শহিদ (ইসলাম)

(শহীদ (ইসলাম) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শহিদ (আরবি: شهيد šahīd, বহুবচনে: شُهَدَاء শুহাদাʾ ; স্ত্রীবাচক: শাহিদা) শব্দটি হলো পবিত্র কুরআনের তথা আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো সাক্ষী। এছাড়াও এর অন্য অর্থ হলো আত্ম-উৎসর্গ করা। ইসলামি বিশ্বাসের সাক্ষ্যদানে যে সচেতনভাবে গ্রহণযোগ্য মৃত্যু কামনা করে এবং আত্ম-উৎসর্গ করে তার উপাধি স্বরূপ শহিদ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

কুরআনের উদ্ধৃতি সম্পাদনা

কোরানের নিম্নোক্ত আয়াতে শহিদের অবস্থান জান্নাত বলে আল্লাহ্‌ উল্লেখ করেছেন:

আল্লাহ্‌র পথে যারা জীবন দিয়েছে, তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, তোমার সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে রিজিক দেন। আল্লাহ্‌ তাদেরকে যে অনুগ্রহ করেছেন তাতে তারা খুশি। তোমাদের পরবর্তীদের থেকে যারা তাদের সাথে এখনো মিলিত হয়নি তাদের ব্যাপারে তারা অনেক উৎফুল্ল। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন দুঃখ নেই।

— সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১৬৯–১৭০ (অনুবাদক মুহিউদ্দীন খান)

নিশয়ই আল্লাহ্‌ মুমিনদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তাদের প্রতি পাকা ও সত্য ওয়াদা। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহ্‌র চেয়ে অধিক কে হতে পারে। সুতরাং আল্লাহ্‌র সাথে যে সওদা বা কেনা-বেচা করছো তা নিয়ে আনন্দ করো। এটাই তোমাদের মহাসাফল্য।

— সূরা তাওবাহ্‌, আয়াত ১১১ (অনুবাদক মুহিউদ্দীন খান)

পবিত্র কুরআনুল কারিমে মুসলিম শহিদের জন্য জান্নাতের অঙ্গীকার করা হয়েছে:

আর যারা আল্লাহ্‌র পথে হিজরত করে এবং নিহত হয় বা মারা যায়, তাদেরকে অবশ্যই উত্তম জীবিকা দান করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তায়ালা অনেক ভালো রিজিকদাতা। তিনি তাদেরকে এমন এক স্থানে প্রবেশ করাবেন, সেখনে যা তাদেরকে খুশি করে দিবে, আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই মহাজ্ঞানী ও পরম সহনশীল।

— সূরা হাজ্জ্ব, আয়াত ৫৮-৫৯ (অনুবাদক মুহিউদ্দীন খান)

হাদিস সম্পাদনা

নিম্নের হাদিসগুলির মাধ্যমে শহিদদের গুরত্ব স্পষ্ট হয়-

আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ বলেছেন, যদি কেউ একনিষ্টভাবে শহিদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে, অবশ্যই এর প্রতিদান পাবে; এমনকি যদিও তা সে অর্জন করতে না পারে তবুও।

— সংগ্রহে মুসলিম বিন আল-হাজ্জাজ, "সহিহ মুসলিম"[১]

এ হাদিস দিয়ে শুধু শহিদগণ স্বর্গে বা জান্নাতে অবস্থান করবেন এটা বুঝানো মূখ্য নয়, বরং শহিদ হওয়ার উদ্দেশ্য বুঝানো হয়েছে। তাসত্ত্বেও, হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী শহিদেরকে সম্মানের চূড়ায় রাখা হয় এবং তাদের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত দেয়া হবে বলে ইসলামে প্রচলিত রয়েছে।

ইসলাম ধর্মের নবি মুহাম্মাদ শহিদ সম্পর্কে বলেছেন-

যার হাতে আমার জীবন সেই সত্তার শপথ, আমি আল্লাহ্‌র পথে শহিদ হতে চাই, যদি আমাকে পুনরুত্থাপিত করা হয়, আমি শহিদ হবো, পুনরায় জীবিত করা হলে আবার শহিদ হবো, তারপর পুনরুত্থাপিত হবো এবং শহিদ হবো

— সংগ্রহে মুহাম্মাদ আল-বুখারি, বুখারী শরীফ[২]

রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ বলেছেন- একমাত্র মুজাহিদ ব্যতীত কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের পর পৃথিবীর সবকিছু বিনিময়ে পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায় না; মুজাহিদরা বার বার পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায় এবং আরো দশবার শহিদ হতে চায়; কারণ তারা জান্নাতে (আল্লাহ্‌র নিকট থেকে) সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হয়।

— সংগ্রহে মুহাম্মাদ আল-বুখারিবুখারী শরীফ[৩]

আর‌ও অনেকগুলো হাদিস শহিদের জান্নাতি জীবন সম্পর্কে সুন্দরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শহিদগণ জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফেরদৌসে অবস্থান করে বলে মনে করা হয়।

বদরের যুদ্ধে হারিছা নামে এক বালক সাহাবি শহিন হন, তার মা রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ এর কাছে আসেন এবং বলেন, "হে আল্লাহ্‌র রাসুল আপনি জানেন আমার পুত্র হারিছা আমার নিকট কত প্রিয়! সে যদি জান্নাতে যায় তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করবো এবং আল্লাহ্‌র কাছে প্রতিদান আশা করবো, আর যদি তা না হয় তাহলে আপনি দেখতে পাবেন আমি কী করবো?" তিনি(রাসুলুল্লাহ সা.) বলেন- "আল্লাহ্‌ আপনাকে ক্ষমা এবং করুণা দান করুন, আপনি কি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন? আপনি কি মনে করেন যে, একটিমাত্র জান্নাত রয়েছে! না অনেক জান্নাত আল্লাহ্‌ মুমিনদের জন্য বানিয়েছেন, আপনার পুত্র সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ জান্নাতুল ফেরদৌসে রয়েছে।"'

এছাড়াও সামুরা বর্ণনা করেছেন-

রাসুলুল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ বলেছেন- "গতরাতে(স্বপ্নে) দুজন ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলো, তারা প্রথমে আমকে একটি গাছের চূড়ায় উঠিয়ে নেয়, এরপর আমাকে তা থেকেও উঁচুতে উঠায় ও সর্বোৎকৃষ্ট ঘরে প্রবেশ করায়। এরকম ঘর আমি কখনো দেখিনি।"। তাদের মধ্যে একজন বলে 'এটা হচ্ছে শহিদদের ঘর। 'সংগ্রহে 'মুহাম্মাদ আল-বুখারিবুখারী শরীফ[৫]

হাদিস অনুযায়ী প্রধানত পাঁচ ধরনের মৃতুকে শহীদ বলে গণ্য করা হয়ঃ-

আল্লাহ্‌র রাসুল বলেছেন- পাঁচ ধরনের মৃতুকে শহিদ হিসেবে পরিগণিত হয়, যারা প্লেগ রোগে, পেটের অসুখে, ডুবে যাওয়া, বিল্ডিং ধসে পড়ে ইত্যাদি কারণে মৃত্যুবরণ করলে এবং আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধে যে শহিদ হয়। '

— সংগ্রহে মুহাম্মাদ আল-বুখারিবুখারী শরীফ'[৬]

যে ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি রক্ষার্থে লড়াই করে মারা যায় সেও শহিদ:- আমি রাসুলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার জন্য মারা যায় সেও শহিদ হিসেবে গণ্য হয়।

— সংগ্রহে মুহাম্মাদ আল-বুখারিবুখারী শরীফ'[৭]

পবিত্র কুর'আন মাজিদে শহিদের মৃত্যু ও তারপর সমাধিস্থের ক্রিয়া-কর্ম সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট করে বলা হয়নি। তবে হাদিসে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। যেমন শুধুমাত্র শহিদদেরকে বিনা গোসলে এবং জানাযার নামাজ না পড়িয়ে দাফন সম্পন্ন করা যায়। তাদের রক্তাত্ত জামাসহ বা যে অবস্থায় মৃত্যু হয় সে অবস্থায় কবরে সমাধিস্থ করা হয়। এসম্পর্কে কয়েকটি হাদিস আছে তন্মধ্যে একটি হলো-

উহুদের যুদ্ধে দুজন করে শহিদ ব্যক্তিকে একই কবর এবং একটুরো কাপড়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছিলো, রাসুলুল্লাহ কবরে রাখার সময় সাহাদিদের জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ "দুজনের মধ্যে কে কুরআন শরীফ বেশি জানে?" সাহাবিদের একজন ইশারা করছিলো; তখন তিনি বললেন, "তাকে আগে কবরে রাখ" এবং বলতেন "কিয়ামতের দিন আমি এদের সাক্ষ্য হবো" তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, " শহিদের রক্তাক্ত কাপড়সহ কবরে দাফন কর।" তাদেরকে গোসল দেয়ার জন্য কিছু বলেননি এমনকি জানাযার নামাজ পড়াননি।

— সংগ্রহে মুহাম্মাদ আল-বুখারি, বুখারী শরীফ[৮]

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তাকে দেয়া হয়। একমাত্র শহীদ ব্যতীত; সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে।

— বুখারী, তাওহিদঃ ২৮১৮, (২৭৯৫) (মুসলিম ৩৩/২৯ হাঃ ১৮৭৭, আহমাদ ১২২৭৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬১৯)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দু’ব্যক্তিও ক্ষেত্রে আল্লাহ্ হাসেন। যারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ কারণে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা হত্যাকারীর তওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহর রাস্তায় শহীদ বলে গণ্য হয়েছে।

— (মুসলিম ৩৩/৩৫ হাঃ ১৮৯০, আহমাদ ৯৯৮৩) বুখারী (তাওহিদঃ ২৮৯৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২৭)

যুদ্ধে মৃত্যুবরণ সম্পাদনা

আধুনিক যুগ পূর্ববর্তী ব্যবহার সম্পাদনা

অষ্টাদশ শতাব্দিতে মুসলিম বিশ্বে মাতৃভুমিকে স্বাধীন করার জন্য ঔপনিবেশিক শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো। এসব যুদ্ধে যারা মৃত্যুবরণ করেছিলো। তাদের অধিকাংশকেই শহিদ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।[৯]

বিংশ শতাব্দিতে ধারণা সম্পাদনা

ইসলামি প্রজাতন্ত্রী ইরানের ইসলামিক বিপ্লব (১৯৭৮/১৯৭৯) এবং ইরাক–ইরান যুদ্ধের (১৯৮০-১৯৮৮) সময়ে শহিদের গুরত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে সৈন্যদের সম্মুখে বার বার তুলে ধরা হতো। ফলে বিপ্লবে ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যপক প্রভাব পড়ে। যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিলো।[১০] ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের সময় অনেক সৈন্য, ইসলামিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ জনগণ যুদ্ধে নিহিত হয়। তাদের প্রত্যেককে বিশেষ কবর স্থানে দাফন করে এবং তারা দেশের পক্ষ থেকে শহিদ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান পায়। ১৯৮০-৮৮ সাল পর্যন্ত ইরানের শিয়া ও ইরাকের সুন্নি মুসলিমদের যুদ্ধে সেনা কমান্ডাররা শাহাদাতের স্বাদ সর্বোচ্চ সম্মানের ও তাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট জান্নাতুল ফেরদৌস প্রাপ্তি হবে। ইত্যাদিভাবে সৈন্যদের উৎসাহ ও প্রেরণা প্রদান করা হতো। ঐ সময়ে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খমেনি শহিদ হওয়ার জন্য জনগণের ভিতরে ব্যাপক উৎসাহ প্রাদান করতে থাকে। ফলে প্রায় ১০হাজার তরুণ যোদ্ধা ও অনেক সাধারণ জনগণ ও শিশুরা ইরাকের অগ্রাসনকে পবিত্র প্রতিরোধ হিসেবে মানব ঢাল তৈরি করে। সেনা বাহিনীকে স্বেচ্ছাসেবক দল হিসেবে অস্ত্র বহনে সাহায্য করে। মাঝে-মধ্যে ইরাকি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানব স্রোত ব্যবহৃত হয়। যারা এ যুদ্ধে নিহত হয় তারা প্রত্যেকে শহিদ হিসেবে গণ্য হয়।

বসনিয়ার যুদ্ধের সময় শহিদ শব্দটি বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায়র সেনাবাহিনীর মুসলিম সৈন্যদের মাঝে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাতে ব্যবহার হয়েছিলো।

একবিংশ শতাব্দিতে জিহাদবাদ সম্পাদনা

সম্প্রতি জিহাদ ও শহিদ শব্দটির মূল অর্থকে ভিন্নদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শহিদ হওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ যে শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আমরা দিন দিন দূরে সরে গিয়েছি। মুসলমান নামধারী কিছু উগ্র ব্যক্তি ইসলামকে কলুষিত করছে। তারা আত্মঘাতি বোমা হামলা করে এবং তা ভিডিও করছে। যা ইসলামে পরিপূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছ। আত্মহত্যাকারীদের ইসলাম পছন্দ করে না। উহুদের যুদ্ধে এক সাহাবি খুবই আহত হয়। তার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সে সহ্য করতে না পেরে নিজের খঞ্জর বুকে ঢুকে দেয়। এবং মারা যায়। ফলে প্রাণপণ যুদ্ধ করা সত্ত্বেও তাকে শহিদ বলা হয়নি। বরং তাকে আত্মহত্যাকারী বলা হয়েছিলো এবং রাসুলুল্লাহ সেই সাহাবিকে জাহান্নামি বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সুতরাং ইসলামে জিহাদের নামে আত্মহত্যা বা আত্মঘাতি হামলার কোন স্থান নেই। বর্তমানে তাদেরকেও শহিদ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। গাজা উপত্যকা ও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে মুসলমান ও ইহুদীদের দ্বন্দ্বে কিছু অতি উৎসাহী লোক আত্মঘাতি বোমা হামলা করেছে তাদেরকেও শহিদ বলা হচ্ছে। তবে ইহুদীদের অন্যায় আক্রমনে ফিলিস্তিনি মুসলমান নিহত হলে তারা শহিদ হিসেবে গণ্য হবে। বলে মনে করা হয়। ১৮ই জানুয়ারি ২০০০সালে ১৯ শহিদ শিরোনামে এক ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওতে নয় এগারো বা ১১ই সেপ্টেম্বর প্লেন ছিনতাইকারিদেরকে শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এসব ভিডিও কোন ইসলামি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কারো ছিলো না। বরং উগ্র মানসিকতার কিছু লোকের ভিডিও। যার কোন আদৌ ভিত্তি নেই। এসব ভিডিওকে তথ্যসূত্র ধরে পুরো মুসলিম জাতিকে সন্ত্রাসী ও বোমাবাজ বানানো হয়েছে। ইসলামে সন্ত্রাসী ও মানব জাতি ধ্বংসকারীদের পছন্দ করে না বরং উত্তম চরিত্র ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হয়। তা সুন্দরভাবে শিক্ষা দেয়। এমনকি আল্লাহ্‌ তার রাসুলকেও জোর করে ইসলামে আনতে নিষেধ করেছেন। আর ইসলাম কবুল করার বিষয়াদি একমাত্র আল্লাহ্‌র হাতে রয়েছে। তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আফগানিস্থানের তালিবানরা আলকায়েদা নেতা ওসামা-বিন-লাদেনকে প্রথম সারির শহিদ বলে মনে প্রানে বিশ্বাস করে।

ইসলামের কিছু উগ্রবাদি মুসলমান অবিশ্বাসী পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, যুদ্ধ, আত্মঘাতী হামলা পরিচালনা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে বৈধতা দেয়ার জন্য মূলত শহিদ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। আইএসআইএল এর বর্ণনা অনুযায়ী, যারা নিয়মিতভাবে অবিশ্বাসী পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, যুদ্ধ ও আত্মঘাতী হামলায় অংশগ্রহণ করবে এবং শত্রুর বিমান হামলায় নিহত হবে তারা সকলেই শহিদ। বলে উল্লেখ করেছে। ফলস্বরূপ পশ্চিমা গণমাধ্যম গুলো শহিদ শব্দকে ভিত্তি ধরে নতুন নতুন শিরোনাম করছে। সন্ত্রাসীদের প্রতি ইসলামি শ্রদ্ধা নিবেদন শিরোনামে আমেরিকান গণমাধ্যম একসাথে লিখে যাচ্ছে। নারিনা রুস্তজমি জরিপ ও গবেষণা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, আমেরিকান গণমাধ্যম ইসলামি দুটি শব্দ তথা শহিদ এবং হুরি নিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। ফলে ইসলামকে সন্ত্রাসীর ধর্ম, অশ্লীলতায় পূর্ণ ও অযৌক্তিক ধর্ম বলে সকলের কাছে পরিচিত করা হচ্ছে। যাতে আমেরিকানরা ইসলাম ধর্ম থেকে দূরে থাকে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় সম্প্রতি আমেরিকায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যান্য ব্যবহার সম্পাদনা

একজন মুসলিম নর বা নারী তার সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে মারা গেলে তাকে শহিদ বলা হয়। পাকিস্তানে যে আল্লাহ্‌র পথে তথা ইসলাম রক্ষার্থে অথবা পাকিস্তানের ভূখণ্ড রক্ষার্থে মৃত্যুবরণ করে তাদেরকে শহিদ বলা হয়। সময়ের পরিক্রমায় অমুসলিম তথা আরবীয় খৃষ্টানরা শহিদ শব্দটি তাদের নিজেদের মৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দুধর্মের(সনাতন ধর্ম) লোকেরা শহিদ শব্দটিকে সংস্কৃততে পরিবর্তন করে "হুতাত্মা" করেছে (हुतात्मा হলো দেবনাগরী লিপি এবং हुत् (হিন্দি), হুত্ এর অর্থ হলো আত্মত্যাগ, পূর্ণ অর্থ হলো আত্মত্যাগ করে যে আত্মা বা যাকে শহিদ বলা হয়)। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী এই হুতাত্মাকে শহিদ বলে গণ্য করা হয়। এমনকি শিখ ধর্মাবলম্বীরাও শহিদ শব্দটি গ্রহণ করেছে। যেমন তাদের গুরত্বপূর্ণ নেতা শহিদ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে শহিদ মতি দাস এবং শহিদ ভগৎ সিং অন্যতম। তাদেরকে শহিদ বলে গণ্য করা হয়।

নারী শহিদা সম্পাদনা

একজন মহিলা ইসলামি রীতি অনুযায়ী শহিদ হলে তাকে শাহিদা বলা হয়।(شَهِيدَة শাহিদা)। আবার কেউ যদি সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করে তাকেও শহিদা বলা হয়ে থাকে। [১১] । ইসলামের সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের মধ্যে নুসাইবা বিনতে কা'ব ছিলো অন্যতম। তবে সুমাইয়া বিনতে খাইয়াত হলো ইসলামের প্রথম শাহিদা। তিনি ইসলাম গ্রহণ করার কারণে শাহিদা করা হয়েছিলো। মক্কার মুসলিম বিদ্বেষী কুরাইশ বংশের ও কাফিরদের নেতা আবু জেহেল তার তলপেটে ছুরি ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। [১২] আধুনিক মুসলিম সাহিত্যে তার নাম ও জীবনী উল্লেখ্য নেই। তবে রাসুলুল্লাহ এর সময়কার অনেক সাহিত্যে তার নাম ও সংক্ষিপ্ত জীবনী পাওয়া যায়।[১৩]

তথ্যসূত্র ও পাদটীকা সম্পাদনা

  1. সহীহ মুসলিম, ০২০:৪৬৯৪ (ইংরেজি)
  2. সহীহ বুখারী, ৪:৫২:৫৪ (ইংরেজি)
  3. সহীহ বুখারী, ৪:৫২:৭২ (ইংরেজি)
  4. সহীহ বুখারী, ৫:৫৯:৩১৮ (ইংরেজি)
  5. সহীহ বুখারী, ৪:৫২:৪৯ (ইংরেজি)
  6. সহীহ বুখারী, ৪:৫২:৮২ (ইংরেজি)
  7. সহীহ বুখারী, ৩:৪৩:৬৬০ (ইংরেজি)
  8. সহীহ বুখারী, ২:২৩:৪২৭ (ইংরেজি)
  9. ""Martyrdom". In The Islamic World: Past and Present. Ed. John L. Esposito. Oxford Islamic Studies Online. 5 December 2012."। ২৮ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২০ 
  10. Wright, Robin (২০০১-১২-০৪)। Sacred Rage: The Wrath of Militant Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Simon and Schuster। আইএসবিএন 978-0-7432-3342-2 
  11. Lumbard, Joseph E.B. (2004) Islam, Fundamentalism, and the Betrayal of Tradition. World Wisdom Publishing, আইএসবিএন ০৯৪১৫৩২৬০৭ (30)
  12. Cook, David (2007). Martyrdom in Islam. Cambridge University Press. আইএসবিএন ০৫২১৬১৫৫১৮.
  13. Cook, David (2007). Martyrdom in Islam. Cambridge University Press. আইএসবিএন ০৫২১৬১৫৫১৮. p. 14.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা