘটে কামাল চেয়ারম্যানের। মেয়ের হাতে শত্রুর মূর্তি দেখে তা ভেঙ্গে ফেলে মেয়েকে আটকে রাখে ঘরে।

এরপরও সাগর ঝিনুকের খালার সহযোগিতায় দুজনে একবার দেখা করে এবং আগামীকাল বিয়ে করার আশা দিয়ে যায়। এদিকে সাগরের খালাতো বোন পারুল (সাগরিকা) সাগরকে জীবন সাথী হিসেবে পেতে চায় কিন্তু সাগর তাকে জানায় সে অন্য একজনকে ভালবাসে। পরদিন রাতের আঁধারে সাগর ও তার মাকে মেরে নদীতে ফেলে দেয় চেয়ারম্যানের লোকেরা। এদিকে সাগরের মামা বোন-ভাগ্নের কোনো খোঁজ না পেয়ে পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে। পরদিন সাগর নদীর ধারে তীক্ষ্ণ রোদের আলোর মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে। নৌকা বেয়ে যাওয়া এক মাঝিকে ডাকে কিন্তু তার গলা দিয়ে সাভাবিক আওয়াজ বের হয় না। কথা বলতে পারে না তাই খেলতে থাকা ছোট ছেলে মেয়েরা তাকে পাগল ভেবে ঢিল ছুড়ে মারে। কিছুদুর যাওয়ার পর সাগর একটি উঁচু জায়গা থেকে মামাকে দেখতে পায় এবং জোর গলায় চিত্কার করলেও সে শুনতে পায় না। চিত্কার করতে করতে একসময় উঁচু জায়গা থেকে অনেক ঢালুতে গড়িয়ে মামার কাছে এসে পড়ে। এদিকে ঝিনুক মনের টানে সাগরের খোঁজে রাস্তায় বের হলে আকাশের (মীর সাব্বির) গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়।

আকাশ ও তার মা (ডলি জহুর) পরিচয় জেনে আকাশকে জানায় ওর নাম ঝিনুক কামাল চেয়ারম্যানের মেয়ে তোর ছোট বেলার খেলার সাথী। আকাশ এই এলাকার চৌধুরী বাড়ির ছেলে এবং একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাই বাড়ি গিয়ে মায়ের সাথে আলাপ করে ঝিনুকের চোখের চিকিত্স্যা করার জন্য ঢাকা নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ঝিনুক যেতে রাজি হয়না। কামাল চেয়ারম্যান বিষয়টি চিন্তা করে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কাজে ব্যবহার করে। চেয়ারম্যান সাগরের খালাতো বোন পারুলকে হাত করে সাগরকে তার জীবনে ফিরিয়ে দেবে কলে। পারুল কামাল চেয়ারম্যানের কথা অনুযায়ী ঝিনুককে জানায় সাগর তার সব কিছু কেড়ে নিয়ে পাশের গ্রামের এক মেন্বারের মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। এবার অন্ধ ঝিনুক মনের দেখা ভুল ভেবে সাগরের কুত্সীত চেহারাটা নিজের চোখে দেখতে চায় এবং চোখ ভালো হওয়ার সাথে সাথে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে আসার শর্তে ঢাকা যায়।

শ্রেষ্ঠাংশে সম্পাদনা

সম্মাননা সম্পাদনা

 
রিয়াজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০৮ গ্রহণ করছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে, ২০১০-এ।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সম্পাদনা

কি যাদু করিলা ছবিটি ২০০৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সহ মোট পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।[২]

  • বিজয়ী শ্রেষ্ঠ অভিনেতাঃ রিয়াজ ২০০৮
  • বিজয়ী শ্রেষ্ঠ গায়কঃ এন্ড্রু কিশোর
  • বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সুরকারঃ আলম খান
  • বিজয়ী শ্রেষ্ঠ নৃত্যপরিচালকঃ মাসুম বাবুল
  • বিজয়ী শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহকঃ রেজাউল করিম বাদল

বাচসাস চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি পুরস্কার সম্পাদনা

সংগীত সম্পাদনা

কি যাদু করিলা
আলম খান
কর্তৃক ভিসিডি কভার
মুক্তির তারিখ২০০৮   বাংলাদেশ
ঘরানাচলচ্চিত্রের গান
প্রযোজকঈগল মিউজিক (ভিডিও)

কি যাদু করিলা ছবির সংগীত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত সংগীত পরিচালক আলম খান। আলম খান এর সংগীত আয়োজনে সাবিনা ইয়াসমিন, অ্যান্ড্রু কিশোর, রুনা লায়লা ও এস আই টুটুল এর মতো কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পীরা কণ্ঠ দিয়েছেন কিছু অসাধারণ গানে। ছবিতে শ্রুতি মধুর ছয়টি গান রয়েছে।

সাউন্ড ট্র্যাক সম্পাদনা

ট্র্যাক গান কণ্ঠশিল্পী নোট পর্দায়
প্রেম করো মন খাটি মানুষ চিনে অ্যান্ড্রু কিশোর রিয়াজ
চক্ষু দুইটা কাজল কালো রূপে ছড়ায় চান্দের আলো অ্যান্ড্রু কিশোর রিয়াজপপি
কি যাদু করিলা পিরিতি শিখাইয়া সাবিনা ইয়াসমিনঅ্যান্ড্রু কিশোর শিরোনাম গান রিয়াজপপি
তোমার সাথে ভাব করিতে রুনা লায়লা রিয়াজ ও সাগরিকা
তোমার আকাশ বুকে মন পাখি সুখে রুনা লায়লা ও এস আই টুটুল মীর সাব্বির ও রত্না
জানুক জানুক সকলে দেখুক দেখুক সকলে সাবিনা ইয়াসমিন ও এস আই টুটুল মীর সাব্বির ও পপি

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মেঘলা রহমান বৃষ্টি (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "অভিনয়ে সেরা রিয়াজ ও পপি"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  2. প্রকাশনাঃ বাংলা কণ্ঠ, ১০ এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] সগৃহীত হয়েছেঃ ১২ মে, ১০১১

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা