আশুতোষ কলেজ
আশুতোষ কলেজ হল দক্ষিণ কলকাতার যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের ২ নম্বর ফটকের একেবারে লাগোয়া অবস্থিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত একটি কলেজ। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে সাউথ সুবার্বন কলেজ নামে শিক্ষাবিদ স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কর্মাধ্যক্ষতায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সময়কালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন।[১] ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জীবনাবসানের পর কলেজটির পুনর্নামকরণ করা হয় আশুতোষ কলেজ। ড. দীপক কুমার কর হলেন কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ। এই কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত।
ধরন | সরকারি |
---|---|
স্থাপিত | ১৯১৬ |
অধ্যক্ষ | ড. দীপক কুমার কর |
শিক্ষার্থী | ৪০০০ |
অবস্থান | , , |
শিক্ষাঙ্গন | শহর |
ক্রীড়াবিষয়ক | নৌবাইচ, ফুটবল, ক্রিকেট |
ওয়েবসাইট | www.asutoshcollege.in |
জাতীয় মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন পরিষদ ২০০২ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ কলেজকে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম স্বীকৃতিদান করে; ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে অর্জিত সিজিপিএ স্কোর ৩.২২ পয়েন্টের সঙ্গে একটা 'এ' গ্রেড দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের চারটি অনুমোদিত শীর্ষ কলেজের মধ্যে এই কলেজের অবস্থান সুরক্ষিত করতে ব্যাপারটা সহায়ক হয়েছিল।[২][৩]
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল আশুতোষ কলেজের শতবার্ষিকী ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন ভারতের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় [৪]।
আশুতোষ কলেজ হল কলকাতার দ্বাদশ কলেজ যেখানে কলেজের নিজস্ব ব্যবহারের জন্যে প্রথমে ২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকল্পে ছাদ সোলার প্ল্যান্ট সংস্থাপন করেছিল। [৫][৬]
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজ তার বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। বর্তমান কলেজ ভবনের চল্লিশ হাজার বর্গফুট পরিসর আছে এবং শ্রেণিকক্ষ রয়েছে পঞ্চাশটারও বেশি যেখানে প্রায় ৪০০০ শিক্ষার্থীর জায়গা হয়। প্রাক-স্নাতক স্তরে সাম্মানিক / মেজর / বৃত্তিমূলক সমেত আটাশটি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
আশুতোষ কলেজে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশ বিজ্ঞানের এক স্নাতকোত্তর পাঠক্রম শুরু করা হয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে ফলিত ভূতত্ত্ব, বাংলা, কম্পিউটার বিজ্ঞান, তথ্য বিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়সমূহে স্নাতকোত্তর পাঠক্রম প্রবর্তন করা হয়েছিল। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, শিল্প রসায়ন এবং ভ্রমণ ও পর্যটন বিষয়ে অ্যাড-অন পাঠক্রম চালু করা হয়েছিল।[৭]
২০১২ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ কলেজকে সেরা কলেজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্ব এবং অবদানের জন্যে বছরের সেরা মাদার টেরেসা আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল।[৮]
২০১৪ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ কলেজ কর্তৃক চালু করা পর্যটন, শিল্প রসায়ন এবং হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য বিনামূল্যে অ্যাড-অন পাঠক্রম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদন করেছিল।[৯]
পছন্দের কলেজ
সম্পাদনাআশুতোষ কলেজের উদারনৈতিক কলা ও বিজ্ঞানের বিষয়সমূহের জন্যে কলকাতা এবং ব্যাপকভাবে রাজ্যের অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই এটা বাছাই করা এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যখন শহরের বেশ কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষা অনুষদ কলেজের ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস ও পরিসংখ্যান বিভাগে পাঠদান করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষাগারের পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। ভূবিজ্ঞান,পদার্থবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান এবং অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে প্রাক-স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্যে। গণ যোগাযোগ বিভাগ এবং যোগাযোগমূলক ইংরেজি বিভাগেও প্রয়োগকৌশল বৃদ্ধি করতে দেখা যাচ্ছে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] যাই হোক, এই অবস্থায় কলেজে শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের অনুপাত বেড়ে চলেছে, সেটা সাম্মানিক শ্রেণি কিংবা সাধারণ, যে বিষয়েরই হোক। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ন্যাক দ্বারা কলেজের ওপর প্রথম সমীক্ষায় এই সমস্যার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছিল। "আশুতোষ কলেজের মতো শহরের বড়ো বড়ো কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতকে আরো অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ রাখা জরুরি। শ্রেণিকক্ষের এই বিশাল ভারসাম্যহীনতা থেকে বেরিয়ে আসার একটি উপায় রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাবিষয়ক প্রশাসকদের চিন্তা করা প্রয়োজন, না-হলে এটা স্বাভাবিক পঠন-পাঠনের গতিকে কমিয়ে দিতে পারে।"[১০]
ন্যাকের স্বীকৃতি
সম্পাদনা২০১৫ খ্রিস্টাব্দে ন্যাক থেকে 'এ' অথবা 'বি' শ্রেণি প্রাপ্ত কলেজগুলোর প্রত্যেককে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক উৎসাহ সহায়তা দিয়েছিল। উচ্চশিক্ষা দপ্তর চেয়েছিল আশুতোষ কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রমাণিত শিক্ষা বিষয়ক ট্র্যাক রেকর্ডসহ ন্যাক ক্রমতালিকা পুনর্নবীকরণ করুক। কিন্তু আশুতোষ কলেজসহ অনেক কলেজ এই প্রক্রিয়ায় সামিল হতে চায়নি, কেননা, সেই সময় অধ্যক্ষ বলেছিলেন, 'আসল কোনো সুবিধা ছাড়াই দীর্ঘকালীন তোলা এবং তহবিল খরচ হয়'। প্রারম্ভিক মূল্যায়নের পিছনে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজের ক্রমতালিকা ছিল সি++, ক্রমতালিকার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে আর আবেদন করেনি। এই কলেজ তার পর থেকে শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেছিল এবং বর্তমানে ন্যাক দ্বারা একটি ক্রমতালিকায় 'এ' স্থানে রয়েছে।[১১]
সু্যোগ-সুবিধা
সম্পাদনাকলেজে উৎপাত বিরোধী উদ্যোগের অংশ হিসেবে উৎপাতের শিকার এবং একই সঙ্গে সম্ভাব্য আগ্রাসনকারী উভয়কে পরামর্শ দানের জন্যে কলেজে একটি আলাদা পরামর্শদানকারী সেল আছে।[১২]
কলেজের সবকটি বিভাগের নিজস্ব গ্রন্থাগার আছে এবং বিজ্ঞান বিভাগগুলোর জন্য সংগঠিত পরীক্ষাগার বর্তমান।
সংবাদ শিরোনামে
সম্পাদনা১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রীদের নম্রভাবে পোশাক পরতে বলার পর তৎকালীন অধ্যক্ষ শুভঙ্কর চক্রবর্তির বিরুদ্ধে নৈতিক বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছিল। [১৩]
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের পুরোনো কলেজে বসানো স্যানিটারি প্যাড বণ্টনকারীদের মেশিন ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের গোড়ায় দেখা যায় কাজ করছেনা। কলেজের বারান্দা এবং অঙ্গনের অন্যান্য প্রকাশ্য স্থানে রাখা মেশিনগুলো সম্পর্কে অনেক ছাত্রী জানতেন না যখন কিনা অন্যেরা মেশিনগুলো ব্যবহার করতে আত্মসচেতন ছিলেন। যাই হোক, কলেজ স্যানিটারি প্যাড সম্পর্কে অভিযোগ করেছে, প্যাডগুলো এতই নিম্নমানের ছিল যে, ছাত্রীরা এগুলো পরিত্যাগ করেছে। এছাড়াও তারা বলেছিল যে, রাজ্য সরকার দ্বারা যোগাযোগ করা মেশিনগুলো বসানো ও চালনা কিংবা বিক্রির পর সেবা অনিশ্চিত এবং খারাপ ছিল।[১৪]
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তনী
সম্পাদনা- বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় [১৫]
- অনিকেত চট্টোপাধ্যায়
- অমিতাভ চৌধুরী [১৬]
- উষা রঞ্জন ঘটক [১৭]
- বীণা মজুমদার
- দীপেন্দু প্রামাণিক
- অরুণ কুমার শর্মা
- পি সি সরকার, জুনিয়র
- ধীরাজ ভট্টাচার্য
- অম্লান দত্ত
রাজনীতিকগণ
সম্পাদনা- ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
- ফিরহাদ হাকিম
- গুরুদাস দাশগুপ্ত
- গীতা মুখোপাধ্যায়
- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- আবু হাসেম খান চৌধুরী [১৮]
- শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়
- মদন মিত্র
- পার্থ চট্টোপাধ্যায়
- মিমি চক্রবর্তী
অভিনেতাগণ
সম্পাদনা- তৃপ্তি মিত্র [১৯]
- রবি ঘোষ [২০]
- বাসবী নন্দী
- রঞ্জিত মল্লিক
- রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়
- মিমি চক্রবর্তী
- অন্তরা বিশ্বাস
বিজ্ঞানী
সম্পাদনালেখক ও কবিগণ
সম্পাদনাগায়কগণ
সম্পাদনাক্রীড়াবিদগণ
সম্পাদনা- সুনীল ছেত্রী
- চুনী গোস্বামী
- বেণু দাশগুপ্ত
- সৈয়দ নাঈমুদ্দিন
আরও দেখুন
সম্পাদনা- যোগমায়া দেবী কলেজ
- শ্যামাপ্রসাদ কলেজ
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Konar, Debashis (২৫ মার্চ ২০১৩)। "Grandson of Sir Ashutosh Mukherjee upset at Mamata's silence on letter"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৮।
- ↑ ":: ASUTOSH COLLEGE :"। asutoshcollege.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৩।
- ↑ "NAAC"।
- ↑ "Pranab Mukherjee to visit West Bengal on April 1–2"। www.netindian.in (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৩-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৩।
- ↑ "Ashutosh College among solar-compliant campuses"। The Times of India। ১৮ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৮।
- ↑ "Asutosh College has its own solar power"। The Times of India। ২৫ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৮।
- ↑ ":: Asutosh College :"।
- ↑ "History of the College"। ২০১৪-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Archived copy"। ২০১৪-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৩-১২।
- ↑ "State-wise Analysis of Accreditation Reports - West Bengal" (পিডিএফ)।
- ↑ Mitra, Bishwabijoy (২০ জুন ২০১৭)। "https://No NAAC stamp many West Bengal Colleges face deaffiliation"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ Mitra, Bishwabijoy (২০ জুন ২০১৭)। "Colleges set up with anti-ragging initiatives"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৮।
- ↑ Dasgupta, Priyanka (২ মে ২০১৮)। "I condemn moral policing in Kolkata: Asutosh College ex-principal"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ Mitra, Bishwabijoy (১৬ জানু ২০১৮)। "What Padman revolution ? Vending machines gather dust in city colleges"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Bappaditya Bandopadhyay Profile & Career"। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ "biography"। ১২ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Prospectus_2012" (পিডিএফ)। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ http://docs.myneta.info/affidavits/ls2009db/4858/AbuHasemKhanChoudhury_SC5.jpg
- ↑ "Tripti Mitra Biography by Chandi Mukherjee"। Gomolo.com। ২০০৮-০৮-১১। ৩ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১০-০৮।
- ↑ মানস মজুমদার (২০১২)। "ঘোষ, বিনয়"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Shubha Tiwari। "Writing as Social Service: The Literary Compass of Mahashweta Devi"। boloji.com। ৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১২।
She attended Ashutosh College of Calcutta University (1943-44)
- ↑ "Neel Dutt Profile Family Education Career"। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১২।