আয়মান ইবনে উবাইদ ( আরবি: أَيْمَن ابْنِ عُبَیْد ), একজন প্রাথমিক মুসলিম এবং ইসলামী নবী মুহাম্মদের সহচর ছিলেন।

আয়মান ইবনে উবাইদ
জন্ম৬১২ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু৬৩০ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যুর কারণহুনাইনের যুদ্ধে মুহাম্মদকে রক্ষার সময় শহীদ হয়েছেন।
জাতীয়তামক্কা
পরিচিতির কারণমুহাম্মাদের সাহাবা হিসাবে।
সন্তানআল-হাজ্জাজ ইবনে আয়মান
পিতা-মাতা
আত্মীয়

তিনি ছিলেন উম্মে আয়মানের পুত্র, যিনি মুহাম্মদকে বড় করতে সাহায্য করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী বনু খাজরাজ গোত্রের উবাইদ ইবনে যাইদ। যাইদ ইবনে হারিসার সাথে তার মায়ের দ্বিতীয় বিবাহের মাধ্যমে, তিনি ছিলেন উসামা ইবনে যায়েদের সৎ ভাই। [১]

হুনাইনের যুদ্ধে শত্রু আরব উপজাতিদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে আয়মান নিহত হন। [২]

আয়মানের পুত্র আল-হাজ্জাজ ইবনে আয়মান মুহাম্মদের জীবদ্দশায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সহীহ আল-বুখারি সহ ইসলামী সাহিত্যে আল-হাজ্জাজ থেকে মুহাম্মদের হাদীস উদ্ধৃত করা হয়েছে।[৩]

পটভূমি সম্পাদনা

আয়মান ছিলেন বারাকার পুত্র, একজন আবিসিনিয়ান। [৪] যিনি নবীর পিতা-মাতা আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল-মুত্তালিব এবং আমিনাহ বিনতে ওয়াহবের পরিবারের দাস হিসেবে কাজ করেছিলেন। আমিনার মৃত্যুর পর তিনি মুহাম্মদের দাসী হন। [৫]

আল-আবওয়াতে আমিনার মৃত্যুর পর, বারাকাহ মুহাম্মদের দেখাশোনা করেন এবং তার সাথে মক্কায় তার দাদা আব্দুল-মুত্তালিব ইবনে হাশিমের বাড়িতে চলে যান, যেখানে তিনি তার শৈশবকালে [৬] এবং তারপরে [৭] যৌবনে তার সেবা করেছিলেন। [৮]

মুহাম্মদ যখন খাদিজাকে বিয়ে করেন, তখন তিনি বারাকাকে মুক্ত করেন এবং উবাইদ ইবনে যাইদ নামে একজন খাজরাজ গোত্রের সাহাবীর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এই বিবাহের মাধ্যমে আয়মানের জন্ম হয় এবং এভাবে তিনি " উম্মে আয়মান " ("আয়মানের মা") নামে পরিচিত হন। [৯]

আয়মানের পিতা উবাইদ ইবনে যাইদ খায়বার যুদ্ধে নিহত হন। [১০]

মুহাম্মদের সাথে সম্পর্ক সম্পাদনা

ইসলামিক মূল সূত্রে আয়মানকে মুহাজিরদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যার অর্থ হল তিনি মক্কায় কুরাইশদের ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।

তার মায়ের মতো, আয়মানও মুহাম্মদের খেদমতে প্রবেশ করেন এবং তার পানির পাত্রের দায়িত্বে ছিলেন; যা দিয়ে তিনি অজু করতেন। [১১] এছাড়াও তিনি একজন রাখালও ছিলেন এবং মুহাম্মদের মালিকানাধীন আটটি ছাগলের দেখাশোনা করতেন। [১২]

তার থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে মুহাম্মদ শুধুমাত্র একজন চোরের হাত তখনই কেটে ফেলতেন যদি চুরি করা জিনিসটির মূল্য ন্যূনতম একটি ঢালের মূল্যের সমপরিমাণ হতো এবং সেই সময়ে একটি ঢাল একটি স্বর্ণমুদ্রার মূল্যের সমান ছিল।(হাদীসটি দূর্বল) [১৩] এই হাদিসটি সহীহ আল-বুখারির একটি বর্ণনা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।(শুধুমাত্র ঢালের কথা আছে, কিন্তু মূল্য ভিন্ন) [১৪]

মৃত্যু সম্পাদনা

হুনাইনের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে আয়মান নিহত হন। [১৫]

ইবনে কাসির লিখেছেন যে ইবনে ইসহাকের মতে, যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, শত্রুর অতর্কিত আক্রমণে মুসলিম বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং অনেক লোক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়। যদিও মুহাজিরদের একটি দল দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মুহাম্মদকে রক্ষা করেছিল। এই ব্যক্তিরা হলেন আবু বকর, উমর, আলী, আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, আবু সুফিয়ান ইবনে আল-হারিস, ফজল ইবনে আব্বাস, রাবিয়া ইবনে আল-হারিস, উসামা ইবনে যায়েদ এবং আয়মান ইবনে উবাইদ। সেদিন মুহাম্মদকে রক্ষা করতে গিয়ে আয়মানকে হত্যা করা হয়। [১৬] এই কারণে আইমানকে ইসলামে শহীদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

তার শাহাদাতের পর মুহাম্মাদের চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং যারা মুহাম্মদকে রক্ষা করার জন্য আয়মানের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন তার দৃঢ়তা এবং সাহসিকতার প্রশংসা করে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। [১৭]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বালাজুরি, খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৯৬
  2. মাহাল্লাতি, খন্ডঃ ২, পৃষ্ঠাঃ ২৬
  3. হুসাইন মালিক আশতিয়ানি, আফ্রিকার বিলাল, পৃষ্ঠাঃ ১২৭
  4. যুহরী, পৃষ্ঠাঃ ১৭৭; আল-তাবারানি, খন্ডঃ ২৫, পৃষ্ঠাঃ ৮৬
  5. ইবনে সাদ, খন্ডঃ ৮, পৃষ্ঠাঃ ২২৩; বালাজুরি, খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৯৬
  6. ইবনে কুতাইবা, পৃষ্ঠাঃ ১৫০
  7. বালাজুরি, খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ৪৭২
  8. ইবনে হাজার, আল-ইসাবা, খন্ডঃ ৮, পৃষ্ঠাঃ ৩৮০
  9. ইবনে সাদ, খন্ডঃ ৮, পৃষ্ঠাঃ ২২৩; খন্ডঃ ৪, পৃষ্ঠাঃ ৬১
  10. Sadeqi Ardestani, Ahmad (১৯৯৮)। Zanane daneshmand wa ravi hadith=the learned and narratar women‌। পৃষ্ঠা ৩। 
  11. Al Bidayah wa al Nihayah, vol. 6 pg. 39
  12. Husayn Malika Ashtiyani, Bilal of Africa, p. 119
  13. Sunan al Nasa’i, vol. 5, Book 46, Hadith: 4946
  14. Sahih al Bukhari, vol. 8, Book 81, Hadith: 788
  15. mahallati, vol.2, p. 26
  16. Ibn Kathir, The Battles of the Prophet, p. 175-176
  17. Husayn Malika Ashtiyani, Bilal of Africa, p. 119