আবদুল হামিদ

বাংলাদেশের ২০ ও ২১তম রাষ্ট্রপতি
(আব্দুল হামিদ (রাজনীতিবিদ) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মোহাম্মদ আবদুল হামিদ (জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৪৪) হলেন একজন বাংলাদেশী প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি।[][] তিনি বাংলাদেশের ‌২০ ও ২১তম (ব্যক্তি হিসেবে ১৭তম) রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে।[] তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী রাষ্ট্রপতি ছিলেন।[] তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ১৪ জুলাই, ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ জুলাই, ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ১২ জুলাই, ২০০১ সাল থেকে ৮ অক্টোবর, ২০০১ সাল পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে ২৫ জানুয়ারি, ২০০৯ সাল থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাল পর্যন্তও দায়িত্ব পালন করেছেন।[] প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অসুস্থতাজনিত কারণে তার মৃত্যুর ৬ দিন পূর্বেই ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে তিনি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন ছিলেন।

মোহাম্মদ আবদুল হামিদ
২০১৯ সালে ভারতের নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে আবদুল হামিদ
২০ ও ২১তম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
১৪ মার্চ ২০১৩ – ২৪ এপ্রিল ২০২৩
ভারপ্রাপ্ত: ১৪ মার্চ ২০১৩ – ২৪ এপ্রিল ২০২৩
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা
পূর্বসূরীজিল্লুর রহমান
উত্তরসূরীমোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন
জাতীয় সংসদের স্পিকার
কাজের মেয়াদ
২৫ জানুয়ারি ২০০৯ – ২৪ এপ্রিল ২০১৩
পূর্বসূরীজমিরুদ্দিন সরকার
উত্তরসূরীশিরীন শারমিন চৌধুরী
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার
কাজের মেয়াদ
১৪ জুলাই ১৯৯৬ – ১০ জুলাই ২০০১
পূর্বসূরীএল. কে. সিদ্দিকী
উত্তরসূরীআখতার হামিদ সিদ্দিকী
ময়মনসিংহ-৩০ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মার্চ ১৯৭৩ – ৬ নভেম্বর ১৯৭৬
পূর্বসূরীনতুন আসন
উত্তরসূরীআসন বিলুপ্ত
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৭ মে ১৯৮৬ – ৩ মার্চ ১৯৮৮
উত্তরসূরীআব্দুল লতিফ ভূঁইয়া
কাজের মেয়াদ
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬
পূর্বসূরীআব্দুল লতিফ ভূঁইয়া
উত্তরসূরীইমদাদুল হক
কাজের মেয়াদ
১২ জুন ১৯৯৬ – ২৯ অক্টোবর ২০০৬
পূর্বসূরীইমদাদুল হক
উত্তরসূরীআফজাল হোসেন
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ – ২৩ এপ্রিল ২০১৩
পূর্বসূরীওসমান ফারুক
উত্তরসূরীরেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1944-01-01) ১ জানুয়ারি ১৯৪৪ (বয়স ৮১)
কামালপুর, ময়মনসিংহ জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
রাজনৈতিক দলআওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীরাশিদা হামিদ[]
সন্তানরেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক
রাসেল আহমেদ তুহিন
রিয়াদ আহমেদ তুষার
স্বর্না হামিদ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীগুরুদয়াল কলেজ
পেশাআইনজীবীরাজনীতিবিদ
যে জন্য পরিচিতরাজনীতিবিদ, স্পিকার, রাষ্ট্রপতি
পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (২০১৩)

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তাকে ২০১৩ সালে স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত করা হয়।[]

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মাতার নাম তমিজা খাতুন।[] তিনি নিকলী জিঃ সিঃ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি ও বিএ পাশ করেন। সরকারী গুরুদয়াল কলেজের ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শক্রমে ঢাকা সেন্ট্রাল ল' কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে ওকালতি করেছেন। কিশোরগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন বেশ কয়েকবার।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

দাম্পত্য জীবনে তিনি স্ত্রী রাশিদা হামিদের সাথে সংসারধর্ম পালন করছেন।[] রাশিদা হামিদ কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। তাদের বড় সন্তান রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলের সংসদ সদস্য। এছাড়াও তাদের এক ছোট ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন এবং অপর ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং এক কন‍্যা স্বর্না হামিদ।

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা

আবদুল হামিদ আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

১৯৬৩ সালে গুরুদয়াল সরকারী কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৬৫ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি এবং ১৯৬৬-১৯৬৭ মেয়াদে অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করেন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।

তিনি কিশোরগঞ্জের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জের রথখোলা মাঠে ছাত্র জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩০ (বর্তমান কিশোরগঞ্জ-৫) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[] ৭ মে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১০] তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১১]

১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১২] ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১ অক্টোবর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১৩] ১ নভেম্বর ২০০১ সাল থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[১৪] ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তিনি পুনরায় জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হয়ে ২৩ এপ্রিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন।

রাষ্ট্রপতিত্ব

সম্পাদনা

২০তম রাষ্ট্রপতি

সম্পাদনা

কোনরূপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ২৯ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরূপে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ২১ এপ্রিল তারিখে। অতঃপর এ নির্বাচনে অন্য কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় ও প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ ২০ এপ্রিল তারিখে তাঁকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।[১৫] এর ফলে তিনি জাতীয় সংসদের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্পিকার হিসেবে দেশের তৃতীয় অবস্থান থেকে প্রথম অবস্থানে উন্নীত হলেন ও তার স্পিকার পদটি শূন্য হয়ে যায়। তার পূর্বে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।[১৬] নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার এ এম এম শওকত আলী কাছ থেকে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[১৭]

 
মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ৭ জুন ২০১৫ তারিখে বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী মোদি এর সাথে বৈঠক করেন

২১তম রাষ্ট্রপতি (পুনঃনির্বাচিত)

সম্পাদনা

আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪শে এপ্রিল ২১তম (পুনঃ নির্বাচিত) রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।[১৮] ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[১৯] তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘতম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।[২০]

 
ভারতীয় সেনাপ্রধান, জেনারেল বিপিন রাওয়াত ১ এপ্রিল, ২০১৭-এ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাত করছেন

নির্বাচনী ইতিহাস

সম্পাদনা

৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী

সম্পাদনা

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছিল, যদিও তাকে সে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি।[২১][২২] ফেব্রুয়ারিতে বুলডোজার কর্মসূচি চলাকালে আব্দুল হামিদের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।[২৩]

দেশত্যাগ ও প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

৮ মে ২০২৫ আব্দুল হামিদের দেশত্যাগের খবর প্রকাশিত হয়।[২৪] অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলে যে, চিকিৎসার জন্য তিনি থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।[২১] আরও বলা হয়, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তারা বলছে, তার (আবদুল হামিদ) দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিংবা কোনো বাহিনীর আপত্তি ও নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে দেশত‍্যাগে বাধা দেওয়া হয়নি, এছাড়াও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানায়, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয়েছে।[২৫] হান্নান মাসুদ দাবি করেন যে, সরকারের ক্ষমতাসীন লোকদের অনুমতিতে বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর ফোন কলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার আগেই নিরাপদে দেশত্যাগ করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।[২৬] খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনে দাবী করা হয় তার নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার বিষয়ে সরকারপক্ষের অনেক লোকই অপ্রকাশ্যভাবে জড়িত ছিল, এছাড়াও আব্দুল হামিদ এসময় বাধাহীনভাবে ভিআইপি টার্মিনাল ব্যবহার করেছেন, প্রায় ৪ ঘণ্টা বিমানবন্দরে ছিলেন।[২৭] এ ঘটনায় উত্তেজনার পর সরকার জড়িত হিসেবে ১ জনকে (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) প্রত্যাহার ও ২ জনকে বরখাস্ত করে।[২৮] নুরুল হক নুর, ফরহাদ মজহার, মাহফুজ আলম, গণ অধিকার পরিষদসহ অনেকে এর প্রতিবাদ করেন।[২৯][৩০][৩১][৩২] এসময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন যে, আব্দুল হামিদের দেশ তাদের সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন।[৩৩] সারজিস আলম বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা, এ জন্য সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসআসিফ নজরুলকে জবাবদিহি করা উচিত।[৩৪] এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ৮ মে ২০২৫ রাতে একটি গণমাধ্যমকে আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে।[৩৫][৩৬] সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সৈয়দপুর বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ করে ও সাবেক রাষ্ট্রপতি কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান।[৩৭] আব্দুল হামিদকে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট হিসেবে বিচারের আওতায় না এনে তার আগেই নিরাপদে দেশ ত্যাগ করতে দেওয়ার প্রতিবাদে ৮ মে ২০২৫ রাতে হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার পর্যন্ত ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেন, যাতে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ আরো অনেকে যোগ দেন।[৩৮] সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশে ফিরে আসা সাবেক রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ চিকিৎসা শেষে গত ৮ই জুন ২৫ইং দিবাগত রাতে বাংলাদেশ ফিরে আসেন। তখন তার সাথে ছিলেন তার ছোট ছেলে ও তার শ্যালক। সাবেক এ রাষ্ট্রপতির ফিরে আসা নিয়ে নানা স্থানে নানা গুঞ্জন উঠেছে।

প্রাপ্তি

সম্পাদনা

আবদুল হামিদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[৩৯] কিশোরগঞ্জ জেলায় তার নামে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজ নামক একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[৪০] ২০২৩ সালে তার নামানুসারে একটি সেনানিবাসের নামকরণ করা হয়।[৪১]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Eight receive Independence Awards"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৩-০৩-২৫। ২০১৩-০৩-২৮ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২১ 
  2. বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম"দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ"দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৫-০৮ 
  3. "সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ থাইল্যান্ডে গেছেন"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৫-০৮ 
  4. "বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো: আবদুল হামিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুন:নির্বাচিত"বিবিসি বাংলা। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। 
  5. "President Hamid made a unique record"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৪-২৫। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১৪ 
  6. ""Speaker's Biography". Bangladesh Parliament. Retrieved 22 March 2011." (পিডিএফ)। ৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৮ 
  7. "রাষ্ট্রপতির জীবনবৃত্তান্ত"। ২০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে আসল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ 
  8. হাসান, সোহরাব (২৫ এপ্রিল ২০২৩)। "আবদুল হামিদের ১০ বছর ৪১ দিন"দৈনিক প্রথম আলো 
  9. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  10. "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. "৮ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  14. "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২০১৬-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮ 
  15. Hamid elected president, retrieved: 23 April, 2013
  16. ""Former Presidents:Abdur Rahman Biswas" (HTML)। Official website of the Bangabhaban (The president house of bangladesh). Retrieved 2008-04-17"। ২০১২-০৬-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-২৩ 
  17. "বঙ্গভবনের ভেতর হামিদের 'রঙমহল'!"দৈনিক ইনকিলাব। ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪। 
  18. "আরও ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ"দৈনিক প্রথম আলো। ২৪ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  19. আহমেদ, মোশতাক (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে আবদুল হামিদ যেসব সরকারি সুবিধা পাবেন"দৈনিক প্রথম আলো 
  20. হোসেন, আনোয়ার (২৫ এপ্রিল ২০২৩)। "আবদুল হামিদ ছাড়া অন্য রাষ্ট্রপতিরা কেন বিদায় সংবর্ধনা পাননি"দৈনিক প্রথম আলো 
  21. "চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ"আজকের পত্রিকা। ৮ মে ২০২৫। 
  22. "সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৫ জানুয়ারি ২০২৫। 
  23. "কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদের বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন"প্রথম আলো। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। 
  24. "দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ"বাংলা ট্রিবিউন। ৮ মে ২০২৫। 
  25. Pratidin, Bangladesh (৮ মে ২০২৫)। "আবদুল হামিদের সঙ্গে আরও দেশ ছাড়লেন যারা | | বাংলাদেশ প্রতিদিন"bd-pratidin.com। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  26. "কোন কার্যালয়ের ফোনে দেশত্যাগ করতে পারলেন আব্দুল হামিদ, জানালেন মাসউদ"আমাদের সময়। ৮ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  27. "সবাই সবকিছু জানে তবু তদন্ত কমিটি"Jugantor। ৯ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  28. "আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২"The Daily Ittefaq। ৮ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  29. Sun, Daily (মে ২০২৫)। "সরকার কেন কাঙ্ক্ষিত কাজ করতে পারছে না, যা বললেন উপদেষ্টা মাহফুজ"ডেইলি সান বাংলা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  30. প্রতিবেদক, কালবেলা (৮ মে ২০২৫)। "সরকারের ইশারাতেই আবদুল হামিদ দেশ ছাড়েন : ভিপি নুর | কালবেলা"কালবেলা | বাংলা নিউজ পেপার। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  31. জনকণ্ঠ, দৈনিক (৯ মে ২০২৫)। "আবদুল হামিদের 'নিরাপদ' দেশত্যাগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চরম অবমাননা: ফরহাদ মজহার"দৈনিক জনকণ্ঠ || Daily Janakantha (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  32. "স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ দাবি গণ অধিকার পরিষদের"www.kalerkantho.com। মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  33. নিউজ, সময় (৮ মে ২০২৫)। "আব্দুল হামিদ পালানোর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে পদত্যাগ করব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা | বাংলাদেশ"Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  34. "৯ মাস পরে আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়েছেন, এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা : সারজিস"www.kalerkantho.com। মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  35. "আওয়ামী লীগ বা তার কোনো সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে পারে: আসিফ নজরুল"Independent Television। ৯ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  36. "নিষিদ্ধ হতে পারে আওয়ামী লীগ, সম্ভাবনার কথা বললেন আসিফ নজরুল"The Daily Ittefaq। ৮ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  37. "সৈয়দপুর বিমানবন্দরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভ"Bangla Tribune। ৯ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  38. "আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা, ক্ষুব্ধ ছাত্রদের যমুনা ঘেরাও"আবদুল হামিদের বিদেশযাত্রা, ক্ষুব্ধ ছাত্রদের যমুনা ঘেরাও (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ মে ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০২৫ 
  39. "স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৩ ঘোষণা"স্পন্দন। ২০১৩। ৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  40. "আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজে সবদিকে ঘাটতি, শুধু আসন বাড়তি"আজকের পত্রিকা। ২০ জানুয়ারি ২০২৫। 
  41. "মিঠামইনে আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী"banglanews24.com। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
রাজনৈতিক দপ্তর
পূর্বসূরী
জিল্লুর রহমান
ও স্বয়ং (ভারপ্রাপ্ত)
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
২২ এপ্রিল ২০১৩ - ২৩ এপ্রিল ২০২৩
উত্তরসূরী
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন
পূর্বসূরী:
জমিরুদ্দিন সরকার
জাতীয় সংসদের স্পিকার
২৫ জানুয়ারি ২০০৯ - ২৪ এপ্রিল ২০১৩
উত্তরসূরী:
শওকত আলী (ভারপ্রাপ্ত)